somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পটা শুরু একটা হাসপাতাল থেকে...

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গাছের ডালে বসা পাখি কখনো চিন্তা করে না, সে কি গাছের শুকনো না সবুজ ডালে বসে আছে।
পাখির মনে ডাল ভাঙার ভয় থাকে না। কারণ-
সে গাছের ডালের উপর নির্ভর করে বসে না। বরং তার আস্থা থাকে তার ডানার প্রতি।
তা সে হোক বিল গেটস অথবা মাশরাফি বিন মর্তুজা! একমাত্র সেই পাথরই পারে মূর্তি গড়তে যা ছেনির আঘাত সহ্য করে। একমাত্র সেই হৃদয় সর্বদা উৎফুল্ল থাকে যার মাঝে লুকানো গভীরতম ক্ষত।

এই কথাগুলোর মানে কি জানো তুমি?
শুধুমাত্র যেই পাথর ছেনির আঘাত সহ্য করে, সুন্দর মুর্তিতে পরিণত হয়!
যারা ধৈর্য ধরে জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে তারাই জীবনের মিষ্টতা আর শান্তি উপভোগ করে!
ভবিষ্যতে যখন তুমি পেছনে ফিরে দেখবে, তোমার মনে পড়বে দেখো-
সেই সব কথাই যা নিঃশব্দে শুনেছো আর ধীরে ধীরে পাড়ি দেওয়া পথ!
সব হাউকাউ, বিপ্লব, আন্দোলন শেষ হয় এই নিস্তব্ধতায়।

অনেক রাত হয়ে গিয়েছে আয়ান ঘুমিয়ে পড়ি চলো। তা না হলে সিস্টার এসে বকবক শুরু করে দেবে।
সকালে তোমাকে একটা গল্প বলবো। গুড নাইট।
- ওকে আংকেল। গুড নাইট।

১.
গত কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে শরীরটা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
হাসপাতালে আসার পরই ডাক্তার সাহেবা বললেন আপনাকে কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। টেস্ট রিপোর্ট আসতে তিনদিন লাগবে। ডাক্তার সাহেবার কথা শুনে আমি আবার অসুস্থ অনুভব করতে লাগলাম।
আমার কি এমন হলো? যেখানে টেস্ট রিপোর্ট আসতে তিনদিন সময় লেগে যাবে!

- ডাক্তার সাহেবা আমার কোনো সমস্যা নেই তিনদিন থাকতে, যদি আমাকে ওয়ার্ড এ দেওয়া হয়।
- কেনো আপনার কেবিনে থাকতে সমস্যা কোথায়?
- আমি মানুষের ভিড়ে থাকতে ভালোবাসি। তাছাড়া এটা আমার অভ্যাস। আর আমি অভ্যাসের ভেতর বাহির জুড়ে আজ অবধি বেঁচে আছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে। তবে শর্ত আছে, আপনার যে স্বভাব! আপনি অকারণে কাউকে ডিস্ট্রাব করবেন না এবং আপনি ফুল রেস্টে থাকবেন। যদি শর্ত মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনাকে কেবিন থেকে ওয়ার্ড এ শিফট করে দেওয়া যায়।
- আমি রাজি আপনার শর্তে। ধন্যবাদ।

রাত দুইটা বাজে প্রায়।
হঠাৎ ওয়ার্ড এ একটা ছেলেকে নিয়ে আসা হলো। সে নাকি আত্মাহত্যা করার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সেখানে সে সফল হতে না পারায় হাসপাতালে এসে শুয়ে গেলো। আত্মাহত্যার কারণটা প্রেমিকার জন্য।
ছেলেটার নাম আয়ান। বেচারা এযুগের ছেলে হয়েও আত্মাহত্যা করেতে বসেছিলো।
সবাই বলে যুগ বা দিনকাল বদলে গিয়েছে কিন্তু আয়ানের অবস্থা দেখে আমার কাছে মনে হলো ভালোবাসার ক্ষেত্রে আগের প্রেমিকদের অভ্যাস গুলো কিছু না হোক কিছু তো রয়েই গিয়েছে এখনো।

