প্রজন্ম জানতে চায় (২য় পর্ব)
পি টি আই এলাকার যুদ্ধ:
নোয়াখালী জেলার শেষ যুদ্ধ। যুদ্ধ শুরু হয় ৬ ডিসেম্বর’ ৭১। রাত্রি ৩.৩০ মি:
থেকে ৭ ডিসেম্বর’৭১ এর বিকেল ৩.১০ মি: পর্যন্ত। যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ৪ ও ৫ ডিসেম্বর পাকসেনা ও মিলিশিয়ারা আস্তে আস্তে স্থান ত্যাগ করে কুমিল্লা
অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যায়। এ ব্যাপারটি রাজাকাররাও বুঝতে পারে নি।
এদিকে নোয়াখালী জেলা বি.এল.এফ কমান্ডার (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে) জনাব মাহমুদুর রহমান বেলায়েত ৫ ডিসেম্বর বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার প্রত্যেকটি থানা কমান্ডারদের (বি.এল.এফ/এফএফ/এমএফ/বিডি এফ) কে নির্দেশ দেন প্রত্যেক থানা সদর দপ্তর আক্রমণ করে পুরোপুরি শত্রুমুক্ত করতে। যে কথা সেই কাজ। সকল থানায় যুদ্ধের সাজ সাজ রব পড়ে যায়। জেলা সদরের পি.টি.আই দখলের দায়িত্ব পড়ে সদরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের উপর। পি.টি.আই আক্রমণ করতে এসে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের প্রবেশ পথে (১) নাহার বিল্ডিং রাজাকার ক্যাম্প (২) মাইজদী কোর্ট স্টেশান রাজাকার ক্যাম্প (৩) দত্তের হাট রাজাকার ক্যাম্প গুড়িয়ে দেয়। ক্যাম্প আক্রমণ করতে সদর পশ্চিম অঞ্চল থেকে সি জোনের কমান্ডার আদমজীর শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ উল্যা ও আদমজী চটকলের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী সফি নেতা নেতৃত্ব দেন। এই যুদ্ধে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনী/ আনসার/ মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা সি জোনের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তারা জামে মসজিদের পশ্চিমে অবস্থিত রেনুমিয়া কন্টাক্টরের বাড়ী থেকে বর্তমান নতুন বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। উত্তর দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চল থেকে সকল মুক্তিযোদ্ধা শহরে উঠে বাকী তিন দিক ঘিরে ফেলে। ৬ ডিসেম্বর রাত্রি ৩টা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের জবাব দেয় ৩০৩ রাইফেল থেকে।
এদিকে ফেনীতে ২নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল জাফর ইমাম মাইজদী পি.টি.আই যুদ্ধের খবর পেয়ে তার একটি সেকশন নিয়ে দুপুরে এসে মাইজদী অবস্থান নেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সকল অবস্থান ও শত্রুর অবস্থান জেনে নিয়ে শত্রুর আস্তানার ২টি ২ ইঞ্চি মটর সেল নিক্ষেপ করেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজাকাররা ভয় পেয়ে আত্মসমর্পণ করে। এরপর ৭ ডিসেম্বর নোয়াখালী জেলা পুরোপুরি শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। এই যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। তাঁরা হচ্ছেন- (১) আমিনুল হক, গ্রাম-দামাদর, ২ নং দাদপুর ইউনিয়ন, সদর। তার গলায় গুলি লাগলে তিনি কন্ঠস্বর হারিয়ে ফেলেন। দেশ স্বাধীনের পর মরহুম আবদুল মালেক উকিল কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। (২) অন্যজন হচ্ছে- আদমজীর শ্রমিক গোলাম মোস্তফা। গ্রাম-রামকৃষ্ণপুর, ৩ নং নোয়ান্নই, সদর। তার পেটে গুলি লাগে। চিকিতসার পর সে ভালো হয়। তিনি জীবিত। তিনিও কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা।
নোয়াখালী পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাবে নানা জায়গায় অবস্থান নেয়। বৃহৎ আকারে ছিলো (১) নোয়াখালী জিলা স্কুল। (২) হরিনারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় (৩) আহম্মদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সোনাপুর।
প্রজন্মের জন্য আরো লেখার ইচ্ছা রইল।
► লেখক: সাইফুল আলম জাহাঙ্গীর
সাবেক ইউনিট কমান্ডার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নোয়াখালী।
► নোয়াখালী জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রকাশিত স্মারক স্বাধীনতা ২০০৩ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকালঃ মার্চ ২০০৩।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




