মেহেদী হাসান ইলিয়াস
আজকে যখন জানাযার পর তাকে করস্থ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তার নববধু বিলাপ করছিলেন ‘আমি তাইনের কাছে যামু আমারে লইয়া যাও’ তখন সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়’। উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি।
নির্মম ভাবে মেহেদী হাসান ইলিয়াস হত্যা করা হয়ঃ
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় এক যুবলীগ নেতাকে হত্যার পর তাঁর ধর থেকে মাথা কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। তাঁর নাম মেহেদী হাছান ইলিয়াস (৩২)। গত মঙ্গলবার রাতে উপজেলার নিগুয়ারী ইউনিয়নের বেলদিয়া গ্রামে ইলিয়াসের নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত ইলিয়াস উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) গিয়াস উদ্দিন আহাম্মেদের সাবেক পিএস (ব্যক্তিগত সহকারী) ছিলেন।
ইলিয়াসের পরিবার, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে আধুনিক ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৬০-৭০ জনের একদল দুর্বৃত্ত ইলিয়াসের বাড়ি ঘেরাও করে। এরা বাড়ির প্রধান ফটক ও ঘরের চারটি দরজা-জানালা ভেঙে ঘরের ভেতরে ঢুকে ইলিয়াসকে খুঁজতে থাকে। বিষয়টি টের পেয়ে ইলিয়াস বাথরুমে গিয়ে লুকান। ঘরে কোথাও তাঁকে না পেয়ে দুর্বৃত্তরা বাথরুমের বাইরের দিক থেকে দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাঁকে হত্যা করে এবং ধর থেকে মাথা কেটে নিয়ে যায়।
ইলিয়াসের ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেন জানান, দুর্বৃত্তরা যখন বাড়ি ঘেরাও করে ইলিয়াস তখন মোবাইল ফোনে গফরগাঁও থানার ওসি, পাগলা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জামালকে বিষয়টি জানান। ইলিয়াসের স্বজনদের আর্তচিৎকার ও মোবাইলে খবর পেয়ে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তদের একাংশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুর্বৃত্তরা এলাকাবাসীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে আলী হোসেন (২৮), মকবুল হোসেন (৩৩), জয়নাল (২৮) ও শহীদুল্লাহ (৩২) গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি দায়ের কোপে আহছান উল্লাহ (২৬) ও নাজিম উদ্দিন (৪৫) আহত হন। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের মা জমিলা খাতুন বলেন, 'দুর্বৃত্তের দল বাড়ি ঘেরাও করে যখন ইলিয়াসকে পায়, তখন আমি ও ইলিয়াসের স্ত্রী নার্গিস আক্তার দুর্বৃত্তদের পায়ে ধরে ইলিয়াসের জান ভিক্ষা চাই। কিন্তু তারা আমাদের লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায় এবং আমাকে ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেয়। পরে তার স্ত্রীর সামনেই ইলিয়াসকে জবাই করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইলিয়াসের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, এলাকার কামরুল ডাকাত, শফিকুল ইসলাম ওরফে সমবাইরা ডাকাত ও এখলাস ডাকাতের হাতে নিগুয়ারী, টাংগাবসহ আশপাশের দু-তিনটি ইউনিয়নের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। এসব ডাকাতের বিরুদ্ধে সব সময় তৎপর ছিলেন ইলিয়াস। এরাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
তারা আরো জানায়, ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতেও ডাকাতদল ইলিয়াসকে কুপিয়েছিল। সেই ঘটনায় ইলিয়াস বাদী হয়ে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী কামরুল পালোয়ান ওরফে হাতকাটা কামরুল, তার ভাই আলাউদ্দিন পালোয়ান এবং আন্তজেলা ডাকাত শফিকুল ইসলাম সমবাইরা, এখলাছ, রায়হানসহ ৩৭ জনের নামে থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পরপর এলাকাবাসী বেলদিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম সমবাইরা (ডাকাত) ও তার পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে। এর জের ধরে ইলিয়াস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম ফারুক। এ ব্যাপারে গফরগাঁও থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, মনে হচ্ছে পূর্বশত্রুতার জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তিনি জানান, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



