- মাহমুদুর রহমান সুজন
বইঃ শান্তির পথে
লেখকঃ লোকমান হোসেন পলা
প্রকাশনায়ঃ পূর্বাপর
প্রচ্ছদ্রঃ সৃজন
মূল্যঃ ১৩০/
লোকমান হোসেন পলা ব্লগার(সেতুর বন্ধন) যার সাথে আমার কৈশোর কেটেছে। সময়ের আবর্তে কৈশোরের কিছু স্মৃতি যে শুধুই রুপালী তাই নয়। কিছু স্মৃতি বিস্মৃতির অতলে নিঝুম আধাঁরে তলিয়ে গিয়েছে কিছু আবার মানষপটে ভেসে ওঠে, এখন শুধুই ফেলে আসা স্মৃতি মনে হয়। এমন অনেক সময় কেটেছে লেখকের সাথে। বয়সের যদিও কিছুটা তারতম্য রয়েছে তারপরেও ওর শুরুর জীবনটা চোখের দেখা। ভ্রমন প্রিয় লেখকের ভ্রমন যেনো তার ছিল নেশা। লেখক সবসময় ভ্রমনে খুশি হতো। নিত্য নতুন কোন যায়গাতে ঘুরা ফেরা করা তার ছিল স্বভাব। এক সময় সে তাজমহল দেখার বায়না ধরে, আমরা যখন ঘরের গন্ডি পেরোতে পারিনি সে ঠিকি ভারতে আগ্রায় তাজমহল দেখে এসে তাজমহল দেখার কৃতিত্ব অর্জন করে । তার এই ইচ্ছা ছিল সদায় পাখির চোখে পৃথিবী দেখার মতো। এমন করে দেশের প্রতিটি অঞ্চল দেখা। দেশের পরে বিদেশ; ভারতের ভিবিন্ন অঞ্চল সুযোগ করে দেখা শুরু করে; তার মধ্যে পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা,দিল্লি,রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, আসাম, মিজুরাম, বিহারসহ আরো অন্যান্য অঞ্চল। এছাড়া ও লেখক নেপাল, ভুটান, সিঙ্গাপুর ঘুরে দেখে ।
যাইহোক যে গ্রন্থটি নিয়ে লিখতে বসেছি তার প্রসঙ্গে আসি। লেখক গত দুই বছর আগে মক্কাতে উমরা করতে আসে। উমরা করতে এসে ইসলামের নানান স্মৃতি জড়িতে মক্কা, মদিনা, তায়েফ ও জেদ্দা নগরি দেখে অভিভূত হয়। এই সুযোগে ঐতিহাসিক স্থাপনা ও আরবদের নান্দনিক শিল্প দেখে তার মনে জাগে এই পথে তার দেখা স্মৃতি বিজড়িত দৃশ্যপটগুলো সাহিত্যের আদলে মলাট বন্ধি করবে। ঠিকি যেই কথা সেই কাজ তার এই ভ্রমনকে মলাট বন্ধি করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে। তার চেষ্টার সফলতার নাম হয় ”শান্তির পথে।”
আমি একসময় তার লেখার নিয়মিত পাঠক ছিলাম। কিন্তু দূরত্ব আমাদের একটু বিচ্ছিন্ন করলেও প্রযুক্তি এখন সেই সমস্যাটা উত্তরন করেছে। মাঝে মধ্যে লেখক তার লেখা পড়ার সুযোগ করে দেয়। তার জন্য লেখকের কাছে কৃতজ্ঞ।
”শান্তির পথে” বইটি যদিও আমাদের প্রাণের একুশের বই মেলায় প্রকাশ পাওয়ার কথা। আর বই মেলা শরু হবে পহেলা ফেব্রুয়ারী থেকে আমি বইটির পিডিএফ কপি পাই তার একদিন আগে। বইটির পিডিএফ ভারর্সনটি হাতের কাছে পেয়েই পড়ায় ডুব দেই। পড়া শেষ করে লিখতে চেয়েছিলাম বইটির রিভিও কিন্তু জ্ঞানের সল্পতার জন্য হয়তো বইটির রিভিও করার মতো এতো সাহস আমার নেই ভেবে অবদমিত হয় ইচ্ছার। কিন্তু যা পড়লাম তার সম্পর্কে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিছু না বললে যে নয়। তারপর ভাবলাম লেখকতো আমার চেনা মানুষ, তার লেখাতে আলোচনা বা সমালোচনা মার্জিত হবে। আবার একদিক থেকে আমিতো একজন পাঠক আমি আমার মতামত