somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর কম্পিউটার শিক্ষার নতুন সিলেবাস ও কিছু কথা

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত ৭ সেপ্টেম্বর এনসিটিবি উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর কম্পিউটার সিলেবাসে কিছু পরিবর্তন আনে। পরিবর্তিত সিলেবাসটি তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আমরা এ সংক্রান্ত খবর দেখতে পাই। এ খবরের নানান ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখতে পাওয়া যায়। পরিবর্তিত সিলেবাসটি কবে থেকে কার্যকর করা হবে, কিভাবে কার্যকর করা হবে তার কোন দিক নির্দেশনা ওয়েব সাইটটিতে দেওয়া হয়নি। বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিলেবাসটি পরিবর্তনের কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহলে কিছুটা সোরগোল পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। বিশেষ করে যে সমস্ত শিক্ষার্থী বিষয়টি ঐচ্ছিক অথবা আবশ্যিক বিষয় হিসেবে নিয়েছে তাদের করণীয় সম্পর্কে কোন দিক নির্দেশনা না থাকায় তারা বিশেষ ভাবনায় পড়ে যায়। একজন শিক্ষা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি আমার নজরে আসে। বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা লাভের জন্য আমি সিলেবাসটি পাঠ করি। নতুন এই সিলেবাসের সাথে আমি বর্তমানে বিদ্যমান উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সিলেবাসটি মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করি। এই দুটোকে মিলিয়ে দেখার সময় কিছু কিছু বিষয় আমার নজরে আসে।




বর্তমানে বিদ্যমান সিলেবাসটিতে অর্থাৎ ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের সিলেবাসে কম্পিউটার শিক্ষায় যে সমস্ত বিষয় শেখানো হয় তা হলো-

কম্পিউটার শিক্ষা প্রথম পত্র
অধ্যায় ১- কম্পিউটারের ধারনা ও সংখ্যা পদ্ধতি, অধ্যায় ২-অপারেটিং সিস্টেম, অধ্যায় ৩-ডকুমেন্ট প্রসেসিং ও পেজ মেকার, অধ্যায় ৪-ডিজিটাল লজিক, অধ্যায় ৫-সিপিইউ ও মেমরি, অধ্যায় ৬-কম্পিউটার আর্কিটেকচার, অধ্যায় ৭-ইনপুট ও আউটপুট ডিভাইস, অধ্যায় ৮-প্রোগ্রাম ডিজাইন, অধ্যায় ৯-কিউবেসিক

কম্পিউটার শিক্ষা দ্বিতীয় পত্র
অধ্যায় ১- ডাটা প্রসেসিং ও সিস্টেম এনালাইসিস, অধ্যায় ২- ডাটা স্ট্রাকচার ও এলগরিদম, অধ্যায় ৩- স্প্রেডশিট এনালাইসিস,অধ্যায় ৪- ফাইল এবং ফাইল প্রসেসিং, অধ্যায় ৫- ডেটাবেস, অধ্যায় ৬- ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং প্রোগ্রামিং, অধ্যায় ৭- ডেটা কমিউনিকেশন ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, অধ্যায় ৮- তথ্য প্রযুক্তি অধ্যায় ৯- মাল্টিমিডিয়া অধ্যায় ১০- কম্পিউটার রক্ষনাবেক্ষণ

সিলেবাসে যে সমস্ত বইয়ের লিস্ট দেয়া হয়েছে সেই বইগুলোতে অধ্যায় ভিত্তিক কি আলোচনা করা হবে তার উল্লেখ আছে। নতুন সিলেবাস ও বর্তমানে বিদ্যমান সিলেবাস দুটো দেখলে দেখা যায় নতুন সিলেবাসে-‌

