somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

দূর্নীতির আরেক চিত্রঃ রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্টের নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। নেই কোন নীতিমালা।!!!!

২৭ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে সাগর অতল"- ছোটকালে আমরা সবাই কম বেশি এই ভাব-সম্প্রসারন পড়েছি। এই ভাব সম্প্রসারনের মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এই বলে যে, ছোট ছোট কিছু মিলে অনেক বড় কিছু হতে পারে। তাই ছোট কিছুকে অবহেলা করা উচিত নয়। পূরানো এই কথাটির সত্যতা সম্প্রতি আবারো প্রমানিত হয়েছে। আমাদের দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই নীতি বাক্যের উপর ভর করে বেশ চমৎকার ভাবে চোখের সামনেই দূর্নীতি করে যাচ্ছে। ছোট ছোট বলে আমরা দেখতে পাইনা। আর এই ছোট ছোট দূর্নীতির আধুনিক টার্ম হলো "রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট"। আর এই ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে আমাদের দেশের প্রতিটি সুপার শপ, চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট, কফিশপ সহ সেবা বিক্রয়কারী নানা প্রতিষ্ঠান।

প্রশ্ন করতে পারেন "রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট" কি?

উত্তরঃ "রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট" হলো এমন একটি গানিতিক প্রক্রিয়া, যা মূলত কোন একটি পন্যের আসল দামের সাথে যে কিছু খুচরো পয়সা থাকে তাকে সম্বনয় করে বাস্তবে পরিশোধ করা যাবে এমন একটি নিয়ম। যেমন ধরুন, আপনি একটি পন্য কিনলেন, তার দাম ১০ টাকা। এর সাথে ভ্যাট এবং অন্যান্য সারচার্জ যোগ করে তার দাম দাঁড়াল ১০.৪৩ পয়সা। এই ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী, আপনি হয় ১০.৪০ পয়সা পরিশোধ করবেন, নতুবা ১০.৪৫ পয়সা পরিশোধ করবেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাধারনত, ২ পয়সা যোগ করে অথবা ২ পয়সা বিয়োগ করে এই "রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট'' এর কাজ চালানো হয় অথবা সর্বোচ্চ পাঁচ দিয়ে ভাগ করা যাবে মূল সংখ্যার কাছাকাছি এমন সংখায় রুপান্তর করা হয়। পৃথিবীর সকল দেশেই রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট নিয়ে একটি নীতিমালা আছে।

বাংলাদেশে রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্টঃ

উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশেও রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট প্রচলিত আছে। বিভিন্ন শপিং সেন্টার, দোকানপাট, খাওয়ার দোকান এবং বিশেষ করে সুপার শপগুলোতে যেখানে কাউন্টার পেমেন্ট করা হয় সেখানে এই রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট প্রয়োগ করা হয়।

সচেতনতার এবং নীতিমালার অভাবে যেভাবে প্রতিদিন লোপাট হচ্ছে হাজার হাজার টাকাঃ

ধরা যাক, আপনি কোন একটি সুপার শপে গেলেন, একটি পন্য কিনতে। পন্যটির দাম ১৩ টাকা। ভ্যাট সহ দাম আসলো ১৩.৫২ টাকা। আপনি যখন কাউন্টারে দাম দিবেন, তখন এর দাম রাখা হবে ১৪ টাকা। অর্থাৎ আপনার কাছে থেকে .৪৮ পয়সা তার বেশি রেখে তারা একটি রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট করেছে। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে ব্যাপারটা খুবই অল্প মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি বড় পরিসরে দেখেন, তাহলে চমকে উঠবেন। ঢাকার একটি নামকরা চেইন সুপার শপ হলো আগোরা। ঢাকা শহরে এর প্রায় ১০ টি শাখা হয়েছে। এর প্রতিটি শাখায় প্রতিদিন গড়ে ৮০০-১০০০ মানুষ ছোট বড় নানা রকম পন্য কিনতে আসে। কম করেই ধরি, গড়ে প্রতিদিন একটি ব্রাঞ্চের ৮০০ মানুষ থেকে যদি .৪৮ পয়সা বেশি নেয়া হয় তাহলে, দিন শেষে তা দাঁড়ায় ৩৮৪ টাকা। মাস শেষে তা দাঁড়ায়, ১১,৫২০ টাকায় এবং বছর শেষে দাঁড়ায় ১,৩৮,২৪০ টাকা এবং দশটি শাখায় তা দাঁড়ায় ১৩,৮২,৪০০ টাকা। যদি আপনি পাঁচবছরের হিসাব করেন তাহলে তা দাঁড়ায়, ৬৯,১২,০০০ টাকা। আর দশ বছরে, ১,৩৮,২৪,০০০ টাকা তারা বাড়তি আয় করলো।

