somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ

০৪ ঠা জুলাই, ২০১০ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ

প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকারের প্রথম বর্ষ পালনে প্রথমেই যে প্রশ্নটির মুখোমুখি হয়েছিলেন তার জবাব তিনি দিতে পারেননি। বলা ভালো, জবাব দেবেন না বলেই তিনি দেননি। সংবাদমাধ্যমে অবশ্য জবাবটা এসেছে, প্রশ্নটা আসেনি।
প্রশ্নটা করেছিলেন সাংবাদিক উমাকান্ত লাখেরা। প্রশ্ন ছিল, আপনারা একবছর সরকার চালালেন। কিন্তু একটা বড় সমস্যা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তু‍লেছে, তা হলো মূল্যবৃদ্ধি। সরকার আগে উদ্যোগ নিলে কিছুটা হয়তো দাম কমতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আপনার মন্ত্রীরা যেদিন বিবৃতি দেন, সেদিন জিনিসের দাম আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসাবে আপনার কাছে এর জবাব চাইছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেই পরিচিত। তাঁর কথায়, ‘অর্থনীতির ব্যাপারে যা বলা হয় তার কিছুটা সত্যি, কিছুটা মিথ্যা। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সবটা খারাপ এটা ঠিক নয়, ২০০৮সালে বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা আসে। ভারতে তার প্রভাব পড়ে। ২০০৮-০৯সালে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের হার ছিল ৬.৭শতাংশ। ২০০৯-১০সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭.২শতাংশ। বর্তমান আর্থিক বছরে তা বেড়ে হবে ৮.৯শতাংশ।’ এটুকু বলে সময় নিলেন। মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে বললেন, ‘এর কারণ বি‍‌শ্বজুড়ে আর্থিক সঙ্কট। পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। এরসঙ্গে ভারতে গত বছর খরা এবং বন্যার সমস্যা ছিল। এইটুকুই জবাব। এর সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর নির্লিপ্ত জবাব, আগামী ডিসেম্বরে মূল্যবৃদ্ধির হার কমে ৫/৬শতাংশ হবে। দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ, কোনো আশ্বাস নেই। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদের এই জবাব হুবহু শোনা যায় অর্থমন্ত্রী ও যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিং আলুওয়ালিয়ার মুখেও। সংসদে গত এক বছরে বারবার মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্ন এলেও তোতাপাখির মতো একই বুলি আওড়েছেন তাঁরা। আজ মূল্যবৃদ্ধির জেরে জীবনযাপন দুর্বিষহ হলেও এর জবাবদিহি করতে রাজি নয় কেন্দ্র। বর্ষ পালনের উৎসবেও তারই প্রতিফলন।
সাংসদরা বক্তব্য রাখার সময় বারেবারে সরকারের এই সাজানো বুলির সমালোচনা করেছেন। শেষ দেখতে বাজেটে ছাঁটাই প্রস্তাব পর্যন্ত এনেছেন বিরোধীরা। যা স্বাধীন ভারতে কখনও দেখা যায়নি। তবু দাম কমাবে না সরকার, হাবেভাবে বুঝিয়েছে কেন্দ্রের সরকার। সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জবাবে বেশি কিছু আশা করাটাই অবান্তর। ‘আম জনতার’ সরকার আসলে কাদের পক্ষে, এই প্রশ্নটাই এখন উঠে আসছে। বর্ষপালনের উৎসবে তাই কাদের মোচ্ছব সেটাই বুঝে নেওয়া দরকার।
সোজা কথাটা একেবারে সোজাসুজি বলে দেওয়া ভালো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তিনি নীরবে তার শ্রেণীর স্বার্থ পালন করে চলেছেন। এখানে তিনি আপসহীন, দ্বিধাহীন চিত্ত। বর্ষপালনের সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রীদের নানা দুর্নীতি ও বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার দায় নিয়ে প্রশ্ন উঠলে অকপটে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেন সব দায় তাঁর। বলেন, ‘দায় মন্ত্রীদের নয়, দায় তাঁর। কারণ সরকারের নেতৃত্বে তি‍‌নি আছেন।’