- গুড মর্নিং আয়ান...
- গুড মর্নিং আংকেল।

চলো নাস্তা আগে শেষ করে তারপর গল্প শুরু করবো।

২.
- আচ্ছা আংকেল গল্প বলা কি আপনার প্যাশন নাকি আপনি একজন রাইটার?
- আরে নাহ! গল্প বলার মতো কোনো বিষয় না। আর রাইটাররা হচ্ছেন উনাদের স্বপ্নের গল্প লেখার মতো আন্দোলনে প্রকাশ পায়। জীবন দর্শন আর বাস্তবতাকে ভাগ করে নেয়া। একজন রাইটার এর একটা গল্প লিখা মানে হাজার হাজার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার মতো! নয় কী?
- আপনার কথাগুলো মাথার উপর দিয়ে গেলো। যাই হোক গল্প শুরু করুন...
- আচ্ছা তাইলে শুরু করা যাক। গল্পটা শুরু একটা হাসপাতাল থেকে...

তানভীর এবং তার এক বন্ধু, আন্নিকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো।
আন্নিকে জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হলো।
কিছুক্ষণ পর ওটি থেকে একজন ডাক্তার বের হয়ে এসে জানালেন যে, “খুব বেশি ভেতরগত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কাউকে যদি এক্ষুনি জানানোর দরকার থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি সেটা করুন। আশা করি আপনারা বিষয়টার গুরুত্ব বোঝতে পারছেন।” আমরা না বলছি না তবে সম্ভাবনা খুবই কম! প্রার্থনা করুন।

ডাক্তারদের কথা শুনে তানভীর খুব চিন্তায় প্রায়। তানভীরের জীবনে অপ্রিয় সব কিছু বলে; প্রিয় হয়ে আসে তারপর প্রিয় সব কিছু না বলে চলে যায়। এইতো মাত্র ছয় মাস হলো রাদিয়াও চলে গেলো তার জীবন থেকে। যাকে ভালোবেসে ভালোবাসা কি সেটা বোঝতে পেরেছিলো তানভীর। আন্নি যদিও ভালো বন্ধু কিন্তু তার সাথে পরিচয় হবার পর থেকে রাদিয়ার স্মৃতি গুলো মেঘলা আকাশটা বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাওয়ার মতো হয়ে গিয়েছিলো। এখন আর রাদিয়ার কোনো স্মৃতি মনে থাকলেও সেগুলো অস্পষ্ট হয়ে উঠে। তবে শেষ যখন রাদিয়ার সাথে কথা হয়েছিলো সেগুলো মনে রয়ে গিয়েছে।
- আচ্ছা রাদিয়া, ছোট বেলা থেকেই তো এক সাথে বড় হলাম দুজন। দুজন দুজনকে চেনা জানা এবং আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি এটাও আমরা জানি। তাহলে তুমি বিয়েতে রাজি হলে কি ভেবে?
- এখানে আমার কি করার আছে? তুমি কী কিছু করো? যে আমি বাবা-মা কে তোমার ব্যাপারে বলবো!
- মাত্রই তো গ্রাজুয়েশন শেষ করে জবের জন্য চেষ্টা করতেছি। এখনও সময় আছে তুমি জানিয়ে দাও রাদিয়া।
- শোনো তানভীর জীবন এতো সহজ নয়। কল্পনার জগতে বাস করে তারাই যারা ব্যক্তিগত ভাবে জীবনকে উপভোগ করতে চায়। কিন্তু তুমি জীবনেও কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।
- কেউ ছেড়ে গেলেই তার জন্য তাকে খুন করা যায় না রাদিয়া। কষ্ট হবে না যে তাও নয়, কষ্ট হবে। আমি যদি এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই তাহলে তুমি আর তোমার স্মৃতিরা এখানেই থেকে যাবে! যদি ইচ্ছা হয় তাহলে আসতে পারো সাথে!

