জীবনানন্দ খুব আধুনিক মানুষ ছিলেন ।
আধুনিক মানুষেরা বৈষয়িক বিষয়ে সবাই খুব সফল হয় না, তিনি ছিলেন তেমন একজন
আধুনিক মানুষ , যিনি ব্যক্তিগত সাফল্যে খুবই তুচ্ছ ছিলেন কিন্ত তার প্রেমের বোধ দেখে , পরিণতি দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই-- খুব আধুনিক মানুষেরা এক সময় সাধারণ মানুষ জন হতে অনেক
দূরে সরে যায় , মনে মনে নির্জন জগতের বাসিন্দা হয়ে যায় ।
তিনি ছিলেন তাই । এই একাকী নিঃসংগ থাকার মধ্য দিয়ে তিনি যে সাহিত্যিক ভাষাটি আয়ত্ত্ব করেছিলেন , সেটা একটি স্বতন্ত্র কাব্য ভাষা । রবীন্দ্রনাথের প্রভাবমুক্ত হয়ে , সে সময়ে এই ধরনের একটি নিজস্ব কাব্যিক ভাষা চর্চা করতে পেরেছিলেন বলেই , জীবনানন্দ দাশ এখনো পঠিত - এবং আমার ধারনা আরও দুই চারশ বছর তাকে পড়া হবে । মনিয়া নামের কিশোরী, আর তাঁর মামাতো বোন লীলাময়ী বাদেও যাকে ধারনা করা হয়, তার অনেক বিষণ্ণতার জন্য দায়ী , তিনি ছিলেন তার কাকাতো বোন শোভনা । যাকে তিনি ডাকতেন 'বেবী ' বলে । সনাতন ধর্মে এই সম্পর্ক ট্যাবু কিন্ত জীবনানন্দ একজন আধুনিক মানুষ , একজন কবি --- আর এটাতো জানার ই কথা কবিরা নিজেদের জীবনের গুপ্ত ভালোবাসাকে সুগোপনভাবে আচ্ছাদিত করে নির্মোহ জীবন নির্বাহ করে ।
এই 'বেবী' অপভ্রংশে এক সময় হয়ে গেলো ' ওয়াই ' আর তাকে তিনি ঝরা পালক কাব্য গ্রন্থে উতসর্গ করলেন 'কল্যাণীয়েষু ' নামে ।
জীবনের সবচেয়ে সুখের গান , কষ্টের দলিত দানা দিয়ে তৈরী বলে ,আমরা ঝরা পাতার কাব্য গুলো পড়েই নির্বাক হয়ে যাবো , কিন্ত ভেতরে অনুভব করতে পারবো না - এক 'বেবী' জীবনানন্দকে কতোটা পুড়িয়েছে --
মনের খাতায় অমোচনীয় কালিতে তিনি লিখে যান --
'আজ এই বসন্তের রাতে
ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে;
ওই দিকে শোনা যায় সমুদ্রের স্বর,
স্কাইলাইট মাথার উপর,
আকাশে পাখিরা কথা কয় পরস্পর' --
কিছু রাত থাকেই , যে রাতে ঘুম চোখে জড়াতে চায় না -- মাথার ভেতরে ঘুরে ফেরে সমুদ্রের মন্থন - বুকের গহীনে প্রবল শব্দ করে ভালোবাসার বক পাখীরা , শীতের সকালে শিউলি ফুলের মালা গেঁথে কেউতো বসেই থাকে -- হয়তো এই পৃথিবীতে নয় , হয়তো অন্য কোন পৃথিবীতে ,
অন্য কোন ভুবনে --
সেখানেই হয়তো পাখিরা , পাখিদের সাথে মন খুলে কথা বলবে পরষ্পর ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:২৯