আসো তবে উল্লাস করি। শীষ দেই। না, দোয়েলের শীষ নয়, এমন শীষ নয় যেটি ধীর লয়ে হবে দীর্ঘতর। যার রেশ তোমাকে-আমাকে বিষণ্ণতায় ডুবাবে, কিছুটা কাঁদাবেও হয়তো, ভাবাবেও খানিক, এমন শীষ নয়। আমরা ঠোঁট গোল করে মধ্যমা আর বুড়ো আঙুল মুখে পুরে দেব অশ্লীলতম শীষ। আমরা হাসবো। বিষণ্ণ নয়, বীভৎস হাসি। হাসবো কেন? আরে বোকারাম এখন ফেব্রুয়ারি এসে গেছে। ফেব্রুয়ারি আমাদের উৎসবের মাস। আসো আমরা বাণিজ্য মেলায় যাই। ঐ নধর মেয়েটির গা ঘেঁষে দাঁড়াও, যদি সাহস থাকে তবে হাতখানি বাড়াতে পারো, আর যদি না পারো তবে হাত রাখো ঐ বিদেশী বিলাসে। ওসব আমার দেশেও তৈরি হয়। হলে হোক। তবু আমি আর তুমি, বা সমবেত আমরা মিলে ঐ বিদেশী ফেরিওয়ালার কাছ থেকেই কিনবো অক্সিডাইজ গয়না। আলো ঝলমল। আলো লাল নীল। পতাকা-ফেস্টুন-বেলুন। নাহ, ওকে অশ্লীল বলো না, ও হচ্ছে বাণিজ্য মেলা। আমাদের ফেব্রুয়ারির অনির্বায উৎসব...
...থাক না ওসব। আসো এবার ধাঁধাঁ ধাঁধাঁ খেলি। বলোতো ১৪ ফেব্রুয়ারি কি হয়েছিল? আরে সাবাশ, সাবাশ, ঠিক বলেছো। ঐ দিন সাধু ভ্যালেন্টাইন বাবাজি মারা গেছেন। বন্ধু, তোমার তো ভীষণ স্মরণশক্তি। জাতিস্মর নাকি? ১৮০০ বছর আগের ইতিহাস জানো! আর কিছু স্মরণ পড়ে? পড়ে না? দিলীপ সাহার নাম শুনেছো? সেলিম- দেলোয়ার? ওরা মরে গিয়েছিল এই ১৪ কিংবা ১৫ ফেব্রুয়ারিতে। ১৮০০ নয় বড়ো জোর ২৮ বছর হবে। ১৯৮৩ কিংবা '৮৪ সাল। আমিও ঠিক জানি না। জানবো কিভাবে, আমি কি কম বাঙালি নাকি? কোন ছাত্র না শ্রমিক এরশাদ সাহেব মেরে ফেলেছিল, তাতে তোমার আমার কি?
আমরা ঐ ১৪ ফেব্রুয়ারি মনে রাখি না। আমাদের ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে-ভালোবাসা দিবস। স্কুল পড়ুয়া মেয়েটির সঙ্গে আমরা 'কহো না পেয়ার হে' নিয়ে গল্প করবো। ১৪ তারিখ অনির্বায ডেটিং। চাই কি, ঐ সব লোকগুলোর লাশ যেখানে পড়েছিল, সেখানেই ডেটিং হতে পারে। কিছুটা উষ্ণতা, গাঢ় চুম্বন। ভালোবাসা, ভালোবাসা! কবিতা লেখার দরকার কি? আর্চিস গ্যালারিতে রেডিমেড কবিতা কিনতে পাওয়া যায়। কিভাবে প্রেম করবে, শিখে নাও। ভালোবাসা কোচিং। ফেব্রুয়ারিতে কাপড়-চোপড় কেনোনি? আরে গর্দভ, উৎসবে নতুন পোষাক কিনতে হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি সামনে। সাদা পাঞ্জাবি কেনো। ঐ যে গলা ফাটিয়ে যে বিবি সাহেবানরা 'আমার ভাইয়ের' গাচ্ছেন, গানটি মন দিয়ে শোন। উনাদের স্বামীরা বিরাট আমলা-পলিটিশিয়ান-শিক্ষাবিদ-আইনজ্ঞ। সালাম-বরকত-রফিকের জন্য উনাদের কষ্টের শেষ নেই। বাংলা গান শুনলে কষ্টটা বেড়ে যায় বলে, তাদের ঘরে সব ইংরেজি গান। শুধু কি তাই, খালি পায়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদীতে ওঠতেও তাদের ভীষণ কষ্ট হয়। উনারা ওঠেন বিদেশ থেকে আমদানি করা অতি উচ্চ মূল্যের নরম তুলতুলে জুতা নিয়ে। সাবাশ, ব্রেভো!
যাক, অনেক বকবক করেছি। বকবক করলে মুখে থুথু জমে। থুথু জমলে কথা বলা ঠিক না। থুথু ছিটকে পড়বে। তোমার গায়ে। আমার শরীরে। এ মাস উৎসবের মাস। নিজের শরীরে থুথু ছিটানো ঠিক নয়। থুথু ভেতরে থাক। তোমার ভেতরে। আমার ভেতরে। সাবধান! থুথু ছিটিও না। চুপ থাকো, চুপ থাকো, একদম চুপ...
( সর্বশেষ এ তালিকায় নাম লেখিয়েছেন বর্তমান পুলিশ কমিশানার মহোদয় ১৯-০২-২০১০ তারিখে।)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ১১:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