বেরিয়ে আসার পথে রাদিয়ার বাবার মুখোমুখি তানভীর!
রাদিয়ার বাবা তানভীরকে জানালেন উনার মেয়ের জামাই একজন ডাক্তার।

রাদিয়ার বিয়ের মাসখানিক পর। তানভীরের একটা জব হয়।
জব করার ইচ্ছেই ছিলো না তানভীরের। কিন্তু তানভীরের বাবার কথা ভেবেই সব গুছিয়ে নিয়েছে সে তার নূতন গন্তব্যে পৌঁছার জন্য।

- শোন বাবা, মানুষের সাথে মিশে তাদেরকে জানাটা হলো সবচেয়ে বড় ওষুধ। যে কোনো সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হলো প্রার্থনা। আপাতত কিছু সময় ব্যস্ত থাক। সব ঠিক হয়ে আসবে।

৩.
সহকারি অ্যাকাউন্টেটেড ম্যানেজার পোস্টে তানভীর।
নূতন জায়গায় নূতন মানুষের ভিড়। হঠাৎ শোনা গেলো একটা থাপ্পড়ের শব্দ।
মেয়েটা কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বসলো ছেলেটাকে। হ্যাঁ সেই মেয়েটাই আন্নি।

আন্নি মেয়েটার কেউ যদি ভুল করে হাতে ধরে ফেলে কিংবা তার হাতে ছোঁয়াও লেগে যায় তা হলে তার হাতের থাপ্পড় খাওয়া থেকে রক্ষা নেই। এটা শোনার পর তানভীরের কেমন জানি অদ্ভুত লাগলো আন্নিকে।
এতো সাতপাঁচ না ভেবে কাজে মন দিলো তানভীর।

একদিন সকালে অফিস টাইমে তানভীর অবাক হয়ে গেলো। অবশ্য সে আন্নির অন্য একটা বিষয় আছে যে সেটা জানতো না।
- তানভীর আপনাকে একটা কাজ করতে হবে অফিসের পারসোনালি!
- কি কাজ?
- এটা অফিসের একটা গোপনীয় কাজ। সবার সাথে শেয়ার করা হয় না। যার কাছে শেয়ার করা হয় তাকে আগে প্রমিজ করতে হয় তারপরে বলতে হয়।
- কি সেটা?
- আগে প্রমিজ করেন কাজটা শোনার পর করবেন। যদি শোনার পর না করে দেয় তাহলে আপনাকে জব থেকে বরখাস্ত করা হবে। ভেবে বলুন!
- আচ্ছা প্রমিজ। এবার বলুন।
- সাব্বাস। আমি আগামী চার দিন অফিসে আসতে পারবো না। আমার কাজ গুলো আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি সে গুলো করবেন। ধন্যবাদ।
- মানে কি? আপনার কাজ আমি করবো কেনো?
- প্রমিজ করেছেন কিন্তু।

কি আর করার প্রথম ভেবে তানভীর ওকে বলে চলে এলো।

এভাবে অনেকবার অনেক বাহানার হাত ধরে তানভীরকে দিয়ে আন্নির কাজ চলতো।
তানভীরও সব জেনেও না বলতো না। কেননা, ব্যর্থ মানুষের জন্য অবসর সময়টাই হচ্ছে অতীত স্মৃতির কাছে যে ঋণী সময়গুলো সে গুলোকে খুঁচিয়ে উপলব্ধি করানো! তাই তানভীর সবসময় ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করে।

ধীরে ধীরে আন্নির সাথে ভালো বন্ধুর সম্পর্ক গড়ে উঠতে লাগলো।
এবং এক পর্যায়ে কোনো এক কারণ বসতো আন্নির হাতে তানভীর শক্ত করে ধরে ফেলে।
আন্নির কঠিন রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে তানভীর ভয় পেয়ে যায় এবং সাথে সাথেই তানভীরের গালে টাস টাস করে দুইটা থাপ্পড় পড়লো।

তানভীর পুরোপুরি অবাক। আন্নির হাত ধরার উদ্দেশ্য ছিলো, আন্নি ছাদে হেঁটে হেঁটে গল্প করতে করতে ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তাই আন্নিকে টেনে এনেছিলো সে। অথচ আন্নি ব্যাপারটা প্রথমে না বুঝেই কষিয়ে বসালো তানভীরের গালে। পরবর্তীতে আন্নি লক্ষ্য করে ব্যাপারটা বোঝতে পারলো। আন্নি তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত।