তবে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ধানমন্ডির শাখায় প্রতিদিন প্রায় ১২০০-১৫০০ জন ক্রেতা তাদের পন্য ক্রয় করতে আসেন।সেই হিসাবে বাড়তি হাতিয়ে নেয়া টাকার পরিমান আরো অনেক বেড়ে যায়।

এই ব্যাপারে আগোরার কতিপয় কর্মকর্তার সাথে যোগাকরা হলেও তেমন কেউ কথা বলতে রাজি হননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ম্যানেজার জনার আশ্রাফ এর সাথে কথা বলি। তিনি একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানালেন, বাজারে পয়সার অভাব রয়েছে। এই পয়সার অভাবের কারনে তারা রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্টটা করেন দুই ভাবে। পঞ্চাশ পয়সার নিচে হলে তারা সেটা গন্য করেন না। আর পঞ্চাশ পয়সার বেশি হলে সেটা কাষ্টমারকে বহন করতে হয়।

কিন্তু বাস্তবে যখন খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, মূল টাকার পাশাপাশি বাড়তি যে পয়সা যোগ হয়, তা যে পরিমানই হোক না কেন, তা একজন ক্রেতাকে পরিশোধ করতে হয়। এই প্রসংগটি যখন বলা হয়, তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি জানান, তাদের নিয়ম আছে, কেউ যদি সেই বাড়তি টাকা না দিতে চায় তাহলে সেটা তারা নিবেন না।

কি হাস্যকর একটি কথা, যেখানে একটি পন্যের দামের চেয়ে বেশি টাকা মূল দাম হিসেবে রাখা হয়, সেখানে আবার ক্রেতার ইচ্ছা আর অনিচ্ছার মূল্যায়ন- আর যাই হোক, শুনতে হাস্যকরই শুনায়।

এই ব্যাপারে ব্যাংকগুলোতে যোগাযোগ করি আমি, কিন্তু কারো কাছ থেকেই তেমন কোন সাড়া পাইনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারী ব্যাংক এর একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেছেন, এই রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্টের তেমন কোন সরকারী নীতিমালা নেই। তাই ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতন সারচার্জ বসায়। তবে যদি অনলাইনে টাকা পরিশোধ করা হয় সেই ক্ষেত্রে রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্টের দরকার পড়ে না।


এই তথ্যগুলো অনেক ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সংগ্রহ করতে হয়েছে। কারন এইসব বিষয়ে সরাসরি কেউ কথা বলতে রাজি হয় না। একজন আমাকে উল্টা কথা শুনিয়ে দিলেন, আসলে হলমার্ক কেলেংকারীর মত বড় ঘটনা মানুষ হজম করে ফেলেছে আর আপনার এই দু'চার পয়সার দূর্নীতির খবরে মানুষের কিছুই হবে না। কথা কতখানি সত্য মিথ্যে জানি না। তবে একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের উচিত সচেতন হওয়া। আমি এখানে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে কিছু বলি নি, একটি উদহারন হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই সামগ্রিক ব্যাপারটি আমি মনে করি সরকারী অবহেলার কারনে হচ্ছে। সুষ্ঠ নীতিমালার অভাবে, এই প্রক্রিয়াটি জনগনের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার একটি অবৈধ প্রক্রিয়াতে পরিনত হয়েছে।

যা করনীয়ঃ

আমি মনে করি, সরকার অবিলম্বে এই ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা প্রয়োগ করুক। বাজারে যদি পয়সার সংকট থাকে, তাহলে সেই ক্ষেত্রে অন্য কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, তা নির্ধারন করুক।

সর্বোচ্চ কত পয়সা এ্যাডজাস্টমেন্ট করা যাবে, সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে।

যতদিন পর্যন্ত না এটা করা হবে, ততদিন পর্যন্ত এই রাউন্ডিং এ্যাডজাষ্টমেন্ট প্রথা প্রয়োগ করা যাবে না।


সর্বপরি আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। একটি টাকা আয় করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। আমাদের সচেতনতার অভাবে যদি অন্য কেউ লাভবান হয়, তাহলে সেটা দোষ কিছুটা হলেও আমাদের উপর বর্তাবে।

তথ্যসূত্র সমূহঃ lawyerment
Bank Negara Malaysia
রহিম আফরোজ, এবং wikipedia
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৬
৩৬টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×