somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঋতুর্ বষা বৃষ্টি রাত্র'রি গল্প

২৪ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তিন -- কি কেন কিভাবে এর বাকী অংশ

এই শুনছ? বলে, রাহেলা আবার বারান্দায় তার স্বামীর কাছে গেলেন।
বিদ্যুৎ এল গেল টের পাওনি!
না।
এখনও বারান্দায় বসে আছ কেন?
বিদ্যুত চমকানি দেখছিলাম।
কি দেখছিলে?
রাত্রি, বৃষ্টি!
বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টি হবে এগুলো দেখার কিছু নেই। ঘরের মোম নিভে গেছে!
মোম জ্বালিয়ে দাও।
ঘরে মোম নেই।
চার্জার অন করে দাও।
চার্জার নষ্ট হয়ে আছে দু মাস!
রাহেলা রেগে জ্বেলে উঠলেন। আব্দুর রশীদ ঘরের ভেতরে ঢুকলেন। পেছনে রাহেলা। দুলি রান্না ঘরে বসে গ্যাসের চুলোর পাশে ভিজে কাপড় শুকাচ্ছে।
দুলি নিচে গিয়ে মোম নিয়ে আয়। আমি এখন লিখব।
রাহেলা বললেন, ’অনেকের মাাথার ভেতর অনেক গল্প ছোটাছুটি করে, সেগুলোকে বের করে আনা সহজ কথা নয়! সহজ হলে সবাই বড় লেখক হতে পারত।
এতণ যা বললে!
বললেই লেখক হওয়া যায় না।
আব্দুর রশীদ চুঃ চুঃ শব্দ করলেন, খুঁচিয়ে কথা বলার অভ্যেসটা তুমি ত্যাগ কর! রাহেলা বললেন,
প্রতি বছর ছশ লেখক বের হয়। গত চল্লিশ বছরে লেখকের সংখ্যা কতজন হল?
’চল্লিশ কোটি হলে আমার কি? রাহেলা বটগাছের নীচেই ছোট্ট ছোট্ট গাছ থাকে। বটগাছ কখনো বলে, এই ছোট্ট তুই এখানে কেন? তুই যা!
দুলি আমার ঘরে একটা মোম দিস। রাহেলা, বর্ষার পর শরৎ শুরু হবে। আমি আগামী মাসে গ্রামে যাব। অনেক দিন ওখানে যাওয়া হয়না। রাহেলা, তুমি কি বল?
রাহেলা বললেন, ’যেও!
আব্দুর রশীদ স্ত্রীকে মনে মনে আবারো ধন্যবাদ দিলেন। তার মনে হল, তিনি তার লেখার সীমাবদ্ধতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এবার লেখাটা টেবিল থেকে ডাস্টবীন নয়, প্রেসে নেয়া হবে।
শরতের শুরুতেই আব্দুর রশীদ তার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গেলেন। বাড়ীর পাশের সেই খরস্রোতা নদী যমুনা। খোরস্রোতা, একটা পুরানা স্মৃতি। নদীর নিশানা খোঁজে পাওয়া যায় না। চারদিকে ধুঁধুঁ বালুর চর। মাইলের পর মাইল তুষার শুভ্র কাঁশবন। কোথাও জনবসতি, কোথাও জনমানব শূণ্য বিরান বালুর চর। শাখা নদী বড় বড় চরগুলোকে কেটে দূরে চলে গেছে। আব্দুর রশীদ হেটে চর থেকে চরে গেলেন। পরিচিত দুএকজনের সাথে দেখাও হল। একটা চরে একরাত কাঁটালেন। দিনের বেলায় চরটার সাদা ধবধবে কাঁশবনে সে কি বাতাস! রাত হলে ভয়ে শরীর জমে যায়। জোছনার আলোয় আবার কাঁশবনে বিমূর্ত এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পবিত্র আর শুদ্ধ সব ব্যাপারগুলো যেন ভেঙ্গে ভেঙ্গে গড়া এ চর থেকেই উদ্ভুত হয়! রাতে জোছনার আলো গায়ে লাগিয়ে আব্দুর রশীদ বসে রইলেন। চাঁদ সাগরের পানিকে টেনে ফোলে ফুঁপিয়ে তুলে। মানুষের শরীরের পঁচাত্তুর পার্সেন্ট হল পানি। এই পানিকেও চাঁদ টানে! নইলে মানুষের মনে তার এত প্রভাব কেন? মনের যত কালি সব ধূঁয়েমুছে যায় জোছনার আলোর আকর্ষণে। মানুষ কেন এত শিহরিত হয়?

