somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ঘৃণা' গুলো একদিন ঠিকই অভিশাপ হয়ে আসবে.....

০৯ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝরাত। কারাগারের বিশেষ সেলের মেঝেতে কুন্ডলি পাকিয়ে শুয়ে আছেন জামান সাহেব। যদিও তার সেলে ব্যবস্থা আছে চৌকির কিন্তু শক্ত চৌকিতে কোনভাবেই এখন আর তিনি পিঠ লাগাতে পারেননা, তার পিঠের প্রতিটা জয়েন্টে জয়েন্টে ভয়াবহ রকমের ব্যাথা, সাথে আছে ফুলেফেপে লালচে হয়ে যাওয়া নিতম্বের ব্যাথা। ঘুমের ঘোরে খুক খুক করে একবার কাশি দিতেই গতদুরাতের অত্যাচরের পর ক্লান্তিতে আসা ঘুমটা ভেঙে গেল, আবার বুকের খাচাকাপিয়ে আসছে কাশি, 'ওহ্ খোদা বলে'..কাশতে কাশতে....চোখ তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে......
'ওয়াক থু....' করে থুথুটাও ফেলতে পারলেন না........জোর না থাকায় থুথুটা গালে গড়িয়ে পড়ল....কোনমতে হাত দিয়ে গাল মুছতে মুছতে উঠে বসল জামান সাহেব......সেলের বাইরে করিডোরে জ্বলা বিদু্তের আলোয় হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলেন অনেক্ষণ.........কাশির বদলে বুক থেকে উঠে এসেছে দলা দলা রক্ত......তার নিজের বুকের ভিতর থেকে আসা রক্ত.........বুকটা কেপে উঠল অজানা ভয়ে, পরক্ষনেই আবার হাতটা ফ্লোরে মুছে.....গুটি মেরে শুয়ে পড়লেন..........চোখ লেগে আসতেই আবার ঘুম ভেংগে গেল এবার দড়মড় করে উঠে পড়লেন জামান সাহেব কারন প্রায় অন্ধকার সেলের তালা খুলে কালো পোশাকের কয়েকজন আর্মড লোক প্রবেশ করলো। এধরণের ঘটনা তার গ্রেপ্তারের পর থেকে প্রায় রাতেই এমন হচ্ছে। রাত ২টা/৩টার দিকে চোখ বাধা অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ইন্টারোগেশন সেলে। একমনে জামান সাহবে অপেক্ষা করেন হঠাৎ করে শুরু হতে পারা নিমর্ম অত্যাচারের। জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যযুগীয় অত্যাচার.......'এরা কি মানুষ!! '(কথাটা মনে হতেই ঢোক গিলে ফেলেন.....)। ইন্টারোগেশন সেলে প্রায় অনেক্ষন হয়ে যাওয়ার পরও কোনকিছু না হওয়ায় উনি....কিছু বলতে চাইলেন....কিন্তু গলাদিয়ে স্বর বের হলোনা।.......
এসময় কেউ একজন তাকে জিজ্ঞেস করল....
'কিছু খাবেন স্যার'
চমকে উঠলেন জামান সাহেব 'স্যার' !! স্যার কেন!! তবে কি তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে!! তার দল কি তারজন্য কঠোর আন্দোলনে নেমেছে.......মুখে হাসি ফুটে উঠল....তবে কি আগামীকাল আবার বিজয়ীর বেশে জেল থেকে বের হবেন.....!!!
চিন্তায় ব্যাগাত ঘটল আবার
'স্যার কিছু খেতে চাইলে বলতে পারেন...'
কিছুটা ঝাঝ নিয়ে তিনি বলতে চাইলেন ....
কিন্তু তার আগেই অন্য আরেকজন এসে তার চোখের বাধন খুলে দিলেন.......চোখ খুলেই জামান সাহেব দেখলেন তার সামনে দাড়িয়ে আছে র‌্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক সহ কয়েকজন....যারা একসময় তার সামনে দাড়িয়ে কথা বলতোনা আজ তারা.....
তাদের মধ্য থেকে একজন বলল 'স্যার আপনার ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে গেছে'
'মানে কি?'--
কেউ একজন বক্র হাসি দিয়ে বলল,'আজরাতে হাইকমান্ড থেকে আপনার ব্যাপারের গ্রীন সিগনাল এসেছে এবং কনফার্মড করা হয়েছে এইব্যাপারে আপনার নিজের দল থেকে কোন উচ্চবাচ্য হবেনা....ইনফ্যাক্ট তারা অলরেডি আপনাকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছে....."
জামান সাহেবের কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে...দূর্বল কন্ঠে জানতে চাইলেন....'আমাকে বাতিলের তালিকায় মানে....'
এর উত্তরে কেউ কিছু বলল না...তারা জানে এককালের ঝানু রাজনীতিবিদ জামান সাহেবের এই অর্থ বুঝতে দেরি হবেনা।....
তারা অপেক্ষায় থাকল.....বিস্ফোরিত নেত্রে তাকিয়ে থাকা সাবেক রাজনীতিবিদের দিকে।
এইসময় কালো পোশাকের এক সার্জেন্ট এসে মহাপরিচালককে উদ্দেশ্য করে বলল 'স্যার ফোর্সড রেডি'।
ধ্ক করে উঠলো জামান সাহেবের বুকটা...'তোমরা আমাকে কোথায় নিতে চাও???'
উনার প্রশ্নের উত্তরের দিকে কারো খেয়াল নেই, মহাপরিচালক তখন তার প্রেসসচিব কে নির্দেশ দিচ্ছেন যেন এখনই পত্রিকা অফিসগুলোতে প্রেসনোট ফ্যাক্স করা হয়। প্রেসচিব পড়ে শোনাতে লাগলেন ইতোমধ্যে তৈরি প্রেসনোট........"গতকাল মধ্যরাত আনুমানিক ২টায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ঘুষগ্রহন, দশট্রাক অস্ত্রমামলার অন্যতম আসামী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে জঘণ্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের আমদানীকারক সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফজ্জামান বাবরকে নিয়ে রেপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের একটি টিম সাভারের জঙ্গলবাড়িয়ায় অস্ত্রউদ্ধারে যাওয়ার সময় একদল সন্ত্রাসী অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আসামী বাবরকে ছিনিয়ে নিতে গেলে তাদের সাথে র‌্যাবে'র তুমুল বন্দুকযুদ্ধ হয়। প্রায় ১ঘন্টা ব্যাপী এই বন্দুক যুদ্ধে পালিয়ে যাওয়ার সময় 'ক্রসফায়ারে' পড়ে বাবর নিহত হন। এইঘটনায় র‌্যাবের দুজন সদস্য মারাত্মক আহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে পরবর্তীতে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমান অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র"... এই পর্যন্ত পড়ে প্রেসসচিব তাকালেন মহাপরিচালকের দিকে....উনি সম্মতি সূচক মাথা নাড়লেন।
তারপরই আসন্ন মৃত্যু ভয়ে হিস্টিয়াগ্রস্তের ন্যায় কাঁপতে থাকা জামান সাহেবকে টেনে হিচড়ে র‌্যাব-১০ স্টিকার লাগানো মাইক্রোবাসে তুলে রওনা হয়ে গেল রেপিড একশান ব্যাটালিয়নের টীম। রাতের অন্ধাকারের হিস্ হিস্ শব্দ তুলে ছুটে চলেছে মাইক্রোবাস...লক্ষ্য সাভার......
....................................................................................................

