somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোবেলচি

১৭ ই অক্টোবর, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুক্কুরবার মোবাইলে কোন এক হতভাগা জানি বার্তা পাঠাইলো, "ইউনুস শান্তিতে নোবেল জিতিয়াছে! হুররে!"

মনে মনে হাসিলাম। রোসো বৎস, অত ফূর্তির কিছু নাই। নো বেল, এই নোবেলের কোন বেল নাই। টাইপিং মিশটেকে হয়তো নোবেল কমিটি ভুল করিয়া এরূপ কীর্তি করিয়া বসিয়াছে। নইলে শান্তিতে ইউনুস কী করিয়া নোবেল জয় করিবে? নিশ্চয়ই কোন গলদ রহিয়াছে। অচিরেই শুদ্ধিপত্রে বাহির হইবে, ইউনুস নহে, ইউনান প্রদেশের মেয়র ইউ নুং নোবেল লভিয়াছে, তাহার প্রদেশে ছান্তিছিঙখলা বজায় রাখিবার জন্য। বাঙ্গালি জিতিবে নোবেল, তবেই হইয়াছে। ছোহ!

কিন্তু কয়েক ঘন্টা কাটিয়া গেলো, শালার ব্যাটারা শুদ্ধিপত্রে কিছু কহিলো না। আমার বেজায় রাগ হইতে লাগিলো। নরওয়ের নরকূল এমন ছাগুপনা করে কিভাবে? এ-ও কী সহ্য করা যায়? বাঙ্গালি হইলে মানিয়া লওয়া যায়, কিন্তু সাদা চর্মবিশিষ্ট বিচারকগণ এরূপ তুঘলকি কারবার করিবে, মন হইতে সায় দ্যায় না।

টিভি খুলিয়া দেখি মারাত্মক ব্যাপার। ইউনুস ইউনুস করিয়া মিডিয়া পাগল হইয়া উঠিয়াছে। যে যাহা পারে সম্বল করিয়া ইউনুসের বাড়ির দিকে দৌড়াইতেছে। নোবেল পাইবার পর বাঙ্গালি উহাকে পয়গম্বর মানিয়াছে।

রাগে আমার গাত্রদাহ হইতে লাগিলো। বউকে ডাকিয়া বলিলাম, শ্যালকের পুত্রদের কি আহারভোজনের পর কর্তব্য কিছু নাই, ইহারা ইউনুসের মাঝে কী এমন মধু খুঁজিয়া পাইয়াছে? উহারা কি বুঝিতে পারিতেছে না, যে শান্তিতে নোবেল লাভের কোন এখতিয়ারই ইউনুসের নাই! শান্তির জন্য সে কী করিয়াছে? সে কি বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে মিটমাট করিতে পারিয়াছে? নাকি নিজে কারো সাথে বৎসরের পর বৎসর মারমারকাটকাট করিয়া অবশেষে দোস্তি পাতাইয়া গোলাগুলির অবসান ঘটাইয়াছে? নাকি কুষ্ঠরোগীদের কোলে তুলিয়া চুমাইয়াছে কখনো? সে তো ব্যাঙ্ক খুলিয়া রাস্তার ফকিরকে খাতক বানাইয়া মারোয়াড়িদের পর্যন্ত লজ্জায় ফেলিয়া দিয়াছে। তাহার সুদ আদায়ের পদ্ধতি দেখিয়া কালোয়ারের মহাজনেরা একে অপরকে গালি দিতেছে, শেষ পর্যন্ত সুদাসুদি বাঙ্গালির কাছে শিখিতে হইলো বলিয়া। দরিদ্রের খুলিখুলি লুঙ্গিটি তুলিয়া যদি কুকর্মটি কেউ সম্পূর্ণরূপে সম্পাদন করিয়া থাকে তো সে ইউনুস, আর কেহ নহে! শান্তিতে বরং, মোছাদ্দেক আলি ফালুকে নোবেল দেওয়া যাইতো। তাহাকে দেখিলেই এক ধরনের শান্তি, এক ধরনের স্ফূর্তি জাগে বুকে। সদা হাস্যময় মানুষ, দন্তরুচি বাহির করিয়াই রহিয়াছেন। বিশেষ করিয়া জিয়ার মাজার জিয়ারতের সময় তাহার স্ফূর্তি দেখিলে আসলেই বড় প্রশান্তি অনুভব করে সকলে। তিনি গোটা জাতির শান্তির পায়রা। আমাদের ফালুদা। কেউ বলিতে পারিবে না, ফালুদার এন্টিভির লোকজন গিয়া গরীবের বাড়ির চাল খুলিয়া জব্দ করিয়া লইয়াছে। ফালুদা সম্প্রতি যে ব্যাঙ্কের বিপুল শেয়ার কিনিয়া মালিক হইয়াছেন, সেই ব্যাঙ্কের নামেও কেউ 30-40% সুদের অপবাদ দিতে পারিবে না। সকল বিচারে তিনি সেরা। আর পাইলো কি না ইউনুস?

