ফকর আলী আর জবর আলী দুই ভাই। সুজলা সুফলা শ্যামল শীতলা বাংলার এক গন্ডগ্রামে আরামেই কাটত জীবন। ফকর আলী মানুষটা একটু উদাস প্রকৃতির। রাইত হইলেই মনে বেশ ভাবের উদ্রেক হইত, মনটা কেন জানি আনচান কইরা উঠত। কি জানি আসি আসি করত, কিন্তু কিছুই বাইর হইত না। চাপটা মনে না পেটে- এইটাও বুইঝা উঠতে পারত না। কই জানি শুনছিল, বিড়ি-সিগারেট খাইলে নাকি লুজ মোশনের মত ভাব বাইর হইয়া আসে। এইটা শুইনা কয়েকদিন টেরাইও করছিল, কিন্তু গেরামের লোকেরা বড়ই বেরসিক। হেরা কয়, আশে-পালের ঝোপ-জঙ্গল নাকি দুর্গন্ধময় হয়া যাইতাছে ফকর আলীর ভাবের লুজ মোশনের ধাক্কায়। দুর্মূখেরা কয়, ফকর আলীর ভাব নাকি শরীরের নিম্নদেশ দিয়া বাইর হয়। মনের দুঃখে ফকর আলী ঠিক করল, হালার এই গেরামেই আর থাকুম না, ক্ষেত-খামারীর কাম ছাইড়া দিয়া শহরে যামুগা- ওইখানেই গুণের কদর আছে। বাপ-দাদার পেশা ছাইড়া অবশেষে ফকর আলী পাড়ি দিল শহরে। কিন্তু ক-অক্ষর গোমাংস বেচারা ফকর আলী। হেরে কাম দিব ক্যাডা? বহুত কষ্ট-মষ্ট কইরা অবশেষে কাম জোটাইল এক বাড়িতে। কাম বেশি কিছুনা, থালা-বাসন ধোয়া, বাথরুম পরিষ্কার করা, বড় সাহেবের পা টিপ দেওয়া- এইসব আর কি। কিন্তু এই বাড়ির পোলাপান বড়ই ট্যাটনা। বড়ই জ্বালায় বেচারা ফকররে। রাইতের বেলায় কাম- কাইজ সাইরা যখনই একটু ভাবে বসে, পোলাপানের বদমাইশি শুরু হয় তখনই। আইয়া কান মলা দেয়, ঠাট্টা- তামাশা করে, মাইর-ধরও করে যখন তখন। আর গালি-গালাজ তো আছেই। চান্দের দিকে তাকাইয়া যখনই একটু উদাস হয়, বদ পোলাগুলা পিছন দনে আইয়া লুঙ্গি ধইরা টান দেয়। মনের ধুঃখৈ ফকর আলী চিঠি লেখে ভাইয়ের কাছে, "ভাইরে, মনে বড়ই দুঃখ। এইখানে কাজ করিয়া শান্তি পাইতেছি না। ছেলেরা বড়ই জ্বালাতন করে। মার-ধর করে, গালি-গালাজ করে, মাঝে মাঝে কাছা ধরিয়াও টান দেয়, ঠিক মত খাইতে পড়িতেও দেয় না। ভয় হয়, কোন দিন না অপমান করিয়া বসে!"
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



