সাংসদদের মারমুখী আচরণে ক্ষুব্ধ স্পিকার লড়তে চাইলে গায়ে তেল মেখে মাঠে নামুন
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আবদুল হামিদ
সংসদে কয়েকজন সদস্যের বিষোদ্গার ও মারমুখী আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে স্পিকার আবদুল হামিদ বলেছেন, সংসদে কেউ অসংসদীয় কিংবা আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিলে মাইক বন্ধ হয়ে যাবে। সংসদের সৌন্দর্য ও সম্মান রক্ষায় যা প্রয়োজন, তার সবই করা হবে।
স্পিকার গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংসদদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমি একটা কথা বলে দিতে চাই, অসংসদীয় ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করলে মাইক বন্ধ হয়ে যাবে। আর ফাইটিং বা রেসলিং করতে চাইলে পল্টনে চলে যান। সংসদের বাইরেও মাঠ আছে। গায়ে তেল মেখে আন্ডারওয়্যার পরেও সেখানে চলে যেতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি ও বিরোধী দলের ভোটে নির্বাচিত। আমি আমার মতো করে সংসদ চালাব। আপনারা যদি মনে করেন, আমার থাকার দরকার নেই, আই অ্যাম রেডি টু গো।’
স্পিকার বুধবার সংসদে ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সংসদে দেওয়া রুলিংয়ে এসব কথা বলেন।
অধিবেশনের শুরুতেই বিএনপির মওদুদ আহমদ পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিতে চাইলে স্পিকার বলেন, ‘এখন কোনো পয়েন্ট অব অর্ডার হবে না। আপনাদের আগে আমারও কিছু বলার আছে।’
বেসরকারি সদস্যদের সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপনের পরই মওদুদ আহমদ, আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিতে চাইলে স্পিকার তাঁদের কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলেন, তিনি কোনো পয়েন্ট অব অর্ডার দেবেন না। তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তব্যের পর পয়েন্ট অব অর্ডার দেওয়া হবে।
এরপরই স্পিকার বলেন, কালকে (বুধবার) যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তা জাতির জন্য দুঃখজনক ও লজ্জাকর। সংসদে বিরোধী দল সরকারি দলের সমালোচনা করবে। সরকারি দলও আগের সরকারের সমালোচনা করবে। কিন্তু তার জন্য সংসদীয় ভাষা ও শিষ্টাচার দরকার।
বুধবারের ঘটনা নিয়ে প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে সাংসদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্পিকার বলেন, ‘আপনাদের এ রকম কথা, আচরণ ও অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন মানুষ মেনে নিতে পারে না। সংসদের মান-মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এ ধরনের ঘটনা দেখব, তা কোনোভাবেই আশা করিনি। এ ধরনের ভাষা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ তিনি বলেন, ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়, কে কোথা থেকে এসেছেন।
আবদুল হামিদ সাংসদদের উদ্দেশে বলেন, অনুগ্রহ করে, আল্লাহর ওয়াস্তে দেশবাসী যাতে আশান্বিত হয়, সেভাবে চলবেন। খুব সুন্দর করে অনেক কঠিন কথা বলা যায়। তিনি বলেন, কারও বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ থাকলে সেটা বলার একটা সংসদীয় ভাষা আছে। একইভাবে কাউকে নমরুদ-ফেরাউন বলতেও হিসাব-নিকাশ করে বলা উচিত। বলার আগে ভাবতে হবে, কী বলছেন।
পরে সরকারি দল ও বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে স্পিকারের এই উদ্যোগের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।
স্পিকারের বক্তব্যকে স্বাগত: রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে পয়েন্ট অব অর্ডারে বিএনপির মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আজ সংসদে দেওয়া স্পিকারের পদক্ষেপ ও বক্তব্যকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আগেই বলেছিলাম, সংসদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিরোধী দল হিসেবে আমরা তো সরকারের ভুল নিয়ে কথা বলবই। তাতে রাগ করলে, অসহিষ্ণু হলে চলবে কী করে। এটা স্বাভাবিক যে আমাদের একজন নেতা আছেন, আমরা তাঁর আদর্শের অনুসারী। আপনাদের তা পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু আপনারা তাঁর সম্পর্কে যা ইচ্ছা বলবেন, এটা তো হতে পারে না।’
মওদুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কিছু বলা হলে আওয়ামী লীগের খারাপ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। একইভাবে আমাদের নেতা সম্পর্কে বললে আমাদেরও খারাপ লাগবে। সুতরাং আমরা এই প্রতিযোগিতায় না যাই। তাহলেই সংসদ ভালোভাবে চলবে।’
এরপর আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তীব্র নয়, সুতীব্রভাবে আপনারা সরকারের সমালোচনা করুন। এটাই আপনাদের কাজ। কিন্তু ইতিহাসকে বিকৃত করা থেকে বিরত থাকুন। আমরা যখন জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করি, তখন বীর উত্তম শব্দটিও বলি। কারণ, তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা চলে না।’
এরপর বিএনপির এম কে আনোয়ার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান অর্জন যেমন রয়েছে, তেমনি স্বাধীনতার পর রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর কোনো কাজের বিষয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি কারও বক্তব্যে কোনো অশ্রদ্ধার ভাব থাকা উচিত হবে না। একইভাবে আমাদের নেতা শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদানের কথাও অস্বীকার করার উপায় নেই।’
এম কে আনোয়ার বলেন, স্পিকারের উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। এই ধারা বজায় রাখতে হবে।
এরপর তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘স্পিকারের বক্তব্য আমাদের সবার হূদয়কে নাড়া দিয়েছে। সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকায় আমরা গর্ব বোধ করছি। আজ সবাই উপলব্ধি করেছেন, যেভাবে সংসদ চলছে, তা আমাদের কারও জন্যই শোভনীয় নয়।’
তোফায়েল বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় আমরা জিয়াউর রহমানের নাম শুনিনি। সত্তরের নির্বাচনের সময়ও তাঁর নাম শুনিনি। সুতরাং তাঁর ঘোষণায় দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে, এটা বলা অন্যায়। জিয়াউর রহমানকেও বঙ্গবন্ধু স্নেহ করতেন। তিনি বলেন, সংসদ সম্পর্কে মানুষের ধারণা দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ‘আসুন, আমরা আজ থেকেই শুরু করি।’
সর্বশেষ কটূক্তি: গত বুধবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপির শাম্মী আখতারের কটূক্তি নিয়ে সংসদে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী সরকারি দলের জয়নুল আবেদীনের দিকে মারমুখী ভঙ্গিতে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ পর্যায়ে উভয় পক্ষের কয়েকজন সাংসদ ছুটে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
শাম্মী আক্তার তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব মারা যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের লন্ডনপ্রবাসী এক নেতা বলেছিলেন, ফেরাউনের হাত থেকে দেশ রক্ষা পেল। শেখ মুজিব মারা যাওয়ার পর দেশের মানুষ তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের নেতারাও ইন্না লিল্লাহ বলেননি।’
এর আগে মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সাংসদ শফিকুল ইসলাম সংসদে বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট হিসেবে এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে কাজ করেছেন। এ খুনি জিয়া রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী আর আবদুল আলিমকে রেলমন্ত্রী করেন। সেনাবাহিনীর অসংখ্য কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন।’ তাঁর এ বক্তব্যের সময় বিরোধী দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে হইচই করে প্রতিবাদ জানান। একপর্যায়ে বিএনপির সদস্যরা ওয়াকআউট করেন।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।
কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...
হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?
হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।