somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে গল্পঃ ছোটনের নিয়তি

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দক্ষিণদুয়ারী খড়ের ঘরের বারান্দায় রাখা চৌকির উপর শুয়ে আছে ছোটন। প্রতিদিনের মত আজও পুবদিকের গাছ-গাছালির ফাঁক দিয়ে সূর্যটা উঁকি দেয়। সূর্যের এই আলোকছটায় ঘুম ভাঙ্গে ছোটনের। ঠিক যেন এলার্ম ঘড়ির মত কাজ করে সূর্যের এই আলোকছটা। অন্যদিন ব্যাপারটা ভালো লাগলেও ছোটনের আজ মনটা বিমর্ষ। ভোর রাতের স্বপ্নটা ছোটনের মনটাকে বিষিয়ে তুলছে। স্বপ্নে সে তাঁর দাদিকে দেখেছে, যিনি মাসখানেক আগেই মারা গিয়েছেন। ৬মাস বয়সে মাকে হারানোর পর এই দাদিই তাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে। মায়ের মত আগলে রেখেছিল এতোদিন। এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিঃশব্দে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে বালিশের উপর।

দাদির মুখে শুনেছিল মায়ের মৃত্যুর ঘটনা। তখন ছোটনের বয়স ৬মাস। বড় অভাবের মধ্যে চলছিল তাদের সংসার। ছোটনের বাবা রহিম আলি পরের জমিতে কাজ করে যে টাকা আয় করত, তাই দিয়ে তাদের সংসার চলতো। দিন আনে দিন খায় অবস্থা।

প্রতিদিনের মত সেদিনও রহিম আলি সকালে কাঁচা-মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে পান্তা ভাত খেয়ে গেরস্তের মাঠে কাজ করতে গেল। সারাদিন পরিশ্রমের পর ৮০টাকা মজুরি পেল।

বিকেলে রহিমের বউ জোহুরা বেগম বাজারের ব্যাগটা হাতে দিয়ে বাজার থেকে কি কি আনতে হবে সেগুলো বললো। রহিম আলি বাজারে গেল।
বাজারে ঢুকতেই একটা বড় আম বাগান। সেখানে কিছু লোক গোল হয়ে বসে তাস খেলছে। তাস খেলছে বললে ভুল হবে, এটাকে জুয়া খেলা বা গ্রামের ভাষায় ‘ফড় খেলা’ও বলা চলে। রহিমের ছিল জুয়া খেলার প্রতি খুব নেশা। সে হিসেব করে দেখলো ৮০টাকার মধ্যে ৩০টাকা যদি জুয়া খেলে, তবুও বাকি টাকায় তাঁর বাজার করা হয়ে যাবে। কিন্ত সে প্রথম দানেই ৩০টাকা হেরে গেল। জুয়ার নেশায় বাকিটাকাগুলোও হেরে বসল। জুয়ায় সব টাকা হেরে অনেক টেনশনে পড়ে গেল রহিম আলি। মাথার মধ্যে নানা চিন্তা ভর করছে। কিভাবে বাজার করবে, বাড়ির সবাই কি খাবে ইত্যাদি নানা ধরনের চিন্তায় মুষরে পড়লো।

অবশেষে সন্ধ্যার দিকে খালি ব্যাগ হাতে নিয়ে বাড়িতে এলো। এদিকে জহুরা বেগম ভাত রেধে তরকারির জন্য আশায় বসে আছে-কখন তাঁর স্বামী বাজার থেকে ফিরবে?

শেষে স্বামীর এই নির্বুদ্ধিতা দেখে জোহুরা বেগম বকাবকি শুরু করে দিল। এদিকে জুয়ায় টাকা হেরে এমনিতেই রহিমের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে, তার উপর বউয়ের বকাবকিতে মেজাজ ঠিক রাখতে না পেরে জোহুরা বেগমে বেধড়ক মার শুরু করলো। বিষয়টা তিল থেকে তাল হয়ে গেল।
স্বামীর এ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ৬মাসের বাচ্চাকে রেখেই বিষ খায় জোহুরা বেগম। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাকে আর বাচানো সম্ভব হয়নি।

ছোটনের স্মৃতিচারণায় আবারো চোখ দুটো জলে ভিজে যায়। গড়িয়ে পড়ে বালিশের উপর।

***

এমনসময় হঠাৎ চিৎকার শুনতে পেল সৎমা জামিলা খাতুনের। “লাট সাহেবের ছেলে এখনো ঘুম থেকে উঠে নি; কখন ঘুম ভাঙবে শুনি?”
চোখ দুটো মুছতে মুছতে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে ছোটন। ঘরের চালে গোজা নিমের দাতনটা দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে টিউবওয়েলের কাছে গেল। মুখটা ধুয়ে দরজার সামনে আসতে না আসতেই জামিলা খাতুন আবারো চেচিয়ে উঠলো, “সকাল সকাল এক গামলা ভাত গেলো; তারপর তোমার বাপের জন্য মাঠে ভাত দিয়ে এসো।"

ছোটন মায়ের উদ্দ্যেশে বলে, “মা, আমার এসএসসি পরীক্ষা চলে; তুমি শিপনকে পাঠাও।" শিপন তাঁর ছোট ভাই অর্থাৎ জামিলা খাতুনের ছেলে।
“এতো লেখাপড়া শিখে জজ-ব্যারিস্টার হয়ে যাবে না; আর শিপন অতদূর যেতে পারবে না। খাবার দিয়ে এসে পরীক্ষা দিতে যেও" জামিলা খাতুনের স্পষ্ট বক্তব্য।

ছোটন দেখলো আজ তাঁর গণিত পরীক্ষা। আর গণিত তো সব আগে থেকেই করা আছে। নতুন করে আবার কি করবে। তাই সে খাবার নিয়ে মাঠে গেল। প্রায় ৪ কিমি পথ সে দৌড়ে গেছে এবং যত দ্রুত সম্ভব ফিরে এসেছে। পরে পরীক্ষা দিতে গেছে।

এতো কিছুর পরেও ছোটনকে দমিয়ে রাখা যায় নি। শত কষ্টের মাঝেও সে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে।

***
ছোটন এখন একটা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে। সৎমা এখন আর অতোটা অবহেলা করে না। রহিম আলি ছেলেকে নিয়ে গর্বিত।

___________________________________________
পুনশ্চঃ উপরের ছবিটি ছোটনের না; পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মোবাইল থেকে নেওয়া।
গল্পটি বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে লেখা।

___________________________________________
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×