বউ হাসিলো খালি, কিছু কহিলো না। তাহার স্ফূর্তি দেখিয়া আমার মনে রাগ আরো ফেনায়মান হইয়া উঠিলো, কহিলাম, অত নাচিও না। ইউনুস নোবেল জিতিয়াছে বলিয়া কি আমাদের পক্ষ গজাইয়াছে নাকি? নোবেলের শাক দিয়া কি দুর্নীতির মাছ ঢাকিতে পারিবে? এই যে জেম্বি বোমা মারিয়া দেশ ছারখার করিয়া দিয়াছে, এই কথা বিশ্ববাসী অত চট করিয়া ভুলিবে ভাবিয়াছো? এই দেশ হইতেছে গিয়া বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, হরতাল আর দুর্নীতির দেশ, এই দেশের ময়লা ছুপাইতে পঞ্চাশখানা নোবেল লাগিবে!

শনিবার ফুরাইবার পর দেখি অবস্থা বেগতিক। সকলেই ইউনুস ইউনুস জিকির তুলিয়া কানের পটকা পচাইয়া ফেলিতেছে। দুই চারিজন বিবেকবান ভদ্রলোক পত্রপত্রিকায় কিছু কঠিন সত্য কথা পাঠাইয়াছেন বটে, কিন্তু পত্রিকাগুলিও নিমকহারাম, তাহারা ছাপে নাই। আমার পরিচিত এক প্রগতিশীল নিভৃতচারী তথ্যকারিগর হুবাবা দৌলা মেগাজন তো ইন্টারনেটের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রকাশ করিয়া খুঞ্চুষ ইউনুসের যাবতীয় ছিদ্র খুঁজিয়া বাহির করিয়া প্রকাশ করিয়াছেন। ক্লিন্টনের সাথে উহার দোস্তির পর পরই ক্লিন্টনের মনিকাসংক্রান্ত পতন ঘটে, স্পেনের রাণী যে ইয়াহু ম্যাসেঞ্জারে তাহার সহিত নিভৃতে কী কী আলাপ করিয়া থাকে, লেডি ডায়ানার সাথেও নাকি সেই হতভাগা বন্দোবস্ত করিয়াছিলো, প্রভৃতি নিখাদ সত্য কথা তিনি গুছাইয়া লিখিয়াছেন। কিন্তু শক্তের ভক্ত নরমের যম পূজাবাজ বাঙ্গালি বহুদিন পরে উপাস্য পয়গম্বর খুঁজিয়া পাইয়াছে, তাহারা মেগাজনকে দল বাঁধিয়া আসিয়া গালাগালি করে। সত্য কথার অন্ন নাই।

অগত্যা ঠিক করিলাম নোবেল কমিটির কাছে পত্র লিখিবো। বিচার চাহিয়া তাহদিগের কোর্টে মামলা দাখিল করিবো, ইউনুসের নোবেল ফিরাইয়া লওয়া হউক, আর সে কাহাকে ডানে বামে উৎকোচ গছাইয়া নোবেলখানি বাগাইয়াছে, ঐ বিষয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হউক। আমার বন্ধু নরওয়ের ঐ আইটিব্যবসায়ীকে একবার ড্রাফটখানি দেখাইয়া লইবো ঠিক করিলাম।

রাত্তিরে শয্যায় শুইয়া বউকে আদর করিতে করিতে কথাখানি বলিবো ভাবিয়াছিলাম, মাগী বলে কি, ওগো, আমাদের প্রথম সন্তান পুত্র হইলে নাম রাখিবো মোহাম্মদ ইউনুস, ডাক নাম রাখিবো নোবেল, কেমন হইবে?

আমার ইচ্ছা করিতেছিলো তাহার নিতম্বে কষিয়া চড় মারিতে, কিন্তু নিজের বউ বলিয়া কথা, কোনমতে ক্রোধ সংবরণ করিয়া বলিলাম, আর কন্যা হইলো?

বউ গদগদ স্বরে কহিলো, গ্রামীণা!