জানাতে পারি, মনের সাথে নানান হিসেব করার পরে বন্ধুর লেখনীর আলোচনা করতে গিয়ে সাহসের কমতি নিয়েই কিবোর্ডে হাত লাগাই। বইটি পড়ে মনে হলো যে লেখক সত্যিই পাখির চোখে বিশ্বটাকে দেখতে পেরেছে। তার দেখার নিপুণ বর্ণনা আমাকে উদ্বেলিত করেছে। লেখক একবার দেখে এতো সুন্দর বর্ণনা করেছে সে স্থানগুলো আমি বহুবার দেখেছি। আমার চিন্তার খোরাক যোগিয়েছে ”শান্তির পথে” গ্রন্থটি। লেখকের ঐতিহাসিক বর্ননার ত্রুটি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে পড়েনি।
শান্তির পথে ৬৪ পৃষ্টায় লিখিত গ্রন্থটি বেশ কয়েকটি শিরোনামে লিখেছেন প্রতিটি শিরোনামে রয়েছে স্তবক, লিখন রীতি প্রমিত বাংলা । পাঠকদের জ্ঞানার্থে ইতিহাসিক আলোচনাগুলো সাল ও রেফারেন্স হিসেবে দিয়েছেন। এখানেই লেখকের পেশার সাথে সামজস্যই লেখনীর চমক! সুন্দর লেখনীতে সাহিত্যে রষ রেখে বিচ কিংবা সপিংমলের মতো যায়গাগুলো দর্শনের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন, বর্ণনা করেছেন স্থাপত্যগুলোর। অতি যত্ন করে তার লেখনীর সবোর্চ্চ দিতে চেয়েছেন । লেখেছেন ইসলামের প্রথম সময়কার যুদ্ধগুলো নিয়ে তাতে ইসলামী ইতিহাসের দারস্থ হয়েছেন লেখক। তার বর্ণনাতে শিশু মুহাম্মদ (সাঃ) এর শৈশবের কিছু কথা, নবী সাঃ জিবদর্শায় ইসলাম প্রচার, মদিনার নবিজির দিনাতিকালপাত ওবিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণ এগুলো নিয়ে তার লেখনীর মাত্রা ত্রৈমাত্রিক ছিল।
ভ্রমন বিষয়ক গ্রন্থটি যে কোন চিন্তাবিধদের চিন্তার খোরাক হবে আমার মনে হয়। বইটির দার্শনিক বর্ননাও নিপুন। যেহেতু বইটি মুসলিম বিশ্বের প্রাণ প্রিয় দর্শনীয় স্থানদ্বয় আবর্তে তাই কোরানিক ও হাদিসের রেফারেন্স সহ আলোচনা অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। যেহেতু লেখক নিজেই স্বীকার করেন মুখবন্ধনে, ”কোরআন আর হাদিসের ব্যাপারে একজন ধর্মীয় বিষয়ক আলেমের সহযোগিতা নিয়েছেন।” তাই ভুল থাকবার কথা নয়। সাহিত্যে ভাষায় ভ্রমন গ্রন্থটি লুকমান হুসেন পলার সৃষ্টির দুঢ়তার পরিচয়। লেখকে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি তাই তার বেশী প্রশংসা হয়তো অনেকের কাছে অতি রঞ্জিত মনে হবে। তার রচিত সাহিত্য পুঙ্খানুপুঙ্খ এক একটি প্রতিকৃতি যেখানে আছে সুক্ষ সব অনুভব এবং গভীর দৃষ্টিকোণ। তাই পাঠকদের কাছে আবেদন রইল যদি সম্ভব হয় বইটি হাতে নিয়ে কিছুটা সময় ব্যায় করে দেখতে পারেন। আমি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি সময় অপচয় হবে না।
তার ”শান্তির পথে” বইটি মানুষের মনে শান্তি অমিয় বাণী পৌছে যেনো দেয়, আমি তাই কামনা করি। লেখককে আরো জ্ঞান সমৃদ্ধ করুন, চিন্তাকে প্রসার করুন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তারি সাথে আমাদের দীনের মধ্যে অবিচল রাখনু। আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১০:৪৪