মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান, স্বাধীনতাসংগ্রামী জাতীয় বীর ও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা অসুস্থ আবদুর রাজ্জাকের লন্ডনের ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ যে অশোভন, শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করেছেন সুদূর প্যারিসে বসে তার অমানবিক হৃদয়কেই উন্মুক্ত করেনি আওয়ামী লীগবিদ্বেষী চরিত্রকেও জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। মুখে মধু অন্তরে বিষ নুরুল ইসলাম নাহিদরা যখন বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে সিআইএ'র এজেন্ট ও তার ঘোষিত বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফাকে আমেরিকার দলিল বলে কটাক্ষ করছিলেন তখন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবের আদর্শবান কর্মী আবদুর রাজ্জাক দলের চরম দুঃসময়ে জেলই খাটেননি, আইয়ুবের দমননীতি উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খান ও কাজী আরিফকে নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই নুরুল ইসলাম নাহিদরা যখন কেজিবির টাকায় মস্কোর সমাজতন্ত্রের বিদেশি রাজনীতি করছিলেন তখন আবদুর রাজ্জাক মহান মুজিবের স্নেহছায়ায় অন্ধকার ভেদ করে জাতিকে আলোর পথ দেখাতে ছয় দফাকে নিয়ে বীরের মতো মাঠে নেমেছিলেন। বিষয় যদি হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ তাহলে আবদুর রাজ্জাকসহ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকার কাছে নুরুল ইসলাম নাহিদ দূরে থাক তার প্রয়াত নেতা মণি সিংহও তুলনায় আসেন না। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতীয়তাবাদী নেতারাই অমরত্ব পেয়েছেন। আর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লেনিন, মাও সেতুং বা ফিদেল কাস্ত্রোদের নাম সোনার হরফে লেখা থাকলেও এ দেশের আদর্শচ্যুত বাম বা কমিউনিস্টদের নাম কোনোটাতেই নেই। হয় সামরিক শাসকদের সঙ্গে পরকীয়া প্রণয়ে লিপ্ত না হয় জাতীয়তাবাদী শক্তির হেরেমে আশ্রিত রক্ষিতার তালিকায় তাদের নাম শোভা পাবে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুর রাজ্জাক মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে নিরলস পরিশ্রম করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। কালের অন্ধকার সময়টিতে একদিকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ও রেহানার অলৌকিক জীবন লাভ, অন্যদিকে বেদনাবিধূর হৃদয়ে নির্বাসিত জীবন আর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে আসে খুনি চক্রের হত্যা, জেল-জুলুম এবং নির্যাতনের ভয়াবহ আগ্রাসন। সে সময়ে এই আবদুর রাজ্জাক মুজিবহীন বাংলায় নৌকার মাঝিই নন, হয়ে ওঠেন মুজিব-অন্তপ্রাণ মানুষের আশ্রয়ের ঠিকানা। এই আবদুর রাজ্জাক হয়ে ওঠেন অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় দলের মধ্যমণি। সেদিন যখন জাতির ঐক্যের ঠিকানা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে তখন তার আদর্শের সহচর জাতীয় চার নেতার রক্তাক্ত নিথর দেহ অনাদর-অবহেলায় পড়েছে কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেই রাতে রাজ্জাক-তোফায়েলকে খুনিরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল। যদি পেয়ে যেত হয়তো আজ এভাবে আবদুর রাজ্জাককে এমন নির্দয় আক্রোশ সইতে হতো না। তোফায়েলকে চোখের জলে দহনে দহনে ক্ষয়ে যেতে হতো না। সে সময় হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী যখন জেল খাটছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন তখন সেদিনের কমিউনিস্ট নুরুল ইসলাম নাহিদরা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের খাল কাটা বিপ্লবে যোগ দিয়েছেন কোদাল হাতে। আওয়ামী লীগের জেলে যাওয়া নেতাদের পুত্র-কন্যাদের পড়ালেখা, খাওয়া-পরা তখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের চিকিৎসা সংকটে পড়তে হয়েছে। অথচ সেদিনও কমিউনিস্টরা সন্তানদের, কর্মীদের মস্কো পাঠিয়েছেন লেখাপড়ার জন্য। চিকিৎসায় গেছেন নেতারা। এমন ভাগ্য কার জোটে? এই রাজনৈতিক চরিত্রহীনরা তারও আগে দুনিয়া কাঁপানো জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা, আজীবন গণতন্ত্রের জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন ও ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে উঠে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে একদলীয় বাকশাল করে কমিউনিস্ট পার্টি বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। ওরা আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট, ওরা পারে! সুন্দর চেহারা, মিষ্টি মিষ্টি কথা, বেশরম বেহায়ার মতো দল বদলায়। ক্ষমতায় যায়। মনের কুৎসিত চেহারা বদলায় না। আবদুর রাজ্জাকের মতো জাতীয় বীর জীবনসায়াহ্নে যখন হাসপাতালের শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুটি বড় অপারেশন লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য অপেক্ষায়। সংসদে যখন লন্ডনে গিয়েও তাকে দেখতে না যাওয়া মন্ত্রী ও হাইকমিশনার সমালোচিত, নিন্দিত তখন প্যারিসের নেতা-কর্মীদের বুকভরা বেদনা ও ভালোবাসাকে তোয়াক্কা না করে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলে বসলেন, 'বাংলাদেশের কয়জন লোকের সামর্থ্য আছে লন্ডন গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার? রাজ্জাক সাহেবের সে রকম সঙ্গতি রয়েছে বলেই তিনি লন্ডনে চিকিৎসা করাচ্ছেন। আমি দেশে গিয়ে তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেব।' প্যারিস থেকে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের প্রতিনিধি ফারুক নওয়াজ খানের পাঠানো রিপোর্ট পড়ে আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে। যে নুরুল ইসলাম নাহিদকে একজন মিষ্টভাষী, অমায়িক ব্যবহারের সৎ, ভালোমানুষ বলে জেনে আসছি তার দুই দফা দল বদল নিয়ে কথা না থাকলেও অসুস্থ রাজ্জাককে নিয়ে এমন কুৎসিত, অশালীন মন্তব্য নিয়ে হতাশ। শেখ ফজলুল হক মণির সঙ্গে যদি আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিলরা চলে যেতেন আর যাই হোক জীবনসায়াহ্নে দলে ঠাঁই নেওয়া বহিরাগত কমিউনিস্টদের ঔদ্ধত্য দেখে যেতে হতো না। বিএনপি জামানায় ভৈরব সেতু থেকে স্বাধীন বাংলার প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নাম সরিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান যখন বললেন 'কোথাকার কোন নজরুল' গোটা বাংলাদেশ ব্যথিত হয়েছে। সাইফুর রহমানের রুচি ও উচ্চতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সংসদে মরহুম সামাদ আজাদ সংসদীয় ধাঁচে বলেছিলেন, আমি আরও ভাবলাম 'কোন ছয়ফুর!' সাইফুর রহমান পরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। প্যারিসের প্রবাসীরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য। তিনি যেন বলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা রাজ্জাকের চিকিৎসার ভার সরকার নেয়। মুজিবকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজ্জাকের চিকিৎসার খোঁজখবর