গায়ের চামড়া সাদা থেকে ময়লা হয়ে গেছে। পায়ের অনেক জায়গায় ফোসকা পড়েছে। আব্দুর রশীদ গ্রাম থেকে একমাস পর বাসায় ফিরে এলেন।

তিনি এবার উপন্যাস লিখা শুরু করলেন। নাম দিলেন -- নৈর্ঋতী।
ঋতু বর্ষা বৃষ্টি রাত্রির নৈর্ঋতী।



চার -- বর্ষা ঋতুর নৈর্ঋতী

গ্রামের শেষ মাথায় বিশাল পাকুট গাছের নিচে একটা পরিত্যাক্ত শ্মশান। শ্মশানের পাশে একটা শাখা নদী। খেয়া পাড় হয়ে হাঁটা পথে আঁধামাইল পর একটা ধুঁধু বালুচর। পাশে আরো কয়েকটা ছোট্ট বালুর দ্বীপচর। সাদা ধবধবে কাঁশবন পুরো এলাকা ছেয়ে আছে। দিনের বেলায় এলাকাটা পবিত্র শুভ্রপুরী, রাতের অন্ধকারে এটাই একটা নিঃস্তব্ধ বিরানভূমি। এই বিরান চরভূমিতে নিশাচর প্রাণীর মত রাতে একজন থাকে। তার নাম নৈর্ঋতী। এখানেই তার সংসার। সংসার বলতে একটা শনের ঘর, ঘরটির চারদিক পাটখড়ির বেঁড়া। বেঁড়া ঘেঁষে পাশে একচালার ছাপড়াটা তার রান্নার ঘর। কয়েকটা মাটির হাঁড়িপাতিল। দীর্ঘকায় নৈর্ঋতী তার ঘরের সামনে বসে আছে। গায়ে পুরান পাঞ্জাবী, পরনে কালো পায়জামা। চুল লম্বা, দাঁড়িগোঁফে মুখ ছেয়ে আছে।
তাকে কেউ নরাতী বলে, কেউ ন্যাড়াতি বলে ডাকে। কেউ কেউ কপালে চোখ তুলে বলে, এই লোকটা এখানে থাকে কেন? সে কোত্থেকে এসেছে? সে আসলে কে?
সে পীর। সে দরবেশ। সে ভন্ড। সে একাহারী। সে ফেরারী। সে দেও দৈত্য। যে যা-ই বলুক, নৈর্ঋতী এক কানে শোনে, আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। তার কিছু আসে যায় না। সে রাগে না। সে কাউকে রাগায় না।
নৈর্ঋতী বাজারে গেলে সেখানকার বেঞ্চিতে দুম মেরে বসে থাকে। নির্জীব শুয়ে থাকে। কেউ তাকে টাকা দেয়, কেউ খেতে দেয়। সে খায়। খাবার না থাকলে, সে খায় না। কারোর কোন খালি ঘরে রাতে থাকতে বললে সে থাকে না। সে স্বাধীন। সে মুক্ত। নৈর্ঋতী কুলষিত একটা বলয় থেকে বেরিয়ে এই চরে এসে নৈর্ঋুতী নির্ভেজাল শুদ্ধ একটা জীবন যাপন করতে এখানে থাকছে। সে সরকারী চরে থাকে।

