সামহয়্যারইনব্লগ। যেখানে নানা মতের নানা পথের বিভিন্ন ব্লগারের সমাবেশ ঘটেছে। প্রচুর মানুষের সমাগম। স্বভাবতই এখানে যেমন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা আছেন তেমনি আছেন সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী, খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষেরা। সাথে আছেন নাস্তিকেরাও যারা কোনো ধর্মেই বিশ্বাস করেন না। এখন সামু যেহেতু বাংলাদেশের ব্লগ তাই এখানকার বেশিরভাগ সদস্যই বাংলাদেশী। কিছু সদস্য আছেন, যারা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকেও ব্লগিং করেন। আমাদের দেশে যেহেতু মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাই সমানুপাতিক হারে সামুতেও মুসলিমদেরই সংখ্যাধিক্য দেখা যায়।
সামুতে যখন কোনো নাস্তিক লেখা দেন তারা আশা করেন যে, অন্ততঃ যারা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পেয়েছেন তাদের ভিতর কুপমুন্ডুকতার লেভেলও কম হওয়াই স্বাভাবিক। এবং তারা এইসব লেখার ভিতর যেসব ভাবনার খোরাক থাকে বা আছে সেগুলো নিয়ে হয়তো আরো বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা করতে পারবে। হোকনা তারা আস্তিক। কিন্তু যে চিত্র দেখা যায় সেটা নাস্তিকদের দুরবর্তী ভাবনার কাছ দিয়েও যায় না।
যেহেতু ব্লগে মুসলিমরা সংখ্যাগুরু তাই কোনো নাস্তিকের লেখার ডিডাকশন শেষ পর্যন্ত ইসলামে গিয়ে ঠেকে। আর এখানকার বেশীরভাগ নাস্তিকই যেহেতু মুসলিম পরিবার থেকে আগত তাই মুসলিম সমাজের বিভিন্ন অলিগলিতেই তাদের বিচরণটা স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে হয়, এবং লেখার ভিতর বিভিন্ন ভাবে সেগুলোও উঠে আসে। যার জন্য মুসলিমরা ভাবেন তাদের কে হেয় করা হচ্ছে। তার নিজেদের ধর্মকে ডিফেন্ড করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন এবং এভাবে একটা বচসার সুত্রপাত হয়।
অন্য ধর্মের বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি নিয়ে যখন কোনো নাস্তিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা দেন তখন প্রথমতঃ তাকে বাহবা জানান সংখ্যাগুরু মুসলিম ব্লগার। এবং এর ভিতর থেকেও অনেকে ইসলামের মাহাত্ম্য খুঁজে পেতে চান। মনেপ্রানে যিনি নাস্তিক তিনি স্বভাবতঃই চাইবেন যে এই ভুল ধারণা ভেঙে দিতে। ফলাফল নতুন বচসা, মুসলিম বনাম নাস্তিক। সাথে নাস্তিক লেখককেও ট্যাগ করার চেষ্টা করা হয়। বা ঐ লেখক যদি অন্য সময়ে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে, তখন তার পুরোনো লেখাকে টেনে এনেও তাকে ট্যাগ করার চেষ্টা করা হয়।
এবং এসব ক্ষেত্রে আরো যেটা হয়, অন্য ধর্মের কেউ যদি নিজের ধর্মকে ডিফেন্ড করতে আসেন তখন তাকে ট্যাগ করে দেয়া হয়। যেমনঃ- আমি নিজে দেখেছি, সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী হ'লে তাকে বলা হচ্ছে ভারতীয় বা ভারতের দালাল; খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী হ'লে তাকে বলা হচ্ছে এনজিওর দালাল। সবাই এমন করেন সেটা বলছি না, কিন্তু এমনটা করা হয়।
আরেকটা ব্যাপার সারদিনের পোস্টের হিসাব করলে দেখা যায় যে কবিতা গল্পের পাশাপাশি ধর্ম বিষয়ক পোস্টের সংখ্যাধিক্য। সব পোস্টেই যে নাস্তিকরা তাদের যুক্তি নিয়ে এগিয়ে যায় না। তারা এগিয়ে যায় সেসব পোস্টেই যেগুলোতে এ্যরোগেন্সিটা প্রকট। এবং এসব পোস্টে দেখা যায় অনেকেই ধর্মকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে এ্যরোগ্যান্ট আচরণ করে বসেন। এটা যেমন আস্তিকদের জন্য প্রযোজ্য তেমনই প্রযোজ্য নাস্তিকদের জন্যও।
এক হাতে কখনও তালি বাজে না। কিছু নাস্তিক আছেন তাদের প্রকাশভঙ্গীটা আলাদা বা আক্রমণাত্মক। সেই আলাদা প্রকাশভঙ্গী অনেক আস্তিকদের সহ্য না হওয়ায় তারাও আক্রমণাত্মক আচরণ করে বসেন। ফলশ্রুতিতে শুরু হয় বচসা। নাস্তিকদের উপর বিভিন্ন সময় ব্যাক্তিআক্রমণ মূলক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই কিন্তু একজন নাস্তিক আক্রমণাত্মক লিখার প্ররোচনা পান। যদি তাদের সাথে সহনশীল আচরণ করা হ'তো তাহলে হয়তো একজন নাস্তিক এমন আক্রমণাত্মক পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে তার লেখাটা লিখতেন না।
শেষ কথা হিসেবে আমি একেবারে নিজস্বঃ একটা ধারণার কথা বলতে চাই-
আমার ধারণা ব্লগে যত আস্তিক আছেন, তাদের ভিতর একটা বড় অংশই নিজ নিজ ধর্মের অবশ্য পালনীয় আচার-উপাচারগুলো ঠিকমতো পালন করার থেকে ব্লগে নিজ নিজ ধর্মকে ডিফেন্ড করতে বেশি আগ্রহী। সাধারণ ব্লগার, যারা নাস্তিকতা বা আস্তিকতার ধার ধারেন না, তাদের কাছে ধর্মকে হালকা করার জন্য নাস্তিকদের থেকে আমি অতি-আস্তিক মনোভাবাপন্নদেরই বেশি দোষ দিবো। যারা বিশ্বাস কে যুক্তির সাথে মিলিয়ে ফেলে একটা জগাখিচুড়ী তৈরী করার চেষ্টা করে নিজ নিজ ধর্মকে হাস্যাস্পদ করে তোলে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:৫৮