- সরি তানভীর।
তানভীর কিছু না বলে তার কাজে মনোযোগ দিয়েই আছে।
- আমি আসলে ব্যাপারটা বোঝতে পারিনি। আমি সত্যি খুব দুঃখিত।
তানভীর রেগে গিয়ে জোর গলায় বললও তোমার সমস্যা কোথায়?
অফিসের সবাই তানভীর এবং আন্নির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আন্নি তানভীরকে উদ্দেশ্য করে বললো চলো বলছি।

৪.
তখন খুব ছোট ছিলাম।
ক্লাস ফাইভে তে পড়তাম। বাবা মার একমাত্র মেয়ে। অবশ্যই আদরের ছিলাম। বাবা সাপ্তাহে বাসায় একবার আসতেন। ব্যবসার কাজে কখন তিনি কোথায় থাকতেন তিনি নিজেই যানতেন না। আমি আর মা বাসায় একা থাকতাম। আমাদের পাশের বাসায় একজন ভাড়াটে ছিলেন। ব্যাচলর তিনি। তাই বাবা উনাকে বাসায় দাওয়াত দিতেন খাওয়ানোর জন্য। বাবাকে লোকটা ভাই বলে ডাকতেন এবং আম্মুকে আপা বলে। তারপর লোকটা যখন তখন আমাদের বাসায় আসতো।

হঠাৎ একদিন রাতে ঐ লোকটা আমাদের বাসায় আসলো। আমি তখন ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু তখন দরজার শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভেঙে যায়। কিছুক্ষণ পর মায়ের রুমের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখলাম-
একটা বাজে অবস্থা!
আর আপত্তিজক মূহুর্তে দেখি দুজনকে। অবশ্য সেই সময় কিছুই বোঝে উঠতে পারি নি। তবে তখন বেশ খারাপ লাগছিলো দেখে। তখন আমি মাকে মা বলে ডাকতে পারি নি! শুধুই কেঁদেই যাচ্ছিলাম। সদর দরজার পাশের বসে আমি কান্না করছিলাম।
হঠাৎ তখন বাবাও চলে আসেন।
আমি বাবাকে দেখে আরো জোরে কাঁদতে লাগলাম এবং বাবার কোলে উঠে বসলাম। সেদিন বাবা আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি আমার কান্না দেখে তাও আবার এতো রাতে দরজার পাশে একা বসতে দেখে বাবা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ভয়ে ভয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর ঐ লোকটা ঘর থেকে দেখলাম দৌড়ে পালালো।

পরদিন সকালে বাবা-মা আমাকে বাসায় রেখে একটা গাড়ি করে কোথায় যেন যাচ্ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম বাবা কে কোথায় যাচ্ছো তোমরা? বাবা উত্তর দিলেন না। আবার জিগ্যেস করার পর বললেন, তোমার নানু বাড়িতে। ব্যাস সেই যে দুজন গেলো আর ফিরলো না।
পরের দিন উনাদের লাশ ফিরে আসলো। হাইওয়েতে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।
তারপর থেকে আমার পুরুষ মানুষের স্পর্শ ভালো লাগে না। কেননা, আমার সেই মূহুর্তটার কথা মনে পড়ে যায়।

বুঝলে তানভীর, দুটি দেশের শূন্যতার চেয়েও বড় শূন্যতা বাড়তে থাকে আমার হৃদয়ে আর এগুলো সবচেয়ে বেশি ভালোবাসার মানুষের মাঝে হয়।

তারপর আমার চাচা-চাচীর সাথে ছিলাম। উনি আমাকে উনার মেয়েদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখতেন। সেই মায়ের মেয়েতো। রক্ত একই। কথায় বলে না লোকে ভালোর থেকে ভালো হয়, খারাপের থেকে খারাপ।

চলছিলোই জীবন। চাচী আমাকে বুয়ার মতো ব্যবহার করতো। চাচা বুঝতেন। কিন্তু উনার কিছুই করার ছিলো না। আমাকে তিনি হোস্টেলেও দিতেন না। যখন আমি মেডিক্যালে চান্স পেলাম তখন আমাকে চাচা হলে যেতে দিলেন। তার সাথে এই জবটা।

