somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

আঁতেল- একটি ভয়াবহ ছোঁয়াচে বুদ্ধিজীবি ভাইরাস।

২২ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট বোন আচমকা পিছন থেকে এসে জিজ্ঞেস করল, ভাইয়া আঁতেল মানে কি?
চমকে উঠে কিছুটা থতমত খেয়ে পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম, কি বলতে চাও?
আমার কন্ঠে কিছুটা জলদ গম্ভীরতা আঁচ করে বেচারী সাথে সাথে বলল, তোমাকে তো বলি নাই। এমনিতে জানতে চাইলাম, আঁতেল কারা?

কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, দুনিয়ার আর জানার কিছু পেলে না, শেষ পর্যন্ত আঁতেল শব্দের মানে জানতে হবে। যাও গুগলে সার্চ করে দেখো।
আমার এই জবাবের পরেও দেখলাম, ও পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের ইশারায় বুঝালো, এই ধরনের ধরি মাছ না ছুই পানি টাইপের জবাবে ওর পোষাবে না। বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাই।

আমি বললাম, দেখো বাপু আঁতেল সম্পর্কে বলতে গেলে কিঞ্চিত আঁতেলে পরিনত হবার সম্ভবনা থাকে। মহামারীর সময়ে আমি এই দ্বৈত বিপদের সম্ভবনা নিজের উপর নিতে পারি না। আমার রক্ষে করো।

আদরের বোন বলে কথা। তাছাড়া মেয়েদের চোখের মায়ার কাছে যেখানে বড় বড় যোদ্ধাদের পরাজয় হয়েছে, আমি তো সেখানে সামান্য এক ভাই। তাই করোনা ও আঁতেলগিরি থেকে রক্ষা পাবার জন্য দোয়া পড়ে বুকে তিন ফু দিয়ে বললাম, বসো।

আঁতেলদের নিয়ে কেউ এত আগ্রহ দেখাতে পারে আমার জানা ছিলো না। পরিচিত কোন আঁতেল যদি টের পায় তাহলে সর্বনাশের চুড়ান্ত হতে আর বাকি থাকবে না। আঁতেল নিয়ে জানার আগ্রহ যে একটি অপরাধ হতে পারে, সেটা সেই মুহুর্তেই টের পাবেন। সম্ভাব্য প্রশ্ন হতে পারে - আঁতেল নিয়ে এই যে জানার আগ্রহ তা কি আপনি জীবনবোধ থেকে পেয়েছেন নাকি কেউ অভিযোগ করেছে? যদি জীবনবোধ বা দর্শন থেকে পেয়ে থাকেন, তাহলে কোন আমলের দর্শন আপনাকে আঁতেল সম্পর্কে জানতে অনুপ্রানিত করেছে? প্রাক-সক্রেটীয় দর্শন নাকি প্রাচীন দার্শনিক তত্ব? আপনাকে দেখে ধরে নেয়া যায় - আপনি প্রাক-সক্রেটীয় দর্শনে বিশ্বাসী। কিভাবে আমি বুঝলাম? হা হা। আসলে তা বলতে গেলে আপনাকে দার্শনিক থেলিসের চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান রাখতে হবে। তিনিই প্রথমে পানি দর্শন সম্পর্কে আমাদেরকে জানান। আর সেই আলোকে .......।

- ভাইয়া, এই ভাইয়া?? কি হইছে? এইভাবে তব্দা মেরে বসে আসো কেন? কি বিড়বিড় করতেছ?
হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়ে বললাম, প্প... পানি দর্শন।
- কি?? পানি কি?
কিছুটা সম্বিত ফিরে পেয়ে বললাম, পানি আন! পানি খাবো।

