somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষি শিক্ষা বনাম প্রযুক্তি শিক্ষা

৩০ শে মে, ২০১১ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবম-দশম শ্রেণীতে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে যে কয়টি বিষয় দেওয়া আছে তার মধ্যে দুইটি হলো কম্পিউটার শিক্ষা ও কৃষি শিক্ষা অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী তার চতুর্থ বিষয় হিসাবে কৃষি শিক্ষাও নিতে পারে আবার কম্পিউটার শিক্ষাও নিতে পারে। এই দুটিই ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। একটি কৃষি যা মানুষের আদিম পেশাগুলোর মধ্যে একটি ও আমাদের বাংলাদেশের সিংহ ভাগ লোকের পেশা তা নিয়ে আলোচনা করে, অপরটি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অন্যতম আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করে।

বাংলাদেশের প্রায় আশি ভাগ লোকের পেশা কৃষি। কৃষির উপর নির্ভর করে সচল হয় আমাদের অর্থনীতির চাকা। কিন্তু আমরা কৃষিতে এখনো আধুনিক হতে পারিনি। আমাদের দেশের কৃষক এখনো সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ পরিচালনা করে থাকে। তারা অনেকে জানেনা কৃষিতে কি কি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। আমি আমার গ্রামের কৃষি পদ্ধতির কথাই বলতে পারি। তারা এখনো গরু দিয়ে হাল চাষ করে। চাষের জন্য তারা ট্রাকটর ব্যবহার করতে নারাজ। ধান কাটার পর তারা মাড়াই করতে ব্যবহার করে প্রাচীন মাড়াই পদ্ধতি। কিন্তু তারা আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন না। এভাবে তারা প্রতি ধাপে ধাপে প্রাচীন সেই পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। যা কৃষির উন্নতিকে ব্যহত করে। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারে এমন কৃষক গ্রামে নেই বললেই চলে। গ্রামের বেশির ভাগ চাষিই তাদের পূর্বপুরুষের পেশাকে ধরে রাখতে গিয়ে চাষাবাদ করছে মাত্র। তাদের বেশির ভাগই আবার নিরক্ষর, তাই তারা আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে অজ্ঞ।

আবার উল্টো কথাও বলা যায়। আমি যখন আমার প্র্যাকটিস টিচিং শুরু করি তখন একটি পরীক্ষা চালিয়েছিলাম আমার ক্লাশের শিক্ষার্থীদের সাথে। ঢাকার একটি সুনামধন্য বিদ্যালয়ে আমার ক্লাশ নেয়ার সুযোগ হয়েছিল। ক্লাশের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বেশির ভাগই ছিলেন বাংলাদেশকে সচল রাখার কারিগর। অর্থাৎ প্রশাসনের প্রান। একদিন আমি ক্লাশে বললাম, তোমরা কি জানো, ধানগাছ থেকে ধান আহরণ করার পর সেই গাছ দিয়ে কি করা হয়? অনেকেই জানে না। দুই একজন জানে বললো। আমি বললাম, বলো তো কি হয়?

জবাবে যা বললো তা শুনে আমার মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম হলো। জবাবটি ছিল, ধানগাছ দিয়ে কাঠ হয়। সেই কাঠ দিয়ে আমরা আসবাবপত্র বানাই।

আমার কিছু বলার ছিলনা। কি বা বলার থাকতে পারে? তাদের অনেকের কখনো ধানগাছ দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই এমন উত্তরে আমি অবাক হইনি। এতে তাদের কি দোষ? তাদের জানানোর দায়িত্ব ছিল যাদের তারা জানাতে পারেন নি। তাদের জানার একটা উপায় আছে তা হলো কৃষি শিক্ষা। আমরা অপশন দিয়ে তাদের সেই সুযোগটাকেও ছিনিয়ে নিচ্ছি। এ কারনে দেখা যাচ্ছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ কৃষি শিক্ষা নিচ্ছে, আবার শহরের শিক্ষার্থীরা নিচ্ছে কম্পিউটার শিক্ষা। আবার নাম্বারের উপরও নির্ভর করছে কোনটা নিবে। মেয়েদের জন্য তো অপশন আরো আছে, গার্হস্থ্য শিক্ষা। হয় তুমি গৃহ কন্যা কর, মানে গার্হস্থ্য শিক্ষা নাও নয়তো ইঞ্জিনিয়ার হও। এটা কেমনতর কথা?

বর্তমান সময় তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আবার আমাদের দেশ হচ্ছে কৃষি প্রধান দেশ। তাই আমাদের উচিত দুটো দিকেই তাকানো। একটির মুখোমুখি আরেকটিকে দাঁড় না করিয়ে দুটোকে যদি সমন্বয় করা যায় তবে শিক্ষার্থীরা অঙ্কুর থেকেই যেমন প্রযুক্তির বিদ্যা লাভ করতে পারবে, তেমনই শ্রদ্ধা জানাবে আমাদের চাষি সমাজকে। তাদের নানান প্রয়োজনে তাদের সাথে এসে দাড়াতে পারবে।

অনেকে বলতে পারেন, একজন শিক্ষার্থী কি করে একই সাথে একাধিক বিষয়ে শিখবে? তাদের জন্য আমার জবাব হলো, বিষয় বিশেষজ্ঞ বানানো তো নবম দশম শ্রেণীর কাজ না। এসময়ে তারা শিখবে কিছু মৌলিক জিনিস। যা তারা কোন কারনে পড়াশোনা শেষ করলেও তাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারবে। যেমন-কৃষি ক্ষেত্রে বাগান করা, মাছ চাষ করা, ফসল ফলানো ইত্যাদি আর প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজ করা- টাইপ করা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, মেইল করা ইত্যাদি। এজন্য খুব বেশি বইয়ের পরিধি বাড়ানো দরকার হবেনা। দরকার হবে শুধু পরিবর্তনের মানসিকতা। জানি সেই মানসিকতা আমাদের দেশের লোকের আছে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×