জবটা করে নিজের খরচ চালাই। আর এক্সামের সময় কাউকে কাজ দিয়ে চলে আসি। ছুটি অফিস থেকে দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। আর অফ দিলে চাকরি হারাতে হবে। তাই এমন করি।

আসলে তানভীর সবকিছুর ব্যাপারে সাবাইকে জানিয়ে কার সাথে মিশে চলা যায় না। একজন মানুষের অবশ্যই ভালো বুদ্ধি থাকা উচিৎ সেই বুদ্ধিতে মানুষত্ব বোধ ও থাকা জরুরি। এসব আমাকে প্রকৃতি শিখিয়েছে। বলে আন্নি হাসি দিলো!

তানভীর আন্নির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!

- আজ দেরি হয়ে গেলো, আমাকে একটু দিয়ে আসতে পারবে?
- হুম! চলো।

৫.
যেখানে হাত, মনের ভিতর ঢুকে যায়
মন ঢুকে যায়, অভিব্যক্তির মাঝে
অভিব্যক্তি ঢুকে পড়ে, মনোভাবের মাঝে!
- দারুণ হয়েছে না আন্নি কবিতা টা?
- আপনি বারবার এমন করেন কেনো? আপনার সমস্যা কোথায়?
- তোমাকে বিয়ে করবো।
- আপনার কী মাথা খারাপ মিয়াঁ?
- এতো কিছু জানি না। তোমাকে আমি বিয়ে করবো। আমি বিয়ে না করলে কাউকে বিয়ে করতে দেবো না তোমাকে। মনে রেখো।
- থাপ্পড় দিয়ে তোর গাল ফাটিয়ে দেবো বিয়াদব একটা।

অফিস থেকে বের হবার সময় এবং ফেরার পথে আন্নির পথের কাটা এলাকার ভাই একজন নাম “লাল্লু ভাই”। ভয়ংকর চেহারা। এলাকার সবাই ভয় পায় থাকে। আন্নিরও ভয় হয় কখন কি করে বসে!

আন্নির ভয়টা নিয়ে ভাবনা টা আর বেশিক্ষণ থাকলো না।
“লাল্লু ভাই” পথে আটকিয়ে রাখলো।
যদি আন্নি লাল্লুকে বিয়ে করবে বলে তা হলে ছাড়বে। যদি না বলে তাহলে আর কোনোদিন যাতে ঘর থেকে সমাজের সামনে না আসতে পারে সেই ব্যবস্থা করবে।

আন্নির সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে লাল্লু তার সাথের সবাইকে নিয়ে আন্নিকে গাড়িতে তুললো।
লাল্লু ভাই গাড়িটির ভেতরে। তার সাথের বাকিরা বাইরে অপেক্ষার আছে, সুযোগের।

আন্নির চিৎকার শোনা যাচ্ছে। রাতের বেলার যেকোনো শব্দের আওয়াজ বেশ ভারি হয় এবং স্পষ্ট শোনাও যায়। অথচ কোথাও কেউ নেই।

৬.
তানভীর একটা ঘোরের মধ্যে আছে। অবশ্যই আন্নিকে নিয়ে।
মেয়েটা যে পরিমাণ কষ্টে আছে তার তুলনায় আমার আবার কীসের কষ্ট?
আন্নির কথা ভাবতে ভাবতে তানভীর লক্ষ্য করলো। বাইকে একটা ব্যাগ আন্নির রাখা।
কী আর করার দিতে হবে গিয়ে! তাই আন্নির কাছে যাওয়া।

বাইক চালানো অবস্থায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। তবে আন্নির গলার মতো লাগছিলো তানভীরের কাছে।
তানভীর চিৎকার শুনে প্রায় গাড়ির কাছে চলে আসে।

গাড়ি থেকে আন্নির বডি ফেলে চলে যায় লাল্লু তার সঙ্গীদের নিয়ে।

আন্নির পেটের বাদিকে ছুরির আঘাত। বেশ রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তানভীর আন্নিকে নিয়ে হাসপাতালে যায়।
লাল্লু ভাই আন্নিকে কিছু একটা করার আগেই আন্নির হাতে একটা ছুরি পড়ে যায়। সেটা দিয়া লাল্লু ভাইকে আঘাত করে আন্নি। তারপর লাল্লু ভাইয়ের লোকেরা আন্নিকে আঘাত করে তাকে ফেলে চলে যায়।

