জানুয়ারি ১৯৬৪, কাশ্মীরে একটি মসজিদ থেকে হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর চুল চুরি গিয়েছিলো বলে গুজব উঠেছিল, এটা নিয়ে উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। সে সময় বাঙ্গালী জাতীর ধীরে ধীরে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটতে থাকে। তখন এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নস্যাৎ করতে পাকিস্তানী তৎকালীন সরকার পূর্ব বঙ্গে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বাঙ্গালী ছাত্রসমাজ, বুদ্ধিজীবী, সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক নেতারাই এটার প্রবল প্রতিবাদ করেন। শেখ মুজিব এবং ভাষানী এই দাঙ্গার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানান। ছাত্রনেতারা এর নিন্দা করেন। ঢাকার প্রধান পত্রিকাগুলো এর বিরুদ্ধে প্রচার চালায়। দাঙ্গা-বিরোধী একটি সর্বদলীয় কমিটিও গঠিত হয়। এর পক্ষ থেকে ১৬ই জানুয়ারি প্রচার করা হয় "পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও" নামে একটি ইশতেহার। দাঙ্গার সময় বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্ররা মিলে ঢাকায় একটি বিশাল শান্তি মিছিল বের করেন। আমীর হোসেন চৌধুরী হিন্দুদের রক্ষা করতে গিয়ে দিয়েছিলেন নিজের প্রাণ। কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাও এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে গ্রেফতার বরণ করেন।
আজ ২০১৩। বাংলার ইতিহাস ফিরে আসে কিন্তু আমরা ভুলে যাই। সেসময় সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চেয়েছিল নিজের স্বার্থে, আজ জামাত শিবির সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টায় লিপ্ত তাদের স্বার্থে। পুলিশের উপর আক্রমণ করতে গিয়ে যদি কোন জামাত শিবির কর্মী নিহত হয় তাতে আমার কোন আক্ষেপ নেই। কিন্তু তাদের ফাঁদে পা দিয়ে যদি কোন সাধারণ মানুষ মারা যায় তবে তা আমার জন্য অনেক উদ্বেগের বিষয়। আজ টিভিতে দেখলাম একটি ৮-১০ বছরের শিশু মারা গেছে সেই শিশুটির কোন দোষ ছিল কি? তবে তাকে কেন মরতে হল? মানুষের মধ্যে ওরা যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এই বিভ্রান্তি আমাদের ই দূর করতে হবে। দেশের মানুষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে নষ্ট না হয় তাই খুব দ্রুত কোন পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই। শাহবাগে যারা আছেন তাদের কাছে আমি অনুরোধ করছি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সামলে স্বাভাবিক করার দায়িত্ব আমাদেরই। অতি দ্রুত এই বিভ্রান্তি দুর করার জন্য দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী সবাইকে সাথে নিয়ে সহিংসতা মোকাবেলায় কার্যকর কর্মসূচী গ্রহণ করুন। জামাত শিবিরকে কোণঠাসা করতে না পারলে এই সহিংসতা ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




