জামায়াত-শিবিরের উপর খরগহস্ত সরকার : ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরীর চেষ্টা?
আল ইসলাহ রিপোর্ট :
কোন ধরনের তদন্ত ছাড়াই রাজশাহীতে ছাত্রলীগের এক কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনার দায় একতরফা ভাবে জামায়াত-শিবিরের উপর চাপিয়ে তাদের উপর খরগহস্ত হয়েছে সরকার। ঐ ঘটনাকে ইস্যু করে সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে চিরুনি অভিযান। ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্তণালয়ের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবির উৎখাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং পুলিশ ও র্যাব এমন ভাব নিয়ে নির্বিচারে সারা দেশে ইসলামপন্থী এই দল দুটির নেতাকর্মীদের উপর ব্যাপক ধরপাকর ও নির্যান করছে, যেন জামায়াত-শিবির কোন নিষিদ্ধ সংগন। জামায়াত-শিবিরকে কোন প্রোগ্রাম করতে দেয়া হচ্ছে না। রাজশাহীর জেলা আমীর প্রবীণ জামায়াত নেতা আতাউর রহমান এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীরকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আরো শতাধিক নেতা-কমীকে, তাদের উপর চালানো হয়েছে পাশবিক নির্যাতন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রকাশ্য উস্কানী ও প্রশ্রয়ে সারাদেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী ক্যাডাররা চালিয়ে যাচ্ছে বল্গাহীন তাণ্ডব। ইতোমধ্যেই শিবিরের ২ ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে, আহত ও পঙ্গু করা হয়েছে শতাধিক নিরীহ কর্মীকে।
অথচ এ ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলে আবুবকর নামে একজন নিরীহ ছাত্র নিহত হলেও তার বিরুদ্ধে সরকারকে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বরং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন এ ঘটনাকে একটি বিচ্ছিন্ন ও তুচ্ছ ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন ‘এটি কোন ব্যাপার না’। এর মাধ্যমে তিনি মূলত ছাত্রলীগকে হত্যার লাইসেন্স দিয়েছিলেন।
শিবির নেতৃবৃন্দের অভিযোগ এবং কয়েকজন সাংবাদিকের সরেজমিন তদন্ত থেকে জানা যায়, রাজশাহীর ঘটনা মূলত ছাত্রলীগের অন্তকোন্দলের ফল। কিছুদিন আগেও নেতৃত্ব নিয়ে রাবিতে ছাত্রলীগের দু গ্র“পের মধ্যে কোন্দল হয়েছে। ফারুক নামে যে ছেলেটি নিহত হয়েছে এবং আরও যারা আহত হয়েছে, তাদের সবাই রাবি ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্র“পের সদস্য। ছাত্রলীগের মধ্যকার এই গ্র“পিং ও কোন্দলের বিষয়টি যে বানোয়াট নয় তার প্রমাণ তো আ.লীগের মহাসচিব সৈয়দ আশরাফই দিয়েছেন। রাজশাহীর ছাত্রহত্যার ঘটনাটি যেদিন সংঘটিত হয়, সেদিনই তিনি অভিযোগ করেছিলেন এই বলে যে, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিবিরের ছেলেরা রয়েছে। অথাঁৎ, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এমন একটি গ্র“প রয়েছে, যারা শিবির পন্থী।
যাইহোক, সারা দেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, দখলদারী, ভর্তিবাণিজ্য নতুন ও বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। টেন্ডারবাজি ও আধিপত্যকে কেন্দ্র করে সারাদেশেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্র“পের মধ্যে সংর্ষের ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। এমনি একটি প্রেক্ষাপটে রাজশাহীতে যখন দুই ছাত্রগ্র“পের সংঘর্ষের ঘটনায় একজন ছাত্র নিহত হল, তখন কোন ধরনের তদন্তের তোয়াক্কা না করে একতরফা ভাবে প্রতিপক্ষের উপর দোষ চাপিয়ে যে নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছে সরকার তা দেশকে আসলে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে? এরফলে দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের পরিণতি কী হবে তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে।
এখন তো এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, সরকার অহেতুক জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে যে খরগহস্ত হয়েছে, তা এক বিরাট নীলনকশারই অংশ! সরকার কি তাহলে জামায়াত-শিবির তথা ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করার জন্যই অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে? এবং যেভাবে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের উপর খরগহস্ত হয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে তাতে কি এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক নয় যে সরকার এই পরিবেশ-পরিস্থিতির মধ্যেই সম্পূর্ণ ফ্যাসিবাদী কায়দায় ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে নামে লুটপাট ও দূর্নীতির প্রবল প্রতিপক্ষ ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ইসলামপন্থী ও দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী দলগুলোকে নির্র্মূল করে আবার একদলীয় শাসন, শোষণের দিকে ফিরে যেতে চায়?
সবচেয়ে অবাক লাগে এক শ্রেণীর পত্র-পত্রিকার নিউজের ভাষা দেখে। তারা কোন ধরনের বাছ-বিচার না করেই সারা দেশে গ্রেফতারকৃত নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের বর্ণনায় অহরহ ক্যাডার শব্দটি ব্যবহার করছেন, যা অত্যন্ত আপত্তিকর। একজন সাংবাদিকের যদি ন্যূনতম পেশাদারিত্ব না থাকে, বস্তুনিষ্ঠতা না থাকে তখন সেই সাংবাদিক কীভাবে জাতির বিবেক বলে অভিহিত হবেন? সাংবাদিকের নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু সংবাদ পরিবেশনের সময় তাকে অবশ্যই দলীয় গন্ডির উর্ধ্বে উঠে পেশাদারিত্ব বজায় রাখা উচিত। শুধু ভিন্নমতের কারণে কোন ধরনের বাছ-বিচার না করে তিনি যখন একজন নিরীহ মজলুম ব্যক্তিকে ক্যাডার বা সন্ত্রাসী হিসেবে চিত্রিত করতে চান তখন তিনি কিন্তু সাংবাদিকের পেশাদারিত্বকে, তার মর্যাদাকে কলংকিত করে নিজেই নিজেই একজন কলমবাজ ক্যাডার বা সন্ত্রাসীতে পরিণত হন। এ অবস্থায় তাকে আমরা আর সাংবাদিক বলতে পারি না, কেননা, সাংবাদিকতার মহান স্তর থেকে নেমে তখন তিনি একজন হাম্বাদিকে পরিণত করেন এবং দলের পক্ষে হাম্বা হাম্বা করতে থাকেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




