লেখার শুরুতে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই গত ১ লা মে , ২০১২ মে একটা বিশেষ ধরনের পোস্ট একজন ব্লগার প্রকাশ করেন | সামুতে দৈনিক ৩০০ এর মত পোস্ট প্রকাশ পায় | তো এই পোস্টকে বিশেষ বলার কারণ কি ? কারণ হলো পোস্টটি ছিল খটমটে বিষয় ইলেকট্রনিক্স নিয়ে |
ইলেকট্রনিক্স একশ্রেনীর মানুষের কাছে প্রিয় হতে পারে | কিন্তু পোস্টটি আকর্ষণ করলো প্রায় সব শ্রেনীর মানুষকে | মানুষের আগ্রহকে সম্মান দেখিয়ে মডারেশন প্যানেল পোস্টটিকে স্টিকি করলেন | স্টিকি হবার কারণে পোস্টটি যাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল তারাও সুযোগ পেলেন চোখ বুলানোর |
কি ছিল সেই পোস্টে | পোস্টটিতে খুব সহজ ভাষায় দেখানো হয়েছিল কিভাবে কোনো ধরনের পূর্বের ইলেকট্রনিক্স সম্মন্ধে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও আপনি কম খরচে একটা আই.পি.এস বানাতে পারবেন | অস্বাভাবিক পরিমানে লোডশেডিং এবং গরমে দুর্বিসহ পরিবেশে যেসব মানুষ ত্রাহি মধুসুধন অবস্থায় ছিলেন , তারা নড়েচড়ে বসলেন | যাদের পক্ষে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে একটা আই.পি.এস কেনা সম্ভবপর ছিলনা তারা আশ্বান্নিত হলেন এই আই.পি.এস ৩০০০ টাকার মধ্যে বানানো সম্ভব শুনে | ব্লগার অনেকগুলি ছবি , ভিডিও, দোকানের ভিজিটিং কার্ডের মাধ্যমে পুরো প্রক্রিয়াটি জলবত তরলং করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন | এর সাথে তিনি আরো নিজের ই-মেইল একাউন্ট দিয়েছিলেন যাতে কারো ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা হলে তিনি সাহায্য করতে পারবেন | সেই ই-মেইলে যারা ফোন নাম্বার চেয়েছেন ,তাদের তিনি ফোন নাম্বার দিয়েছেন |
এবার বলি আমায় কিভাবে এর সাথে যুক্ত হলাম | আমার নানা-নানী-দাদা-দাদির মাঝে কেবলমাত্র আমার নানা বেঁচে আছেন | আমাকে অসম্ভব স্নেহ করা এই মানুষ গুলো একে একে বিদায় নিয়েছেন কিন্তু আমি তাদের জন্য কিছু করার সুযোগ পাইনি | এবার যখন শুনলাম গরমে আর লোডশেডিং এ উনার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে , তখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল কি করা যায় | এমন সময় ওই বিশেষ ব্লগটি চোখে পড়ল | ই-মেইল এর মাধ্যমে ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন দিয়ে বসলাম ব্লগারের নাম্বারে | খুলে বললাম কি জন্য ফোন দিয়েছি | আমি আমার নানার জন্য কিছু করতে চাচ্ছি জানতে পেরে এই নরম মনের মানুষটি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন | নানা পরামর্শ দেন গ্রামের পরিবেশে কিভাবে আই.পি.এস টি বানালে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করবে | এর পর অসংখ্যবার তাকে ফোন দিয়েছি , ই-মেইল করেছি | কোনদিন এতটুকু বিরক্তি তার মাঝে দেখতে পাইনি | শুধু আমি না , আরো অনেক ব্লগার তাকে ফোন দিয়ে সাহায্য পেয়েছেন | ই-মেইলের মাধ্যমে সাহায্য পেয়েছেন | কয়েকজনকে বানিয়ে দিয়েছেন | উত্তরা থেকে নবাবপুর গিয়ে অন্যের জন্য কিনে এনেছেন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি | সবকিছুই করেছেন সহব্লগারদের প্রতি আন্তরিকতা থেকে | চাকরি - ফ্যামিলি সব কিছু মেনটেইন করেও বাড়তি সময়টুকু দিয়েছেন সহব্লগারদের সাহায্যার্থে | এবং এত কিছুর পরও তার মুখের হাসি কোনদিন মলিন হয়নি |
তার কাজের গুরুত্ব পরিপূর্ণভাবে আমার বুঝে আসে যখন নিজের হাতে বানানো আই.পি.এসটি আমার নানার সামনে নিয়ে যাই | বাজার থেকে কিনে দিলে খুশি হতেন কিন্তু নিজের হাতে বানানো শুনে তিনি অন্তরের অন্তরস্থল থেকে আমাকে যে দোয়া করেছেন তার তুলনা নেই | এই যে উনার জন্য সামান্য কিছু করার আমার যে প্রচেষ্টা , তা সম্ভব হয়েছে এই ব্লগারের ওই পোস্টটির জন্যই | প্রিয় মানুষের জন্য নিজের হাতে কিছু করা , একটা নতুন জিনিসের প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তোলা এবং কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হওয়া সমস্যার সমাধান এই সব কিছুর জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এই ব্লগারের প্রতি |
এই ব্লগারটির নাম জাহিদুল হাসান | জাহিদ ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা | উনার ব্লগ ঘেটে উনার একমাত্র রাজকন্যার একটা ছবি পেলাম | দোয়া করি রাজকন্যা বড় হয়ে তুমি তোমার বাবার মতন বড় মনের উপকারী মানুষ হও |
আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে ব্লগারদের অনুরোধ করছি ব্লগার জাহিদুল হাসানের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা আর রাজকন্যার প্রতি আমাদের শুভকামনা একটি কমেন্টের মাধ্যমে প্রকাশ করি |
জাহিদ ভাইয়ের সেই পোস্ট -
Click This Link