somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেখে এলাম পর্বতের শহর আল-আবহা পর্ব -৩

২৭ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এরপর আমরা দেখতে বের হলাম আল-আবহা তথা সৌদি আরবের সর্বোচ্চ টিলা সোঁদা পাহাড়।শহর থেকে আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথে রওয়ানা দিলাম।পাহাড়ী রাস্তায় কোথাও গাড়ী নিচে নেমে যাচ্ছে কোথাও বা উপড়ে।চলতে চলতে আমরা গিরিপথের এক স্থানে গাড়ী থামাতেই এক বিশাল আকারের আরবিয়ান বেবুন লাফ দিয়ে এসে গাড়ীর বনেটে বসে পড়লো। আমরা ভয়ে বেশ কিছুক্ষণ গাড়ীতেই বসে রইলাম।একটু পর নিজ থেকেই লাফিয়ে নেমে গেল। আমি তখন ভয়ে ভয়ে গাড়ী থেকে বের হয়ে দেখি বেবুন অর্থাৎ বানরের মেলা,রাস্তার আসে পাশে এবং পাহাড়ের গায়ে গায়ে।আমিতো ভয়ে কাপছি,সঙ্গী মধুমিতা ভাইও।


আমরা যেখানে নেমেছি সেখান থেকে বেশ ভালবাবে দেখা যায় থিরা পাহাড়ের চুড়া থেকে নিচে রিজ আল-আলমা গ্রামে নামার সর্পিল পথ।এতো ঊচূ থেকে নেমে আসার রাস্তা দেখে যেকোন লোকেরই ভয় লাগার কথা।আমার আগের অভিজ্ঞতায় নিচে নেমে যাওয়া সহজ হলেও ঊপড়ে ফিরে আসা হবে ভয়াবহ।তাই সবিনয়ে আমরা ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
নিচে নেমে পাহাড়ের পাদদেশে রিজ আল আলমা গ্রাম সমতল ভুমিতে ৪০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী প্রাচীন প্রসাদ আল-আলোয়ান সম্পর্কে জেনেছিলাম এই মধুমিতা ভাইয়ের পোষ্ট থেকে।এখান থেকে পড়ে নিতে পারেন


একটু এগিয়ে গিয়েই রাস্তার বাকে ল্যান্ডিং এড়িয়াতে বেশকিছু পিকাপ ভ্যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নেমে পড়লাম।সেখানে পাহাড়ি বেদুরা তাদের রংবেরঙের পোষাক গায়ে পাহাড়ী মধু ,নানান রকমের মশল্লা এবং ধুপ বিক্রির জন্য দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের প্রত্যেকেরই কোমড়ে রয়েছে জাম্বিয়াহ(বিশেষ রকমের ড্যাগার)। এই ছুরি নিয়ে একটি যুবকের সঙ্গে আমরা বেশ মজাও করে নিলাম।


এরপর চলে এলাম রোপকার বা কেবলকার ষ্টেশনে,এখান থেকে ১৪টি গাড়ী তিনটি স্থানে যাত্রীদের নিয়ে যায় যা সৌদি আরবের মধ্যে সবচে বেশী দূরত্বের কেবল রাস্তা।আমার খুঊব ইচ্ছে ছিল এই ঝুলন্ত গাড়ীতে করে আল-হাবালা গ্রামে যাওয়ার।


এই হাবালা গ্রামটি সম্পর্কে অনেকদিন আগেই জেনেছিলাম।হাবল আরবী শব্দার্থ হচ্ছে দড়ি।এই গ্রামের বাসিন্দারা বিখ্যাত কাহতানী বংসের একটা ক্ষুদ্র অংশ এবং এরা বহু বছর আগে তুর্কি রাজার ভয়ে পালিয়ে এসে ৪০০মিটার খাড়া পাহারের গায়ে অবস্থান নেয়।সেখানে যেতে হলে একমাত্র দড়ি বেয়ে যেতে হতো। এই জাতি যুগের পর যুগ এই ভুতুরে স্থানেই লোক চক্ষুর আড়ালে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে যাচ্ছিল।কিন্তু খনি গভেষনার জন্য একটি দল যখন সেদিকে হেলিকপ্টারে নিয়ে ঘুড়ছিল তখন তাদের নজরে আসে এই গ্রামটি। পরবর্তিতে বাদশা ফয়সাল তাদেরকে উদ্ধার করে অন্যত্র স্থানান্তর করেন।

এছাড়াও কেবলকারে করে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ পাহাড় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ কিঃমিঃ উপর) সোঁদা পাহাড়ের সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। বছরের বেশিরভাগ সময়ই এই সোঁদা পাহাড় মেঘে ঢাকা বা কুয়াসাছন্ন থাকে।আমার ক্যামেরায়তো ছবিই আসছিলনা।


আবার এই পাহাড়ের ফাকেই আসির পাদদেশে ১৫কিঃমিঃ দীর্ঘ একটি বিশাল হ্রদ রয়েছে,যা নাকি ঝরনাকারে ছরিয়ে পড়ে।

আমার এসবের কিছুই দেখা হলোনা , কারন সেদিন কেবল কার বন্ধ ছিল।সম্ভবতঃ ছুটির দিনে পর্যটকদের জন্যই এরা বেশী ব্যবহৃত হয়।তাই দূর থেকেই কুয়াচ্ছন্ন পাহাড়ের দৃশ্য দেখে দুধের স্বাধ ঘোলে মিটিয়ে এলাম।

আর হ্যা,এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের অপরূপ সৌন্দর্যের কাছে হয়তো এটা নস্যি।কিন্তু দীর্ঘদিন সৌদি আরবে থেকে আমি বালু আর সমুদ্রের পানি ছাড়া কিছুই দেখিনি।এখানে সবুজ পাহাড় /ঠান্ডা আবহাওয়া দেখে আমি সত্যিই অবাক।
আপাততঃ এটাই শেষ পর্ব।
যদি আবারো কখনো আল-আবহা যাই এবং কেবল কারে চড়ে প্রাচীন প্রসাদ আল-আলোয়ান, মালহা গ্রামে বা রিজ আল আলমা অথবা থিরা পাহাড়ের সর্পিল রাস্তা ভ্রমন করি তবে কথা দিচ্ছি, আবারো লিখবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×