ঠান্ডা পানি খেতে খেতে কপালের ঘাম মুছলাম। কি সর্বনাশ!! দোয়াটা ঠিকভাবে মনে হয় পড়া হয় নি। আঁতলামী ঠিকই উঁকিঝুঁকি মারছে। আবার দোয়া পড়ে ফু তো দিলামই সাবধানতা হিসেবে তিন তালিও দিলাম। তালির শব্দ যতটুকু যাবে, এর মধ্যে আতলামী ঢূকতে পারবে না। কিন্তু পাশ থেকে বোন কিছুটা অবাক বলল, হাত তালি দিলে কেন? তুমি কি হাত তালি দিয়ে আমাকে ডাকার চেষ্টা করছ?
তারপর কন্ঠে কিছুটা রাগ ঢেলে বলল, নিজেকে কি ভাবো? আগের দিনে রাজা? আমি দাসী বান্দী??
কি মুসকিল!! কি মুসকিল!! হতচ্ছাড়া আঁতেল!! কোথায় নিয়ে গেলো আমাকে। সাথে সাথে পাল্টা ধমক দিয়ে বললাম, আরে চুপ থাকো! অপ্রয়োজনীয় কথা! শুনো যা বলছি।

ছোট বোন কিঞ্চিত অভিমানে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকল। এর মানে হচ্ছে, হ্যাঁ বলো।

আমি বললাম, দেখো আঁতেল হচ্ছে এক ধরনের বুদ্ধিজীবি ভাইরাস। যাকে এই ভাইরাসে ধরে সে প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে বিভিন্ন স্থান, কাল, পাত্র ভেদে আঁতলামী করে বেড়ায়। উনারা সহজ কোন কথা বলতে পারেন না। প্রয়োজনে এবং অপ্রয়োজনে কথা পেঁচিয়ে একটি সাধারন বিষয়কে অসাধারন বিষয়ে রুপান্তর করতে পারে। উনাদের নির্দিষ্ট খাদ্য ও পানীয় আছে। মুল পানীয় চা এবং যন্ত্রনাহীন সকালের জন্য প্রতিরাতে ইসুবগুলের ভুষি।
ছোট বোন চোখ বড় বড় করে বলল, যন্ত্রনাহীন সকালের জন্য ইসুবগুলের ভুষি মানে? এটা কি আবার?
ছোট ধমক দিয়ে বললাম, সব কিছু জেনে কি আঁতেল হবা? যার যার পানীয় সে সে বুঝবে। আমাদের তো সব বিষয়ে জানার দরকার নাই।

ছোট বোন কিছুটা হতাশ হয়ে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বাদ দাও। তুমি যে বললা, উনারা সহজ করে কথা বলতে পারে না মানে কি?
এর মানে হচ্ছে, সহজ কথা বইলা কি মার্কেট ফাওন যাইব? পাভলিক কি বুঝবো যে তুমি বিদ্যা আর দর্শনের সাহারা মরুভুমি?

ছোট বোন ভ্রুকুটি করে বলল, বিদ্যা আর দর্শনের সাহারা মরুভুমি মানে? এটা কি ধরনের উপমা? সবাই বলে সাগর কিংবা পাহাড় কিন্তু মরুভুমি তো খালি? খালি কি করে পরিপূর্নের উপমা হয়?

আমি রহস্যের একটি হাসি দিয়ে বললাম, এটা একটা অদ্ভুত প্যারাডক্স। তারপর হাত দিয়ে বাতাসে থাবা মেরে কিছু একটা উড়ানোর মত ভঙ্গি করে বোনকে করে বললাম, আরে বোকা!! সাহারা মরুভুমি কত বড় দেখছ? এদের জ্ঞান ও পাঠ অভিজ্ঞতা এই মরুভুমির মতই বিশাল।

ছোটবোন খুবই সন্দেহপূর্নভাবে আমার দিকে তাকালো। আমি তা উপেক্ষা করে কথা চালিয়ে গেলাম। বললাম,
দেখো, অধিকাংশ আঁতেল তার আশেপাশের মানুষকে অন্ধ মনে করে। ফলে তাঁরা যে কোন জিনিস বর্ণনায় কালচারাল থিওরি, কলোনিয়াল চিন্তাভাবনা, বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা, প্রচলিত বিশ্বের উপর প্রশ্ন, আস্থা, অনাস্থা, বিভিন্ন শ্রেনী বৈষম্য, সংঘাত, ও দর্শনের একটি অভুতপূর্ব সংমিশ্রন ঘটিয়ে সেটার ব্যাখ্যা দেয়। ফলে একজন প্রকৃত অন্ধ পিপড়া সম্পর্কে জানতে গিয়ে আঁতেলদের কাছ থেকে বারবার হাতিই দেখেন।

ছোট বোন আমার দিকে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবলাম, দাঁড়াও, আঁতেল সম্পর্কে তোমার জানার শখ আমি মিটিয়ে দিচ্ছি। মুখে বললাম, চলো এবার তোমাকে আঁতেলের আক্ষরিক অর্থ কি সেটা বলি।

বোন আগ্রহ নিয়ে বলল, বলো শুনছি।
আমি বললাম, শুনো, আঁতেল শব্দটি মুলত, ফরাসি তেঁলেক্তুয়াল (intellectual) শব্দটি থেকে আঁতেল শব্দটির উৎপত্তি । আভিধানিক অর্থে, আঁতেল শব্দটির অর্থ পণ্ডিত, বিদ্বান, বুদ্ধিজীবী। ভাষাতত্ত্ববিদ পবিত্র সরকারের মতে, চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে এক বিশেষ শ্রেনীর বাঙালি বুদ্ধিজীবীর আত্ম প্রকাশ ঘটে। এরা নিয়মিত কফি হাউজে বসতেন, পরনে পাঞ্জাবি, আর নিজেদের মনে করতেন, 'আমরাই সেরা'। এই সব বুদ্ধিজীবীকে দেখে অন্যান্যদের বিদ্রুপ এবং প্রতিক্রিয়াতেই ‘আঁতেল’ শব্দটির প্রয়োগ শুরু।

এই চমৎকার জ্ঞানী মানুষটিকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো - আঁতেলদের আপনার কেমন লাগে? আর কেউ যদি আপনাকে আঁতেল বলে তাহলে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে?
তিনি বলেছিলেন, “আমি তো গ্রামের ছেলে। কলেজে পড়াকালীন এই আঁতেলদের ভয়ই পেতাম, এখনও ভয় পাই।”
“কেউ আমাকে আঁতেল বললে কষ্ট পাব। কারণ আমার বিশ্বাস, আমি কখনও কিছু জাহির করতে চাই না। এখন যেমন পড়ুয়াদের অনেক সময় দেখি কথায় কথায় ‘কালচারাল থিয়োরি’, তৃতীয় বিশ্বের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করছে। ঠিক বুঝতে পারি না কতটা বুঝে বা না বুঝে বলছে।”

কথা শেষ করে, গ্লাসের পানিটা একটা লম্বা চুমুকে শেষ করলাম। কিছুটা দম ফেলে ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে যখন বলতে যাবো, 'এই তো আর কি জানতে চাও?' ঠিক তখনই দেখলাম, প্রচন্ড বিরক্তিতে আমার বোনের ভ্রু দুটো কুঁচকে আকাশে উঠেছে। শেষমেষ জিজ্ঞেস করলাম, কি? কি হইছে??

ও রেগে গিয়ে বলল, তারমানে সহজ কথায়, আঁতেল মানে যিনি নিজের অর্জিত জ্ঞান আজাইরা ফলাইতে চায় সেই তো??
আমি মৃদ্যু হেসে বললাম, হ্যাঁ রে!!

সাথে সাথে কর্কষ শব্দবানে জর্জরিত হয়ে আমি শুনলাম, তাহলে হুদাই এত প্যাচাল কেন পাড়লা? প্রথমেই এই কথা সহজ ভাবে বলতে পারলা না? তুমিও দেখি আঁতেল!!

সাথে সাথে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। কানে বাজতে লাগল, তুমিও তো আঁতেল। তুমিও আঁতেল, আঁতেল তেল তেলললললল।
মনে হলো চিৎকার দিয়ে বলি !! নাআআআআআআআআআ। ( যেভাবে বাংলা ছবিতে শাবানার 'না' প্রতিধ্বনিত হয়)। আমি আঁতেল নই। কেউ বিশ্বাস করো!! করো না!!

হাতে তালি, বুকে ফু কিছুতেই কিছু হলো না। বুঝলাম- আঁতেল দিয়ে নিয়ে বলতে গিয়ে আমি নিজেই আঁতলামীর শিকার হলাম। আবারও প্রমানিত হইলো, করোনার চেয়েও একটি ভয়াবহ ছোঁয়াচে ব্যাধি।



বিঃদ্রঃ ইহা একটি কাল্পনিক গল্প। জীবিত বা মৃত কারো সাথে মিল খুঁজে পাওয়া নিতান্তই কাকতালীয়।


সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪৭
৬৩টি মন্তব্য ৬২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×