তৃতীয় খন্ড
ঢাকায় আমার পাঠ্যজীবন
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আমার ছোট চাচা জনাব শফিকুল ইসলাম সরকারি ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ছাত্র ছিলেন। কুমিল্লায় আমার ক্লাসের সেকেন্ড বয় আমার চেয়ে ১০০ নম্বরেরও কম পেলে আব্বা মনে করেন, পরীক্ষায় ভালো ফল করতে হলে আমার চেয়েও ভালো ছাত্রদের সাথে প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকতে হবে। তাই ছোট চাচার সাথে পরামর্শ করে ঢাকায় ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (বর্তমান কবি নজরুল কলেজে) ভর্তির সিদ্ধান্ত নিলেন।
ঢাকায় ভর্তি করার উদ্দেশ্যে আব্বা কুমিল্লার হাই মাদ্রাসার টিসির জন্য সুপারিন্টেন্ডেন্টের কাছে গেলেন। সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাহেব খুবই বিস্মিত হয়ে বললেন, "ক্লাস এইটের সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রটিকে আপনি নিয়ে গেলে আমার মনে খুব কষ্ট লাগবে। হাই মাদরাসার ফাইনাল পরীক্ষায় সে বৃত্তি পাবে বলে আমি আশা করি।" আব্বা বললেন, "যাতে আরো ভালো ফল করতে পারে, সেকারনেই আমি শাকায় নিয়ে যেতে চাই। সেখানে আরো ভালো ছাত্র রয়েছে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে বাধ্য হলে ফল ভালো হবে।" সুপারিন্টেন্ডেন্ট সাহেব শেষ পর্যন্ত সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন।
১৯৪০ সালের জানুয়ারী মাসে ঢাকার ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেটে ক্লাস নাইনে ভর্তি হলাম। কলেজের নিকটবর্তী কলতাবাজার হোস্টেলে স্থান পেলাম। কুমিল্লার তুলনায় ঢাকার শিক্ষকদের মান যেরকম উন্নত ছিলো, ছাত্রদের মানও সেরকম উন্নত ছিলো। প্রথম ত্রৈমাসিক পরীক্ষায় ক্লাসে আমার পজিশন ছয় নম্বরে চলে গেল। ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত ফার্স্ট বয় হিসেবে যে গর্ব ছিলো, তা চূর্ণ হয়ে গেলো। এ খবর পেয়ে আব্বা আমাকে উৎসাহ দিয়ে বললেন, "কুমিল্লায় তোমাকে এরকম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয় নি। একারনেই আমি তোমাকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি। তোমাকে আরো সিরিয়াসলি পড়াশুনা করতে হবে।" আমাকে শান্ত্না দিয়ে বললেন, "তোমাকে ক্লাসে ফার্সটই হতে হবে এরকম কোনো দাবি নেই। তবে সব বিষয়ে শতকরা ৭৫ এর উপরে নম্বর থাকতে হবে।" ক্লাস টেনে ৪র্থ হয়ে প্রমোশন পেলাম, কিন্তু ফার্স্ট বয় থেকে আমার নম্বর তেমন কম ছিলো না। ফার্স্ট পজিশন পেলাম না, সেজন্য আমার দুঃখবোধ সত্তেও নম্বর ভালো পাওয়ায় নিরাশ হলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ বিকাল ৩:২৯