এতে ভালো কার হলো? হলো বড় বড় কর্পোরেট লবির। বহু উদাহরণ টানা যায়। একেবারে টাটকা হিসাবে কর্পোরেট রিলায়েন্সের প্রাকৃতিক গ্যাসের দখলদারিত্বে সরকারের ভূমিকা দেখা যাক। প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার তুলে দেওয়া হলো কর্পোরেট রিলায়েন্সকে। এবারে ঐ ভাণ্ডারের গ্যাস তুলে যাতে বেশি দরে বিক্রি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করতে পারে কর্পোরেট পরিবার তার ব্যবস্থা করা হলো। রিলায়েন্সের দর অনুযায়ী বাড়িয়ে দেওয়া হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার গ্যাসের দাম। এই বেশি দর দিতে হবে সাধারণ মানুষকেই। কর্পোরেটদের এতে কোনো কিছু যায় আসে না। বাড়বে বিদ্যুৎ, সার এবং জল পরিবহনের খরচ। স্বাভাবিকভাবে তা আদায় করা হবে দাম বাড়িয়েই। যে দাম দিতে হবে ‘আম জনতাকেই’। প্রাকৃতিক গ্যাসের দখল নিয়ে আম্বানিদের পারিবারিক ঝাগড়ার রম্যরচনা লিখে চলেছে সংবাদমাধ্যম। ঝগড়ার বিষয় হলো, এক ভাই পারিবারিক সম্পত্তি হিসাবে কেন্দ্রের উপঢৌকনে প্রাকৃতিক গ্যাসের যে দখল পেয়েছেন তা তিনি পারিবারিক সম্পত্তির বাটোয়ারা সূত্র মেনে কেন আরেক ভাইকে সস্তায় দেবেন না। এ নিয়ে বিবাদ গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সুপ্রিম কোর্ট প্রাকৃতিক সম্পদের দায়িত্ব কেন্দ্রের বলে রায় দিয়েছে। ফলে দর নিষ্পত্তির দায় কেন্দ্রের। রায় বেরোনোর পর আর এক মুহুর্ত দেরি সয়নি কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী মুরলী দেওরার। সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার গ্যাসের দামও দু’গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হলো। এটা কেন বাড়ানো হলো তার সোজা জবাব খুঁজে পাবেন না বড় সংবাদমাধ্যমে। বাড়ানো হলো এই কারণে, এন টি পি সি-র সঙ্গে রিলায়েন্সের আগেই চুক্তি হয়ে আছে, কম দামে অর্থাৎ ২.৩৪ ডলার প্রতি ইউনিট দরে তাদের গ্যাস সরবরাহ করবে রিলায়েন্স। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এন টি পি সি-কে ঐ দরে চুক্তি থাকলেও গ্যাস সরবরাহে রাজি নয় রিলায়েন্স। এনিয়ে মামলা চলছে। তার রা‌য় বেরোনোর আগে সরকারীভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার গ্যাসের দাম দু’গুণ বাড়িয়ে রিলায়েন্সের গ্যাসের দরে তা ৪.২০ডলার প্রতি ইউনিট করে দেওয়া হলো। এবার বাধ্য হয়েই এন টি পি সিসহ সকলকে বেশি দরে গ্যাস কিনতে হবে। এই দর আগামী ৫বছর ধরেই চলবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এই দাম কমবে না, ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। রিলায়েন্সের অতিরিক্ত মুনাফার বন্দোবস্ত করতে সাধারণ মানুষের ওপর এই মূল্যবৃদ্ধি চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রেণীস্বার্থ দেখার নিখাদ চেষ্টা। তাই প্রশ্ন নেই, প্রধানমন্ত্রীর সততা নিয়ে। তিনি কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখতে সততার সঙ্গেই দায়িত্বপালন করছেন। আজ রিলায়েন্সের দুই ভাইয়ে‌র পারিবারিক সমঝোতার খবর পরিবেশিত হচ্ছে বড় সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু এর আসল খবর যার সঙ্গে দৈনন্দিন মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ জড়িত তা আড়ালে চলে যাচ্ছে। সেই প্রশ্ন টানলেই কর্পোরেটের স্বার্থ, কেন্দ্রের স্বার্থ এসব কথা উঠে আসবে। উপেক্ষিত হচ্ছে জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী তাই তার বর্ষপালনের উৎসবে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কোনো কৈফিয়ৎ দিতে রাজি নন।
