পাকিস্তানিরা যোদ্ধারা কি সাচ্চা মুসলমানই না ছিল? উর্দী পড়া দাড়ি গোঁফওয়ালা পরিপাটি সুসজ্জিত সাচ্চা মুসলমান, যুগপৎ (ভারতীয় যোদ্ধা অপেক্ষা) শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার দাবিদারও বটে। বাংলাদেশের নিরস্ত্র রমণীদের উপর পাকিস্তানি যোদ্ধারা বীরত্ব দেখিয়ে বীরত্বের অনন্য সাধারণ মানদণ্ডের নজির তৈরি করলেন। ঐ বীরত্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দেয়া আর তা হজম করতে গেলে আমাদের সবাইকে অবশ্যম্ভীভাবেই শতভাগ প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে হবে। আবারো বলছি পাকিস্তানি যোদ্ধার ঐ বীরত্ব গাঁথা সবার জন্য নয়। পাকিস্তানিরা যে পর্যায়ের/অবস্থানের যোদ্ধা কিংবা তথাকথিত সাচ্চা মুসলমান সেই পর্যায়/অবস্থানে নিজেকে নামিয়ে আনতে না পারলে তা হজম করা যাবে না কস্মিনকালেও।
অতীত ইতিহাসের পাতা ঘেটে কতই না মুসলমান বীর যোদ্ধা/সেনাপতিদের গল্প পড়েছি। তারা শত্রু পক্ষের সেনাদের জন্য ছিলেন রীতিমতো ত্রাস, সাক্ষাৎ যমদূত। অথচ শত্রু শিবিরের নারী, বয়ঃবৃদ্ধ, শিশুদের কাছে ছিলেন মানবিকতা শব্দটির মুর্ত প্রতিক, আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় মানবিকতা শব্দটির শতভাগ সমার্থক। দূরবর্তী অতীত ইতিহাস পার হয়ে যদি নিকট অতীতে এসেও থামি তাহলেও আমরা পাই জেনেভা কনভেনশন। অবশ্যই পাকিস্তান জেনেভা কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী একটি দেশ ছিল।
একজন যোদ্ধার পোশাক বা উর্দী বা ইউনিফর্ম যাই বলি না কেন অত্যন্ত পবিত্র। যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলে শহীদের কোন গোসল হয় না। তার পোশাকই হয়ে যায় তার কাফনের কাপড়। কিন্তু এই সামরিক কাপড় গায়ে সাটিয়েই পাকিস্তানি ফৌজিরা কি অবলীলায় নির্বিচারে বাংলাদেশের নারীর উপরে পুরুষত্ব (?) দেখিয়েছে। উর্দু না হিন্দিতে একে খুব সম্ভব "মার্দানি" বলা হয়। তো কি অবশিষ্ট রইল? না সামরিক পোশাকের মর্যাদা রইল, না ইসলাম ধর্মের মূল্যবোধ। আর জেনেভা কনভেনশন? আসলে মানব রুপী পাকিস্তানি দানবের কাছে এইসব সভ্য মানবীয় বৈশিষ্ট্য সমূহ আশা করা আর চূড়ান্ত নৈরাশ্যময়তার অন্ধকার খাদে নিজেরই আপাদমস্তক হারিয়ে যাওয়া একই কথা।
দানব তো একদিন বা এক রাতের মধ্যে তৈরি হয় না। খুব সচেতনতার সাথে সময় নিয়ে তাকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করা হয় কিংবা তার মস্তিষ্ক ধোলাই করে দেয়া হয় যেন কোন প্রকার ব্যর্থতা ব্যতিরেকেই দানবে রূপান্তরিত হতে পারে। একটা দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ববঙ্গের জনগোষ্ঠী সম্বন্ধে তাদের এমন ধারণা দেয়া হয়েছে যে আমরা দুপেয়ে মানুষরা যেন বিশেষ একপ্রকার মানুষ রুপী জীব (subhuman) যাদের সাথে যা খুশি তাই করা যায়। "বেহেস্তের হুরপরীর জন্য খামোখা অপেক্ষা না করে চঞ্চু ডুবিয়ে, উদোর পূর্তি করে এ বেলা নগদে কচি নারী মাংস ভক্ষণ করে নাও"। এই পুরো প্রজেক্টের (মানবকে দানবে রূপান্তর থেকে শুরু করে তাকে দিয়ে সাফল্যের সাথে গণহত্যা চালানো) মাস্টারমাইন্ড কারা? এই পুরো প্রজেক্টের সুবিধাভোগকারী কারা?
পাপ করে মানুষ তওবা করে এই নিয়তে যাতে সে তার সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা লাভ করতে পারে। পাকিস্তানিরা কি ১৯৭১ এ তাদের কৃত গণহত্যা ও অসংখ্য যুদ্ধ অপরাধের জন্য অনুতপ্ত? নাকি এখন অবধি ন্যূনতম পাপ বোধই তাদের মাঝে জাগ্রত হয়নি? কবেই বা তারা সভ্য হবে আর কবেই বা তারা ক্ষমা চাইবে?
নারীর প্রতি সহিংসতার যে বর্ণনা গেরিলা ৭১ গ্রুপে দেয়া হয়েছে তার খুবই সামান্য নমুনা পেলাম "লাল মোরগের ঝুঁটি" সিনেমায়। কিন্তু তাতেই বুক ভেসে গেছে চোখের নোনা জলে। যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করতে না পারার ব্যর্থতার দায়ভার আমাদের যুদ্ধ পরবর্তী প্রতিটা প্রজন্মের। জানিনা এই দায় মাথায় নিয়েই আমাদের সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে কিনা?
সম্পুরক পাঠঃ
লাল মোরগের ঝুটি ও আমার প্রতিক্রিয়া.........
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৩ ভোর ৫:১৪