সঙ্গে সঙ্গেই গনি মাতবর খেঁকিয়ে উঠলেন। এ্যাই মিয়া চৈত মাসের রইদে কি তোমার মাথা খারাপ হইলো। কি আবোল-তাবোল কইতাছো, কবে তুমি আমার কাছে টাকা জমা রাখছো। কোন কাগজ-দলিলপত্র আছে কি তোমার। পাগলের মতো কি সব কও মিয়া।
হাসান মিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। মাতবর সাব কন কি। ১ বছর আগে বিদেশ যাওনের সময় ২০ হাজার টাকা আপনার কাছে রাইখা গেলাম। এহন আপনে কন কোন টাকা-পয়সা রাখি নাই। তহন তো কইছিলেন গনি মাতবরের মুখের কতাই সব, কোন কাগজপত্র লাগবো না। আর অহন কাগজপত্র চান।
এ্যাই মিয়া এতো কতা কইয়া লাভ নাই। আগে প্রমাণ আনো, তারপর কতা কও। গনি মাতবর এক কতার মানুষ। কাগজপত্র ছাড়া কোন কিছু করে না। আমার সই করা কাগজপত্র আনো। টাকা দিয়া থাকলে নিয়া যাইবা। আমার কোন অসুবিধা নাই।
হতাশ হয়ে বেরিয়ে এলো হাসান মিয়া। চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না কোনক্রমেই। গ্রামে পথ ধরে যাচ্ছেন আর কাঁদছেন হাউমাউ করে। পথের পাশে খড়কুটা কুঁড়াছেন এক বুড়ি। তাকে দেখে বললো- এ্যাই মিয়া, কি হইছে , কান্তাছো কেন? দেইখা তো ভদ্র ঘরের পোলা মনে হয়। এমন জোয়ান-মর্দ পোলা কান্তাছো শরম করে না মিয়া। কি হইছে মিয়া কও দেহি আমার কাছে।
আমি পাশের গ্রামে করিম মিয়ার পোলা হাসান মিয়া। ১ বছর আগে গনি মাতবরের কাছে ২০ হাজার টাকা রেখে বিদেশ গেছিলাম। বিদেশে ধরা খাইয়া দেশে আইছি। মাতবরের কাছে টাকা চাইতে বলে, তার কাছে কোন টাকা রাখি নাই। জোরাজোরি করাতে কাগজপত্র নিয়া আসতে বলে। প্রমাণ থাকলে টাকা দিবে, নাইলে না। সব শুনে বুড়ি বললো- আমাকে শতকরা ১০ টাকা দিলে তোমার টাকা তুলে দিতে পারবো। রাজি হলো হাসান মিয়া। বুড়ি কিছু বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে বিদায় হলো।
পড়ন্ত বিকাল। মাতবর সাব দোতলা ঘরের নিচ তলায় বসে হুক্কা টানছেন। বুড়ি গিয়ে বললো বড়ো বিপদে পড়ে আপনার কাছে আসলাম। মাতবর সাবগো আপনে হইলে গেরামে মা-বাপ। গনি মাতবর বললো আগে বিপদের কতা কও। তারপর অন্য কিছু্। বুড়ি বলতে শুরু করলো আমি ৬ মাসের জন্য কাশী যাবো, লাখ খানেক টাকা আছে আমার কাছে। আমি ছাড়া যা আর কেউ জানে না। দেশ-বিদেশে তো আর এতো টাকা-পয়সা নিয়ে ঘোরাঘুরি করা যায় না। আবার ঘরে রেখে যাবো সেই ভরসাও পাচ্ছিনা। টাকাগুলো আপনার কাছে রাখাই সবচেয়ে বেশী নিরাপদ মনে হয়। আপনি গেরামে মাথা, মাতবর মানুষ। ঠিক সেই সময় হাসান মিয়া হাজির। কি খবর মাতবর সাব। ভালা আছেন তো। আমার টাকাগুলো দেন। গনি মাতবর মনে মনে চিন্তা করে যদি হাসানে টাকা না দেই তবে তো বুড়ি টাকা নাও পাইতে পারি। হাসানের টাকা ফেরত দিলে বুড়ি বিশ্বাস হবে, আমার কাছে টাকা রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। যেই চিন্তা সেই কাজ। ফেরত দেয়া হলো হাসানের টাকা। হাসান টাকা নিয়ে মাতবর বাড়ির শেষ সীমানার আম গাছ তলায় অপেক্ষা করতে লাগলো বুড়ির জন্য।
বুড়ি আসা মাত্র শতকরা ১০ টাকা হারে পাওনা বুঝিয়ে দিলো এবং আনন্দে নাচতে শুরু করলো। সঙ্গে যোগ দিলো বুড়িও। মাতবরের বউ তাদের নাচ দেখতে পেয়ে,খবর দিলো মাতবরকে। আসলেন মাতবর। মাতবর সাহেব আপনিও শুরু করেন বুড়ি বললো। কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন মাতবর কিন্তু তাদের নাচের অবস্থা দেখে মাতবর এবং তার বউও নাচতে শুরু করলো। গেরামে এক পোংটা পোলা খবর ছড়িয়ে দিলো মাতবর আর তার বউ আম গাছ তলায় নাচতেছে। লোকজন জমে গেলোতাদের নাচ দেখতে। একজন বললো এ্যাই মিয়া তোমরা নাচতেছো কিসের জন্য। হাসান মিয়া জবাব দেয় আসলে আসল পাইয়া। এ্যাই বুড়ি তুমি। বুড়ি বলে শতকরা ১০ পাইয়া। আর মাতবর সাব আপনারা? সঙ্গে সঙ্গে গনি মাতবর বুঝে যায় আসল ঘটনা তবুও জবাব দেয়- আমরা নাচি ফক্কা, ফক্কা...
( ফুটনোটঃ সরকার আসে সরকার যায়। কেউ নাচে আসলে আসল পাইয়া, কেউবা নাচে শতকরা ১০ পাইয়া। কিন্তু হায়!!! মাতবর রূপী বেশী চালাক, অতি লোভী, আমরা জনগণ নাচি এখনো ফক্কা, ফক্কা...)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৮:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