বর্ষপালনের মাসখানেক আগে দিল্লির আজাদপুর মাণ্ডিতে খাদ্যপণ্যের ‘স্টক বোর্ডের’ উদ্বোধন করলেন খাদ্যমন্ত্রী শারদ পাওয়ার। খবরটা খুবই ছোট আকারে দু-একটি সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়। শারদ পাওয়ার বললেন, খাদ্যপণ্যের ফাটকা কারবার নিয়ে বিরোধীরা আপত্তি তুলছেন। তারা জানেন না খাদ্যপণ্য ফাটকা কারবারে টেনে আনায় কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। বোর্ডে কখন কোন পণ্যের কী দর উঠছে, তা দেখেই কৃষকরা খাদ্যপণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তাঁরা বেশি দাম পাচ্ছেন। এতে কৃষকদের সুবিধা হচ্ছে। সোজা কথায় তিনি যেটা বোঝাতে চাইলেন তা হলো, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সুবিধা হচ্ছে কৃষকদের। কৃষকদের আত্মঘাতী মিছিলের ছবি দেখেন না খাদ্যমন্ত্রী। কৃষি উৎপাদনের হার কমছে এ ছবিও তিনি মানেন না বলতে হয়। কারণ তাঁর দাবি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় আখেরে লাভ হয় কৃষকের। অথচ বাস্তব চিত্র ঠিক উলটো। কর্পোরেট লবি নেমে প‍‌ড়েছে খাদ্যপণ্যের বাজার দখলে। তারাই খাদ্যপণ্যের ফাটকা কারবারে মুনাফার পাহাড় গড়ছে। সর্বস্বান্ত হচ্ছেন কৃষক ও সাধারণ মানুষ। এতে কোনো হেলদোল নেই খাদ্যমন্ত্রীর। একই চিত্র মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকেও। সেখানে প্রধানমন্ত্রী খাদ্যপণ্যের ফাটকা কারবার নিয়ন্ত্রণে একটি শব্দও খরচ করেননি। কোনো একটি রাজ্যে মূল্যবৃদ্ধি সীমাবদ্ধ নেই। কোনো একটি রাজ্যের উদ্যোগে তা সীমিত থাকছে না। প্রধানমন্ত্রীর দল কংগ্রেস শাসিত রাজ্যেও মূল্যবৃদ্ধি রাজ্যের পদক্ষেপে কমেছে এরকম একটি ঘটনা বলা যাবে না। তবু দর নিয়ন্ত্রণে ফাটকা কারবারি কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র উষ্মা নেই কেন্দ্রের। এতে প্রশ্নটা এসেই যায় কেন্দ্রের সরকার বর্ষপালনে কাদের ঘরে উৎসবের ফোয়ারা। কর্পোরেট লবির তোষণে দ্বিধাহীন কেন্দ্র। জাহান্নামে যাক ‘আম জনতা’।
টেলিকমের স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির ঘটনার সূত্রপাত প্রথম ইউ পি এ সরকারের আমলে। সেই সময়ে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বামপন্থীরা। টেলিকম মন্ত্রী এ রাজার বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থাই নিতে রাজি নন। অথচ স্পেকট্রাম বিক্রিতে সোজা হিসাবে ৬০হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে কেন্দ্রের। মুনাফা লুটেছে একচেটিয়া কর্পোরেট লবি। কেন্দ্রের সি বি আই, সি এ জি, অর্থদপ্তর সকলেই এতে অনিয়ম হয়েছে বলে রায় দিয়েছে। তার খবর প্রকাশ হ‍‌য়েছে, তবু নিরুত্তর প্রধানমন্ত্রী। আখেরে কেন্দ্রের লোকসান হলেও সুবিধা পেয়েছে কর্পোরেট লবি। এটাই মাপকাঠি। এতেই সব বিচার। কর্পোরেট হলেই বেকসুর খালাস। টাকা নেই, টাকা নেই বলে সবসময় দামামা বাজাচ্ছে সরকার। বলা হচ্ছে, অর্থের অভাবে ঘাটতি বাজেট পেশ করতে হচ্ছে। উলটোদিক দিয়ে এটা বলাই যায় বাজেটে ঘাটতি রাখা হচ্ছে কর্পোরেটদের সুবিধা দিতেই। তাদের থেকে প্রাপ্য আয় আদায় না করেই আসলে বাজেটে ঘাটতি রাখা হচ্ছে। ঘাটতি দেখিয়েই কমানো হচ্ছে জনকল্যাণ প্রকল্পের খরচ। হিসাবটা এটাই, সরকারী কোষাগার এখন উন্মুক্ত কর্পোরেটদের জন্য। আম জনতার জন্য নয়। নয়তো কোষাগারে জমার জন্য প্রাপ্য টাকা আদায় হবে না কেন? কেন তাদের বছরভর শুধু কর ছাড় দেওয়া হবে? বর্ষপালনের উৎসবে তাই পুরোপুরি ব্রাত্য থেকে যায় এই প্রশ্ন।
খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় জর্জরিত জনতা, অথচ আই পি এল-র লাস্যে মেতে আছেন খাদ্যমন্ত্রী। সংসদে এনিয়ে যথেষ্ট বিদ্রূপ-ব্যঙ্গ শুনতে হয়েছে খাদ্যমন্ত্রীকে। বাদ যাননি অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীও। আই পি এল কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখে কুলুপ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। এক মন্ত্রী শশী থারুর নানা রঙ্গ করার পর ইস্তফা দিলেও তা থেমে থাকেনি। নয়া উদারনীতির হাত ধরে বিশ্বজুড়ে প্রমোদ শিল্পের নামে যে জালিয়াতি চলছে, তাতে তো শীলমোহর রয়েছে কেন্দ্রের। জালিয়াতির ফানুস ফেঁসে গেলে তা নিয়ে হইহই না করে তা কীভাবে আড়াল করা যায় সেটা নিয়ে ব্যস্ত কেন্দ্রের সরকার। এই প্রমোদ শিল্পের অংশীদার কর্পোরেট লবি থেকে সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমের আয় নিশ্চিত করে, এ কারণে এই শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে সমস্ত যুক্তি বুদ্ধিকে গুঁড়িয়ে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রক বলে কেউ নেই। সবটাই খোলা বাজার। সরকারও এতে উদারহস্ত। কর ছাড়ে কোনো কার্পণ্য নেই। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাই কারবারে জড়িয়ে পড়ায় অস্বস্তিতে কেন্দ্র। পুরো আই পি এল কারবারটাই একটা ফাঁকিবাজি তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। সংসদে আলোচনায় একে ‘বড় লোকদের বেলেল্লাপনা’ বলে চিহ্নিত করে বক্তব্য রেখেছেন বহু সাংসদ। ভ্রূক্ষেপ নেই কেন্দ্রের। এদেরকে এখন বাঁচাতে হবে। তৎপর অভিজাত কর্পোরেট শিবির। বকেয়া কর আদায় তো দূরের কথা, এতে যুক্ত কর্পোরেটদের কীভাবে এর আওতার বাইরে আনা যায়, সেটাই মাথাব্যথা কেন্দ্রের।
নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান সম্প্রতি তার এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ‘দক্ষিণপন্থীদের এখন কৌশল হলো রাজনীতিতে পরিচয় সত্তার ইস্যু ব্যবহার করে নির্বাচনে জিগির তোলা। নির্বাচনপর্ব মিটে গেলে এবারে কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখা। কারণ তারা তাদের টাকা জুগিয়েছে।’ মন্দার জেরে হাঁসফাঁস হওয়া আমেরিকার আর্থিক পরিস্থিতিতে যেভাবে কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখা হচ্ছে তা নিয়ে এই মন্তব্য ক্রুগম্যানের। লঙ্ঘিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের স্বার্থ। বেকারী বাড়ছে। বহু ব্যাঙ্ক জালিয়াতি অর্থনীতির দাপটে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এতে দায়ী যারা সেই সি ই ও-দের আবার পকেট ভারি করতে সরকার বেইল আউটের নামে প্যাকেজ ঘোষণা করছে। কর্পোরেট বা পুঁজির দাপট ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বরাবর থাকলেও জনকল্যাণের জন্য তবু কিছু পরিসর ছিল। সেটা আজ নয়া উদারবাদের দৌলতে প্রায় উধাও হতে চলেছে। তাই এ‍‌ই নির্লজ্জ কর্পোরেট তোষামোদ। আমেরিকাপ্রেমী কেন্দ্রের পদচারণায় ভারতেও একই ছবি।