নৈর্ঋতীর বয়স এখন চল্লির্ধো। সে আসলে অতীতের একটা পান্ডলিপি বুকে চেপে এখানে থাকছে। নৈর্ঋতীর পান্ডলিপিতে রেকর্ড করা আছে দগদগে তে ভরা তার জীবনের অসামান্য গল্প। এজন্য জীবিত থেকেও সে মৃত।
ঘরে বসে থাকতেও ভাল লাগছে না। নৈর্ঋতী আজ ঘুমাতে পারছে না। ঘরের সামনে হাঁটাহাঁটি করছে। উদাস চোখে তাকিয়ে চরের কাঁশবন দেখছে। মাথার চুল টানছে। ঠোট কামড়াচ্ছে। ভেতরটা গলে যাচ্ছে। নির্জন নিরাশ্রয়ে নৈর্ঋতীকে আজ তিনটা গ্লানিকর ঘটনা আক্রমন করেছে। নিজের বিতর্কিত জন্মের কথা, রাত্রির জীবন থেকে অপমানজনকভাবে বিদেয় নেয়া, আর এই দুই গ্লানির মধ্যে মেয়ে বৃষ্টিকে লিখা একটা চিরকুট তাকে চিড়েেেফড়ে শেষ করে দিচ্ছে। এই চিরকুটটা বৃষ্টি তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বুকের মধ্যে হু হু করে কেঁদে ওঠেছিল। চিরকুটটা লিখেছিল নৈর্ঋতীর অন্নপুষ্টে মানুষ হওয়া অন্য দুই আপনজন। স্ত্রী রাত্রি বন্ধন ভেঙ্গে চলে গেছে। রাত্রির প্রতি অদম্য ভালবাসার-আকর্ষণ থেকে বৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টি তাই তার আতœা। সেই বৃষ্টিকে অন্যের হাতে তুলে দূরে নির্জীব জীবন ধারন করাটা কতটা দুঃখের হয়!
নৈর্ঋতীর চরিত্রে যা কখনও ছিল না, তা সে এখন প্রতিদিন করে, এখনও করছে। সিগারেটে গাঁজা ঢুকিয়ে সে শো শো করে টানছে। নেশায় মাথা ঘুরছে। কে কিভাবে তাকে এখানে নিয়ে এল? আহসান নামক একজন একাউন্টট্যান্ট থেকে রাত্রি। রাত্রি থেকে নৈর্ঋতী । অ -নে -ক ঘটনা। ইতিহাসটা হল-
নৈর্ঋতীর মা ঋতু চৌধুরী। সে তার গর্ভজাত সন্তান। আকাশ তার বাবা। ঋতুর বান্ধবী বর্ষা একজন উত্তরাধিকারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করত। বর্ষার সন্তান হল না। নিঃসন্তান বর্ষা নৈর্ঋতীকে আঁচলের তলে লুকিয়ে নিজ বুকের দুধ খাওয়াত, আর স্বামী বিষ্ণুদেবের বুকের পাঁজরের সাথে মিলেমিশে নৈর্ঋতী ঘুমাত। পবিত্র সম্পর্কটায় অভিযোগ করে বসল ঋতুর স্বামী আকাশ, নৈর্ঋতী আমার ঔরসজাত সন্তান না! তার চেহারাটা কেন বর্ষার স্বামী বিষ্ণুদেবের মত হল? নাক কান চোখ মুখ কথা বলার ধরন! বিষ্ণুর বার্থ স্পটাও সাথে নিয়ে নৈর্ঋতী জন্মাল কেন? একসময় বর্ষাও তার বন্ধু কাম স্বামী বিষ্ণুর বিরুদ্ধে সন্দেহের ইঙ্গিত করে বসল, ’তুই দ্বিখন্ডিত হয়ে ঋতুর সাথে আনহেলদি সম্পর্ক গড়েছিলি, নইলে ঋতুর গর্ভে তোর সন্তান কেন? কে নৈর্ঋতীর বাবা? বিষ্ণুদেব নাকি আকাশ? সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যাপারটা আদালতে গড়াল।