আমি ভাবিলাম, লাথি মারিয়া মাগীকে দূর করি, পরে ভাবিলাম, নিজের বউ। সে-ও অর্ধশিক্ষিতা বাঙ্গালিনী। তাহার কি দোষ। ইউনুসের হুজুগের ব্যাকটিরিয়া আসিয়া সবাইকেই সংক্রামিত করিয়াছে, বেহুদা তাহাকে লাথি মারিয়া রাত্রিকালীন সঙ্গমের আনন্দ কেন মাটি করি। অগত্যা ঐ কর্মে লিপ্ত হইলাম।

পরদিন সকালে উঠিয়া পত্রিকা খুলিয়া দেখি খালি ইউনুসের ছবি। আর কে কে তাহাকে কী কী বলিয়া অভিনন্দন জানাইয়াছে তাহার ফিরিস্তি। ইউনুস নোবেল পাওয়ার পর আর জিরাইবার ফুরসৎ লইতেছে না, টো টো করিয়া দেশময় ঘুরিয়া নিজের পাপের কথা জাহির করিতেছে। মনে মনে ভাবিলাম, নোবেল কমিটির কাছে বিচার চাহিয়া চিঠিতে মেগাজন ভাইয়ের পোস্টগুলির ইউআরএল তুলিয়া দিবো। তাহারা যদি ঘুষ খাইয়া তাহাদের আত্মা শয়তানের কাছে বিক্রি করিয়া না থাকে, তাহা হইলে নিশ্চয়ই তাহাদের আত্মোপলব্ধি ঘটিবে, তাহারা বুঝিবে তাহারা কীরূপ শৃগালের কাছে পায়রা বর্গা দিয়াছে।

চিঠিতে লিখিলাম ফলাও করিয়া, এই জাতি কীরূপ ছাগু। তাহারা যে ঘুষদুনর্ীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, অবসর পাইলেই বোমাবন্ধনে লিপ্ত হয়, বন্যার পানি শুকাইলেই গিয়া বোমাবাজি করে, আর হরতালের ডাক দিয়া ভাঙচুর চালায়, বড় রসালো করিয়া ফাঁদিলাম। এই চিঠি পড়িয়া নোবেল কমিটির টনক যদি না নড়ে, নাম পাল্টাইয়া দুধখোর রাখিবো স্থির করিলাম।

আর কে জানে, এইরূপ জনগুরুত্বসম্পন্ন চিঠির সাহিত্যিক মূল্য বিচার করিয়া তাহারা হয়তো পত্রখানি আরেকটি খামে ভরিয়া সুইডেনে নোবেল সাহিত্য কমিটির কাছে পাঠাইয়া দিতে পারে। তুর্কি কামুক না পামুক যদি নিজের জাতির বদনাম করিয়া নোবেল বাগাইতে পারে, আমি এই মুখফোড় কী দোষ করিলাম?

চিঠিটি লইয়া পোস্টাপিসের দিকে যাইবার পথে দেখা হইলো বন্ধু বাচ্চুর সহিত। মনে পড়িলো, বছর দশেক আগে সে আমার নিকট হইতে ক্ষুদ্রঋণ হিসাবে দশ টাকা ধার লহিয়াছিলো। স্থির করিলাম, চিঠি পোস্ট করিয়া আসিয়া বাচ্চুর গলায় গামছা বাঁধিয়া সেই টাকা সুদেআসলে আদায় করিবো। ইউনুস যদি ঐ কর্ম করিয়া নোবেল পায়, আমি মুখফোড় কী দোষ করিলাম?

বাচ্চুর কলার ধরিবো বলিয়া হাত বাড়াইলাম, সে আমার হাত ধরিয়া কাঁদিয়া ফেলিলো। আমি বলিলাম, কী রে মামদার পো, ক্রন্দন করিতেছিস কেন? সে কহিলো, মুখা রে, জন্মাইবার পর ইস্তক হারিতেছি। শৈশবের মার্বেল হইতে শুরু করিয়া যৌবনের ক্রিকেট, খালি হারি খালি হারি। আজকে জিতিয়াছি। কাউকে পরাজিত করি নাই, শুধু নিজে জিতিয়াছি।

বাচ্চুকে ছাড়িয়া দিলাম। তাহার গলায় গামছা পরানো বড় মুশকিলের কর্ম এখন। বাচ্চুকে জিতিবার স্পৃহায় পাইয়া বসিয়াছে, গর্দান তাহার ফুলিয়া আসমান স্পর্শ করিয়াছে। বাচ্চুর মতো সব বাঙ্গালি মজিয়া উঠিলে কী এক ভীষণ কুকান্ড ঘটিবে ভাবিতে ভাবিতে ঘরের পথে পা বাড়াইলাম। আকাশে বাতাসে ইউনুস হাসিয়া ভাসিয়া চলিলো।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×