ঘণ্টাখানি পর ডাক্তারা জানান-
আঘাতটা গুরুতর! উনাকে ভালো করে ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
৪৮ ঘণ্টা পরই সব বলা যাবে। কিন্তু আমি আপাতত আশ্বাস দিতে পারি, সে প্রাণে বেঁচে যাবে।

ডাক্তারের কথাগুলো শোনার পর তানভীর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। যেন মনে হলো তার প্রান ফিরে এসেছে আবার।

তিন সাপ্তাহ পর।
আন্নি মোটামুটি সুস্থ হয়ে যায়। তানভীর তার বাড়িতে নিয়ে যায় আন্নিকে সেবার জন্য।

৭.
এদিকে রাদিয়া এসেছে বাড়িতে বেড়াতে। তার স্বামী আগামীকাল দেশের বাইরে চলে যাবে। কিন্তু রাদিয়ার মা রাদিয়াকে ডেকে বললেন তানভীর নাকি কোনো একটা মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসছে। সেটা সত্যি নাকি মিথ্যা স্পষ্ট ভাবে জানতে হবে রাদিয়ার মার।

একথা শোনার পর রাদিয়ার কেমন জানি একটু হিংসে লাগলো। যেন খবরটা শুনে তার ভালো লাগে নি!

সন্ধ্যার দিকে রাদিয়া তার স্বামী এবং রাদিয়ার মা তানভীরদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। রাদিয়ার বিয়ের পর আজ উনারা আসলেন। অথছ পাশের বাড়ি রাদিয়াদের।
সবাই মিলে গল্প হচ্ছে।

হঠাৎ রাদিয়ার মা জিগ্যেস করে উঠলেন- এই মেয়েটা কে? তানভীরের বাবাকে!
- আরে ভাবি আপনি কিছুই জানেন না।
- না তো! কি ব্যাপার?
- এলাকার সবাই জানে। এখন দেখতেছি আপনারাই কেবন জানেন না। তাহলে শুনুন-
এটা আন্নি। এই মেয়ের সাথে আমাদের তানভীরের বিয়ে হবে। ওরা একে অপরকে ভালোভাবেই জানে। আমরা আগে কেউই জানতাম না। আজ সকালে সবাই জানলাম। আর এই মেয়েটি ডাক্তার। দুজনকে বেশ মানিয়েছে না?
- হ্যাঁ খুব মানিয়েছে।

রাদিয়ার স্বামী একজন ডাক্তার তাই আন্নির সাথে কিছুক্ষণ কথাও বললেন।

এক পর্যায়ে রাদিয়া এবং তার মা উঠলেন। জামাই আগামীকাল চলে যাবে ভাই সাহেব তাই এখনও অনেক গুছানোর বাকি রয়েছে বলে।

যাবার সময় রাদিয়া তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তানভীর হাসি মুখে রাদিয়াকে বিদায় জানাচ্ছিলো। অথচ রাদিয়ার চাহনি দেখে মনে হচ্ছিলো তানভীর এই মেয়েকে কেনো বিয়ে করবে? আর কোনো মেয়ে নেই ওর বিয়ের জন্য।

সবাই ঘরে ফিরে এলো।
শোন মা, ঐ মেয়েটা তানভীরের মনে পাথর বসিয়ে দিয়েছিলো। যখন তোমার আর তানভীরের বিয়ের কথা বলেছি, আমি এসব কথা বানিয়ে বলেছি। কিছু মনে করো না। আমি খুবই দুঃখিত মা।
- আমি বোঝতে পেরেছি আংকেল। বলে আন্নি হাসি দিয়ে চলে গেলো!

৮.
বুঝলে আয়ান তানভীরের জীবনে কোনো সুখ ছিলো না।
- তানভীর আর আন্নির কি অবস্থা এখন, বিয়ে হয় নাই?
- বিয়ে তো হয়েছে।
- কিভাবে হলো?
- সেটা জানতে হলে একটু অপেক্ষা করতে হবে তোমায়!