সিগারেটে লম্বা টান মেরে নৈর্ঋতী আবারো বালির উপর ঠাশ করে বসে পড়ল। নৈর্ঋতীর সপ্তম বার্থডের পর অষ্টম বছরে তাকে নিয়ে একটা পারিবারিক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। কত বয়সের বিস্মৃত স্মৃতি মানুষের মনের পর্দায় পুনরায় ভেসে ওঠতে পারে? আজ কি যেন হল নৈর্ঋুতীর? পুরান দৃশ্যগুলো তার মনে ভেসে ওঠতে থাকল --- ঘর ভর্তি মানুষ। সামনে বিচারকের মঞ্চ। মঞ্চে বিচারক। বিচারকের সামনে উকিল। নৈর্ঋতীর মা বাদিনী, বাবা বিবাদী। বাদিনীর উকিল হুমায়ুন শের। বিবাদীর উকিল মিসেস সামিয়া। কাঠগড়ায় বিষ্ণদেব হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে। মিসেস সামিয়া ঠাটানি মেরে বিষ্ণুকে জিজ্ঞেস করলেন, ’এই ছেলেটির বাবা কে?
আকাশ!
সত্যি করে বলুন!
আমি সত্যি বলছি, আমি তার বাবা নই!
ছেলেটির চেহারা আপনার চেহারার মত হল কেন?
পৃথিবীতে অনেক লুক-এলাইক আছে। চেহারায় মিল থাকলেই কি একজনকে অন্যের বাবা হিসেব চালিয়ে দেয়া যায়?
বিষ্ণুবাবু, আপনি অতিরিক্ত মদ খাইয়ে আকাশকে বেঁহুশ করে ফেলেছিলেন। এই সুযোগে আপনি তার স্ত্রী ঋতুর সাথে রাত কাটাননি!
না!
ঋতু কাঠগড়ায় দাঁড়াল। বিধ্বস্ত চোখ মুখ। সামিয়া বললেন,ঋতু চৌধুরী! আপনি মানুষ আর প্রাণীর পার্থক্য বুঝেন?
জি।
আমরা পশু নই। মানুষ-মায়েরা নিশ্চিত জানেন, তার গর্ভের সন্তানটা কার ঔরসে সৃষ্টি। আমি কি ইঙ্গিত করেছি আপনি ধরতে পেরেছেন আশা করি। আপনি সত্যি করে বলুন! আপনার সন্তানের বাবা কে?
ঋতুর দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। সে বলল, ’আমি কখনও আকাশ ছাড়া অন্য কারোর সাথে মেলামেশা করিনি। এ সন্তান আমার এবং তার বাবা আকাশ! ও আকাশ-আমার ভালবাসার ফসল!
আপনি দ্বিচারিণী! এ সন্তান আকাশের নয়, এটা বিষ্ণুদেবের!
দুউকিলের আক্রমন প্রতি আক্রমন।
চলছে -- -- --
ঋতু, আকাশ, বর্ষা, বিষ্ণুদেব নৈর্ঋতীকে নিয়ে আদালতের যুদ্ধ চলছে। শিশু নৈর্ঋতী আজ অনেকদিন পর তার বাবা আকাশকে দেখল জজ কোর্টের এই সিভিল আদালতে। কোর্টে তার বাবা আকাশ একবারের জন্যও তার মা ঋতুর চোখে চোখ রাখেনি। নৈর্ঋতী আকাশের কাছে যেতে চেয়েছিল। তার হাত ধরতে চেয়েছিল। শুনানি শেষে আকাশ কখন যে আদালত থেকে হাওয়া হয়ে গিয়েছে, নৈর্ঋতী বুঝে উঠতে পারেনি। আকাশের সাথে তার আর দেখা হয়নি। ঋতুর মৃত্যুদিন পর্যন্ত তার সাথেই নৈর্ঋতীর জীবনটা কেটেছে।
সেই মৃত্যুদিনের ঋতুর বিদায়ী হাতের স্পর্শ, তুমি ভাল থেকো। কতটা ভাল আছি?
নৈর্ঋতীর ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠল। নেশাভরা লাল চোখে পানি জমল। বাইরে অন্ধকার। খোলা যায়গা। চরের কাঁশফুলের বনে বাতাসের ঢেঊ বইছে। শনের ঘর কাঁপছে।

ঋতু, বর্ষা, বিষ্ণু আর আকাশকে নিয়ে সম্পর্কের একটা অদ্ভূত চর্তুভূজি পিরামিড সৃষ্টি হয়েছিল যার শীর্ষে হল এই নৈর্ঋতী। যে শীর্ষে থাকে তাকে জ্বলতে হয়। নৈর্ঋতীর ভেতরের পান্ডলিপিটির পাতা আজ খুলে যায় রাতের এই নির্জন বাসে। চোখ ফেটে পানির ধারা নামে অবিরত।

নৈর্ঋতীর আজ সারারাত এভাবেই কেটে গেল।

পরের দিনের সকাল। নৈর্ঋতী শনঘর থেকে বেরুল। রৌদ্দোকজ্জ্বল ঝকঝকে দিন। রোদের আলোয় চরের বালুতে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের রাখালরা কাঁশগাছ কাঁটতে চরে এসেছে। কেউ কাঁশ গাছের কান্ড চিবিয়ে চিনির স্বাদ নিচ্ছে। কারোর হাতে কাঁশফুলের আঁটি। কেউ গরুর দল নিয়ে পুষছে। নৈর্ঋুতীকে সবাই চেনে। দুএকজন নৈর্ঋতীকে সালাম দিল,
দেওবাবা আসসালামুআলাইকুম!
ওয়ালাইকুমসালাম!
দেও হল পানির নিচে বাস করা দৈত্য। অনেকের ধারনা নৈর্ঋতী দেওবাবা না হলে রাতের বেলায় এই নদীর চরে একা থাকতে পারত না। সে পানির নিচে লুকিয়ে থাকা দৈত্য পোষে। নৈর্ঋতী বাজারের ফোনের দোকানে গেল। দোকানের বালকটি লাফিয়ে ওঠে বলল, আসসালামুআলাইকুম! হুজুর ফোন করবেন?
হ্যাঁ ফোন করব।
মুরীদকে?
হ্যাঁ।
হুজুর ফোন করুন, টাকা লাগবে না!
মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটু দুরে দাঁড়িয়ে ফোনে নৈর্ঋতী দুজন লোককে বলল,তোরা আয়!
ফোনের ওদিক থেকে উত্তেজিত গলা, বস্, আপনি কোথায়? আপনাকে আমরা গরু-খোঁজা খুঁজছি! আজই আসব?
হ্যাঁ, পারলে আজই আয়।
নৈর্ঋতী যাদেরকে আসতে বলল, তারা আজ আসবে এই শুভ্রপুরীতে। হয়তো বা তারা আসবে। নৈর্ঋতীর প্রতি তাদের ব্যক্তিগত দুর্বলতা আছে। নৈতিক বাধ্যবাধকতা ও প্রচন্ডরকম গ্রহনযোগ্যতা আছে ।


