somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ই মে এর অবরোধে যোগ দিলাম, কিন্তু সহিংসতা সৃষ্টি হল কেন?

০৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পরশু সকাল থেকেই ঢাকা অবরোধে আব্দুল্লাপুর-টংগীর অবস্থান কর্মসুচিতে যোগ দেওয়ার হাজার ইচ্ছে থাকা সত্বেও পারছিলাম সেদিনের শেষ পরিক্ষার কারনে। পরিক্ষার প্রস্তুতি ছিল কম, ভেবেছিল অবরোধের কারনে বোর্ড কর্তৃপক্ষ হয়ত পরিক্ষা পিছিয়ে দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেছানো হল না। হাজার উৎকন্ঠা, ভয় আর আতংক নিয়েই মুহাম্মদপুর পরিক্ষা কেন্দ্রে খুব ভোরেই রওনা হলাম। প্রথম চোটেই অবরোধে পড়লাম উত্তরা হাউবিল্ডিংএ। বললাম চলমান পরিক্ষার কথা, তারা জানাল সামনে আটকা পড়বেন, বিকল্প পথ দেখিয়ে দিল। সিএনজি নিয়ে এগুতে থাকলাম, বিশ্বরোডের এখানে বিশাল মিছিলে পড়লাম। খুব টেনশন ফিল করছিলাম পরিক্ষার হল পর্যন্ত পৌছতে পারব কি না। আল্লাহর রহমতে ৭ টার মধ্যেই হলে পৌছে গেলাম। ইতি মধ্যেই সব পরিক্ষার্থীরা এসে পড়তে শুরু করেছে। এক পরিক্ষার্থী আক্ষেপ করে বলতেছিলেন, সবাই যখন অবরোধে আমরা তখন পরিক্ষার হলে। তখন আমরা পরিক্ষার পর একটি মিছিল বের করার চিন্তা করছিলাম, সবাই সাড়া দিল, ব্যাপক সমর্থন পেলাম। পরিক্ষার্থীরাই ১০/২০ টাকা চাদা দিল একটি ব্যানার বাণানোর জন্য। উপস্থিত এক অভিভাবককে ব্যানার বানানোর দায়িত্ব দিয়ে পরিক্ষার হলে ঢুকে গেলাম। আমাদের সিদ্ধান্তের কথা জানতে পারল হেফাজত বিরোধী আহলুস সুন্নাহ এর সেই মাদ্রাসার হল কর্তৃপক্ষ, তিনি পরিক্ষা চলাকালে এসে আমাদের কঠোরভাবে হুশিয়ারী করে দিলেন সেখানে যাওয়া যাবে না বলে। আরো অনেক ভয়-ভীতি দেখিয়ে গেলেন।পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিক্ষার পর সবাই নিচে একত্র হল, ব্যানারও চলে আসল ইতিমধ্যে। একে একে সব পরিক্ষারথীরাই জমা হতে লাগল। স্লোগান দিতে দিতে আমরা শ্যামলির দিকে যাচ্ছিলাম, ইতিমধ্যেই গাবতলী আমীনবাজারে অবস্থান গ্রহনকারীরা অবরোধ শেষ করে মতিঝিলের দিকে মিছিল নিয়ে রওনা দিয়েছে। মিছিলটা কত বড় ছিল তা বোঝার সামর্থ আমার ছিল না। তবে সময়ের অনুপাতে বলা যেতে পারে কম হলেও তিন ঘন্টা লেগেছে এক স্থান অতিক্রম করতে যা আশে পাশের মিছিল দর্শকদের থেকে জানতে পারলাম। আমার ছিলাম সেই মিছিলের শেষ প্রান্তে। কারওয়ান বাজারের পাশে এক বয়স্ক মহিলাকে দেখলাম পানি খাওয়াতে, পানি পান করে সামনে এগুতে লাগলাম, একজন কলা দিল অনকে গুলো, আরেকজন পানি দিল, এগুলো খাচ্ছি আর সামনে এগুচ্ছি। মিছিলটি যখন রুপসি হোটেলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল তখন সেখানে বিপুল পরিমান হেফাজতের সেচ্ছাসেবী ও পুলিশ শাহবাগ যাওয়ার রাস্তা বেরিক্যাড দিয়ে রেখেছিল। মিছিলের একটা অংশ শাহবাগে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু হেফাজতে ইসলামের সেচ্ছাসেবীদের কঠোর অবস্থানের কারনে যেত পারল না, অনেক সেচ্ছাসেবীকে দেখলাম লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে, যারাই ঢুকতে চাচ্ছে তাদের দিকেই তেড়ে আসছে। তাদের পেছেনর স্টেপে ছিল পুলিশ। যাক সেখানে আর কিছু ঘটেনি। কাকড়াইল এসে মাঝ পথে একটু গাছের ছায়ায় বসলাম। তারপর নয়াপল্টন হয়ে সামনে আাসার সময় একজন খেজুর দিল, বিএনপি অফিসের সামনে দেখি ঠান্ডা পানি পান করাচ্ছে, পানি পান করলাম, একটা ফ্রুটিকা দিল। কিন্তু ততক্ষনে পেট ফুল, তাই এক টোকাইকে জুসটা দিয়ে দিলাম। বিএনপি অফিসের কাছকাছি একটা গাড়ির গ্যারেজ থেকে মিছিল লক্ষ করে গুলি করা হয়, সেখানে তিনজনকে দেখতে পেলাম। মিছিলের মানুষ সেখানে ভাংচুর চালালো, ঐ তিনজনকে ধোলাই দিল। উপস্থিত কয়েকজন হেফাজতে ইসলামের স্বেচ্ছাসেবীর কারনে তারা প্রানে বেচ গেল, সেই স্বেচ্ছাসেবীও কিছুটা ধোলাই খেল। শাপলা চত্বরে যেতে আরেকজন তরমুজ এনে দিল, তরমুজ খেয়ে শাপলা চত্বরের কাছকাছি নটরডেমকলেজের সামনে বসলাম। পল্টন, বায়তুল মুকাররম এলাকায় সংঘর্ষের সংবাদ পেলাম। আহত কয়েকজনকে রিক্সায় করে হসপিটালের ছোটাছুটি করতে দেখলাম। বাসা থেকে আব্বু একটু পরপর ফোন দিচ্ছে, এখুনি এসে পড়তে বলছে। আর বসতে পারলাম না বিকাল পর্যন্ত সেখানে ছিলাম। আরামবাগ মসজিদে আসরের নামাজ পড়ে জানতে পারলাম কোন গাড়ী চলে না। কমলাপুর এসে ট্রেন ধরলাম। ৭ টা নাগাদ বাসায় এসে টিভির সামনে বসে আতকে উঠলাম, কি হচ্ছে সেখানে। হেফাজতে ইসলামের এই কর্মসূচি ৬ই এপ্রিলের লংমার্চের মতই শান্তিপূর্ন হতে পারত, কিন্তু দুস্কৃতিকারীরা চিপা-গলি, ভবনের উপর থেকে মিছিলে গুলি করে মিছিলকারীদের সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়। তবে কারা এ সমস্ত তান্ডব চালাল? কেন চালাল? ৬ই এপ্রিল তো এমন টা করেনি, বরং শান্তীপূর্ন একটি সফল লংমার্চ সমাবেশ করেছিল। এজন্য বিভিন্ন মহল হেফাজতে ইসলামকে সাধুবাদ ও জানিয়েছে।
অবরোধের সময় মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় দেখেছি, উস্কানিমূলক স্লোগান কেবল শিবিরের ছেলেরাই দিত । এ নিয়ে মিছিলের সময়ই একটি ছেলের সাথে বাকবিতন্ডা হল। একজন প্রাইমমিনিষ্টারকে নিয়ে কুরুচিপূর্ন স্লোগান শুরু করল, আমি মানা করলে আমাকে কাপুরুষ বলে ব্যানার ছেড়ে দিতে বলে। তেমনি ভাবে বায়তুল মুকাররমের বইএর দোকানে আগুন দেওয়া কোনভাবেই হেফাজতের কর্মীরা করতে পারেনা, কুরান শরীফের আদব সম্পর্কে কওমী ছাত্ররাই ভাল জানে। একটি বিশেষ মহল নিরীহ হেফাজত কর্মীদের সহিংসতার দিকে বারবার ঠেলে দিচ্ছে। ভবনের উপর ও গলি থেকে গুলি করছে, সহিংস হতে বাধ্য করছে। কারা এটা করছে এটা সবাই জানে, ঘোলা পানিতে যারা মাছ শীকাররের চেষ্টা চালায়।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৪ রাত ১০:৫১
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অসমাপ্ত সংগীত

