উনার বিশ্লেষনটা তুলে দিলাম:
রাজনীতি বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল একটি জাতীয় দৈনিকে তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, মন্ত্রিসভার এই সম্প্রসারণ সরকার এবং আওয়ামী লীগের জন্য তেমন ফলদায়ক হবে না কয়েকটি কারণে।
প্রথমত, এটি করা হয়েছে অনেক দেরি করে; ব্যর্থতা, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে সরকার প্রায় নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার সময়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাগরিক সমাজের বহু মানুষ অন্তত বছরখানেক আগে মন্ত্রিসভার আশু রদবদল করা যে খুব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল, তা বার বার ব্যাখ্যা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী উল্টো জবাব দিয়ে বলেছেন, স্যুটেড-বুটেড না হলেও তার মন্ত্রিসভার সবাই দক্ষ! তারা যে অধিকাংশই আসলে অদক্ষ এবং কেউ কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত, তা মানুষের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ এতদিনে জন্মেছে। এসব ব্যাধি এখন এতটাই গুরুতর আকার ধারণ করেছে যে, মন্ত্রিসভার বিলম্বিত সম্প্রসারণ তার নিরাময়ে কতটুকু কাজ দেবে, তা সন্দেহজনক।
দ্বিতীয়ত, মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে যাদের নাম সরকার প্রচার করেছিল, তাদের মধ্যে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে অনীহা জানিয়েছেন যে দুইজন (তোফায়েল ও মেনন), তারা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিত্বের দিক দিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল। এটি সরকারের প্রতি দল ও জোটের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনাস্থাকে প্রকট করে তুলেছে। যারা যোগ দিয়েছেন, তারা বিতর্কিত কিংবা অনুল্লেখ্য। ফলে এই সম্প্রসারণ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই বড় কোনো অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে হয় না।
তৃতীয়ত, মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় দাবি ছিল অযোগ্য এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে অভিযুক্ত ও অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের মন্ত্রিসভা এবং উপদেষ্টাম-লী থেকে বাদ দেয়া। মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের পর এ কাজটি অনতিবিলম্বে না করলে সরকারের সামগ্রিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না।
চতুর্থত, মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের ঘোষণা সরকারের বহু সিদ্ধান্তের মতো আরো কিছু বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় যারা এসেছেন, তারা সমঝোতার রাজনীতির লক্ষ্যে সরকারকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও রাখেন না। মহীউদ্দীন খান আলমগীর জনতার মঞ্চের সময়কাল থেকে বিতর্কিত এবং বিরোধীদলের কাছে অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। হাসানুল হক ইনু অদ্ভুত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার অগণতান্ত্রিক হুঙ্কার দিয়ে বিরোধীদলের কাছে নিন্দনীয় হয়েছেন। অন্যদের মধ্যে হুইপ মুজিবুল হক ছাড়া অন্যরা জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে অনুল্লেখ্য। তবে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে স্থানীয় নেতাদের অন্তর্ভুক্তি তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীকে খুশি করতে পারে।
আসিফ নজরুল বলেন, সরকারের এখন অনুধাবন করা দরকার, শেষ ১২-১৫ মাসে বরং প্রয়োজন দেশকে কিছুটা হলেও সুশাসন প্রদান করা। বিরোধী দল, ভিন্ন মতাবলম্বী, সাধারণ বিনিয়োগকারী, বুয়েটের বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের প্রতি কঠোর হওয়ার ঘোষণা না দিয়ে বা সত্যি সত্যিই কঠোর না হয়ে সরকার যদি দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লোপাটকারী এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়, পদ্মা সেতু ও গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেয়, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্তরিক আলোচনার ডাক দেয়, তাহলেই সরকারের জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি অনেকাংশে পুনরুদ্ধার হতে পারে। শেষ সময়ে মন্ত্রিসভায় অনুল্লেখ্য কিংবা বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি তেমন কোনো সুফল বয়ে আনবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




