মুক্ত বিশ্বে স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষেত্রটি এখন প্রায় উন্মুক্ত।যে কোন সামাজিক প্রেক্ষিতে ব্লগাররা এখন বেশ অনেক কয়টি দায়িত্ব পালন করেন।কারণ ব্লগারদের অধিকার সংক্রান্ত প্রথা সিদ্ধ কিছু ব্যাখ্যাতে বলা হচ্ছে একজন ব্লগার সাংবাদিক হতে পারেন(তদন্ত পূর্বক অথবা অনুসন্ধানী),তার মত প্রকাশের অধিকার থাকতে হবে,যে কোন রাজনৈতিক অথবা সামাজিক অথবা সাম্পর্কিক মতাদর্শ নিয়ে তার কথা বা বক্তব্য থাকতে পারে,আবার ব্লগাররা চাইলে এনোনিমাস বা অজ্ঞাত পরিচয়ও থাকতে পারেন এবং অন্তর্জালের বাতায়ন যেভাবে মুক্ত,একজন ব্লগার সেভাবে ভীতিহীন থেকে যে কোন সংবাদ বা মত প্রকাশে নীতিগতভাগে বাধ্য থাকেন ।১৮৬০ সালের ডিসেম্বর মাসে বিখ্যাত আমেরিকান বক্তা এবং দাস ফ্রেড্রিক ডগলাস তার বিখ্যাত A plea for free speech নামের বক্তব্যটিতে বলেন,স্বাধীনতা তখনই অর্থহীন যখন একজন ব্যক্তি তার চিন্তাভাবনা এবং মতামতকে উচ্চারণ করতে পারেনা,যখন তার অই স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা হয়।ডগলাসের এই বিখ্যাত উক্তিটি একটি প্রসিদ্ধ ঘটনার জন্য প্রণিধানযোগ্য, যেটা ঘটেছিলো অই বছরেরই একটি সামাজিক উদ্ভুত সমস্যাকে কেন্দ্র করে।মুক্ত আমেরিকায় দাস প্রথা থাকবে কি থাকবে না – এই প্রসংগে যখন একটি মুক্তালোচনার আয়োজন করা হচ্ছিলো,ঠিক সেই সময় দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা এই আলোচনা অনুষ্টানটি অধিকৃত কিংবা বলা যায় ভন্ডুল করে দেয়া হয়।বলা হচ্ছিলো আমেরিকা স্বাধীন দেশ কিন্ত সেখানে মুক্তালোচনা অথবা স্বাধীন মতামত প্রকাশ কি স্বাধীন? ডগলাস এই প্রসংগে বলেন,রাষ্ট্রচালকদের চোখে আমি মত প্রকাশের অধিকার প্রদানের ভীতি দেখেছি কিন্ত এই অধিকার প্রদান করা হলে, এই অধিকারটি হতো সামাজিক এবং নৈতিক সংস্কারক।জ্ঞানীজনেরা ডগলাসের সুরেই বলছেন, সমাজ সংস্কারকেরাও এই কথাটির পুনরাবৃত্তি করেছেন,মুক্ত সমালোচনার অধিকার আমাদের সমাজের অধঃপতন যেমন রোধ করবে তেমন উন্নত করবে মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে। ডগলাসের চিন্তার ক্ষেত্র থেকে আমেরিকা যে রসদ লাভ করেছে সেটা আমরা বুঝতে পারি যখন দেখি মতামতের পূর্ণ অধিকার দেয়ার ফলে সমাজের নৈতিক সংস্কার হয়েছে,সম্পর্কের কাঠামো নির্ধারিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের অবকাঠামোও শ্রেষ্ঠ থেকে শ্রেষ্ঠতর হয়ে গেছে।শ দুয়েক বছর পরে এই ধ্যান ধারণার প্রতিফলন দেখি ফেসবুকের
সফল স্রষ্টা মার্ক জুকারবার্গের বক্তব্যে।উনি বলছেন ,কিছু ব্যক্তি চিন্তা করেন মানুষকে নির্ভয়ে কথা বলতে দিলে এটাতে তাদের লাভের চাইতে ক্ষতি বেশী হবে ।এই পৃথিবীর অনেক ক্ষমতাবান মানুষই চিন্তা করেন তাদের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে যদি মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থেকে যায় – এই কিছু মানুষের চিন্তাতা আসলেই খুব বিপদজনক। জুকারবার্গের মতে অধিকতর মানুষকে নির্ভয়ে কথা বলতে দেয়া হলে , এই বর্ণালী জগতের অধিকাংশ মানুষ বিচ্ছিন্তাবাদী হতে সামাজিক প্রাণিতে রূপান্তরিত হবে কারণ এই পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ এখনও বিশ্বাস করে,সম্মিলিত মতামতের ফলাফল এখন ব্যক্তি কেন্দ্রিক মতামত হতে শ্রেষ্ঠতম।
বিবর্তনবাদীরা গবেষনা করে দেখেছেন,মানুষ্কে অনান্য প্রাণি হতে আলাদা করার কার্যকরী প্রাকৃতিক উপায়টি ছিলো যুক্তিকেন্দ্রিক।যুক্তিবোধ থেকে আসে নায়্যবোধ এবং ন্যায়বোধ মানুষের গতি নির্ধারণ করে দেয় নৈতিক সংস্কারের দিকে।মানুষ কিন্ত পৃথিবীতে তার কার্যকরী স্থানটি অধিকার করে রাখতে পেরেছে শুধুমাত্র তার মুক্তবুদ্ধি বা মুক্ত চিন্তাকে গ্রহণ করবার মাধ্যমে।
লৌহযুগে মানুষ আকাশের বিদ্যুৎ দেখে চমকিত হতো ভীত হতো কিন্ত কার্যকরী যুক্তি, তার মাধ্যমে আবিষ্কার এর মাধ্যম মানুষ এখন বিদ্যুৎ নিজেই উতপন্ন করে এবং সেটা মানব কল্যাণেই ব্যয় করে ।
এভাবে হাজারো উদাহরণ দেয়া যাবে সংঘবদ্ধ চিন্তার গাণিতিক সরলতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মুক্ত চিন্তাকে প্রকাশ করতে দেয়া এবং সমাজকে বুদ্ধিবৃত্তিক পরিণতির দিকে এগিয়ে নিতে দেয়া।এই শতাব্দীর এই সময়ে বলা যায় একজন ব্লগার কিন্ত তদন্ত করে তার যে ফলাফল সমাজকে উপহার দিবেন বা সামগ্রিক মুক্ত চিন্তার মাধ্যমে যে উদ্ভাবন বেরিয়ে আসবে,সেটার সামগ্রিক ফলাফল একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে উপভোগ করবে,রাষ্ট্র কি তার থেকে বঞ্চিত হবে ?
এর উত্তর কখনৈই না ।
চিন্তা মুক্ত হোক, জ্ঞান প্রসারিত হোক, মানুষ অবক্ষিক বলয় থেকে বেরিয়ে আসুক Freedom of Speech অথবা জ্ঞান প্রকাশের স্বাধীনতার মাধ্যমে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:৫১