ডাক্তাররা চলে এসেছেন। প্রত্যেক বেডের রোগীকে দেখছেন।
আজকে আয়ানকে ডিসচার্জ দেওয়া হয়েছে। এটা শুনে আয়ানের আংকেল বললেন কি ব্যাপার ডাক্তার সাহেব ও আমার পরে এসে আগে চলে যাচ্ছে। আমি কবে যাবো?

স্যার আপনার ডিসচার্জ আন্নি ম্যাডাম ঠিক করবেন। বলে ডাক্তার সাহেব হাসি দিয়ে চলে গেলেন।

আয়ান এটা শুনে হা করে তাকিয়ে রইলো তানভীর সাহেবের দিকে।
তানভীর সাহেব আয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিলেন।

আয়ান বেশ অবাক হয়েই আবার জিগ্যেস করলো আচ্ছা আংকেল, আপনি গল্পে যা যা বললেন সবই কি সত্য ঘটনা?
- কেনো? বিশ্বাস হচ্ছে না?
- তা নয় আসলে, গল্পতো বাস্তবতার সাথে কিছু মিল থাকে বাকি সব কাল্পনিক। সেই জন্যই আরকি।
- বাস্তব। কাল্পনিক হলে আকাশ, বাতাস, সাগর, পাহাড় ইত্যাদি দিয়ে উপমায় ভরপুর থাকতো গল্পে।
- আচ্ছা আংকেল তারপর বিয়ে কিভাবে হলো?

বাঃ! গল্প বলাও শেষ হয়ে গিয়েছে নাকি? ডাক্তার আন্নি তানভীর সাহেবের দিকে প্রশ্নটা দিলেন।
তানভীর সাহেব চুপ করে বেডে শুয়ে পড়লেন। আয়ান আন্নির দিকে তাকিয়ে আছে।
সে আন্নিকে যতোই দেখছে তোতোই অবাক হচ্ছে।

ডাক্তার আন্নি আয়ানের পাশে এসে বসলেন।
- কেমন আছো আয়ান?
- জ্বী বেশ ভালো। আপনি?
- অভ্যাসের ভেতর বাহির জুড়ে বেশ ভালোই আছি।

বুঝলে আয়ান, মানুষের সব থেকে বড় শক্তি হচ্ছে ব্যর্থতা। তাছাড়া পৃথিবীতে কেউ কারো জন্য আটকে থাকে না। যখন আমরা নিজের মর্জিতে চলতে চাই তখনই আমরা ব্যর্থ হই। যখন আমরা প্রকৃতির উপর জীবনকে নির্ভরশীল করে ফেলি তখন আমাদের প্রকৃতিই লালন পালন করে নেয়। তারপর থেকে আমাদের জীবন সুন্দর হয়ে যায়।

ধীরে ধীরে একটা সময় আসলো যখন বোঝতে পারলাম আমি এবং তানভীর আমরা দুজন দুজকে ভালোবাসি। ব্যাস তারপর তানভীরের বাবা মানে আমার শ্বশুর আমাদের বিয়ে দিয়ে দেন।

৯.
রাত এগারোটা

- সবার কাছে কি বলা লাগে আমাদের কথা? আন্নি তানভীরকে বললও
- আসলে বলতে চাইনি। আমাদের গল্পটা হয়তো আয়ানের চিন্তাধারা বদলে দিতে পারে। চিন্তা করো ছেলেটা মেয়েটার জন্য আত্মাহত্যা করতে চাইছিলো। তাই ওকে এটা বোঝাতে চাইছিলাম যে, যা হয় ভালোর জন্য হয়। পৃথিবীতে কেউই অপূর্ণ নয় সবাই পূর্ণ। সৃষ্টিকর্তার নিয়মের মধ্য দিয়ে। যেমন রাদিয়া তো একটা স্মৃতি আর তুমি পৃথিবীতে আমার বাস্তবতা!
- হয়েছে। স্মৃতি আর বাস্তবতা রেখে ঘুমাও।
- হাহাহাহাহাহা! আচ্ছা। গুড নাইট।
- হুম! গুড নাইট।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×