আহমেদ ছফার গুরু প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের জ্ঞান নিয়ে অনেক ঘটনা পড়েছি । বাংলাদেশের অনেক নামকরা গবেষণার উনি সুপারভাইজার ছিলেন , অনেক পি এইচ ডি উনার অধীনে হয়েছে কিন্ত উনার নিজের পি এইচ ডি ডিগ্রী ছিলোনা, কেনো ছিলোনা সেই কাহিনী অনেকেই জানেন । উনার জীবনের সবচেয়ে গুরত্ত্বপূর্ণ দুইটা বিষয় নিয়ে আমি অনেক কিছু ভাবলাম । একটা হলো উনার নিজের লেখা কোন বই উনি ছাপেন নাই , আরেকটা হলো জ্ঞান গবেষণার ফাকে উনি যে বিষয়ে খুব বেশী সময় দিতেন সেটা হলো দাবা খেলা ।
হুমায়ূন আহমেদের কোন লেখায় পড়ছিলাম , উনি খুব নিম্ন মানের দাবা খেলোয়াড় ছিলেন, প্রায় ভুলভাল চাল দিতেন এবং উনার জেতার রেকর্ড কম কিন্ত হারার রেকর্ড বেশী । অথচ সেই দাবা খেলাতেই উনি সময় দিতেন সবচেয়ে বেশী ।
এখন উনি ৪/৫ টা বই লিখে গেলে কি হতো ?
পৃথিবীর বই পুস্তকের ইতিহাস বলে , ধার্মিক গ্রন্থগুলো ছাড়া অন্য কোন সব গ্রন্থ মানুষের স্মৃতির বাইরে চলে যায় কিংবা কিছু সময় পরে আর পাত্তা পায় না । পৃথিবীতে বিভিন্ন বিষয়ে এতো সব বই লেখা হইছে , যেগুলো পড়তে একজন মানুষের ৪/৫ হাজার বছর লেগে যাবে ।উনি বুদ্ধিমান মানুষ ছিলেন , তাই নিজে বই লেইখা সময় নষ্ট না করে , উনি তাবৎ পন্ডিত দের লেখা বই পড়ে তার গুরুত্ত্বপূর্ণ জীবনের সময়টুকুর মধ্যে ই তিনি বেচেছিলেন।
আর দাবাটা উনি যখন খেলতেন ,আমার ধারনা চাল দেয়ার ফাকে ফাকে উনি যে বইগুলো পড়তেন সেগুলো নিয়েই ভাবতেন , নইলে তার মতোন জ্ঞানী মানুষের 'টেরিফিক দাবা খেলোয়াড়' উপাধিটা পেতে হতো না।
ব্লগের জীবনেও দেখলাম, প্রচুর জনপ্রিয় লেখক এসেছেন , বিতর্কিত কিংবা সন্মানিত কিংবা চর্চিত । কিন্ত সময়ের ফেরে হোক আর কালের পরিক্রমায় হোক এদের কাউকে পরের সময়ে আর তেমনটা পড়া হয়নি ।
ভাইরাল আসলে একটা সময় নির্ভর প্যারাডক্স , গতকাল যেমন ফেরানো যায় না , আগামীকালও আজকে আনা যায়না ।
ইমন জুবায়ের নামটা এখনকার ব্লগে যারা আছেন তাদের অনেকেই হয়তো জানেন না , অথচ একজন আপাদমস্তক ব্লগার বলতে যা বুঝায় তাই ছিলেন তিনি । আরো অজস্র ব্লগার ছিলেন ,আমি মাঝে মধ্যে ব্লগে ফিরে এসে তাদের খুজে পড়তে যাই , অনেক লেখাই পাই , অনেকের লেখাই পাই না ।
পৃথিবীতে এতো সাহিত্য , এতো কবিতা , এতো কন্টেন্ট রচনা হয়ে গেছে , এখন নিজের কিছু লিখাটাই পন্ডশ্রম ।
আমি তাই বইয়ের পাতার মাঝে গুজে রাখা গোলাপের পাপড়ির গন্ধ নিতে
পুরানো ব্লগের মাঝে ফিরে যাই ।
জনপ্রিয়তার জ্বালা অনেক , নিজেকে টাইম লাইনে রাখার চেষ্টা বজায় রাখতে হয় আবার হাত তালি কিংবা গালি কিংবা ঈর্ষা সব কিছুই উপভোগ করতে অভ্যস্ত হতে হয় ।
মানুষের ক্ষুদ্র জীবনে আসলে লো প্রফাইল কিংবা কীটের জীবন নিয়ে বেচে থাকাটাই আমার জন্য শ্রেয় । নীচে বসে থেকে সেই ওপরের দিকে তাকিয়ে থাকলে মানুষও দেখা যায় , সূর্যও দেখা যায় ,
সাড়ে ৬ ফিট উচ্চতায় থাকলে নীচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় সর্বদাই
ওপরে নীল আকাশটাও দেখা হয় না , চাদটাও অন্ধকারে ঢেকে থাকে ।
যদিও জীবনানন্দ লো প্রফাইলে থাকা অবস্থাতেই ট্রামের নীচে পড়ে গেলেন , কিন্ত ২০০ বছর পরেও পৃথিবীর কোন কোণা থেকে কেউ একজন হলেও তার এক লাইন মনে রাখবে ।
আমি এদেরকেই জনপ্রিয় বলি ,ভাইরাল বলিনা ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৭