somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মুবিন খান
অদৃষ্টরে শুধালেম, চিরদিন পিছে, অমোঘ নিষ্ঠুর বলে কে মোরে ঠেলিছে?সে কহিল, ফিরে দেখো। দেখিলাম থামি, সম্মুখে ঠেলিছে মোরে পশ্চাতের আমি।

পত্র লিখি, পত্র লিখি, তোমারেই...

১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রিয়তমেষু,
তুমি কি করেছ জানো? আমাকে একটা ধাক্কা মেরে সময়ের হিসেবে প্রাচীন যুগে ঠেলে দিয়েছ। এই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও, যখন হাজার মাইল দূরে থেকেও লোকেরা পরস্পরকে দেখতে দেখতে কথাবার্তায় আবির মাখিয়ে বলাবলি করে, এমন একটা যুগে বাস করেও আমাকে আজকে সুপ্রাচীন যোগাযোগমাধ্যম চিঠিকে আঁকড়ে ধরতে হয়েছে।

আমি জানি, তুমি বলবে আজকে ডাক দিবস বলেই আমি চিঠি লিখছি। অথচ তুমি জানো তোমার এ ধারণা সত্য নয়। তাছাড়া আজকে যে ডাক দিবস সেটা আমি আমি জানতামই না! এক মেয়ে তার বন্ধুকে একটা কাব্যিক চিঠি লিখেছে। ওই কাব্যিক চিঠিটা না লিখলে তো আমার জানাও হতো না। মেয়েটার চিঠিটা দেখেছ তুমি? দেখ নি, না? মেয়েটা কি করেছে জানো! একশ’ বছরের পুরান একটা কাগজ জোগাড় করে তাতে চিঠি লিখেছে। যাকে লিখছে সে তো ও চিঠি হাতে নিতে না নিতেই তো ছিঁড়ে যাবে! কি কিপটা দেখেছ! মেয়েটার বন্ধুটার জন্যে আমার খারাপই লাগছে! আহা! বেচারি! চিঠি লেখা মেয়েটা কি কিপটা, তাই না? অবশ্য চিঠিটা যে শৈলীতে তাতে ওর ওই কিপটামি এড়িয়ে যাওয়াই যায়। তুমি আমাকে অমন করে একটা চিঠি লিখতে পারো না? ও ভাষায় নয়, তোমার নিজের ভাষায়।
এই শোন! আমি যে তোমাকে এসব বলেছি, তুমি কিন্তু আবার বলে দিয়ো না! বলে দিলে ওই মেয়ে ঠিক ডিটারজেন্ট আর পানি নিয়ে চলে আসবে। লন্ড্রিতে পাঠাবে না। আমাকে নিজেই ধুয়ে ফেলবে।

থাক ওসব কথা। শোন, কবিতা লিখবার কথা ভেবেছিলাম। তুমি তো জানোই, কবিতা আমি লিখতে পারি না। তোমার মতো ভাষা শৈলী আমার জানা নেই, তাই সাহিত্যও রচনা করতে পারি না। কেবল কথাবার্তা বলতে পারি। সে তো সবাই পারে। ও তো আর শিখতে হয় না, শেখা হয়ে যায়। কথাবার্তা যদি শিখতে হতো তাহলে আমার বিপদই ছিল। শেখাশেখি করতে পারি না বলেই তো মূর্খ রয়ে গেলাম। আর মূর্খ মানেই অপাংক্তেয় বড়। তাই যখনই কলম হাতে বসি, আয়নায় প্রতিবিম্বর পানে চেয়ে দেখতে পাই নিধিরাম সর্দার সামনে কাগজ রেখে তাতে সমানে কলম ঘষাঘষি করছে।

তুমি তো আর প্রতিবম্ব নও, তুমি তাকালেই এই নিধিরাম দেখে ফেলতে পারো। দেখও। আমি জানি সেটা। তবুও বলাবলিতে নিয়ন্ত্রণ হারাই, বল্গাহীন বলতেই থাকি, বলতেই থাকি! তুমিও বিরক্ত হতেই থাকো, হতেই থাকো। তারপর রেগে ওঠ। রেগে উঠে তুমিও ডিটারজেন্ট জোগাড় কর।

