somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতির জানালায় বৈশাখ

১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছোটবেলায় বৈশাখ মাসের আগমন হৃদয়ে বসন্ত এনে দিত। এর কারণ ছিল এই মাস ছিল উৎসবের। সারা মাসব্যাপী গ্রামে একটা রমরমা অবস্থা বিরাজ করত। আমার নিজ গ্রামে এই মাসে দুইটি মেলা হত। পার্শ্ববর্তীপ্রায় প্রতিটি গ্রামেও বসত মেলার আসর। মেলার দিনে গ্রামে প্রায় প্রত্যেক ঘরেই মেহমানদের আগমন ঘটত। সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের এক অপূর্ব শোভা ঠিকরে ঠিকরে পড়ত পাড়া মহল্লার প্রতিটি ঘরে ঘরে।

প্রখর রৌদ্রের কারনে বিকেল বেলা মেলায় মানুষের ঢল নামত। হরেক রকমের মিষ্টি-মিঠাই, খেলনা ও ভেপু-বাশির সুরে গমগম করত মেলার প্রাঙ্গন। মেলা শেষে সন্ধ্যায় বসত গানের আসর। লোকগীতি, ভাওয়াইয়া ও পালাগানের মোহনীয় সুর সবাইকে আনন্দলোকে ভাসিয়ে নিত। পল্লী প্রকৃতির রূপ-বর্ণনা, গ্রামীন মানুষের জীবনগাথার শাব্দিক প্রকাশ এসব গানের সুরে প্রাণ লাভ করত। চাঁদনী পসর রাতে জোছনার মিতালি এক অপরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করত চারপাশে। রাতের নিস্তদ্ধতা ছেয়ে গানের সুর ভেসে যেত দূর থেকে বহুদূরে। এমন নিটোল সুন্দর দৃশ্যের রূপায়ন এখন আর দেখতে পাই না? কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে সব। গ্রাম বাংলার প্রাণ-জুড়ানো এসব গানের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে।

গানের সুর হারিয়ে গেলেও মেলার আসর এখনও জমে আগের মত। তবে গ্রামীণ জীবনের আগের সেই সম্প্রীতি ও মায়া-জড়ানো ভালবাসার চিহ্ন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রামে আয়োজিত এই মেলাগুলো নিয়ে ছোটবেলায় নানীর মুখে অনেক কল্পকাহিনী শুনেছি। মজার ব্যাপার হল প্রত্যেক মেলার প্রাঙ্গনে একটি করে পীরের কবর রয়েছে। মেলার দিনে অনেকেই এখানে ছিন্নি( পায়েস, পোলাও, মাংস) দেয়। মেলার শেষ সময়ে এই মাজারের খাদেম এগুলো বিতরণ করে। সভ্যাতার অগ্রগতি হলেও এই গ্রামীণ অঞ্চলের এইসব পীরপ্রথার সংস্কৃতি আজও বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর লালসালু উপন্যাসের মজিদের মত শত শত মজিদ মানুষকে এখনও প্রতিনিয়ত ধোঁকা দিয়েই চলেছে।

আরও অবাক করা বিষয় হল এই মেলার আয়োজনের জন্য কোন প্রচার-প্রচারণার প্রয়োজন পড়ে না। প্রত্যেক বছরের নির্দিষ্ট দিনে মেলার জন্য নির্ধারিত প্রাঙ্গণ দোকান-পাটে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর রকম-ফের এখনও তেমন ঘটে নি, আগের নিয়মেই এখনও চলমান রয়েছে সব। তবে দিন দিন মেলাগুলো তার পূর্বের জৌলুস হারিয়ে ফেলছে। কিছু জৌলুস হারালেও মেলায় আয়োজন হয়ত চলতেই থাকবে যুগের পর যুগ.........।।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:২৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×