somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জিতেছে ভারত, হেরেছে ক্রিকেট

২০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এর আগে বাংলাদেশের বাঙালিরা এতোটা উত্তেজিত খুব কম সময়ই ছিল। গত রাতে কি ফেসবুকে, কি রাস্তায়--- উত্তেজনায় পুরো টগবগ করছিল। পারলে রাতেই ধরে সাকিব-মাশরাফিদের মাঠে নামিয়ে দেয়। রাতে যারা অনলাইনে ছিলেন, ঘুম হচ্ছে না, অপেক্ষা সইছে না, কবে সকাল হবে টাইপ পোস্ট করেছেন সারারাত। ষোল কোটি বাঙালির এমন ঐকতান উচ্ছ্বাস বিরল ঘটনা।

বাংলাদেশে শিশু-বুড়ো প্রায় সবাই সকালে বিছানা ছেড়ে গোসল করে টিভির সামনে বসেছে। রাস্তাঘাট অফিস আদালত ব্যাংক কার্যত ফাঁকঁই ছিল। সকালে টিএসসিতে বড় পর্দা নাই কেন এ নিয়ে বিক্ষোভও হয়েছে। বড় অফিসে কর্তারা পর্দা লাগিয়ে দিয়েছিলেন তাদের অফিসে। শুধু বাংলাদেশ নয়, ওপার বাংলায়্ও এ বাংলার আবেগ ছুঁয়ে গেছে। প্রখ্যাত লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায ১১ বাঙালির গুণকীর্তন গেয়ে কলাম লিখেছেন আনন্দবাজার পত্রিকায। এগারো বাঙালির টিম তাকে গর্বিত করেছে শিরোনামে কলাম লিখেছেন। কলকাতার অন্য পত্রিকাগুলো পড়লে মনে হবে কলকাতা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো রাজ্য, তারা ভারতের সাথে আছে, আবার বাংলাদেশের সাথেও আছে। ১৯৪৭-এর দেশভাগের সীমানা-পিলার বাঙালিদের আলাদা করেছে ঠিকই কিন্তু আবেগ আর উচ্ছ্বাসে দু’পারের বাঙালি আলাদা নয়, বরং এক।


পশ্চিমবঙ্গের নামকরা কবি, শিল্পী, গুণীজনদের অনেকেই উচ্ছ্বসিত। ভারতের জাতীয় দলে উপেক্ষিত বাঙালিরা, অন্য পারের বাঙালিদের সাফল্যে নিজেদের ভেতো বাঙালির অপবাদ ঘুচে দেবার সুপ্ত ইচ্ছা লালন করছিলেন। অবশ্য পত্রিকার মন্তব্য কলামে সেটা আর সুপ্ত থাকছিল না। এপার-ওপার দু’পারই যেন বাঙালি হয়ে উঠেছিল আজ। সন্দেহ নেই দিনশেষে খেলার ফলাফল যদি এগারো বাঙালির পক্ষে যেত তবে দু’বাংলাই খুশী হতো। যদিও রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের দিক থেকে তারা ভারতীয়; সে-হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের লোকেরা মন
খারাপও করতো। কিন্তু বাঙালির বিজয় তাদের ছুঁয়ে যেত, সন্দেহনেঁই। কিন্তু দুর্ভাগ্য, বাঙালির স্বপ্ন চুরি হয়ে গেছে!

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ যা হলো তা এক কথায় ন্যাক্কারজনক। ৯০ রানের মাথায় রোহিত শর্মার ক্যাচ- আউটটি যেভাবে আম্পায়ার গোউল্ড নো বল হেঁকে দিলেন তা ছিল অবিচার। শেন ওয়ার্ন কয়েকশ গজ দূরে প্রেসবক্সে বসেই বলে দিলেন, এটা হতাশাজনক। ভুল সিদ্ধান্ত। ভিভিএস লক্ষণও সাথে সাথেই টুইটারে টুইট করে লজ্জার কথা জানিয়েছেন। তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে ক্রিকেটবিশ্বে। সৌরভ গাঙ্গুলি, মাইকেল হোল্ডিং, মার্টিন ক্রো, অজিত আগারকার---কে সমালোচনা করছে না এই নোংরামির।

ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরিয়ান এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম আকর্ষণ মাহমুদউল্লাহর ক্যাচটি নিয়েও আপত্তি উঠেছে। এ সিদ্ধান্তগুলো সঠিক হলে বাংলাদেশ জিতত কিনা জানি না, তবে বাঙালি এতোটা আহতও হতো না। আইসিসির
দুর্বলতার কারণে ভুল সিদ্ধান্তের বলি হলো বাংলাদেশ দল।

ক্রিকেটের কুলীন দল ভারতের একটি জয় দরকার ছিল। শত কোটি টাকার ব্যবসা, আইসিসির অর্থের যোগান, ভারতের ইজ্জত, আরো বহু বিষয় আইসিসিকে দেখতে হয়। ২০০৭ সালের মতো বাংলাদেশের মতো ‘‘আন্ডারডগ” এর বিরুদ্ধে এবারও হেরে শত কোটি টাকার বাণিজ্য নষ্ট করতে চায় নি এবার আইসিসি, এমনটাই অভিযোগ বাঙালি ক্রিকেটবোদ্ধাদের। তবে তারা অস্বীকার করছে না বাংলাদেশের তুলনায় ভারত ঢের শক্তিশালী দল। আবার এটা ভারতের বোদ্ধারাও স্বীকার করে না যে, বাংলাদেশিরা তাদের হারিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু এমন ক্লেদাক্ত বিজয় ভারতের ক্রিকেটাররাও হয়তো চায়নি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতোই গত ক’দিন যে উত্তাপ ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল তাতে জল ঢেলে দিলেন আম্পায়াররা। একই দিনে আম্পায়ারদের এমন কিছু পক্ষপাতদুষ্ট ভুল সিদ্ধান্ত পুরো ব্যাপারটাকে ঘোলাটে করে দিল। খেলাটা যদি শুদ্ধ হতো,
বাংলাদেশে আরো বাজে ভাবে হারলেও উপভোগ্য হতো। ক্রিকেটের জয় হতো। কিন্তু সেটা হয় নি।

দিনশেষে ভারত হয়তো জিতেছে, কিন্তু ক্রিকেট
হেরেছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×