somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেলপথ মন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি- নির্মলেন্দু গুণ

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা থেকে মোহনগঞ্জ— একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হচ্ছে ৩০ জুলাই থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেই ট্রেনটির উদ্বোধন করবেন বলে কথা আছে। আমি আমার এলাকার মানুষের পক্ষ থেকে ঐ ট্রেনটির জন্য একটি নাম প্রস্তাব করেছিলাম। আমার প্রস্তাবিত নামটি ছিলো— কাশবন এক্সপ্রেস।

ফেইসবুকে ট্রেনের নামকরণ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জনমত জরিপের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল এলাকার কয়েকজন তরুণ। তখন আরও দু’টি নাম প্রস্তাব করা হয়েছিলো, যেমন কংশ এক্সপ্রেস এবং ভাটী বাংলা এক্সেপ্রেস। ফেইসবুকের জরিপে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কাশবন এক্সপ্রেসের পক্ষে ভোট দেন। রেলওয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এ-ব্যাপারে আমি কথা বলেছিলাম। তারাও আমার প্রস্তাবিত কাশবন নামটিকেই কাব্যিক, শ্রুতিমধুর এবং ঐ অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের আলোকে যুক্তিযুক্ত মনে করেন এবং মাননীয় রেলপথ মন্ত্রীর কাছে সেইমতো প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন বলেই জানতাম।

কিন্তু সম্প্রতি লোকমুখে শুনতে পাই যে, কাশবন এক্সপ্রেস নয়, নতুন ট্রেনটির নাম রাখা হচ্ছে— কংশ এক্সপ্রেস। একথা জানার পর আমি ১ জুলাই মাননীয় রেলপথ মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। আমি তাঁকে আমার আত্মজীবনী মহাজীবনের কাব্য এবং নির্গুণের মুখপঞ্জি ও কাশবনের গল্প— এই বই দু’টি উপহার দেই। তখন তিনি আমাকে জানান যে, নেত্রকোণার বেশ ক’জন এমপি তার কাছে এসেছিলেন, তারা নাকি কংশ এক্সপ্রেস নামটির পক্ষে ডিও লেটার ( এটা ঠিক কী জিনিস, আমি ঠিক জানি না)দিয়ে গেছেন। এখন তাঁর পক্ষে কাশবন এক্সপ্রেসের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। আমি যেন তাদের সঙ্গে কথা বলি।

আমি বললাম, এই পরামর্শ আপনি যদি এমপিদের দিতেন, তবেই তো কবির সম্মান রক্ষিত হতো। নামকরণের ব্যাপারেও কবির চেয়ে এমপির প্রাধান্যই আপনি মেনে নিলেন? তাহলে দেশের কবি-সাহিত্যিকরা আছেন কী করতে? মানুষ তো তাদের প্রিয় সন্তানের বা কোনো প্রিয় প্রতিষ্ঠানের নামকরণের জন্য কবিদের কাছেই যায়, এমপিদের কাছে যায় কি?
কাশবন নামটির প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে। আমি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের আদলে আমার গ্রাম কাশতলায় কাশবন প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে সেরা চারজন বাঙালির ভাস্কর্য রয়েছে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাছাড়া রয়েছে— কাশবন বিদ্যানিকেতন (উচ্চ বিদ্যালয়), রামসুন্দর পাঠাগার, বীরচরণ মঞ্চ, সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা (আর্ট স্কুল), শৈলজা সঙ্গীত ভুবন (গানের স্কুল), শহীদ মিনার ইত্যাদি।

ক্রমশ কাশবন একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে। বেশ দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ সেখানে আসছে। ভবিষ্যতে এটি আরও সমৃদ্ধ, আরও প্রসারিত এবং আরও দর্শনীয় হয়ে উঠবে। কাশবন এক্সপ্রেস যদি মানুষেকে আমার স্বপ্নের সেই কাশবনে পৌঁছে দিতে সহায়ক হয়, তাতে লাভ ছাড়া কারও কোনো ক্ষতি তো নেই।

কংশ আমারও নদী। কংশ নিয়ে আমার একাধিক কবিতা রয়েছে। —কংশের সাথে সমুদ্রের বেশ মিল আছে। মাইকেলের যেমন কপোতাক্ষ, আমার তেমনি কংশ। তবে কংশ নিয়ে আমার যে আপত্তি সেটা হচ্ছে— মহাভারত মতে কংশ একজন অত্যাচারী রাজা ছিলেন, যাকে বধ করার জন্য ধরাধামে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিলো। আমাদের এলাকায় ‘কংশবধ পালা’ আমরা ছোটোবেলায় অনেক দেখেছি। আজকাল দেখি না বটে। সেজন্যই সমাজজীবনের অত্যাচারীদের নিন্দা করে এখনও যে-প্রবচনটি আমরা ব্যবহার করি, সেটি হচ্ছে— আমরা কংশরাজার বংশধর।
এবার বাংলা একাডেমী প্রকাশিত বাংলা অভিধানে একটু চোখ বোলানো যাক—
কংস, কংশ # [ কঙশো] বি. কৃষ্ণের মাতুল ও পরম শত্রু মথুরাপতি।কংসজিৎ - কংশকে যিনি বধ করেছেন; মহাবতার শ্রীকৃষ্ণ।

হয়তো একসময় এই নদ তার তীরবর্তী মানুষের কাছে অত্যাচারের প্রতীক হয়ে উঠেছিলো বলেই মহাভারত-নিন্দিত এমন অত্যাচারী নৃপতির নাম বরাদ্দ হয়েছিলো ঐ নদের ললাটে। তাই প্রশ্ন জাগে, কাশবনের মতো এরকম পুষ্পধন্য নাম বাদ দিয়ে আমরা কংশকে গ্রহণ করবো কেন?
বারহাট্টা উপজেলার অন্তর্গত কাশতলা গ্রামে আমার প্রতিষ্ঠিত কাশবন এমন কি অপরাধ করলো যে, রবীন্দ্রনাথের কবিতায়, জয়নুল আবেদীনের চিত্রকর্মে যে-কাশবন ও কাশফুলের প্রশান্তরূপ বিধৃত হয়েছে, ( আমার কবিতার কথা না হয় বাদই দিলাম) তাকে উপেক্ষা করে কংশ নদকে সম্মান না জানালে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?
মাননীয় রেলমনত্রীর কাছে সবিনয়ে জানতে চাই,— দ্রুতযান, একতা, ঝটিকা, তূর্ণা-নিশিথা, প্রভাতী, উপবন, গোধূলি... এইসব সুন্দর-সুন্দর ট্রেনের নামগুলো কোন এলাকার কোন এমপিরা রেখেছিলেন?
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×