somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুনামগঞ্জে , এক চন্দ্রালোকিত রাত্রের পরে

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জ্যোৎস্না রাতের সাথে পাগলামির একটা ভরপুর সম্পর্ক আছে ।
আর তা না হলে আমার মতো সংসারী মানুষ ১০ মিনিটের নোটিসে সুনামগঞ্জের বাসে উঠে পড়ে কিভাবে ?

১৪ তারিখ সুপার মুন ছিল , সেদিন পাগলামি উঠেনি , পাগলামি উঠলো ঠিক তার পরেরদিন ।
এনা পরিবহনের যে বাসে আমি উঠলাম , পলাশ পার হবার পরই
বুঝে গেলাম, ড্রাইভার সাহেব আমার চাইতে বেশী আওলা । ইনি আগের জন্মে প্লেন চালাতেন ।ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া পার হতেই বেজে গেলো সন্ধ্যা ৬ টা , বিপদজনক মোড় ঘুরতেই , গাড়ী হয়তো ইঞ্চি দুয়েকের জন্য খাদে পড়া থেকে বেঁচে গেলো
আমার মনে পড়ে গেলো আজ ১৫ই নভেম্বর , বছর কয়েক আগে যেদিন মোমিনুল মউজুদ্দীন সপরিবারে এই দিনেই ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়াতেই গাড়ী এক্সিডেন্টে নির্মমভাবে মারা গিয়েছিলেন । হাসন রাজার এই প্রপৌত্র, যিনি শুধু অসাধারণ একজন মানুষই ছিলেননা, তিনি একাধারে একজন সু প্রশাসকও ছিলেন , আর ছিলেন খুব মানবীয় মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন অজাতশত্রু কবি ।
আমি বাসের জানালা অর্ধেক খুলে ঠান্ডা বাতাসে গলা ভেজাতে ভেজাতে স্মরণ করি ,সুনামগঞ্জের পৌর কর্তা নির্বাচিত হওয়ার পরে কোন একজন কবি তাকে শুভেচ্ছা বাণী পাঠিয়েছিলেন , প্রত্যত্তরে মউজ উদ্দীন তাকে লিখেছিলেন ''একদিন দেখবেন সুনামগঞ্জ পৌরসভা কবিসভায় পরিণত হয়েছে। সেই সভা স্বচক্ষে দেখে যাবার জন্য আপনাকে অগ্রিম আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।''

সেই সুনাম গঞ্জ আর কবি সভায় পরিণত হয়নি , মউজ উদ্দীন লিখেছিলেন ''এ শহর ছেড়ে আমি পালাবো কোথায়'' , এ শহর ছেড়ে পালাতে গিয়ে ,আবার এ শহরে তাকে ফিরে আসতেই হয়েছিলো , আর সেই ফেরার পথেই তিনি মারা যান ।

জোস্নালোকিত রাত্রে সুনামগঞ্জে পৌরসভায় কোন বাতি জ্বলতো না , তিনি নিয়ম করে গেছিলেন এ শহরে সেই জোস্নালোকিত সন্ধ্যা আর রাত গুলিতে নিয়নের আলো জ্বলবে না , আর চাইলে কবি আর আমার মতোন চির পুরাতন ভব ঘুরেরা খালি পায়ে সারা শহরময় হেটে ঘুরে বেড়াতে পারবে বিলক্ষণ ।

১৫ নভেম্বরের বিশাল চাঁদের নিচে পৌরভার নিয়নের আলোর ভেতরে আমি যখন বাস থেকে নেমে সুনাম গঞ্জ শহরে পা রাখলাম ,
মনে হচ্ছিলো এ শহরে এখন আর হাসন রাজার কোন গান বাজে না ।

এলোমেলো ভাবে এ শহরের আনাচে কানাচে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়িয়ে , আদ্দেক রাত পর্যন্ত হাওরের গা শীতল করা বাতাসের মাঝে বসে থাকলাম , একা এবং নিঃসংগ ।

হোটেলে আধা ঘুম দিয়ে ,পর দিন সকাল এগারটা বিশের বাসে উঠে বসলাম, আমাকে ফিরতে হয় একটি প্রাণহীন শহরে , যান্ত্রিক কিছু অণুভূতির মাঝে আমাকে যে ফিরতেই হয়।
ফেরার পথে সেই মন হু হু করা অণুভূতি , বাইরের ঠান্ডা বাতাস , বাতাসে ভেসে আসা নাম না জানা বুনো ফুলের তীব্র মৌতাত ।
এর মাঝেই কড়া ব্রেক কষে বাস বেমক্কাভাবে দাঁড়িয়ে গেলো ।

কারণ টা খুবই সিম্পল । রাস্তার বা পাশে শীতের অভিবাসী তেল চকচকে বালি হাঁস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভেন্ডররা আর এনা'র এই বাসের আমি বাদে বাকী সবাই সেই মাংশল মাংশের লোভী খদ্দের ।

আমি হয়তো একটু টাল আছি , আমার হয়তো দু ধরনের দিল আছে , আমি হয়তো মাঝে মাঝে এক দু পিস চিকেন কাটলেট খাই -- তবুও অভিবাসী এই পাখিদের টলটল চোখের দিকে আমি তাকাতে পারলুম না ।

এই বাসে আমি এক অনাহুত নাগরিক ,আমি খেয়াল করে দেখলাম আমি ছাড়া এই বাসের সবাই সুস্থ ,
খুব দামাদামি করে কোন এক পরিবার ছখানা হাস কিনেই ফেললো আর সারা বাস জুড়ে তাদের করুণ আর্ত্নাদ আমার কান জুড়ে ঘাই দিতে থাকলো , ঢাকা এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ।

মমিনুল মউজ উদ্দীন আপনি বালি হাঁস খুব ভালোবাসতেন , হাওরের পানির দাপাদাপিতে হাসের জলে কেলি আপনাকে কাঁদাতো, ভাসাতো ------হাসন রাজার গানের মাঝে শাহ আব্দুল করীমের দর্শন আপনি মিলিয়ে মিশিয়ে দিতে পারতেন ---

আপনি কি কখনো জানবেন , চাঁদের এই অতিন্দ্রীয় আলোতে আপনার শহরে আমি খালি পায়ে হাটতে গিয়েও হাটতে পারিনি--সভ্যতার কঙ্কর যে পায়ে বিধঁছিলো বড় !
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৫১
১২টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×