ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- 'প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা' সংস্কৃতির শিকার লাখো মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মিছিলে আটকে যায় এই মহাসড়কের দু'দিকের যানবাহন।
প্রধানমন্ত্রী দেখলেন তাকে স্বাগত জানাতে হাজার-হাজার মানুষ সমবেত হয়েছে। সেসময় যানজটে আটকে ছিলো লক্ষাধিক সাধারণ জনগণ।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে যোগদান শেষে বুধবার সন্ধ্যায় দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিকাল থেকেই বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালের সামনে জড়ো হতে থাকে মূলত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বিমানবন্দর সড়কের একাংশে অবস্থান নেওয়ায় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রাত ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে গণভবনের উদ্দেশে রওনা হন। এজন্য, বিমানবন্দরের সামনের গোলচত্বর থেকেই গাড়ি আটকে দেওয়া হয়।
সন্ধ্যে থেকেই এ রাস্তায় যানবাহন চলাচল প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। এরপর, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য যানবাহন আটকে দেওয়া হলে উত্তরার আজমপুর পর্যন্ত বিশ্বরোডমুখী সব যানবাহন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। একই অবস্থা হয় একদিকে মহাখালী আর অন্যদিকে বাড্ডা থেকে বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালের আগে পর্যন্ত।
আট লেইনের সড়কে সচল শুধু দুই
দলীয় সিদ্ধান্তে বিকাল থেকে মিছিল, ট্রাক মিছিলের বহর, মটর সাইকেল আর বাসে করে স্লোগান দিতে দিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হযরত শাহজালাল (রা) বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালের বাইরে মহাসড়কে সমবেত হতে থাকে। এক পর্যায়ে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর ভিড়ে চার চার আট লেইনের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দু'দিকে মাত্র এক এক দুই লেইন দিয়ে যানবাহন চলতে থাকে। একসময় তাও বন্ধ হয়ে যায় কিছুক্ষণের জন্য।
সড়কের দু'পাশেই একেবারে বাম দিকের লেইনটি বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তার দু'পাশেই এই লেইনে প্রধানমন্ত্রী অর্ভ্যথনা জানাতে আসা নেতাকর্মীদের বহনকারী বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, গাড়ি এবং মটর সাইকেল পার্ক করে রাখা ছিলো।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা সন্ধ্যা সাতটার আগে মহাসড়কের বিমানবন্দর সংলগ্ন অংশের দু'দিকে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এতে করে যান চলাচল একেবারেই থেমে যায় কিছুক্ষণের জন্য। এমনকি, প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে আসা মন্ত্রিসভার সদস্যদেরও বিমানবন্দরের ভিভিআইপ লাউঞ্জে ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছে।
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মাইকিং শুরু করা হয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের পক্ষ থেকে। কর্মীদের সড়কের দুপাশে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে যান চলাচলের সুযোগ করে দিতে বলা হয়।
এতে পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতি হয়। ধীরগতিতে যান চলাচল শুরু হয় বিমানবন্দর সড়কে।
তারা কিভাবে কতক্ষণে এলেন
সন্ধ্যে থেকেই সারিবদ্ধভাবে পথচারীদের এয়ারপোর্ট সড়কের পাশের ফুটপাথ দিয়ে উত্তরার দিতে যেতে দেখা গেছে। এর মধ্যে, অনেক মটরসাইকেল চালক রাস্তায় থেমে থাকা গাড়ির সারি দেখে উঠে গিয়েছিলেন ফুটপাথে। এ নিয়ে, দু'পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়েছে।
অনন্য পরিবহনের হেলপার রফিক সন্ধ্যে সোয়া ৭টার দিকে একই জায়গায় বাসের দরজার দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের জানান, তারা আড়াই ঘণ্টায় মহাখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এসেছে।
সন্ধ্যা ৭টা ৫৪ মিনিটে দু'জন বিদেশি দলীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের পাশ কাটিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে বিমানবন্দরের দিকে যেতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে তাদের মধ্যে মারিয়া নামের একজন জানান, তারা কোথায় গাড়ি থেকে নেমেছেন তা জানেন না। তবে, ১০ মিনিট ধরে তারা হাঁটছেন। তারা ডেনমার্কের নাগরিক এবং রাত সাড়ে ৮টায় তাদের ফিরতি ফ্লাইট।
এরপর পর ভিভিআইপি টার্মিনালের প্রবেশপথে কথা হয় লক্ষীপুরের ইসমাইল ও মোহাম্মদ চৌধুরীর সঙ্গে। তারা জানান, তারা বিশ্বরোডে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটছেন। রাত ৯টার ফ্লাইটে তাদের সৌদি আরব যাওয়ার কথা।
গুলশানে কর্মকর্ত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি মোহাম্মদ হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি উত্তরায় থাকেন। বিশ্বরোড থেকে হেঁটে বাসায় ফিরছেন।
গুলশানের আরেক বেসবরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নায়লা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তিনি গুলশান দু'নম্বর গোল চত্বর থেকে সন্ধ্যা ৬টায় রওনা দিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় উত্তরার রাজলক্ষীতে এসে পৌঁছেছেন।
উত্তরার বাসিন্দা লায়লা আজিজ জানান, তিনি তার মেয়ের ধানমন্ডির বাসার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন একটি জরুরি কাগজ পৌঁছে দিতে। কিন্তু, উত্তরার জসিমউদ্দিন রোডের পূর্বপান্তে গিয়ে এয়ারপোর্টমুখি থেমে থাকা সারি সারি গাড়ি দেখে ফিরে এসেছেন।
যে কারণে দলের এ আয়োজন
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বিশেষ করে শিশুমৃত্যুর হার কমানোয় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করায় বাংলাদেশ এবছর জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছে। পুরস্কারটি গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ জাতিসংঘ পুরস্কার পাওয়ায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো তাদের দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
সংবর্ধনারাত ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর ভিভিআইপি টার্মিনাল থেকে বের হয়। সেসময় দলীয় সমর্থকরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে এবং এই স্লোগানের তালে তালে ব্যান্ডপার্টি বাজনা বাজাতে থাকে। সড়কের দু'পাশে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায়, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্লোগান দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী তাকে বহনকারি এসইউভি'র সামনের আসনে বসে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাস্যোজ্জ্বল মুখে হাত নাড়েন।
এসময় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) পরিবেষ্টিত প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর স্বাভাবিক গতির চেয়ে আস্তে আস্তে এগুতে থাকে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসইউএম/পিডি/২৩১০ ঘ.

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





