somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শৃঙ্খল আর দাসত্বের স্মৃতি

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ ভোর ৫:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link


কাসিমু তিউতে কে বাইসাইকেলের পেছনের সীটে বসিয়ে নিয়ে এসেছিল তার সবচেয়ে ছোট ছেলে আর বড় ছেলের ঘরের নাতি,যে কিনা আবার কাসিমুর ছোট ছেলের চেয়েও বড়।বাইসাইকেলের পেছনের সীটটা বিশেষভাবে তৈরি করা,বোধহয় কাসিমুর বসবার সুবিধার জন্যই। তাকে সাইকেলে বসিয়ে টেনে নিয়ে তার ছেলে আর নাতি।
কুঁজো হয়ে গেছেন তিনি তবে মুখের চামড়া এখনও লোল চর্ম হয়ে যায়নি।তিনি যখন আমাকে বললেন,আসসালামুআলাইকুম....যে হাসিটা তিনি দিলেন,শিশুর মতো অম্লান।মুগ্ধ হ'বার মত,রাজ্যের সরলতা যেন ঝড়ে পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছেন?
আগের চাইতে অনেকটা ভাল, তাহের অনুবাদ করে বলল, আপনার সঙ্গে দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে এসেছেন।
আবারও মুগ্ধ হলাম।এরকমটি সচরাচর ঘটেনা,ভাল হয়ে যাবার পর অনুঘটককে মনে করাটা প্রায় বিরল ভদ্রতার মধ্যেই পড়ে আজকাল। সেদিন অনেক মানুষের ভিড়ে তার সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলা হয়ে উঠেনি।আজ পারা যাবে।পুরো নাম জিজ্ঞাসা করায় আইডি কার্ড এগিয়ে দিলেন।চমকে উঠলাম।জন্ম সাল লিখা আছে পরিষ্কার ইংরেজীতে "১৯২৬"।তার মানে এই বৃদ্ধ নব্বই ছুঁই ছুঁই! অথচ দেখে বা কথা শুনে মনে হয়না তো। ছেলেবেলার কথা মনে আছে কিনা জিঞ্জাসা করায় বললেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কথা তার মনে আছে। আরও মনে আছে ফরাসী উপনিবেশের সময়কালের অত্যাচারের।কথা বলতে বলতৈ আনমনা হয়ে যান কাসিমু।দূরের বাউবাব গাছের দিকে তাকিয়ে কোন সুদুরে হারিয়ে যান....।

১৮৮৭ সালে লেঃ লুই গুস্তাফ বিঙ্গার আইভরিকোষ্টের ভেতরে বছর দুয়েকের অভিযানে আবিষ্কার করেন এদেশটির ফরাসী উপনিবেশ হওয়ার সম্ভাবনা। বিঙ্গার ৪টি চুক্তি সম্পন্ন করেন।১৮৯৩ সালের মধ্যে এটি ফরাসী উপনিবেশে পরিণত হয়।ক্যাপ্টেন বিঙ্গার প্রথম গভর্ণর নিযুক্ত হন।স্হানীয় ট্রাইবাল নেতারা বুঝতেই পারেননি সহযোগীতার চুক্তির নামে কিভাবে দেশকে বিকিয়ে দিলেন,কিভাবে তাদের মুক্তজীবন আর জমি ইউরোপীয় শঠতার কাছে হেরে গেল। ফরাসীরা তাদের ব্যাবসার প্রয়োজনে চালু করল 'বাধ্যতামূলক শ্রম প্রথা'যার আওতায় প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক আইভরিয়ানকে বছরে ১০ দিনের জন্য "দেশের প্রতি দায়িত্ব" হিসাবে বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে বাধ্য করা হতো।ফরাসীরা এদেশ চালাতো দু'নীতির ভিত্তিতে -আত্নীকরণ (assimilation) আর সহযোগীতার(association) নীতিতে।যার মনে হল ভাষা,সংস্কৃতি,প্রতিষ্ঠান,আইন সবকিছুতেই ফরাসী ভাবধারা চালু করা।সহযোগীতার নীতিতে মানা হতো তাই,শুধুমাত্র যা ফরাসী স্বার্থের সাথে সংঘাত হতোনা।১৯৩০ সালের দিকে পশ্চিমা ভাবধারায় শিক্ষিত কিছু আইভরিয়ানকে ফরাসী নাগরিকত্ব্ব দিয়ে 'ধন্য' করা হল।কিন্তূ সহযোগীতার নীতির আওতায় তারা খনি আর কৃষিতে শ্রম দিতে বাধ্যই থাকলো।
সুবিধাপ্রাপ্ত প্রভাবশালী আইভরিয়ানদেরকে হাতে রখার উদ্দ্যশ্য ছিল "মহৎ"-যাতে তারা মাথাচাড়া দিতে না পারে।
আশ্চর্যের বিষয় হল এখনও অনেক আইভরিয়ানের দেখা পাওয়া যায়,যারা মনে করে assimilation ও association এর নীতিতেই তাদের উন্নতি সম্ভব। তৃতীয় বিশ্বের টিপিকাল চিন্তা !
০৭ আগস্ট ১৯৬০ সালে এইদেশ ফরাসীদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায়।সে অন্য কাহিনী। কিন্ত আদৌ মুক্তি পায়নি কাসিমুরা।সোনা,কোকো,কফি থেকে পাওয়া আর্থিক সুবিধার সিংহভাগই "নেপোয় মারে দই" হয়ে যায়।

"গুরো" মা আর "কয়াকা" বাবার সন্তান ৯০ ছুঁই ছুঁই কাসিমু তিউতর ঘোলাটে চোখ গুলো বাষ্পাচ্ছন্ন হয়ে উঠে বাধ্যতামূলক শ্রমের আওতায় তাকে ধরে নিয়ে যাবার কথা স্মরণ করে।হয়তো একটু কেঁপেও ওঠেন পিঠে হান্টারের দাগের কথা মনে করে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৭:১৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×