পাঁচ -- নৈর্ঋতীর পটভূমি

নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। ঝকমকে সব নতুন ভবন। নতুন সাবজেক্ট। আকাশ বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে। মফস্বল থেকে আসা আকাশ কারোর আগেও নেই পিছেও নেই। সে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং এ পড়ছে। জিন কাটা হয়, ছেড়া হয়, জিন ঢুকানো হয়। নতুন কিছু সৃষ্টি হয়। জিন জীবনের বৈশিষ্ট এক শরীর থেকে অন্য শরীরে নিয়ে যায়। আকাশ সুবোধ ছেলের মত কাস থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি কেটে নীচে নামছিল। পেছন থেকে ডাক এলো, এ-ই দাঁড়াও। পেছনে তাঁকাও।
এই প্রথম কারো পেছনে তার বিশেষভাবে তাঁকানো হল। আকাশ পেছন ফিরে তাকাতেই মনে মনে একটা হোঁচট খেল। লম্বা লম্বা পা ফেলে একজন নীচে নামছে। আকাশ মনোযোগ দিয়ে তাকাল। মেয়েটি কাছে এসে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াল। যে মুখোমুখি দাঁড়াল তার নাম ঋতু।
তোমার নামটা - - - যেন কী?
আকাশ!
আই এম ঋতু।
আমি জানি, তুমি ঋতু, ঋতু চৌধুরী। তোমার সবুজ গাড়ীটা ক্যাম্পাসের রাস্তায় হাই স্পীডে চলে। ঠোটে দাঁত চেপে ঋতু আকাশের সাথে হ্যান্ড শেক করল। ফ্রিকশন হল। ব্যাপারটা ফিকশনের মত ঘোরঘোর লাগছে। আকাশ পরিস্কার করে কিছু বুঝে ওঠতে পারল না। সে যা বুঝতে পারল তা হল, তার হাতের তালু থেকে পা পর্যন্ত বৈদ্যুতিক শকের মত শাঁই করে কিছু একটা চলে গেল। কয়েকটা মুহূর্ত সে স্তব্ধ হয়ে রইল। সম্বিত ফিরে এলে বলল,
হোয়াট এ স্ট্রেন্জ!
ঋতু চোখ কুঁচকে বলল, হোয়াট?
কিচ্ছু না!
আর ইউ শক্ড?
এ লিট্যিল বিট! ক্যাম্পাসে হ্যান্ডশেক কজন করে?
এনিথিংএল্স!
মেনিথিংস!
ফর এক্সাম্প্যুল!
ঋতু তুমি কি হিউমার লাইক কর?
ডিজায়ার‌্যাব্যল হিউমার বলতে মানা নেই।
মানুষের প্রতি দশজনের মধ্যে সাতজনের এক পা থেকে অন্য পা প্রায় ১/৮ ইঞ্চি পার্থক্য হয়। এজন্য সব মানুষ এক সাথে একই স্পীডে দৌঁড়াতে পারে না। আকাশের কথায় ঋতু চনমন করে তাকাল, এতে তোমার সমস্যা কোথায়?
গাড়ির চার চাকার মধ্যে একটা চাকার ডায়ামিটার মাত্র দুই সেন্টিমিটার বড় হল, কি হবে? কি হবে?
স্টিীয়ারিং ইম্ব্যালেন্সড হয়ে গাড়ীটা রাস্তার নীচে চলে যাবে। তেমনি কারোর এক পা যদি অন্যটা থেকে এক সেন্টিমিটার খাটো হয় তালে তার শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে অতিরিক্ত চাপ পড়বে। বিষ্ময়ে ঋতুর চোখ কপাল থেকে অনেক উঁচুতে উঠে যায়,
এক পা খাঁট হলে নির্দিষ্ট কোন্ অঙ্গে চাপ পড়বে?
বডির এনাটমি এনালাইসিস না করে পুরোপুরি বলা যাবে না। তবে সেটা হৃদপিন্ড বা মস্তিষ্কে চাপ পড়তে পারে, যারা সারা শরীরটা চালায়।
তুমি কি কখনও কোন গাড়ীর গ্যারেজে চাকুরী করতে?
কেন?
গাড়ী নিয়ে এত কথা বলছ, তাই!
মোটর গাড়ী আর আমাদের দেহকোষ একই ইঞ্জিনীয়ারিংয়ে চলে!
ঋতু থমকে তাকাল, মানুষের পা নিয়ে তুমি গবেষণা করছ?
যা সত্যি তাই বলা হল।
ফুট স্পেশালিষ্ট! তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাও। আই উইল কল ইউ ব্যাক। ক্যাম্পাসে তোমার সাথে একদিন আড্ডা দেব। বর্ষা আসবে। বর্ষার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া যাবে।
বর্ষা কে?
বর্ষা আমার ফ্রেন্ড। সে নরতত্ত্বে পড়ছে।
হোয়াট ইজ টট ইন দ্যাট সাবজেক্ট?
সেটা বর্ষাকেই জিজ্ঞেসা করে জানতে পারবে।
বর্ষার সাথে বিষ্ণু থাকবে। বিষ্ণু ইজ হার বয়ফেন্ড। হি ইজ এ ভেরী ইন্টারেস্টিং ক্যারাক্টার। কতন চুপ করে থেকে আকাশ লম্বা শব্দে বলল, আশ্চর্য! আমি সেখানে থাকব কে-ন?
আমি বলছি, তাই তু-মি থাকবে!
তুমি কে?
ঋতু তার কথার উত্তর করল না। শুধু বলল,
আকাশ আমি মোবাইলে তোমাকে কল করব। তখনই বলা হবে, আমি কে?
আমার মোবাইল নেই!
নো ম্যাটার, মোবাইল ম্যানেজ হয়ে যাবে! বাই!
বাই।
ঋতু সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল। পেছনে নুপুরের মৃদু ঝংকার। সে শব্দে আকাশ হারিয়ে গেছে। ঋতু পেছন ফেরে তাকাল, আকাশ সত্যি হারিয়ে গেছে! সে আবার কয়েকটা সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে উপরে উঠে আকাশের কাছে এসে ফিঁশফিঁশে গলায় বলল, আকাশ!
বল।
তুমি আমার পা দেখছিলে? আকাশ চুপ করে রইল।
আমি মিথ্যে বলা পছন্দ করি না। আকাশ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল,
আকাশ, তুমি আমার পার গোড়ালীর নূপুর দেখছিলে। পার আলতা দেখছিলে! পার আঙ্গুলের রূপার মল দেখছিলে! সত্যি করে বলবে দেখছিলে না!
আকাশ কথা বলল না।
শুধু হাসল।

চলবে ......................................
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৯:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×