লিখেছেন স্প্যানকড, ১২ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:০৬

ছবি নেট।



তুমি এক প্রিয় সুর
আমি হারিয়ে যাওয়া অসমাপ্ত সংগীত!
অথবা,
তুমি পরিবর্তনশীল ঢেউ
আমি নামহীন নাবিক!
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নিয়ে যাও
গল্প শোনাও এক অদৃশ্য পৃথিবীর।

বুঝিয়ে দিয়েছ তুমি
আমার নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালির কপালে সুখ নাই

লিখেছেন রাজীব নুর, ১২ ই জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৮



সময় তখন ১৯৪৩ সাল।
ব্যবসায়ীদের অতি লোভের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই দুর্ভিক্ষে কমপক্ষে এক লাখ মানুষ মারা যায়। ক্ষুধা কোনো ধর্ম মানে না। হিন্দু যায় মুসলমানের বাড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেমিনাই, অর্থাৎ মিথুন রাশি

লিখেছেন করুণাধারা, ১২ ই জুন, ২০২৫ রাত ৯:৫৪

এক সপ্তাহের মধ্যে তিনজনের জন্মদিন। তারমধ্যে আজকে যার জন্মদিন তার উদ্দেশ্যে এই পোস্ট নিবেদিত!!

রাজীব নুরের বড় মেয়ে পরীর জন্মদিন ৬ জুন। আগে পরীর জন্মদিনে উপলক্ষে রাজীব নুরের পোস্ট দেখতাম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসাদের পতনের পর নতুন ভূ-রাজনীতির মুখোমুখি সিরিয়া !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১২ ই জুন, ২০২৫ রাত ১০:৪১

[media pointer="file-service://file-26h7VczEB5tkxCSLjrwomQ"]
সিরিয়ার দীর্ঘকালীন শাসক বাশার আল-আসাদের পতন কেবল একটি স্বৈরাচারী সরকার পরিবর্তনের ঘটনা নয়; বরং এটি মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী রাষ্ট্রব্যবস্থার ভাঙনের প্রতিচ্ছবি। ২০১১ সালে আরব বসন্তের ছায়ায় শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

Between Mars and the Moon

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৩ ই জুন, ২০২৫ রাত ১২:৩৮



মডেল: ভিভিয়ান লি, সিঙ্গাপুর

I dwell in the rust-red silence of Mars,
Where winds whisper through canyon scars.
The sun sets low in a sky so wide,
But without your... ...বাকিটুকু পড়ুন

×