somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের বাঁকে বাঁকে (পর্ব-০২)

২২ শে মে, ২০২০ রাত ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মফস্বলের এক নিভৃত কোণে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে আমার শৈশব। পাঠ্যবইয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল আমার পড়াশোনার জগত। এর বাইরেও যে বিশাল একটা জগত পড়ে আছে তা সম্পর্কে আমার কোন ধারণাই ছিল না। সাহিত্য সম্পর্কে জানাশোনা বলতে পাঠ্য বই এ উল্লিখিত গল্প কবিতাই ছিল একমাত্র সম্বল।

এভাবেই দিন কাটছিল বেশ। হটাত একদিন আবিষ্কার করলাম আমার প্রিয় বন্ধু রাব্বি ক্লাশের ফাঁকে লুকিয়ে লুকিয়ে কি যেন পড়ছে। টিফিন পিরিয়ডে সবাই বাইরে গেলেও আজ সে একচুল নড়ছেও না।
কৌতূহল বেড়ে গেল, দেখার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না।

কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করালাম কি পড়ছ দোস্ত? সে বইটি দেখিয়ে বলল “ হ্যারিপটার এন্ড ফিলোসফার স্টোন”। আমি এই প্রথম এমন কোন বইয়ের নাম শুনলাম। বিস্তারিত জানার জন্য আবার প্রশ্ন করতেই রাব্বি সংক্ষেপে সব বলল।

জে কে রাওলিংয়ের লেখা বিখ্যাত শিশুতোষ উপন্যাস। হ্যারি পটার নামের এক কিশোর জাদুঘরকে ঘিরে,
তাঁর দুই বন্ধু রন উইজলি ও হারমিওন গ্রেঞ্জারের দুঃসাহসিক সব অভিযানের গল্প। শুনেই বইটি পড়ার ইচ্ছাকে কোন বাঁধ দিয়েই আটকে রাখতে পারছিলাম না। তার কাছ থেকে বইটি এক প্রকার ছিনতাই করে নিয়ে গেলাম। এই ছিনতাই অবশ্য ঘোষনা দিয়েই সংগঠিত হল।

রাব্বি বইটি নিয়েছিল আমাদের ক্লাশের ফার্স্ট বয় তুরাষের কাছ থেকে। নাদুস-নুদুস চেহারার এই ছেলেটি সর্বদা ফিট ফাট হয়েই ক্লাসে আসত। তুষারের আব্বু ছিল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। পারিবারিক প্রতিবেশ কিভাবে একজনের মনন ও মানস উচ্চতর করে গড়ে তোলে তুরাষকে দেখেই সেই পাঠ প্রথম বুঝতে শিখেছিলাম।

যেদিন তুরাষদের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম, সেদিন জীবনের নতুন এক পাঠ লাভ করেছিলাম। তুরাষের পড়ার টেবিলের পাশেই ছিল বিশাল এক লাইব্রেরী। সেখানে খ্যাতিমান বিভিন্ন লেখকের বই থরে থরে সাজানো ছিল। এসব দেখে নিজের অবেচতন মনে বিশাল এক অসহায়ত্ব অনুভব করেছিলাম। নিজের অজান্তেই মন বল উঠেছিল “ এমন একটি লাইব্রেরী যদি আমার থাকত” । সেই আফসোসের পথ ধরেই ব্যক্তিগত লাইব্রেরী গড়ে তোলার মিশনে নেমে পড়েছিলাম। সেই মিশনের সফল সমাপ্তিও ঘটেছে।

তুরাষের জ্ঞানগত দক্ষতা ও মেধার ধার কাছ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মত কেউ আমাদের ক্লাশে ছিল না। তাঁর নামেই সাথে ফার্স্ট বয় উপাধিই ছিল বেশ মানানসই। শিক্ষা জীবনের সকল পাঠে মেধার স্বাক্ষর রেখে বুয়েটে থেকে গ্র্যাজুয়েশন করে সে এখন সুদূর যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে পিএইচডি করছে।

অবশেষে বইটি নিজের জন্য কুক্ষিগত করে ক্লাশ শেষ করে বাসায় ফিরলাম। বাসার ফিরে ফ্রেশ হয়েই বইটি পড়ার পরিকল্পনা নিলাম। বইটি খুলে বসতেই আম্মু এসে বলল এসব বই এখন পড়ার কোনই প্রয়োজন নেই। পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার পর ঢের সময় পাবে এসব হাবিজাবি বই পড়ার। মন খারাপ হলেও আম্মুর কথা মেনে নিলাম।

মেনে নিলেও মনযোগের পুরোটাই ঐ বইটাতেই পড়ে রইল। অবশেষে আম্মু ঘুমিয়ে পড়লে সারা রাত জেগেই বইটি পড়ে শেষ করেছিলাম। এভাবেই প্রথম আমার পাঠ্য বইয়ের বাইরের জগতে পথ চলা শুরু হল। এর পর তুরাষের কাছ থেকে নিয়মিত বই ধার করতে শুরু করলাম। হ্যারি পটারের পরবর্তী সকল সিরিজ পড়ে শেষ করেছিলাম। এর বাইরে সায়েন্স ফিকশন পড়ার নেশাটাও তুরাষের হাত ধরেই হয়েছিল। জাফর ইকবালের টুকনজিল আমার পড়া প্রথম সায়েন্স ফিকশন।