আমি ও আমার মত অক্ষমেরা প্রায়ই এমন প্রার্থণা করি,
যখণ দেখি....'লিমন' নামের সদ্যকিশোরকে একনিমিষেই পঙ্গু করে দেয়...একটা বুলেট। ধংস করে ফেলা হয় একটি পরিবার।
যখণ পত্রিকায় পড়ি......'পিতা আর চাচাকে ধরে নেয়ার পর আকুল হয়ে সাংবাদিকের কাছে কোন কিশোর আকুতি জানায় 'আমার বাবারে বাঁচান র‌্যাবের হাত থেইকা....ওরা ক্রসফায়ারে বাবাকে মেরে ফেলবে....' অথচ কেউ বাঁচাতে পারেনা তার বাবা-চাচাকে......চরমপন্থী সিলদিয়ে যাদের ক্রসফায়ারে মারা হয় তার দুইদিন পর......
যখণ দেখি কোন কলেজছাত্র রুবেল'কে বাসায় মায়ের সামনে থেকে তুলে নেয় বর্বর র‌্যাব এবং অসহায় মা ফিরে পায় 'দুধূর্ষ সন্ত্রাসী' ছেলের লাশ....



আল্লাহর অসীম দয়ায় যদি আমার/আমাদের এই প্রার্থণা্ সত্যি হয় তাহলে আমি/আমরা একইভাবে প্রার্থণায় বসব.....এবং একইভাবে উপেরর ঘটনা আবার ঘটার প্রার্থনা করব শুধু....'জামান' সাহেবের জায়গায় 'সাহারা ম্যাডামের' নাম নিব।






৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×