অফিস অটোমেশনে মাইক্রোসফট অফিসের পাশাপাশি ওপেনঅফিস-রাইটার, ক্যালক, বেস ও ইমপ্রেস ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে। মাল্টমিডিয়া প্রেজেনটেশন সফটওয়্যারে ইমেজ এডিটিং এর সফটওয়্যার হিসেবে গিম্প (GIMP) অথবা পেইন্ট এর কথা বলা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি অধ্যায়ের স্থলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কথা বলা হয়েছে। সিলেবাসটি একটু খেয়াল করলে দেখা যায়, বর্তমান সময়ে আলোচিত ওপেন সোর্স সফটওয়্যায় ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম হাতিয়ার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কথা এই সিলেবাসে চলে এসেছে।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আর প্রযুক্তির অধিকাংশ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের খরচ অনেক বেশি। তাই অধিকাংশ মানুষই তা ব্যবহার করতে পারে না। এর উপর যদি লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয় তবে তার জন্য যে অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাবে তা বহন করা আমাদের মত দেশের অধিকাংশ লোকের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। এই অবস্থায় একটি টেকসই আইসিটি নির্ভর সমাজ বিনির্মাণে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেমের ভুমিকা অপরিসীম। ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম আমাদের নিজেদের ভাষায় অনুবাদকৃত ও তা বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এগুলোর নানান ধরনের সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান থাকে। লাইসেন্সের ঝামেলা না থাকায় তা কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হতে পারে।

এনসিটিবি কর্তৃক প্রণীত নতুন সিলেবাসে দেখা যায় এখানে লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যারের (মাইক্রোসফট এর সফটওয়্যার) পাশাপাশি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার (ওপেন অফিস, গিম্প) ও অপারেটিং সিস্টেমের কথাও বলা হয়েছে। যা ওপেনসোর্স সফটওয়্যারের আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। এছাড়া নতুন সিলেবাসে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সিলেবাসে তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে একটি অধ্যায় বিদ্যমান ছিল। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান সরকারের ঘোষণা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে তথ্য প্রযুক্তির সাথে যোগাযোগের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই অধ্যায়টি পরিবর্তন করা যুগোপযোগী হয়েছে।

সদ্য প্রণীত সিলেবাস থেকে দেখতে পাই, এই সিলেবাস দ্বারা একজন শিক্ষার্থী সহজেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে জানতে পারবে, তথা ইউনিক্স, লিনাক্স সম্পর্কে জানতে পারবে, তারা ওপেন সোর্স সম্পর্কে জানতে পারবে ও এতে করে তারা ঐসব ব্যবহারে আগ্রহী হবে। শিক্ষার্থীরা ওপেন সোর্সে অভ্যস্ত হতে পারলে অপরকে শেখাতে পারবে। এতে করে আমরা ওপেন সোর্স ব্যবহারকারী একটি সম্প্রদায় পাবো। ফলে আমাদের দেশ সফটওয়্যার পাইরেসির দুর্নাম থেকে রেহাই পাবে, প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার সাশ্রয়ী হবে, এছাড়া মাইক্রোসফটের বেঁধে দেয়া সময়সীমা নিয়ে অহেতুক চিন্তা করার হাত থেকেও দেশ মুক্ত হবে।

বছরের মাঝামাঝি একটি সিলেবাস পরিবর্তন করা হলে তা যাদের উপর প্রথম প্রয়োগ করা হয় তাদের কিছুটা অসুবিধার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। এতে করে পরিবর্তনের সঠিক ফল পাওয়া যায়না। এই দিকে এনসিটিবির নজর দেয়া উচিত। এমন কিছু করা যেতে পারে যাতে করে পরিবর্তনের সঠিক ফল লাভও করা যায় আবার শিক্ষার্থীদের কোন অসুবিধায় পড়তে না হয়। যেমন পরিবর্তনটি করা যেতে পারে শিক্ষা বর্ষের শুরুতে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা সহজেই এই পরিবর্তনের সাথে অভ্যস্ত হতে পারে। তা না হলে হিতে বিপরীত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যায়।

(লেখাটি একাধিক ব্লগে প্রকাশিত)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৯:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×