→→ ২১ ফেব্রুয়ারি ←←
২১ ফেব্রুয়ারি এসেম্বলি চলাকালীন ছাত্রদের কর্মসূচিতে বাধা দেবার নির্দেশ আসে রাওয়ালপিন্ডি থেকে। তখন ঢাকার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) ছিলেন কোরেইশী নামের এক পঞ্জাবি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন।
সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে। পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে।
ছাত্ররা ৫ জন একত্রিত হলেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছে বলে ধরে নিতে প্রস্তুত ছিল পুলিশ। এ অবস্থায় বেলা ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্ররা ৪ জন করে অ্যাসেম্বলির হলের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাতেও বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের মারমুখী আচরণের প্রতিবাদে ইটপাটকেল নিক্ষেপও শুরু হয়ে যায়।তখনই ডিএম কোরেইশী গুলি করার নির্দেশ দেন। পুলিশের গুলিবর্ষণে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়া আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে সে সময় নিহত হন। এই দিন অহিউল্লাহ নামের একজন ৮/৯ বছরেরে কিশোরও নিহত হয়। পুলিশ লাশগুলো সরিয়ে ফেলে। একমাত্র আবুল বরকতের মা ছাড়া কাউকে লাশ দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়।[২৮] রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহবান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে।[৪১]
এই সময় গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের গুলির খবর জানতে পেরে মাওলানা তর্কবাগিশসহ বিরোধী দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান।
→→ ২২ ফেব্রুয়ারি ←←
ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে সারা দেশ হয়ে উঠে মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল। জনগণ ১৪৪ ধারা অমান্য করার পাশাপাশি শোক পালন করতে থাকে। বেলা ১১টার দিকে ৩০ হাজার লোকের একটি মিছিল কার্জন হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রথমে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এই ঘটনায় সরকারি হিসেবে ৪ জনের মৃত্যু হয়।
→ → ২৩ ফেব্রুয়ারি ←←
সাড়া রাত ঢাকা ম্যাডিকেল কলেজের ছাত্রবৃন্দ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরিতে কাজ করেন। যা ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছিল। তাতে একটি হাতে লেখা কাগজ যুক্ত করা হয়েছিল যাতে লেখা ছিল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।[৪৮] স্মৃতিস্তম্ভডটি উদ্বোধন করেন আন্দোলনে নিহত শফিউর রহমানের পিতা। স্মৃতিস্তম্ভটি পুলিশ ফেব্রুয়ারি ২৬ তারিখে ভেঙে দিয়েছিল।
১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। শহীদ মিনার নতুন করে তৈরী করার লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বড় প্রকল্প গ্রহন করা হয়।
৭ মে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লিগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্জাদা দেয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃত দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ সালে। সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়:
“214.(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali”
### শেষ করতে চাই আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখনীতে অসাধারণ সেই গান দিয়ে
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১ ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি !"