somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হারের শাস্তি টিকফা -আসুন জেনে নিই এর আদ্যোপান্ত ও তলের ঘটনা

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘টিকফা’ চুক্তি হলো TICFA বা Trade and Investment
Co-operation Framework Agreement ‘বাণিজ্য ও
বিনিয়োগ সহযোগিতা সংক্রান্ত কাঠামোগত
সমঝোতা’ চুক্তি, যা আমেরিকার
চাপাচাপিতে হাসিনা সরকার করতে যাচ্ছে।বিগত বি এনপি আমলে ৩ বার মরনপন চেষ্টা করলেও এই চুক্তি আমেরিকা করতে পারে নাই।
বানিজ্য উদারীকরনের
নামে এটা আমেরিকা বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের
সাথে করে থাকে। এ পর্যন্ত ইরাক,
শ্রীলংকা পাকিস্তান, সৌদি আরব, ভিয়েতনাম,
ইরাক, উরুগুয়েসহ বিশ্বের ৩০ টির দেশ এই
চুক্তি করেছে। বেশি উন্নত কোনো দেশ
বা শক্তিশালী দেশ যেমন চীন এই চুক্তি করেনি,
কিন্তু আমেরিকার সাথে বিশাল বানিজ্য
করে যাচ্ছে। মূলত ২০০১ সাল থেকে আমেরিকা এই
চুক্তি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশকে জন্যে চাপ
দিয়ে যাচ্ছে। দেশের বামপন্থিসহ অন্যান্য
নানা মহলের তীব্র প্রতিবাদের মুখে শেষ পর্যন্ত
চুক্তিটি স্বাক্ষর করা এখনো সম্ভব হয়নি।
হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে এসে এই চুক্তি করার
ফলে আমেরিকা এখন বৈধভাবে বাংলাদেশের উপর
প্রভুত্ব করতে পারবে, দরকারমত বন্দর ও
বঙ্গোপসাগরে খবরদারী করতে পারবে। বাংলাদেশ
সরকার আর কখনই আমেরিকার মতের
বাইরে যেতে পারবে না।
টিকফা চুক্তির অজুহাত হিসাবে সরকার বলছে,
আমেরিকার জিএসপি সুবিধা বহাল রাখতে এই চুক্তি,
নইলে পোষাক খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
জিএসপি বহাল থাকলে নাকি বাংলাদেশের
গার্মেন্ট বিনা শুল্কে আমেরিকায়
রফতানি করা যাবে! অথচ এ আওয়াজটি মূলত এই
টিকফা চুক্তি সাক্ষরের জন্য
একটি মিথ্যা প্রচারনা, বাহানা মাত্র। কারন
আমরা পোষাক খাতে কোনো জিএসপি সুবিধা পাই
না। আমাদের রফতানি বাণিজ্যের ১ শতাংশেরও
কম (০.০৬%) জিএসপির আওতাভুক্ত।
সে কারনে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের
জিএসপি সুবিধা বাতিল করলে খুব সামান্য
পরিমানেই আমাদের বানিজ্য ক্ষতিগ্রস্থ হবে,
পোষাক খাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
আজকে হাসিনার কেবিনেটে পাশ
হওয়া টিকফা চুক্তির মূল কথাগুলো এরকম:
[১] চুক্তির শর্ত মোতাবেক বাংলাদেশের বাজার
উন্মুক্ত করে দিতে হবে এবং সেবা খাতের ঢালাও
বেসরকারিকরণ করতে হবে।
[২] যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির বাণিজ্য ও
বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের বাজার উন্মুক্ত
করে দিতে হবে এবং বিদ্যমান শুল্ক ও অশুল্ক
বাধাসমূহ দূর করতে বাংলাদেশ বাধ্য থাকবে।
[৩] বেসরকারি খাতের বিকাশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব
দিতে হবে। মানে সরকারকে জিরো করে আনার বুদ্ধি।
[৪] দুই দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাণিজ্য
ও বিনিয়োগ কমিশন’ প্রাইভেট সেক্টরের বিকাশের জন্য
প্রয়োজনীয় কাজ করবে।
[৫] যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে শুধু সেবা খাতেই
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। তারা কোনো পণ্য এ
দেশে উৎপাদন করবে না। সোজা কথা সার্ভিস
দিয়ে পয়সা নেয়া।
[৬] বাংলাদেশের দেশীয় শিল্প
বা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা প্রদানকারী বাণিজ্য
সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ সংরক্ষণ নীতি বাতিল
করতে হবে। অর্থাৎ শিল্পখাত চরম প্রতিযোগিতার
মুখে পড়বে।
[৭] যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের অর্জিত
মুনাফা বা পুঁজির উপর কোনো কর আরোপ
করা যাবে না।
[৮] বিনিয়োগের বিশেষ সুরক্ষা দিতে হবে এবং বিনিয়োগ
প্রত্যাহার করে নেয়া হলে তার ক্ষতিপূরণ
দিতে হবে।
[৯] দেশের জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর,
টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন
ইত্যাদি খাতে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাণিজ্যের
জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
[১০] কৃষিপণ্যের বাজার উন্মুক্ত
করতে হবে এবং কৃষি থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার
করতে হবে।
[১১] চুক্তি অনুযায়ী মেধাস্বত্ব আইনের কঠোর
বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ।
এই চুক্তি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশ
নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে, যথা–
ক) এই চুক্তির ফলে যে কোনো প্রকল্পে আমেরিকার
কাছে দাসখত দিতে হবে যে,
এখানে দুর্নীতি হবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশ
একটা চোর জাতি! এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের
অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর
পারস্পরিক দরকষাকষির ক্ষমতায় মার্কিন নিয়ন্ত্রণ
বেড়ে যাবে। এই অঞ্চলের মার্কিন
স্বার্থে বাংলাদেশকে ব্যবহার হতে হবে। বিশেষ
করে চীনের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
আধিপত্যের লড়াইতে বাংলাদেশকে চীনের
পক্ষে নয়, থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে। মোট
কথা, জোট নিরপেক্ষ বা নিজস্ব কোনো অবস্থান
নিতে পারবে না বাংলাদেশ। দক্ষিন এশিয়ার
বিশাল বাজারের উপর নিজের আধিপত্য
প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গোপসাগরের অবাধ
ব্যবহার চাইবে আমেরিকা। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশকে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের
আঞ্চলিক পার্টনারও হতে হবে। মোট কথা এই
টিকফার আওতায়
বাংলাদেশকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে ফেলা সম্ভব হবে।
খ) এই চুক্তির পরে সরকারকে মেধাস্বত্ত আইন
কার্যকর করতে হবে। যার ফলে পকেট
কাটা পেড়বে এ দেশের সাধারন মানুষের।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প, কম্পিউটার সফটওয়্যার
সহ গোটা তথ্যপ্রযুক্তি খাত আমেরিকার
কোম্পানিগুলোর পেটেন্ট, কপিরাইট, ট্রেডমার্ক
ইত্যাদির লাইসেন্স খরচ বহন করতে গিয়ে বিরাট
লোকসানের কবলে পড়বে। ফলে বিভিন্ন পণ্য
এবং প্রযুক্তির দাম অভাবনীয়ভাবে বেড়ে যাবে।
তথ্য-প্রযুক্তি খাতেই দেশকে সফটওয়্যার লাইসেন্স
ফি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন
হতে হবে। কম্পিউটার ও অনলাইন ব্যবহারীগন আর
পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার করতে পারবেন না।
বন্ধ হয়ে যাবে আইডিবি ভবনের ব্যবসা।
মেধাস্বত্তের আইনের ফলে বাংলাদেশ অনেক অষুধ
তৈরী করতে পারবে না। ফলে একদিকে ওষুধ
শিল্পে রপ্তানি সম্ভাবনা হারাবে,
অন্যদিকে দরিদ্ররা ওষুধ কিনতে গিয়ে হিমশিম খাবে।
কয়েকগুন বেশি দামে বিদেশি কোম্পানির পেটেন্ট
করা ওষুধ খেতে হবে ।
গ) চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে দেশের সেবাখাতসমূহ
রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হয়ে মার্কিন
বহুজাতিক কোম্পানির দখলে চলে যাবে।
এতে করে দেশীয় কোম্পানিগুলোর স্বার্থও বিঘ্নিত
হবে। অবাধ মুনাফা অর্জনের জন্য
বিদেশি কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সেবা, যেমন
টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, চিকিৎসা,
শিক্ষা, বন্দর প্রভৃতি ও পণ্যের দাম
বহুগুনে বৃদ্ধি করবে।
ঘ)
মার্কিনীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করে বিনা শুল্কে
নিয়ে যাবে নিজ দেশে। অন্যদিকে তারা বিনিয়োগ
প্রত্যাহার করে নিলে তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এটা একটা দাসত্ব চুক্তি।
ঙ) এই চুক্তির মাধ্যমে মার্কিনীদের বিনিয়োগের বিশেষ
সুরক্ষাসহ কোম্পানিগুলোকে সেবাখাতে বাণিজ্যের
জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিয়ে দেশের জ্বালানি,
গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর, টেলিযোগাযোগ, শিক্ষা,
স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি সেক্টরকে মার্কিন
পুঁজিপতিদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
চ) চুক্তির শর্তানুযায়ী আমাদের
কৃষিখাতে বিদ্যমান ৫% ভর্তুকি তুলে দিতে হবে,
যাতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কৃষিখাত। অথচ
আমেরিকা নিজ দেশ কৃষিখাতে ভর্তুকি দেয় ১৯%।
ছ) দেশীয় শিল্পখাতকে সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান
আইনী সুবিধা প্রত্যাহার করতে হবে। এর
ফলে বিদেশী সার্ভিস এদেশে ঢুকে দেশীয় শিল্প ও
সার্ভিসখাতকে খেয়ে ফেলবে।
জ) শ্রমমান নিশ্চিত না হওয়া বা মেধাস্বত্ব ভঙ্গ
করে পাইরেটেড কিছু ব্যবহার হওয়ার অভিযোগ
তুলে মার্কিনীরা বিনিয়োগ
আটকে দিতে পারবে বা শুল্ক কর চাপিয়ে দেয়ার
মতো ব্যবস্থা নিতে পারবে। চুক্তি ভঙ্গের জন্য
বাংলাদেশকে কঠোর পরিস্থিতির
মুখোমুখি করাটা তাদের পক্ষে কঠিন নয়।

মজার ব্যাপার হলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হারার ৪৮ ঘন্টার ভিতরে এই চুক্তি সাক্ষর হলো। যে বামরা বিএনপি আমলে মাঠ কাপাতো চুক্তির. বিরুদ্ধে তারা কোন অলীক বিপ্লবের স্বপ্নে আজ চুপ তা আমার জানা নেই। কমরেড ইনু, মেনন রা জাতির কাছে বেইমান মিরজাফররুপে চিন্হিত হবেন। তবে কি আগামী নির্বাচনে জেতার আশায় সত্যিই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আমার সদেশ? তবে কি সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জুতা প্রদর্শনের শাস্তি পাচ্ছে মজলুম জনতা?
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×