নিলেও তার মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু লন্ডন গেলেও রোগশয্যায় শায়িত রাজ্জাককে দেখতে যাননি! যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা খাবার ভাগাভাগি করে সংগ্রামের পথ হেঁটে সুখে-দুঃখে পাশে থেকে দলকে বটবৃক্ষে পরিণত করেছিলেন মুজিবের নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগে মায়া-দয়া নির্বাসনে পাঠাচ্ছেন_ এরা কারা? আওয়ামী লীগবিদ্বেষী আদর্শহীন বাম? দলের অভ্যন্তরে মতপার্থক্য থাকলে আবদুর রাজ্জাক যদি খারাপ হয়ে যান তাহলে কতটা খারাপ? সেনাশাসক এরশাদের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করা, গণফোরামে হিজরত করা আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজ্জাকের চেয়েও ভালো আওয়ামী লীগার? প্যারিসের প্রবাসীদের বক্তব্য ও দাবি দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করার যোগ্যতা না রাখলেও নুরুল ইসলাম নাহিদ যে মন্তব্য করেছেন তা অমার্জনীয় অপরাধ কি না, বাংলাদেশের লাখো লাখো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের বেঁচে থাকা বীররা সিদ্ধান্ত নেবেন। আজকের আওয়ামী লীগ বোধহীন, হৃদয়হীন দলে পরিণত হয়েছে কি না জানি না তবে বিএলএফের আহ্বায়ক মুজিবসন্তান মোস্তফা মহসীন মন্টু টেলিফোনে বলেছেন, 'নুরুল ইসলাম নাহিদকে এই কটূক্তি করার জন্য টুঙ্গিপাড়ায় শায়িত জাতির জনকের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আবদুর রাজ্জাকরা আওয়ামী লীগ রক্ষা করেছিলেন বলেই নাহিদরা আজ নৌকায় চড়ে মন্ত্রী হয়েছেন।' ছাত্র ইউনিয়ন করা লোকজন তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া পাপির পক্ষেও সিন্ডিকেট বলয় গড়ে তুলতে ভুল করেন না। ছাত্রলীগ হিসাবের খাতায় ভাই হয়ে ভাইকে রক্তাক্ত করে শেষ করার পাঠ নিচ্ছে। আর এই সুযোগে আদর্শহীন বামরা সাফসুতরো সততার জিকির তুলে তুলে, তোষামোদ ও চাটুকারিতার গান করে আওয়ামী লীগের বুকে দাঁড়িয়ে উল্লাস করে যাচ্ছেন। মোস্তফা মহসনি মন্টুর যে ভূমিকা এই দল, দলের মহান দার্শনিক শেখ মুজিব ও নৌকার কাণ্ডারি শেখ হাসিনার জন্য নাহিদ তার কতটা করেছেন? পঁচাত্তর-উত্তর দুঃসময়ে সশস্ত্র প্রতিরোধে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে হাজার হাজার মুজিবসন্তান দিনের পর দিন ঘাস খেয়ে জীবন-যাপন করেছেন। আর নাহিদরা জিয়ার হেরেমে খাল কাটা বিপ্লবের কোরাস গেয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়ন কৌশলের তালিম দেয়। কৌশলের দোহাই দিয়ে কখনো বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভাসিত আওয়ামী লীগের হেরেমে কখনোবা অসাংবিধানিক সেনাশাসনের আস্তানায় রাতযাপন করে, কখনো সংস্কারের কথা বলে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে গণফোরামে হিজরত করে এলেও দল বদল হয় না! অদ্ভুত জগৎ-সংসারের চলমান রাজনীতিতে নাহিদরা রাতারাতি ভালো হয়ে গেলেন! '৯১ সালের জোটের কারণে নৌকায় চড়ে নির্বাচন করতে গেলে সিলেটের বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের মানুষ জানতে পারল নুরুল ইসলাম নাহিদ নামের একজন কমিউনিস্ট নেতা ঢাকায় থাকেন। পরাজয়ের পর গণফোরামে গেলেও এলাকায় জামিন মিলবে না চিন্তা করে '৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মিন্টো রোডে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দলের দুঃসময়ের সঙ্গী শিল্পপতি ও বাউল শেখ ওয়াহিদুর রহমান '৯১ সালে নৌকা পেলেও পরে নাহিদের ভাগ্যে তা স্থায়ী হয়ে যায়। দুঃখ ও বেদনা নিয়ে ওয়াহিদ বলেছিলেন, 'জাল টানে ওয়াহিদে, মাছ খায় নাহিদে!' বঙ্গবন্ধুর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছিলেন আবদুল আজিজ। বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সিলেট বিভাগের জীবিত আওয়ামী লীগারদের মধ্যে ইনি সবচেয়ে প্রবীণ মুজিবকর্মী। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা জানেন না তার নৌকায় চড়ে আজকের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আবদুল আজিজকে দল থেকে বের করে দিয়েছেন। সুশীলরা বলবেন, নাহিদ অনেক ভালো। কতটা ভালো তা জানতে চাইব না। তবে আজীবন সংগ্রামী গণমানুষের নেতা আবদুর রাজ্জাক খারাপ হলেও ততটা খারাপ নন যে, জিজ্ঞাসা করবেন নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সরকারের আমলে পাওয়া এক এলাকার ছোট প্লট মন্ত্রী হয়ে অভিজাত এলাকার বড় প্লট কীভাবে করেন? জাতীয় নেতা রাজ্জাক তো সরকারি কোনো প্লট নেননি! রাজ্জাক অনেক খারাপ কিন্তু নাহিদের আঘাত রোগশয্যায়ও নীরবে সয়ে যাবেন। রাজ্জাক খারাপ তবুও নাহিদের আঘাত মুখ বুজে সয়ে একদিন চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন। ভুলেও প্রশ্ন করবেন না ভোটের আগে নাহিদ কেন যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে সিলেটী প্রবাসীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরেন। রাজ্জাকের রুচিতে কখনোই আসবে না নাহিদের ভোটের অর্থের উৎস কোথায়? ধুমধামে সন্তানের বিয়ের উৎসব কেন হয়? কমিউনিস্ট দীক্ষায় দীক্ষিত নাহিদের বিয়ানীবাজার থানার প্রশাসন থেকে সব কিছু কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, আবদুস শুকুর ও এবাদ আহমেদ, গোলাপগঞ্জের বদরুল ইসলাম শোয়েব। নাহিদ যতটা ভালো রাজ্জাক ততটাই খারাপ। তবুও রাজ্জাকের প্রশ্ন করতে রুচিতে বাধবে, নাহিদের শিক্ষাভবন নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের শক্তির উৎস কী? কোন দুঃসাহসে জিয়াউর রহমানকে দিশাহারা জাতির স্বাধীনতার ঘোষক বলে স্কুল পাঠ্যবইয়ের লেখক রতন সিদ্দিকীকে ইতিহাস বিকৃতি রোধের জন্য গঠিত কমিটিতে নাহিদ ঠাঁই দেন? '৭০ সাল থেকে কখনোই চরম বিপর্যয়েও পরাজয়ের গ্লানি আবদুর রাজ্জাককে স্পর্শ করেনি। একাধিক আসনেও বারবার জিতেছেন। তবুও রাজ্জাক প্রশ্ন তুলবেন না শেখ হাসিনার করুণায় খাল কাটা বিপ্লবের কোদাল কমরেড নাহিদ আওয়ামী লীগে আসার আগে জাতীয় নির্বাচন দূরে থাক কোনো স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছেন কি না। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে জেল-জুলুম-সংগ্রামের পথে রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুর স্নেহছায়া ও জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা নিয়ে জাতীয় নেতার বরমাল্য পরে আজকের জায়গায় আছেন। রাজ্জাক যত খারাপ হোন ভুলেও প্রশ্ন করবেন না কালকে মন্ত্রিত্ব চলে গেলে, এমপি না থাকলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর করুণা হারালে বায়তুল মোকাররমের জুমার নামাজের সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুকরা নাহিদকে চিনবেন কি না? আবদুর রাজ্জাক ভারতে এর আগে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনসহ দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে তার পরিবার এবার লন্ডনে শেষ চেষ্টা করছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো আবদুর রাজ্জাককে দলের সহকর্মী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর আগে কখনো দেশে দেখতে গিয়েছিলেন কি? রাজ্জাক ভালো নন, রাজ্জাক আওয়ামী লীগার। নাহিদ তো কমিউনিস্ট। কমিউনিস্টরা কতই না ভালো! কমিউনিস্টদের ভারে মুজিবকন্যার নৌকা ডুবতে বসেছে। তবুও রাজ্জাক ভারত থেকে জাতীয় শোক দিবসের আগের দিন চলে এসেছিলেন তার নেতার প্রতিকৃতিতে মালা দেবেন বলে। পিতার ছবিতে ফুল দিয়ে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনেই পড়ে গিয়েছিলেন। সেই রাজ্জাককে নাহিদ দেখতে যান আর না যান রাজ্জাক তবুও বলবেন না আওয়ামী লীগে না এলে, সভানেত্রীর অনুকম্পা না পেলে তুমি এমপি-মন্ত্রী হতে? তবুও বলবেন না আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে করুণা ভিক্ষা চেয়ে নেতা-নেত্রীর বাড়ি তোমরা কতটাই না হেঁটেছ! তবু রাজ্জাক সুস্থ হয়ে ফিরে এলে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের মাজারে কাঁদতে কাঁদতে বলবেন না, পিতা, ওরা আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট, ওরা আওয়ামী লীগার হতে পারে না। তবুও আজ দিকে দিকে ওরা তোমার রক্তে, শ্রমে, সংগ্রামে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে কী চতুরতার সঙ্গেই না গ্রাস করে ফেলছে! তবু রাজ্জাক বলবেন না প্রিয় সভানেত্রীকে বলুন এখন এই মুহূর্তে বিনা নোটিসে ওদের নৌকা থেকে নামিয়ে না দিলে সামনে নুহের প্লাবন। রাজ্জাক অনেক খারাপ, তবুও যদি আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসায় সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন নাহিদের এমন অশালীন আঘাতের জবাবে দেখা হলে শুধুই বলবেন, তোরা ভালো আছিস? তবু দেখতে দেবেন না নাহিদের আঘাতে তার বুকজুড়ে কতটা রক্তক্ষরণ। কমিউনিস্ট এক মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টা বঙ্গবন্ধুর মাজারেও যাননি, বক্তৃতা শেষে জয়বাংলা ধ্বনিও তোলেননি। এসবে আজকাল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কিছুই আসে যায় না। নাহিদরা অনেক ভালো। চরিত্র খুইয়ে, চেতনা হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এদের মাথায় তুলে নাচুক। এদের সহকর্মীরা এখনো দিনদুপুরে বলে 'নৌকা-পাল্লা-ধানের শীষ সবার মাথায় সাপের বিষ'। মানুষ মরণশীল। সবাইকে একদিন চলে যেতে হয়। আমাদেরও একে একে চলে যেতে হবে। তবু বাঁচার জন্য শেষ লড়াই করে। চিকিৎসা দোয়া-দরুদ পাল্লা দিয়ে চলে। বাঁচার আকুতি সবার আছে বলেই শুধু সব দলের নেতা-নেত্রীই নয়, সাধারণ মানুষও ভিটেমাটি বিক্রি করে চলে যায়। তবুও কারও বিদেশ চিকিৎসা নিয়ে এমন কটাক্ষ আগে কখনো হয়নি। নাহিদ খুউব ভালো। তাই করেছেন। রাজ্জাক খুউব খারাপ তাই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে তার জীবন। মরণেও পাবেন লাখো মানুষের ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু, থোকা থোকা ফুল আর ফুল। নাহিদের সঙ্গে সিপিবির সভাপতি সাইফুদ্দিন মানিক দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলেন মৃত্যুর আগে, আমরা কি তার জন্য দোয়া করিনি? কেউ কি অমানবিক প্রশ্ন তুলেছেন? মান্নান ভূঁইয়া? বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, মন্ত্রীরা যান না, আসলে মানুষই বাঁচার জন্য উন্নত চিকিৎসার সন্ধানে শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু বিদেশে ভিক্ষা করে ভোট করার, রাজনীতি করার সামর্থ্য কয়জনের? তাই বলে দুধ খেয়ে মুখ মুছে বিড়ালের মতো নিষ্পাপ ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট যখন রোগশয্যায় শায়িত হবেন তখন কোনো মানবিক হৃদয়ের মানুষ কি এভাবে আঘাত করে বলবেন?
জাল টানে ওয়াহিদে মাছ খায় নাহিদে'
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
লেখক -পীর হাবিবুর রহমান

মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান, স্বাধীনতাসংগ্রামী জাতীয় বীর ও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা অসুস্থ আবদুর রাজ্জাকের লন্ডনের ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ যে অশোভন, শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করেছেন সুদূর প্যারিসে বসে তার অমানবিক হৃদয়কেই উন্মুক্ত করেনি আওয়ামী লীগবিদ্বেষী চরিত্রকেও জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। মুখে মধু অন্তরে বিষ নুরুল ইসলাম নাহিদরা যখন বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে সিআইএ'র এজেন্ট ও তার ঘোষিত বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফাকে আমেরিকার দলিল বলে কটাক্ষ করছিলেন তখন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবের আদর্শবান কর্মী আবদুর রাজ্জাক দলের চরম দুঃসময়ে জেলই খাটেননি, আইয়ুবের দমননীতি উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খান ও কাজী আরিফকে নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই নুরুল ইসলাম নাহিদরা যখন কেজিবির টাকায় মস্কোর সমাজতন্ত্রের বিদেশি রাজনীতি করছিলেন তখন আবদুর রাজ্জাক মহান মুজিবের স্নেহছায়ায় অন্ধকার ভেদ করে জাতিকে আলোর পথ দেখাতে ছয় দফাকে নিয়ে বীরের মতো মাঠে নেমেছিলেন। বিষয় যদি হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ তাহলে আবদুর রাজ্জাকসহ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকার কাছে নুরুল ইসলাম নাহিদ দূরে থাক তার প্রয়াত নেতা মণি সিংহও তুলনায় আসেন না। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতীয়তাবাদী নেতারাই অমরত্ব পেয়েছেন। আর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লেনিন, মাও সেতুং বা ফিদেল কাস্ত্রোদের নাম সোনার হরফে লেখা থাকলেও এ দেশের আদর্শচ্যুত বাম বা কমিউনিস্টদের নাম কোনোটাতেই নেই। হয় সামরিক শাসকদের সঙ্গে পরকীয়া প্রণয়ে লিপ্ত না হয় জাতীয়তাবাদী শক্তির হেরেমে আশ্রিত রক্ষিতার তালিকায় তাদের নাম শোভা পাবে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুর রাজ্জাক মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে নিরলস পরিশ্রম করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। কালের অন্ধকার সময়টিতে একদিকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ও রেহানার অলৌকিক জীবন লাভ, অন্যদিকে বেদনাবিধূর হৃদয়ে নির্বাসিত জীবন আর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে আসে খুনি চক্রের হত্যা, জেল-জুলুম এবং নির্যাতনের ভয়াবহ আগ্রাসন। সে সময়ে এই আবদুর রাজ্জাক মুজিবহীন বাংলায় নৌকার মাঝিই নন, হয়ে ওঠেন মুজিব-অন্তপ্রাণ মানুষের আশ্রয়ের ঠিকানা। এই আবদুর রাজ্জাক হয়ে ওঠেন অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় দলের মধ্যমণি। সেদিন যখন জাতির ঐক্যের ঠিকানা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে তখন তার আদর্শের সহচর জাতীয় চার নেতার রক্তাক্ত নিথর দেহ অনাদর-অবহেলায় পড়েছে কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেই রাতে রাজ্জাক-তোফায়েলকে খুনিরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল। যদি পেয়ে যেত হয়তো আজ এভাবে আবদুর রাজ্জাককে এমন নির্দয় আক্রোশ সইতে হতো না। তোফায়েলকে চোখের জলে দহনে দহনে ক্ষয়ে যেতে হতো না। সে সময় হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী যখন জেল খাটছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন তখন সেদিনের কমিউনিস্ট নুরুল ইসলাম নাহিদরা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের খাল কাটা বিপ্লবে যোগ দিয়েছেন কোদাল হাতে। আওয়ামী লীগের জেলে যাওয়া নেতাদের পুত্র-কন্যাদের পড়ালেখা, খাওয়া-পরা তখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের চিকিৎসা সংকটে পড়তে হয়েছে। অথচ সেদিনও কমিউনিস্টরা সন্তানদের, কর্মীদের মস্কো পাঠিয়েছেন লেখাপড়ার জন্য। চিকিৎসায় গেছেন নেতারা। এমন ভাগ্য কার জোটে? এই রাজনৈতিক চরিত্রহীনরা তারও আগে দুনিয়া কাঁপানো জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা, আজীবন গণতন্ত্রের জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন ও ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে উঠে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে একদলীয় বাকশাল করে কমিউনিস্ট পার্টি বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। ওরা আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট, ওরা পারে! সুন্দর চেহারা, মিষ্টি মিষ্টি কথা, বেশরম বেহায়ার মতো দল বদলায়। ক্ষমতায় যায়। মনের কুৎসিত চেহারা বদলায় না। আবদুর রাজ্জাকের মতো জাতীয় বীর জীবনসায়াহ্নে যখন হাসপাতালের শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুটি বড় অপারেশন লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য অপেক্ষায়। সংসদে যখন লন্ডনে গিয়েও তাকে দেখতে না যাওয়া মন্ত্রী ও হাইকমিশনার সমালোচিত, নিন্দিত তখন প্যারিসের নেতা-কর্মীদের বুকভরা বেদনা ও ভালোবাসাকে তোয়াক্কা না করে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলে বসলেন, 'বাংলাদেশের কয়জন লোকের সামর্থ্য আছে লন্ডন গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার? রাজ্জাক সাহেবের সে রকম সঙ্গতি রয়েছে বলেই তিনি লন্ডনে চিকিৎসা করাচ্ছেন। আমি দেশে গিয়ে তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেব।' প্যারিস থেকে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের প্রতিনিধি ফারুক নওয়াজ খানের পাঠানো রিপোর্ট পড়ে আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে। যে নুরুল ইসলাম নাহিদকে একজন মিষ্টভাষী, অমায়িক ব্যবহারের সৎ, ভালোমানুষ বলে জেনে আসছি তার দুই দফা দল বদল নিয়ে কথা না থাকলেও অসুস্থ রাজ্জাককে নিয়ে এমন কুৎসিত, অশালীন মন্তব্য নিয়ে হতাশ। শেখ ফজলুল হক মণির সঙ্গে যদি আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিলরা চলে যেতেন আর যাই হোক জীবনসায়াহ্নে দলে ঠাঁই নেওয়া বহিরাগত কমিউনিস্টদের ঔদ্ধত্য দেখে যেতে হতো না। বিএনপি জামানায় ভৈরব সেতু থেকে স্বাধীন বাংলার প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নাম সরিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান যখন বললেন 'কোথাকার কোন নজরুল' গোটা বাংলাদেশ ব্যথিত হয়েছে। সাইফুর রহমানের রুচি ও উচ্চতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সংসদে মরহুম সামাদ আজাদ সংসদীয় ধাঁচে বলেছিলেন, আমি আরও ভাবলাম 'কোন ছয়ফুর!' সাইফুর রহমান পরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। প্যারিসের প্রবাসীরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য। তিনি যেন বলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা রাজ্জাকের চিকিৎসার ভার সরকার নেয়। মুজিবকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজ্জাকের চিকিৎসার খোঁজখবর নিলেও তার মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু লন্ডন গেলেও রোগশয্যায় শায়িত রাজ্জাককে দেখতে যাননি! যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা খাবার ভাগাভাগি করে সংগ্রামের পথ হেঁটে সুখে-দুঃখে পাশে থেকে দলকে বটবৃক্ষে পরিণত করেছিলেন মুজিবের নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগে মায়া-দয়া নির্বাসনে পাঠাচ্ছেন_ এরা কারা? আওয়ামী লীগবিদ্বেষী আদর্শহীন বাম? দলের অভ্যন্তরে মতপার্থক্য থাকলে আবদুর রাজ্জাক যদি খারাপ হয়ে যান তাহলে কতটা খারাপ? সেনাশাসক এরশাদের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করা, গণফোরামে হিজরত করা আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজ্জাকের চেয়েও ভালো আওয়ামী লীগার? প্যারিসের প্রবাসীদের বক্তব্য ও দাবি দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করার যোগ্যতা না রাখলেও নুরুল ইসলাম নাহিদ যে মন্তব্য করেছেন তা অমার্জনীয় অপরাধ কি না, বাংলাদেশের লাখো লাখো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের বেঁচে থাকা বীররা সিদ্ধান্ত নেবেন। আজকের আওয়ামী লীগ বোধহীন, হৃদয়হীন দলে পরিণত হয়েছে কি না জানি না তবে বিএলএফের আহ্বায়ক মুজিবসন্তান মোস্তফা মহসীন মন্টু টেলিফোনে বলেছেন, 'নুরুল ইসলাম নাহিদকে এই কটূক্তি করার জন্য টুঙ্গিপাড়ায় শায়িত জাতির জনকের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আবদুর রাজ্জাকরা আওয়ামী লীগ রক্ষা করেছিলেন বলেই নাহিদরা আজ নৌকায় চড়ে মন্ত্রী হয়েছেন।' ছাত্র ইউনিয়ন করা লোকজন তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া পাপির পক্ষেও সিন্ডিকেট বলয় গড়ে তুলতে ভুল করেন না। ছাত্রলীগ হিসাবের খাতায় ভাই হয়ে ভাইকে রক্তাক্ত করে শেষ করার পাঠ নিচ্ছে। আর এই সুযোগে আদর্শহীন বামরা সাফসুতরো সততার জিকির তুলে তুলে, তোষামোদ ও চাটুকারিতার গান করে আওয়ামী লীগের বুকে দাঁড়িয়ে উল্লাস করে যাচ্ছেন। মোস্তফা মহসনি মন্টুর যে ভূমিকা এই দল, দলের মহান দার্শনিক শেখ মুজিব ও নৌকার কাণ্ডারি শেখ হাসিনার জন্য নাহিদ তার কতটা করেছেন? পঁচাত্তর-উত্তর দুঃসময়ে সশস্ত্র প্রতিরোধে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে হাজার হাজার মুজিবসন্তান দিনের পর দিন ঘাস খেয়ে জীবন-যাপন করেছেন। আর নাহিদরা জিয়ার হেরেমে খাল কাটা বিপ্লবের কোরাস গেয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়ন কৌশলের তালিম দেয়। কৌশলের দোহাই দিয়ে কখনো বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভাসিত আওয়ামী লীগের হেরেমে কখনোবা অসাংবিধানিক সেনাশাসনের আস্তানায় রাতযাপন করে, কখনো সংস্কারের কথা বলে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে গণফোরামে হিজরত করে এলেও দল বদল হয় না! অদ্ভুত জগৎ-সংসারের চলমান রাজনীতিতে নাহিদরা রাতারাতি ভালো হয়ে গেলেন! '৯১ সালের জোটের কারণে নৌকায় চড়ে নির্বাচন করতে গেলে সিলেটের বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের মানুষ জানতে পারল নুরুল ইসলাম নাহিদ নামের একজন কমিউনিস্ট নেতা ঢাকায় থাকেন। পরাজয়ের পর গণফোরামে গেলেও এলাকায় জামিন মিলবে না চিন্তা করে '৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মিন্টো রোডে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দলের দুঃসময়ের সঙ্গী শিল্পপতি ও বাউল শেখ ওয়াহিদুর রহমান '৯১ সালে নৌকা পেলেও পরে নাহিদের ভাগ্যে তা স্থায়ী হয়ে যায়। দুঃখ ও বেদনা নিয়ে ওয়াহিদ বলেছিলেন, 'জাল টানে ওয়াহিদে, মাছ খায় নাহিদে!' বঙ্গবন্ধুর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছিলেন আবদুল আজিজ। বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সিলেট বিভাগের জীবিত আওয়ামী লীগারদের মধ্যে ইনি সবচেয়ে প্রবীণ মুজিবকর্মী। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা জানেন না তার নৌকায় চড়ে আজকের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আবদুল আজিজকে দল থেকে বের করে দিয়েছেন। সুশীলরা বলবেন, নাহিদ অনেক ভালো। কতটা ভালো তা জানতে চাইব না। তবে আজীবন সংগ্রামী গণমানুষের নেতা আবদুর রাজ্জাক খারাপ হলেও ততটা খারাপ নন যে, জিজ্ঞাসা করবেন নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সরকারের আমলে পাওয়া এক এলাকার ছোট প্লট মন্ত্রী হয়ে অভিজাত এলাকার বড় প্লট কীভাবে করেন? জাতীয় নেতা রাজ্জাক তো সরকারি কোনো প্লট নেননি! রাজ্জাক অনেক খারাপ কিন্তু নাহিদের আঘাত রোগশয্যায়ও নীরবে সয়ে যাবেন। রাজ্জাক খারাপ তবুও নাহিদের আঘাত মুখ বুজে সয়ে একদিন চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন। ভুলেও প্রশ্ন করবেন না ভোটের আগে নাহিদ কেন যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে সিলেটী প্রবাসীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরেন। রাজ্জাকের রুচিতে কখনোই আসবে না নাহিদের ভোটের অর্থের উৎস কোথায়? ধুমধামে সন্তানের বিয়ের উৎসব কেন হয়? কমিউনিস্ট দীক্ষায় দীক্ষিত নাহিদের বিয়ানীবাজার থানার প্রশাসন থেকে সব কিছু কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, আবদুস শুকুর ও এবাদ আহমেদ, গোলাপগঞ্জের বদরুল ইসলাম শোয়েব। নাহিদ যতটা ভালো রাজ্জাক ততটাই খারাপ। তবুও রাজ্জাকের প্রশ্ন করতে রুচিতে বাধবে, নাহিদের শিক্ষাভবন নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের শক্তির উৎস কী? কোন দুঃসাহসে জিয়াউর রহমানকে দিশাহারা জাতির স্বাধীনতার ঘোষক বলে স্কুল পাঠ্যবইয়ের লেখক রতন সিদ্দিকীকে ইতিহাস বিকৃতি রোধের জন্য গঠিত কমিটিতে নাহিদ ঠাঁই দেন? '৭০ সাল থেকে কখনোই চরম বিপর্যয়েও পরাজয়ের গ্লানি আবদুর রাজ্জাককে স্পর্শ করেনি। একাধিক আসনেও বারবার জিতেছেন। তবুও রাজ্জাক প্রশ্ন তুলবেন না শেখ হাসিনার করুণায় খাল কাটা বিপ্লবের কোদাল কমরেড নাহিদ আওয়ামী লীগে আসার আগে জাতীয় নির্বাচন দূরে থাক কোনো স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছেন কি না। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে জেল-জুলুম-সংগ্রামের পথে রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুর স্নেহছায়া ও জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা নিয়ে জাতীয় নেতার বরমাল্য পরে আজকের জায়গায় আছেন। রাজ্জাক যত খারাপ হোন ভুলেও প্রশ্ন করবেন না কালকে মন্ত্রিত্ব চলে গেলে, এমপি না থাকলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর করুণা হারালে বায়তুল মোকাররমের জুমার নামাজের সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুকরা নাহিদকে চিনবেন কি না? আবদুর রাজ্জাক ভারতে এর আগে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনসহ দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে তার পরিবার এবার লন্ডনে শেষ চেষ্টা করছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো আবদুর রাজ্জাককে দলের সহকর্মী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর আগে কখনো দেশে দেখতে গিয়েছিলেন কি? রাজ্জাক ভালো নন, রাজ্জাক আওয়ামী লীগার। নাহিদ তো কমিউনিস্ট। কমিউনিস্টরা কতই না ভালো! কমিউনিস্টদের ভারে মুজিবকন্যার নৌকা ডুবতে বসেছে। তবুও রাজ্জাক ভারত থেকে জাতীয় শোক দিবসের আগের দিন চলে এসেছিলেন তার নেতার প্রতিকৃতিতে মালা দেবেন বলে। পিতার ছবিতে ফুল দিয়ে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনেই পড়ে গিয়েছিলেন। সেই রাজ্জাককে নাহিদ দেখতে যান আর না যান রাজ্জাক তবুও বলবেন না আওয়ামী লীগে না এলে, সভানেত্রীর অনুকম্পা না পেলে তুমি এমপি-মন্ত্রী হতে? তবুও বলবেন না আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে করুণা ভিক্ষা চেয়ে নেতা-নেত্রীর বাড়ি তোমরা কতটাই না হেঁটেছ! তবু রাজ্জাক সুস্থ হয়ে ফিরে এলে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের মাজারে কাঁদতে কাঁদতে বলবেন না, পিতা, ওরা আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট, ওরা আওয়ামী লীগার হতে পারে না। তবুও আজ দিকে দিকে ওরা তোমার রক্তে, শ্রমে, সংগ্রামে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে কী চতুরতার সঙ্গেই না গ্রাস করে ফেলছে! তবু রাজ্জাক বলবেন না প্রিয় সভানেত্রীকে বলুন এখন এই মুহূর্তে বিনা নোটিসে ওদের নৌকা থেকে নামিয়ে না দিলে সামনে নুহের প্লাবন। রাজ্জাক অনেক খারাপ, তবুও যদি আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসায় সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন নাহিদের এমন অশালীন আঘাতের জবাবে দেখা হলে শুধুই বলবেন, তোরা ভালো আছিস? তবু দেখতে দেবেন না নাহিদের আঘাতে তার বুকজুড়ে কতটা রক্তক্ষরণ। কমিউনিস্ট এক মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টা বঙ্গবন্ধুর মাজারেও যাননি, বক্তৃতা শেষে জয়বাংলা ধ্বনিও তোলেননি। এসবে আজকাল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কিছুই আসে যায় না। নাহিদরা অনেক ভালো। চরিত্র খুইয়ে, চেতনা হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এদের মাথায় তুলে নাচুক। এদের সহকর্মীরা এখনো দিনদুপুরে বলে 'নৌকা-পাল্লা-ধানের শীষ সবার মাথায় সাপের বিষ'। মানুষ মরণশীল। সবাইকে একদিন চলে যেতে হয়। আমাদেরও একে একে চলে যেতে হবে। তবু বাঁচার জন্য শেষ লড়াই করে। চিকিৎসা দোয়া-দরুদ পাল্লা দিয়ে চলে। বাঁচার আকুতি সবার আছে বলেই শুধু সব দলের নেতা-নেত্রীই নয়, সাধারণ মানুষও ভিটেমাটি বিক্রি করে চলে যায়। তবুও কারও বিদেশ চিকিৎসা নিয়ে এমন কটাক্ষ আগে কখনো হয়নি। নাহিদ খুউব ভালো। তাই করেছেন। রাজ্জাক খুউব খারাপ তাই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে তার জীবন। মরণেও পাবেন লাখো মানুষের ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু, থোকা থোকা ফুল আর ফুল। নাহিদের সঙ্গে সিপিবির সভাপতি সাইফুদ্দিন মানিক দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলেন মৃত্যুর আগে, আমরা কি তার জন্য দোয়া করিনি? কেউ কি অমানবিক প্রশ্ন তুলেছেন? মান্নান ভূঁইয়া? বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, মন্ত্রীরা যান না, আসলে মানুষই বাঁচার জন্য উন্নত চিকিৎসার সন্ধানে শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু বিদেশে ভিক্ষা করে ভোট করার, রাজনীতি করার সামর্থ্য কয়জনের? তাই বলে দুধ খেয়ে মুখ মুছে বিড়ালের মতো নিষ্পাপ ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট যখন রোগশয্যায় শায়িত হবেন তখন কোনো মানবিক হৃদয়ের মানুষ কি এভাবে আঘাত করে বলবেন?
মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান, স্বাধীনতাসংগ্রামী জাতীয় বীর ও আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতা অসুস্থ আবদুর রাজ্জাকের লন্ডনের ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ যে অশোভন, শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করেছেন সুদূর প্যারিসে বসে তার অমানবিক হৃদয়কেই উন্মুক্ত করেনি আওয়ামী লীগবিদ্বেষী চরিত্রকেও জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। মুখে মধু অন্তরে বিষ নুরুল ইসলাম নাহিদরা যখন বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে সিআইএ'র এজেন্ট ও তার ঘোষিত বাঙালির মুক্তিসনদ ছয় দফাকে আমেরিকার দলিল বলে কটাক্ষ করছিলেন তখন বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবের আদর্শবান কর্মী আবদুর রাজ্জাক দলের চরম দুঃসময়ে জেলই খাটেননি, আইয়ুবের দমননীতি উপেক্ষা করে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খান ও কাজী আরিফকে নিয়ে নিউক্লিয়াস গঠন করে স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এই নুরুল ইসলাম নাহিদরা যখন কেজিবির টাকায় মস্কোর সমাজতন্ত্রের বিদেশি রাজনীতি করছিলেন তখন আবদুর রাজ্জাক মহান মুজিবের স্নেহছায়ায় অন্ধকার ভেদ করে জাতিকে আলোর পথ দেখাতে ছয় দফাকে নিয়ে বীরের মতো মাঠে নেমেছিলেন। বিষয় যদি হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ তাহলে আবদুর রাজ্জাকসহ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকার কাছে নুরুল ইসলাম নাহিদ দূরে থাক তার প্রয়াত নেতা মণি সিংহও তুলনায় আসেন না। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতীয়তাবাদী নেতারাই অমরত্ব পেয়েছেন। আর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের লেনিন, মাও সেতুং বা ফিদেল কাস্ত্রোদের নাম সোনার হরফে লেখা থাকলেও এ দেশের আদর্শচ্যুত বাম বা কমিউনিস্টদের নাম কোনোটাতেই নেই। হয় সামরিক শাসকদের সঙ্গে পরকীয়া প্রণয়ে লিপ্ত না হয় জাতীয়তাবাদী শক্তির হেরেমে আশ্রিত রক্ষিতার তালিকায় তাদের নাম শোভা পাবে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধে আবদুর রাজ্জাক মুজিববাহিনীর অন্যতম প্রধান হিসেবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে নিরলস পরিশ্রম করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। কালের অন্ধকার সময়টিতে একদিকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা ও রেহানার অলৌকিক জীবন লাভ, অন্যদিকে বেদনাবিধূর হৃদয়ে নির্বাসিত জীবন আর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে আসে খুনি চক্রের হত্যা, জেল-জুলুম এবং নির্যাতনের ভয়াবহ আগ্রাসন। সে সময়ে এই আবদুর রাজ্জাক মুজিবহীন বাংলায় নৌকার মাঝিই নন, হয়ে ওঠেন মুজিব-অন্তপ্রাণ মানুষের আশ্রয়ের ঠিকানা। এই আবদুর রাজ্জাক হয়ে ওঠেন অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতায় দলের মধ্যমণি। সেদিন যখন জাতির ঐক্যের ঠিকানা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে তখন তার আদর্শের সহচর জাতীয় চার নেতার রক্তাক্ত নিথর দেহ অনাদর-অবহেলায় পড়েছে কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেই রাতে রাজ্জাক-তোফায়েলকে খুনিরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল। যদি পেয়ে যেত হয়তো আজ এভাবে আবদুর রাজ্জাককে এমন নির্দয় আক্রোশ সইতে হতো না। তোফায়েলকে চোখের জলে দহনে দহনে ক্ষয়ে যেতে হতো না। সে সময় হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী যখন জেল খাটছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন তখন সেদিনের কমিউনিস্ট নুরুল ইসলাম নাহিদরা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের খাল কাটা বিপ্লবে যোগ দিয়েছেন কোদাল হাতে। আওয়ামী লীগের জেলে যাওয়া নেতাদের পুত্র-কন্যাদের পড়ালেখা, খাওয়া-পরা তখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। স্ত্রী-সন্তানদের চিকিৎসা সংকটে পড়তে হয়েছে। অথচ সেদিনও কমিউনিস্টরা সন্তানদের, কর্মীদের মস্কো পাঠিয়েছেন লেখাপড়ার জন্য। চিকিৎসায় গেছেন নেতারা। এমন ভাগ্য কার জোটে? এই রাজনৈতিক চরিত্রহীনরা তারও আগে দুনিয়া কাঁপানো জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা, আজীবন গণতন্ত্রের জন্য জেল-জুলুম, নির্যাতন ও ফাঁসির মঞ্চে হাসতে হাসতে উঠে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকে দিয়ে একদলীয় বাকশাল করে কমিউনিস্ট পার্টি বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন। ওরা আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট, ওরা পারে! সুন্দর চেহারা, মিষ্টি মিষ্টি কথা, বেশরম বেহায়ার মতো দল বদলায়। ক্ষমতায় যায়। মনের কুৎসিত চেহারা বদলায় না। আবদুর রাজ্জাকের মতো জাতীয় বীর জীবনসায়াহ্নে যখন হাসপাতালের শয্যায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দুটি বড় অপারেশন লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য অপেক্ষায়। সংসদে যখন লন্ডনে গিয়েও তাকে দেখতে না যাওয়া মন্ত্রী ও হাইকমিশনার সমালোচিত, নিন্দিত তখন প্যারিসের নেতা-কর্মীদের বুকভরা বেদনা ও ভালোবাসাকে তোয়াক্কা না করে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলে বসলেন, 'বাংলাদেশের কয়জন লোকের সামর্থ্য আছে লন্ডন গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার? রাজ্জাক সাহেবের সে রকম সঙ্গতি রয়েছে বলেই তিনি লন্ডনে চিকিৎসা করাচ্ছেন। আমি দেশে গিয়ে তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেব।' প্যারিস থেকে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমের প্রতিনিধি ফারুক নওয়াজ খানের পাঠানো রিপোর্ট পড়ে আমার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছে। যে নুরুল ইসলাম নাহিদকে একজন মিষ্টভাষী, অমায়িক ব্যবহারের সৎ, ভালোমানুষ বলে জেনে আসছি তার দুই দফা দল বদল নিয়ে কথা না থাকলেও অসুস্থ রাজ্জাককে নিয়ে এমন কুৎসিত, অশালীন মন্তব্য নিয়ে হতাশ। শেখ ফজলুল হক মণির সঙ্গে যদি আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিলরা চলে যেতেন আর যাই হোক জীবনসায়াহ্নে দলে ঠাঁই নেওয়া বহিরাগত কমিউনিস্টদের ঔদ্ধত্য দেখে যেতে হতো না। বিএনপি জামানায় ভৈরব সেতু থেকে স্বাধীন বাংলার প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নাম সরিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান যখন বললেন 'কোথাকার কোন নজরুল' গোটা বাংলাদেশ ব্যথিত হয়েছে। সাইফুর রহমানের রুচি ও উচ্চতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সংসদে মরহুম সামাদ আজাদ সংসদীয় ধাঁচে বলেছিলেন, আমি আরও ভাবলাম 'কোন ছয়ফুর!' সাইফুর রহমান পরে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। প্যারিসের প্রবাসীরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে বলার জন্য। তিনি যেন বলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা রাজ্জাকের চিকিৎসার ভার সরকার নেয়। মুজিবকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজ্জাকের চিকিৎসার খোঁজখবর নিলেও তার মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু লন্ডন গেলেও রোগশয্যায় শায়িত রাজ্জাককে দেখতে যাননি! যে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা খাবার ভাগাভাগি করে সংগ্রামের পথ হেঁটে সুখে-দুঃখে পাশে থেকে দলকে বটবৃক্ষে পরিণত করেছিলেন মুজিবের নেতৃত্বে সেই আওয়ামী লীগে মায়া-দয়া নির্বাসনে পাঠাচ্ছেন_ এরা কারা? আওয়ামী লীগবিদ্বেষী আদর্শহীন বাম? দলের অভ্যন্তরে মতপার্থক্য থাকলে আবদুর রাজ্জাক যদি খারাপ হয়ে যান তাহলে কতটা খারাপ? সেনাশাসক এরশাদের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করা, গণফোরামে হিজরত করা আবুল মাল আবদুল মুহিত রাজ্জাকের চেয়েও ভালো আওয়ামী লীগার? প্যারিসের প্রবাসীদের বক্তব্য ও দাবি দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করার যোগ্যতা না রাখলেও নুরুল ইসলাম নাহিদ যে মন্তব্য করেছেন তা অমার্জনীয় অপরাধ কি না, বাংলাদেশের লাখো লাখো আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের বেঁচে থাকা বীররা সিদ্ধান্ত নেবেন। আজকের আওয়ামী লীগ বোধহীন, হৃদয়হীন দলে পরিণত হয়েছে কি না জানি না তবে বিএলএফের আহ্বায়ক মুজিবসন্তান মোস্তফা মহসীন মন্টু টেলিফোনে বলেছেন, 'নুরুল ইসলাম নাহিদকে এই কটূক্তি করার জন্য টুঙ্গিপাড়ায় শায়িত জাতির জনকের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আবদুর রাজ্জাকরা আওয়ামী লীগ রক্ষা করেছিলেন বলেই নাহিদরা আজ নৌকায় চড়ে মন্ত্রী হয়েছেন।' ছাত্র ইউনিয়ন করা লোকজন তাদের ঘরে জন্ম নেওয়া পাপির পক্ষেও সিন্ডিকেট বলয় গড়ে তুলতে ভুল করেন না। ছাত্রলীগ হিসাবের খাতায় ভাই হয়ে ভাইকে রক্তাক্ত করে শেষ করার পাঠ নিচ্ছে। আর এই সুযোগে আদর্শহীন বামরা সাফসুতরো সততার জিকির তুলে তুলে, তোষামোদ ও চাটুকারিতার গান করে আওয়ামী লীগের বুকে দাঁড়িয়ে উল্লাস করে যাচ্ছেন। মোস্তফা মহসনি মন্টুর যে ভূমিকা এই দল, দলের মহান দার্শনিক শেখ মুজিব ও নৌকার কাণ্ডারি শেখ হাসিনার জন্য নাহিদ তার কতটা করেছেন? পঁচাত্তর-উত্তর দুঃসময়ে সশস্ত্র প্রতিরোধে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে হাজার হাজার মুজিবসন্তান দিনের পর দিন ঘাস খেয়ে জীবন-যাপন করেছেন। আর নাহিদরা জিয়ার হেরেমে খাল কাটা বিপ্লবের কোরাস গেয়েছেন। ছাত্র ইউনিয়ন কৌশলের তালিম দেয়। কৌশলের দোহাই দিয়ে কখনো বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভাসিত আওয়ামী লীগের হেরেমে কখনোবা অসাংবিধানিক সেনাশাসনের আস্তানায় রাতযাপন করে, কখনো সংস্কারের কথা বলে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে গণফোরামে হিজরত করে এলেও দল বদল হয় না! অদ্ভুত জগৎ-সংসারের চলমান রাজনীতিতে নাহিদরা রাতারাতি ভালো হয়ে গেলেন! '৯১ সালের জোটের কারণে নৌকায় চড়ে নির্বাচন করতে গেলে সিলেটের বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জের মানুষ জানতে পারল নুরুল ইসলাম নাহিদ নামের একজন কমিউনিস্ট নেতা ঢাকায় থাকেন। পরাজয়ের পর গণফোরামে গেলেও এলাকায় জামিন মিলবে না চিন্তা করে '৯৪ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন মিন্টো রোডে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দলের দুঃসময়ের সঙ্গী শিল্পপতি ও বাউল শেখ ওয়াহিদুর রহমান '৯১ সালে নৌকা পেলেও পরে নাহিদের ভাগ্যে তা স্থায়ী হয়ে যায়। দুঃখ ও বেদনা নিয়ে ওয়াহিদ বলেছিলেন, 'জাল টানে ওয়াহিদে, মাছ খায় নাহিদে!' বঙ্গবন্ধুর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছিলেন আবদুল আজিজ। বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সিলেট বিভাগের জীবিত আওয়ামী লীগারদের মধ্যে ইনি সবচেয়ে প্রবীণ মুজিবকর্মী। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা জানেন না তার নৌকায় চড়ে আজকের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আবদুল আজিজকে দল থেকে বের করে দিয়েছেন। সুশীলরা বলবেন, নাহিদ অনেক ভালো। কতটা ভালো তা জানতে চাইব না। তবে আজীবন সংগ্রামী গণমানুষের নেতা আবদুর রাজ্জাক খারাপ হলেও ততটা খারাপ নন যে, জিজ্ঞাসা করবেন নুরুল ইসলাম নাহিদ এক সরকারের আমলে পাওয়া এক এলাকার ছোট প্লট মন্ত্রী হয়ে অভিজাত এলাকার বড় প্লট কীভাবে করেন? জাতীয় নেতা রাজ্জাক তো সরকারি কোনো প্লট নেননি! রাজ্জাক অনেক খারাপ কিন্তু নাহিদের আঘাত রোগশয্যায়ও নীরবে সয়ে যাবেন। রাজ্জাক খারাপ তবুও নাহিদের আঘাত মুখ বুজে সয়ে একদিন চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন। ভুলেও প্রশ্ন করবেন না ভোটের আগে নাহিদ কেন যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে সিলেটী প্রবাসীদের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরেন। রাজ্জাকের রুচিতে কখনোই আসবে না নাহিদের ভোটের অর্থের উৎস কোথায়? ধুমধামে সন্তানের বিয়ের উৎসব কেন হয়? কমিউনিস্ট দীক্ষায় দীক্ষিত নাহিদের বিয়ানীবাজার থানার প্রশাসন থেকে সব কিছু কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, আবদুস শুকুর ও এবাদ আহমেদ, গোলাপগঞ্জের বদরুল ইসলাম শোয়েব। নাহিদ যতটা ভালো রাজ্জাক ততটাই খারাপ। তবুও রাজ্জাকের প্রশ্ন করতে রুচিতে বাধবে, নাহিদের শিক্ষাভবন নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের শক্তির উৎস কী? কোন দুঃসাহসে জিয়াউর রহমানকে দিশাহারা জাতির স্বাধীনতার ঘোষক বলে স্কুল পাঠ্যবইয়ের লেখক রতন সিদ্দিকীকে ইতিহাস বিকৃতি রোধের জন্য গঠিত কমিটিতে নাহিদ ঠাঁই দেন? '৭০ সাল থেকে কখনোই চরম বিপর্যয়েও পরাজয়ের গ্লানি আবদুর রাজ্জাককে স্পর্শ করেনি। একাধিক আসনেও বারবার জিতেছেন। তবুও রাজ্জাক প্রশ্ন তুলবেন না শেখ হাসিনার করুণায় খাল কাটা বিপ্লবের কোদাল কমরেড নাহিদ আওয়ামী লীগে আসার আগে জাতীয় নির্বাচন দূরে থাক কোনো স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভের যোগ্যতা অর্জন করেছেন কি না। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে জেল-জুলুম-সংগ্রামের পথে রাজ্জাক বঙ্গবন্ধুর স্নেহছায়া ও জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা নিয়ে জাতীয় নেতার বরমাল্য পরে আজকের জায়গায় আছেন। রাজ্জাক যত খারাপ হোন ভুলেও প্রশ্ন করবেন না কালকে মন্ত্রিত্ব চলে গেলে, এমপি না থাকলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর করুণা হারালে বায়তুল মোকাররমের জুমার নামাজের সময় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আগন্তুকরা নাহিদকে চিনবেন কি না? আবদুর রাজ্জাক ভারতে এর আগে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনসহ দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়েছেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে তার পরিবার এবার লন্ডনে শেষ চেষ্টা করছে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়ানো আবদুর রাজ্জাককে দলের সহকর্মী নুরুল ইসলাম নাহিদ এর আগে কখনো দেশে দেখতে গিয়েছিলেন কি? রাজ্জাক ভালো নন, রাজ্জাক আওয়ামী লীগার। নাহিদ তো কমিউনিস্ট। কমিউনিস্টরা কতই না ভালো! কমিউনিস্টদের ভারে মুজিবকন্যার নৌকা ডুবতে বসেছে। তবুও রাজ্জাক ভারত থেকে জাতীয় শোক দিবসের আগের দিন চলে এসেছিলেন তার নেতার প্রতিকৃতিতে মালা দেবেন বলে। পিতার ছবিতে ফুল দিয়ে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনেই পড়ে গিয়েছিলেন। সেই রাজ্জাককে নাহিদ দেখতে যান আর না যান রাজ্জাক তবুও বলবেন না আওয়ামী লীগে না এলে, সভানেত্রীর অনুকম্পা না পেলে তুমি এমপি-মন্ত্রী হতে? তবুও বলবেন না আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে করুণা ভিক্ষা চেয়ে নেতা-নেত্রীর বাড়ি তোমরা কতটাই না হেঁটেছ! তবু রাজ্জাক সুস্থ হয়ে ফিরে এলে সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের মাজারে কাঁদতে কাঁদতে বলবেন না, পিতা, ওরা আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট, ওরা আওয়ামী লীগার হতে পারে না। তবুও আজ দিকে দিকে ওরা তোমার রক্তে, শ্রমে, সংগ্রামে গড়ে ওঠা ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী লীগকে কী চতুরতার সঙ্গেই না গ্রাস করে ফেলছে! তবু রাজ্জাক বলবেন না প্রিয় সভানেত্রীকে বলুন এখন এই মুহূর্তে বিনা নোটিসে ওদের নৌকা থেকে নামিয়ে না দিলে সামনে নুহের প্লাবন। রাজ্জাক অনেক খারাপ, তবুও যদি আল্লাহর রহমতে মানুষের ভালোবাসায় সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন নাহিদের এমন অশালীন আঘাতের জবাবে দেখা হলে শুধুই বলবেন, তোরা ভালো আছিস? তবু দেখতে দেবেন না নাহিদের আঘাতে তার বুকজুড়ে কতটা রক্তক্ষরণ। কমিউনিস্ট এক মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টা বঙ্গবন্ধুর মাজারেও যাননি, বক্তৃতা শেষে জয়বাংলা ধ্বনিও তোলেননি। এসবে আজকাল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কিছুই আসে যায় না। নাহিদরা অনেক ভালো। চরিত্র খুইয়ে, চেতনা হারিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এদের মাথায় তুলে নাচুক। এদের সহকর্মীরা এখনো দিনদুপুরে বলে 'নৌকা-পাল্লা-ধানের শীষ সবার মাথায় সাপের বিষ'। মানুষ মরণশীল। সবাইকে একদিন চলে যেতে হয়। আমাদেরও একে একে চলে যেতে হবে। তবু বাঁচার জন্য শেষ লড়াই করে। চিকিৎসা দোয়া-দরুদ পাল্লা দিয়ে চলে। বাঁচার আকুতি সবার আছে বলেই শুধু সব দলের নেতা-নেত্রীই নয়, সাধারণ মানুষও ভিটেমাটি বিক্রি করে চলে যায়। তবুও কারও বিদেশ চিকিৎসা নিয়ে এমন কটাক্ষ আগে কখনো হয়নি। নাহিদ খুউব ভালো। তাই করেছেন। রাজ্জাক খুউব খারাপ তাই মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে তার জীবন। মরণেও পাবেন লাখো মানুষের ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু, থোকা থোকা ফুল আর ফুল। নাহিদের সঙ্গে সিপিবির সভাপতি সাইফুদ্দিন মানিক দীর্ঘদিন বিদেশে চিকিৎসাধীন ছিলেন মৃত্যুর আগে, আমরা কি তার জন্য দোয়া করিনি? কেউ কি অমানবিক প্রশ্ন তুলেছেন? মান্নান ভূঁইয়া? বর্তমান ও সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, মন্ত্রীরা যান না, আসলে মানুষই বাঁচার জন্য উন্নত চিকিৎসার সন্ধানে শেষ চেষ্টা করেন। কিন্তু বিদেশে ভিক্ষা করে ভোট করার, রাজনীতি করার সামর্থ্য কয়জনের? তাই বলে দুধ খেয়ে মুখ মুছে বিড়ালের মতো নিষ্পাপ ভঙ্গিমায় দাঁড়ানো আদর্শচ্যুত কমিউনিস্ট যখন রোগশয্যায় শায়িত হবেন তখন কোনো মানবিক হৃদয়ের মানুষ কি এভাবে আঘাত করে বলবেন?
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।