আমি কি করব বল তো, ছুঁড়ে দেয়া তীর-বর্শা আর বলে দেয়া কথাবার্তা ফিরিয়ে নেয়া যায় কি কখনও? যায় না তো। আমি পারি না। কিন্তু তুমি কি করে যেন এই অদ্ভুত ক্ষমতাটি আয়ত্ত করে ফেলেছে! আমি দৃষ্টিতে খুব অবিশ্বাস নিয়ে তোমার এ ক্ষমতাটি দেখলাম। কি করে আয়ত্ত করলে! বলবে আমাকে? তবে এর পেছনে যদি লেখাপড়া-জ্ঞান এসবের কোনও ব্যাপার থাকে, তাহলে জানতে চাই না। ও জিনিস আমার কাছে নেই। জোগাড় করতেও পারব না।

তারচেয়ে এসো জ্যোৎস্নার কথা বলি। লোকেরা বলে, তোমার নাকি আলো নেই। ওই দূর নক্ষত্র থেকে আলো ধার করে নাকি তুমি ঝলমল কর, সুন্দর লাগো। লোকেদের এই কথাদের আমি ঘোরতর বিরোধী, জানো তো। তুমি তো তোমার জায়গাতেই রয়েছ। নক্ষত্রর কাছে তো যাও নি! বলও নি তোমাকে আলো ধার দিতে। নক্ষত্রর আলো যে তোমার গায়ে পড়ে সেটা ওই নক্ষত্রর স্বভাব বলেই। ওর চরিত্রে সমস্যা আছে। সেকারণেই যত্রতত্র আলো ছড়িয়ে বেড়ান ওর স্বভাব। তার থেকে কিছু তোমার কাছে পৌঁছেছে বলে নক্ষত্র তোমার সৌন্দর্যে ভাগ বসাবে! এটা হয়? বল? নক্ষত্র একটা ছোটলোক।

আর লোকেদের ব্যাপারটা একবার ভাবো। লোকেরা নক্ষত্রর হেথা-হোথা-সেথা আলো ছড়িয়ে বেড়ানোর স্বভাব জানে, তবুও 'ধার' শব্দর ব্যবহারে তোমাকে 'ঋণী' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কেন চায়? লোকেরা কি জানে না যে ওই আলো যদি তোমার গায়ে নাও পড়ত, তুমি যা তাই থাকতে, তোমার রঙ, রূপ রস, গন্ধ, সৌন্দর্য, আকৃতি- কিছুই পাল্টাত না। তুমি অমনই থাকতে, এই এখন যেমন আছ।
লোকেরা এসব কেন বলে জানো? বলে, নক্ষত্রর আলো তোমার শরীরে পড়লে তারা তোমাকে দেখতে পায় বলে। মজার ব্যাপার হলো, তোমাকে দেখে মুগ্ধ হয়, আর কৃতজ্ঞতা জানায় নক্ষত্রকে। সৌন্দর্য দেখতে পায় বলে তাদের কথাবার্তায় ওইটিরই প্রাধান্য।

কিন্তু দেখতে পায় না তোমার শক্তি। গ্রহের বাইরে থেকেও তুমি নদীতে আনো জোয়ার, সমুদ্রে তোল উত্তাল ঢেউ, বানাও ঝড়- এসব লোকেদের কেউ কেউ জানে বটে, কিন্তু উপলব্ধি করে না। তাদের আলাপে শুধু তুমি, তোমার সৌন্দর্য আর জ্যোৎস্না। আচ্ছা তুমিই কি জানো? উপলব্ধি কর নিজের শক্তি? এখন তো আমার সঙ্গে আড়ি করেছ। বাড়ির সামনের গলি দিয়ে চলে যাও, আমার বাড়ি আসবে তো দূর, যেন চেনোই না আমাকে! আসবে না আর? আসবে তো। মন তাই বলে। কবে আসবে?

ইতি
আমি
১০১০/২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×