somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা নাচি ফক্কা,ফক্কা...

১৬ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সঙ্গে সঙ্গেই গনি মাতবর খেঁকিয়ে উঠলেন। এ্যাই মিয়া চৈত মাসের রইদে কি তোমার মাথা খারাপ হইলো। কি আবোল-তাবোল কইতাছো, কবে তুমি আমার কাছে টাকা জমা রাখছো। কোন কাগজ-দলিলপত্র আছে কি তোমার। পাগলের মতো কি সব কও মিয়া।
হাসান মিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। মাতবর সাব কন কি। ১ বছর আগে বিদেশ যাওনের সময় ২০ হাজার টাকা আপনার কাছে রাইখা গেলাম। এহন আপনে কন কোন টাকা-পয়সা রাখি নাই। তহন তো কইছিলেন গনি মাতবরের মুখের কতাই সব, কোন কাগজপত্র লাগবো না। আর অহন কাগজপত্র চান।
এ্যাই মিয়া এতো কতা কইয়া লাভ নাই। আগে প্রমাণ আনো, তারপর কতা কও। গনি মাতবর এক কতার মানুষ। কাগজপত্র ছাড়া কোন কিছু করে না। আমার সই করা কাগজপত্র আনো। টাকা দিয়া থাকলে নিয়া যাইবা। আমার কোন অসুবিধা নাই।
হতাশ হয়ে বেরিয়ে এলো হাসান মিয়া। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না কোনক্রমেই। গ্রামে পথ ধরে যাচ্ছেন আর কাঁদছেন হাউমাউ করে। পথের পাশে খড়কুটা কুঁড়াছেন এক বুড়ি। তাকে দেখে বললো- এ্যাই মিয়া, কি হইছে , কান্তাছো কেন? দেইখা তো ভদ্র ঘরের পোলা মনে হয়। এমন জোয়ান-মর্দ পোলা কান্তাছো শরম করে না মিয়া। কি হইছে মিয়া কও দেহি আমার কাছে।
আমি পাশের গ্রামে করিম মিয়ার পোলা হাসান মিয়া। ১ বছর আগে গনি মাতবরের কাছে ২০ হাজার টাকা রেখে বিদেশ গেছিলাম। বিদেশে ধরা খাইয়া দেশে আইছি। মাতবরের কাছে টাকা চাইতে বলে, তার কাছে কোন টাকা রাখি নাই। জোরাজোরি করাতে কাগজপত্র নিয়া আসতে বলে। প্রমাণ থাকলে টাকা দিবে, নাইলে না। সব শুনে বুড়ি বললো- আমাকে শতকরা ১০ টাকা দিলে তোমার টাকা তুলে দিতে পারবো। রাজি হলো হাসান মিয়া। বুড়ি কিছু বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে বিদায় হলো।
পড়ন্ত বিকাল। মাতবর সাব দোতলা ঘরের নিচ তলায় বসে হুক্কা টানছেন। বুড়ি গিয়ে বললো বড়ো বিপদে পড়ে আপনার কাছে আসলাম। মাতবর সাবগো আপনে হইলে গেরামে মা-বাপ। গনি মাতবর বললো আগে বিপদের কতা কও। তারপর অন্য কিছু্। বুড়ি বলতে শুরু করলো আমি ৬ মাসের জন্য কাশী যাবো, লাখ খানেক টাকা আছে আমার কাছে। আমি ছাড়া যা আর কেউ জানে না। দেশ-বিদেশে তো আর এতো টাকা-পয়সা নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যায় না। আবার ঘরে রেখে যাবো সেই ভরসাও পাচ্ছিনা। টাকাগুলো আপনার কাছে রাখাই সবচেয়ে বেশী নিরাপদ মনে হয়। আপনি গেরামে মাথা, মাতবর মানুষ। ঠিক সেই সময় হাসান মিয়া হাজির। কি খবর মাতবর সাব। ভালা আছেন তো। আমার টাকাগুলো দেন। গনি মাতবর মনে মনে চিন্তা করে যদি হাসানে টাকা না দেই তবে তো বুড়ি টাকা নাও পাইতে পারি। হাসানের টাকা ফেরত দিলে বুড়ি বিশ্বাস হবে, আমার কাছে টাকা রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। যেই চিন্তা সেই কাজ। ফেরত দেয়া হলো হাসানের টাকা। হাসান টাকা নিয়ে মাতবর বাড়ির শেষ সীমানার আম গাছ তলায় অপেক্ষা করতে লাগলো বুড়ির জন্য।
বুড়ি আসা মাত্র শতকরা ১০ টাকা হারে পাওনা বুঝিয়ে দিলো এবং আনন্দে নাচতে শুরু করলো। সঙ্গে যোগ দিলো বুড়িও। মাতবরের বউ তাদের নাচ দেখতে পেয়ে,খবর দিলো মাতবরকে। আসলেন মাতবর। মাতবর সাহেব আপনিও শুরু করেন বুড়ি বললো। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন মাতবর কিন্তু তাদের নাচের অবস্থা দেখে মাতবর এবং তার বউও নাচতে শুরু করলো। গেরামে এক পোংটা পোলা খবর ছড়িয়ে দিলো মাতবর আর তার বউ আম গাছ তলায় নাচতেছে। লোকজন জমে গেলোতাদের নাচ দেখতে। একজন বললো এ্যাই মিয়া তোমরা নাচতেছো কিসের জন্য। হাসান মিয়া জবাব দেয় আসলে আসল পাইয়া। এ্যাই বুড়ি তুমি। বুড়ি বলে শতকরা ১০ পাইয়া। আর মাতবর সাব আপনারা? সঙ্গে সঙ্গে গনি মাতবর বুঝে যায় আসল ঘটনা তবুও জবাব দেয়- আমরা নাচি ফক্কা, ফক্কা...
( ফুটনোটঃ সরকার আসে সরকার যায়। কেউ নাচে আসলে আসল পাইয়া, কেউবা নাচে শতকরা ১০ পাইয়া। কিন্তু হায়!!! মাতবর রূপী বেশী চালাক, অতি লোভী, আমরা জনগণ নাচি এখনো ফক্কা, ফক্কা...)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৮:৪৬
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×