স্কুল জীবনে হ্যারি পটার সিরিজে বেশ আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলাম। বন্ধুবর জনি, সাজু, হাসান, মুহিত এদের সবারই প্রিয় ছিল এই সিরিজ। বই পড়ার পাশাপাশি বই থেকে ধাঁধাঁ তৈরি করা ছিল রিমুন আর তুরাষের অনেক শখের একটা কাজ। একবার ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে জনির বাসায় হ্যারি পটারের গবলেট অব ফায়ার মুভি দেখার আয়োজন করা হয়েছিল। যান্ত্রিক গোলাযোগ সেই আয়োজন যখন প্রায় ভেস্তেই যাচ্ছিল তখন সাজুর প্রস্তাবে সেই আয়োজন তার বাড়িতেই সফলতার মুখ দেখল।

এর পর একদিন আমার এক কাজিনের বাসায় তার পুরাতন বইপত্রের মাঝে একটি বই খুঁজে পেলাম। বইটির উপরের মলাট ছিড়া থাকায় নাম না জেনেই পুরো বই পড়ে ফেললাম। বইটির সাবলীল বর্ণনা ও বাক্যের কাব্যিক উপস্থাপনা আমার মাঝে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দিল। উপরন্তু অমিত ও লাবণ্য চরিত্র দুটির মাঝে আমার বন্ধুবর জনি ও আমাদের এক ক্লাশমেটের চিত্রই ভেসে উঠছিল। তখন মনে হল এই বই আমার জন্য নয় ,জনির জন্য একদমই উপযোগী একটা পাঠ্য।

এর কারণ হল আমার এই বন্ধু সেই ৮ম শ্রেণী থেকেই ভীষণ রোমান্টিক। ভালবাসার কাব্যময় বাণীতে তার হৃদয় ছিল টই-টুম্বুর এক মহাসমুদ্র। যার নাবিক ছিল সে কিন্তু তার জীবন তরীতে যাত্রী হিসেবে সে শুধু একজনকেই চাইত। সেই চাওয়ার মাঝে কোন খেদ ছিল না, ছিল না তরুণ বয়সের উঠকো আবেগের মিছে ক্রন্দন। ছিল না বলেই হয়ত তার সেই চাওয়া বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এক যুগের প্রেমপর্ব শেষে বন্ধু আমার পবিত্র ভালবাসার এক মরূদ্যান গড়ে তুলেছে।

শেষের কবিতা যখন পড়ছি তখন পর্যন্ত কিন্তু এর লেখকের নাম জানা হয় নি। কারণটা শুরতেই বলেছি। এসএসসি পরীক্ষার কোচিং শুরু হল। পরীক্ষার প্রস্তুতি বেশ জোরে-শোরেই চলছে। একদিন ক্লাশের ব্ল্যাকবোর্ড এ মোটা হরফে একটি উক্তি চোখে পড়ল “For God's sake hold your tongue, and let me love” .

উক্তিটি দেখেই মনে পড়ল আমার পড়া বইটির কথা মনে পড়ল। ক্লাশে স্যার আসার আগেই যে উক্তিটি লিখেছিল মুছে দিয়ে আসল। এ কাজটি যে করছিল তার নাম ছিল শাহ আলম। অসম্ভব মেধাবী একটা ছেলে। ইংরেজিতে তাঁর দখল বেশ ভালই ছিল। ঐ সময়ে নিজেকে জাহির করতে মাঝে মাঝে ইংরেজিতে কথা বলত। পাশাপাশি ঐ বয়সেই বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনাও করত বেশ। সব সময় কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই চলত বলে বন্ধুত্বটা অতটা ঘনিষ্ঠতর হয় নি। তাকে জিজ্ঞেস করেই লেখকের নামটা জানতে পারলাম।

আর এভাবেই নিজের অজান্তেই কবিগুরুর বিখ্যাত কাব্যিক উপন্যাস সেই দশম শ্রেণীতেই পড়ে ফেলেছিলাম। তবে অপিরণত বয়সের পাঠক ছিলাম বলে বেশির ভাগ কথাই মাথার উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল। নতুন করে এই উপন্যাসটি আর পাঠ করা হয়ে উঠে নি।


এসএসসি পরীক্ষা শেষ করেই অফুরন্ত অবসরে বেশ ফুরফুরে মুডেই দিন পার করছিলাম। এই সময় নিজ থেকে একটা বই কিনে ফেললাম। বইটি ছিল ইংরেজি সাহিত্যের বার্ড অব এভন খ্যাত শেক্সসপিয়র এর রচনাসমগ্র। তখন অবশ্য সাহিত্যের এই দিকপাল সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও আমার ছিল না।

অবসরের দিনগুলো শুরু হল শেক্সসপিয়র এর বইয়ের সাথে। সংগ্রহকৃত বইটিতে লেখকের বিখ্যাত কমেডি ও ট্র্যাজিডি নির্ভর নাটক দিয়েই আমার প্রথম ইংরেজি সাহিত্যের পাঠ শুরু হয়। ইংরেজি সাহিত্যে আমার হেঁটে চলার দৃশ্য তুলে ধরতে অন্য একদিন আবার স্মৃতির ঝাপি খুলে বসব..।।।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০২০ রাত ১:৩৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×