বছরভর আম জনতা যেটুকু আশা করেছিল তার বিন্দুমাত্র পূরণ হয়নি। বামপন্থী আন্দোলনে বহুবার তা আলোচিত হয়েছে, তবু কোনো সাড়া নেই। কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশ্‌তেহারে মূল্যবৃদ্ধি প্রশমনে প্রতিশ্রুতি দিলে তা মানা হয়নি। এখন উলটে সরকার নিজেই কর্পোরেটদের স্বার্থে দাম বাড়াচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা দিতে বিল আনার কথা বলা হয়েছিল। তার খসড়া যেটুকু প্রচার হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে খাদ্যপণ্যের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। ফলে আপত্তি উঠেছে খাদ্য বিল নিয়ে। এতে আবার সরকারে বিরোধের তত্ত্ব ছাড়া হচ্ছে বাজারে। কিন্তু বিরোধটা আমজনতার স্বার্থ, নাকি ক্ষমতার অলিন্দে ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব তা স্পষ্ট নয়। প্রথম ইউ‍‌ পি এ সরকা‍‌রের আমলে, জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প, বনাঞ্চল অধিকার আইন, কৃষি ঋণ মকুব, তথ্যের অধিকার আইন যা সাফল্য বলে প্রচার হয়েছে তা দ্বিতীয় ইউ‍‌ পি এ সরকারের আমলে খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চ‌য়তা প্রকল্প বেকারীর বাজারে শহরে সম্প্রসারিত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না। শুধু পালটানো হলো প্রকল্পের নাম। বনাঞ্চল অধিকার আইন হলেও তা রূপায়ণ হচ্ছে না। কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পে আরো শক্তিশালী করার বদলে দুর্বল হয়েছে, এতে দুর্নীতি বাড়ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন গরিব মানুষ। স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রসারে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন হলেও এতে বরাদ্দ বাড়ে না। কর্পোরেট স্বাস্থ্য পরিষেবাকে মদত দেওয়া হলো। উদার বাজারের হাত ধরে কর্পোরেট স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল চিত্রের অন্যতম নিদর্শন মেডিক‌্যাল কাউন্সিলের কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখায় আকাশ সমান দুর্নীতি। যা ফুলে ফলে বেড়েছে উদার বাজার নীতির দৌলতে। এখন নীতির গলদকে আড়াল করতে চলছে নানা কৌশল। স্বাস্থ্য পরিষেবায় কর্পোরেট মুনাফার ‍‌শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তা তাদের নিত্য অভিজ্ঞতায় টের পাচ্ছেন। তথ্য জানার অধিকার আইন আরো সম্প্রসারিত করার বদলে আমলা ও বিচারকদের স্বার্থে তা লঘু করা হলো। আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও দেখা গেলো, মাওবাদী-হিংসাত্মক কার্যকলাপ দে‍‌শের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার চরম বিপদ বলা হলেও তা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারে মতপার্থক্য। এতেও মুখ খোলা বারণ। খুন হচ্ছেন সাধারণ গরিব মানুষ। তবু তা গৌরব কাণ্ড বলেই প্রচার।
কর্পোরেটদের স্বার্থ দেখা হচ্ছে বছরভর। তবে কেন কর্পোরেট লবি সরকারের স্বার্থ দেখবে না? কর্পোরেট মিডিয়ায় এটাই অভিমুখ। তাদের সব প্রচারেই আসল তথ্যকে আড়াল করার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। মূল্যবৃদ্ধিতে বাজার আগুন হলেও তা নিয়ে ঝড় ওঠে না সংবাদ প্রচারে। সংবাদ প্রচার হয় কর্পোরেট পরিবারের মন কষাকষির। খবর হয় প্রমোদ শিল্পের সেনসেক্স বাড়াতে আই পি এল-র নৈশভোজের প্রমোদ কেচ্ছার। এটা নাকি সময়ের চাহিদা। এখানে ঐ শ্রেণীর স্বার্থের জয়োল্লাস।
বছরভর মানুষ ভালো থাকেনি। উৎসব পালন করে, যেটাই বোঝানোর চেষ্টা করুক কেন্দ্র, বাস্তব চিত্র হলো সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ ভালো নেই। তাদের জীবন আরো দুর্বিষহ হয়েছে। দাম কমানোর দায় নেই, কারণ সামনে কোনো বড় নির্বাচন নেই, বলছেন সাধারণ মানুষ। তবু ভালো যাদের হচ্ছে তারা তো উৎসব করবেনই, করছেনও। যেমন আমাদের রাজ্যে কংগ্রেস, তৃণমূল। কেন্দ্রের সরকারের সব কাজেরই সাফাই শুনছি। তোফাও মিলছে সমর্থনে গলা ফাটানো বিদ্বজ্জনের। উৎসব ওদের। কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×