একদিনের ঝটিকা সফরে বাড়ী গিয়েছিলাম। শৈশব কৈশোর এর স্মৃতিমাখা শহর। মনে হয়েছিল খুঁজে পাবো হারানো স্মৃতির টুকরো টাকরা!
কিন্তু আশাহতের বেদনা নিয়ে ফিরে এলাম। নগরপিতারা আমার স্মৃতির শহরটিকে হত্যা করেছে। পরিকল্পনাহীন অকল্পনীয় দুর্বৃত্তায়নের ছাপ সমস্ত শহর ঘিরে...
পা ফেলবার জো নেই...মার্কেট মার্কেট... পা ফেলবার জো নেই সিএনজি, রিকশা আর ব্যাটারি চালিত যানে ভর্তি। যে শহরে রুপবাণী থেকে রুপসী বা জেলা সদরে হেটে যাওয়া যেত ২০ মিনিটে, রিকশায় ১০ মিনিটে এখন হেটে যেতে লাগবে একঘন্টা রিকশায়ও একই সময়। পা হাটু আস্ত থাকবে কিনা জানিনা, যাদের বাত ব্যাথা বা কোমড়ের গিরা দুর্বল তাদের জন্য আরো বিপদ অপেক্ষা করছে...!!
কতদিন রাস্তাগুলির পরিচর্যা হয়নি কে জানে?
কোন বরাদ্দ কি নেই মেরামতের জন্য? রাতের বাতিগুলো, শহরের ভাগার গুলো, উপচে পড়া ময়লা পরিষ্কারের জন্য কি কোন বরাদ্দ নেই??
একটা শহর কি শুধু মার্কেট?
কি পরিমান অট্টালিকা উঠছে সেগুলোর পয়:প্রণালী ধারন, পানি সরবিরাহ, বিদ্যুৎ, গ্যাস এগুলির কি কোন সমন্বিত পরিকল্পনা আছে?
আগামী ১০/২০ বছর পর কি দাঁড়াবে শহরটার চেহারা কেউ কি কল্পনা করতে পারছেন?
মনে পড়লো বিন্দুবাসিনী স্কুল থেকে ছুটির পর পাবলিক লাইব্রেরী থেকে হালিম ভাইয়ের কাছ থেকে বই ইস্যু করিয়ে ভিক্টোরিয়া রোড ধরে রওশন টকিজ ডানে রেখে বাসায় ফিরছি....তর সইতো না দেবসাহিত্য কুটির, ঝামাপুকুর লেন এর বই গুলোর গন্ধ নিতে নিতে কবি তারাপদ রায়ের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে বই উল্টাতাম। রফিকুল আলম মিন্টু ভাই বা তাহেরা আরিফা অনু আপা বইটা কি আগেই পড়ে ফেলেছেন নাকি? পায়ের স্যান্ডেল কেন যেন পায়ে থাকতে চাইত না...ডান পা থেকে এক লাথে স্যান্ডেল সামনে, কদম বাড়িয়ে স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে বাম পায়ের টা লাথ মেরে সামনে...চলত এভাবে এগিয়ে যাওয়া..বইয়ের পাতা উল্টানো। দু চারটা রিকশা টুং টাং বেল বাজিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেত। ফায়ার সার্ভিসের কাছে পৌছানোর পর টের পেতাম বাবুল ভাই আবু পাগলারা রেনেসাঁ ক্লাবে হ্যারিকেন জালিয়ে তাসে মত্ত হয়েছে....
আর একটু এগোলেই ফায়ার সার্ভিসের উচু ব্রীজ... বর্ষায় ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে পড়লে আমাদের বাসার সামনে উঠা যেত...আবিষ্কার করতাম গ্রামের বাড়ী থেকে ধান নিয়ে নৌকা এসে থেমেছে...
সেই শহর আর শহর নেই!! গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে...
সব শহর গুলির জন্যই বোধহয় এটা সত্য.।।।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২১