somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভোরবেলার খেদোক্তিঃ করোনাকালীন গল্প

২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



করোনা হটাত করেই জীবনকে এক অপরিকল্পিত রুটিন উপহার দিয়েছে। রুমেই অন্তরীন হয়ে আছি। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত বাইরের জগতে ভ্রমণ আপাতত বন্ধ আছে। ঘরকুনো তকমাটা আমার পাশে বেশ বেমাননই বটে।

তবে ভবঘুরে তকমাটাকে বেশ আপনই মনে হয়। ছোটবেলায় আম্মুর কড়া বিধি-নিষেধের প্রাচীর টপকানো বেশ দুঃসাধ্য ছিল। মাঝে মাঝে এই প্রাচীর টপকানোর চেষ্টা করে বরাবর ব্যর্থতার গ্রীবাতেই বিজয়মাল্য পরিয়েছি।

বাড়ির বাইরে পা রেখেই নিজ রাজ্যের অঘোষিত রাজা বনে গেলাম। বিকেলের মিষ্টি রোদ রোজ আমাকে নিমন্ত্রণ পাঠাতে শুরু করল। এর মনোহর শব্দ সুধা পানে আমি তৃষ্ণাতুর পথিকের মত ছুটে চলতাম।

রংপুরের চিকলি বিলের ধারে বসে সন্ধ্যাকে বরণ করা ছিল আমার নিত্যদিনের কর্ম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও অহেতুক ঘুরে ফিরে ঢের সময় নষ্ট করেছি। ব্রক্ষপুত্রের তীরে বৈকালিক ভ্রমণ, আম বাগানের পথ ধরে সবুজের দিগন্তে ছুটে চলা, রেল বিজ্রের উপর দাঁড়িয়ে গোধূলির শোভায় মনের উঠোন ভিজানো সবই কেবল স্মৃতি। চাকরির প্রস্তুতির এই সময়টাতেও এইসব কর্মকাণ্ডের কোন ব্যঘাতই ঘটে নি।

আজ বিশেষ প্রয়োজনে সেহেরির পর বাইকে চেপে বসলাম। চরপাড়ার রাস্তা ধরে কেওয়াটখানী পানে ছুটছি। ভেবেছিলাম এত ভোরে রাস্তায় একটা পিনপতন নীরবতা বিরাজ করবে। আমার এই আশায় গুড়েবালি ঘটতে বেশি সময় লাগল না।

ব্রিজ মোড়ে এসেই মনে হল সেই চিরচেনা দৃশ্য দেখছি। ময়মনসিংহের এই ব্রিজে মোড়ের ট্রাফিক জ্যাম এক চিরাচরিত চিত্র। তবে করোনার এই লকডাউন সময়ে এই দৃশ্য ছিল অনেকটা অপ্রত্যাশিত। ঢাকা ফেরত মানুষের ঢল নেমেছে , ট্রাকে চেপে পঙ্গপালের মত ঝাঁক বেধে মানুষ যেন ছটে চলছে।

উপায়ন্তর না দেখে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে অন্য রাস্তা ধরিলাম। রেললাইনের পাশ ঘেষে নতুন একটি বাইপাস রাস্তা কেওয়াটখালী বাইপাসে উঠেছে। সেই রাস্তা ধরেই গন্তব্যপানে চললাম। বাইপাস এ এসে দেখি এখানেও একই অবস্থা। সারিবদ্ধ ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। অগত্যা পাশের গলিপথকে বেঁচে নিলাম।

কাজ শেষে ফেরার পথে লোক সমাগম দেখে রীতিমত আতকে উঠলাম। জীবন বাঁচার তাগিদে নয় আবেগের তরীতে চেপে এ যেন অন্তিম যাত্রা পথে চলার এক নীরব আয়োজন। ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো মানুষের এই মিছিল করোনা পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে যাবে তা এখন আর কেউ বলতে পারে না। একমাত্র আল্লাহ তা’আলা জানেন প্রিয় মাতৃভূমির কপালে কি লেখা আছে? বাইকে চেপেও অনেক দম্পতিকে ছুটে চলতে দেখলাম।

মেইন রাস্তার থেকে দূরে দাঁড়িয়ে এসব দৃশ্য দেখছি আর অনাগত দিনের ভয়াবহতা কল্পনা করে শিউরে উঠছি। প্রতি মুহুর্তে অজানা এক আতঙ্ক নিয়ে কালাতিপাত করছি। এমন অনুভূতির বিছানায় নিশিযাপন আমার জীবনকালে এই প্রথম। আমাদের দেশের মানুষের গা-ছাড়া ভাব আর অবান্তর সব কাজ-কর্মে অবাক না হয়ে পারি না।

জনগণের উপর ত্যক্ত বিরক্ত হয়েই হয়ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও অভিমান করেছে। আজ পুরো রাস্তায় ও মোড়ে কোন পুলিশ ভাইদের চোখে পড়ল না। এমনিতে অন্যান্য সময় অন্তর চরপাড়া মোড়, আলিয়া মাদ্রাসা রেল ক্রসিং, ব্রিজের মোড় ভোরবেলা সব সময় পুলিশ বাহিনীকে অবস্থান করতে দেখেছি। আজই প্রথম ব্যতিক্রম দেখলাম।

রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আইন মেনে চলা অন্যতম কর্তব্য। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ যেভাবে আইন অমান্য করাইকে কর্তব্য বলে মনে করেন। কথা হচ্ছিল পুলিশে চাকরিরত এক অগ্রজে সাথে। ভাই আক্ষেপ করে বললেন! এ দেশের মানুষের ক্ষুধার কষ্ট বড় নয়, আড্ডা দিতে না পারলে এমনিতেই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে। লোকদের সচেতন করতে গেলে উল্টা তারাই নাকি ছবক দেয়। বড়ই বিচিত্র আমার দেশের মানুষ।

এটাও জানি কিছু মানুষের জন্য লক ডাউন মানা খুবই কষ্টের তবে এই যে যারা মায়ার টানে আবেগের আতিশয্যে নাড়ীর পানে ছুটে চলেছেন। এমন মানুষদের জন্য মনে কোন অনুকম্পাও জাগছে না। আফসোস! আফসোস এই খেদোক্তিই জেগে উঠছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২২
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×