somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী-২

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি গলাখাকারি দিয়ে দেখলাম তাঁর ঘুম ভাঙে কি না। ছোট মাঝারি বড় এভাবে তিনবার খাকারি দিয়েছি। না, নাসের ভাইয়ের ঘুম ভাঙবার নয়। লাশটা আমার পায়ের সঙ্গে লাগছে। আমি একটু ঠেলে দিয়েছি।
আমি বললাম, 'তুষি, তুমি কি জান, মুর্দা রাতে নড়াচড়া করে!'
'যাহ, সব ভুয়া কথা।'
'দেখলে না, আমার ফুফু আমার পায়ের দিকে চলে আসছিল।'
'না, এটা গাড়ির নড়াচড়ার কারণে।'
'তাহলে শোনো। আমাদের বাড়ির পাশের ঘটনা। তিনটা লোক লাশ পাহারা দিচ্ছিল। দুইজন পুরুষ, একজন মহিলা। তারা জানত, লাশ কাউকে পাশে একা পেলে ধড়মড়িয়ে উঠে গলা চেপে ধরে। রাত বাড়তে বাড়তে একটা লোক ঘুমিয়ে পড়ে। বাকি দু'জনের চোখেও ঘুম লেগে আসে। আরও কিছুক্ষণ পর আরেকজনও ঘুমিয়ে পড়ে। এখন লাশ এর পায়ের কাছে, ওর পায়ের কাছে গিয়ে দেখে সবাই ঘুমিয়েছে কিনা। লাশ যখন বুঝতে পারে একজন ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, তখন সে ঐ লোকটার গলায় হাত দেয়। সে চিল্লায়। বাকি দু'জনের ঘুম ভাঙে। তারা হঠাৎ অবিশ্বাস্য কাণ্ড দেখে বেহুঁশ হয়ে যায়...'
'দিদার, আমার ভয় হচ্ছে।'
'এরপর, ঘরের লোকজন এসে দেখে, লাশের পাশে তিনজনই বেহুঁশ পড়ে আছে।'
'এখন কি তোমার ফুফু উঠে দাঁড়াবেন?'
'নাসের ভাই ঘুমিয়ে পড়েছেন। তুমিও যদি ঘুমাও হয়ত দাঁড়াবেন।'
'না, আমি ঘুমাব না।'
'আচ্ছা তুষি, তুমি কি আমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাস?'
'আমাদের কথাগুলো নাসের ভাই শুনছেন না!'
'এখন যদি ফুফু উঠে আমাদের গলা চেপে ধরেন, আর আমরা যদি চিল্লাই, তবু তাঁর ঘুম ভাঙবে না।'
'আমার তৃষ্ণা পেয়েছে।'
'ফুফুর মাথার পাশ থেকে বোতলটা নাও।'
'আমার ভয় হচ্ছে, তুমি নাও।'
আমি বোতলটা নিতে গিয়ে একটু আঁচ করলাম, ফুফু মাথা নাড়ছেন।
'এই তুষি, ফুফু মাথা নাড়ছেন।'
তুষি এলেবেলে 'নাসের ভাই, নাসের ভাই' করে চিল্লাচ্ছে। নাসের ভাইয়ের ঘুম ভাঙছে না। লাশ পার হয়ে ধাক্কা দিয়ে জাগিয়ে দেওয়ার সাহস এ-মুহূর্তে আমারও নেই।
আমি বললাম, 'তুষি, গাড়ির ধাক্কায় বোধ'য় মাথা নড়েছে।'
'হ্যাঁ, তাও হতে পারে।'
তুষি কাঁপছে। কাঁপা গলায় সুরা ফাতেহা পড়ছে।
আমি বললাম, 'তুষি, তুমি বিসমিল্লাহ পড়নি।'
সে বিসমিল্লাহ পড়ে আবার শুরু করেছে। মেয়েলি গলায় কুরআন তেলাওয়াত ভাল লাগছে। আমার ভয়টা একটু কমছে। একটা যুক্তি কাজ করছে। ভাবছি, মরা মানুষ উঠবেন কিভাবে! তাঁর হৃৎযন্ত্র কাজ করছে না, তাঁর রক্ত চলাচল বন্ধ। তিনি গাড়ির ধাক্কায় নড়েছেন।
আমি বললাম, 'তুষি, তুমি শুদ্ধ করে পড়তে পার।'
'দিদার, তুমিও পড়। শুনেছি, লাশের পাশে দোয়া-দরুদ না হলে শয়তান আসে। শরীরে ঢুকে গিয়ে মুর্দাকে নাড়ায়।'
'তুমি আগে পানি নাও।'
'দাও।'
'এই পানিটা মরার আগে ফুফু খেয়েছিলেন।'
'আমার তৃষ্ণা কমে গেছে। পরে খেলেও চলবে।'
আমরা দু'জনই সুরা পড়ছি। ড্রাইভারকে দরুদ পড়তে বলেছি। সেও পড়ছে। এখন গাড়ির কোনও দিক দিয়ে শয়তান ঢুকতে পারবে না!
নাসের ভাই ঘুমাচ্ছেন। নিশ্চয়ই কোনও স্বপ্ন দেখছেন। কী স্বপ্ন দেখছেন আল্লায় জানে! তিনি নাকি ঘুমালেই স্বপ্ন দেখেন। একবার তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, একটা পাখি এসে পাখায় করে তাঁকে মদীনায় নিয়ে গেছে। সেখানে তিনি রওজা মোবারক দেখেছেন। কথাটা বলার জন্য তিনি আমার বাসায় ছুটে এসেছিলেন। আমি কান পেতে শুনেছিলাম। তখন তাঁর সঙ্গে আমার গোলমাল ছিল না। স্বপ্নটা দেখেছিলেন টাকা ধার নেওয়ার কয়েকদিন পর। এরপর কত স্বপ্ন তিনি দেখেছেন। আমাকে হয়ত বলতে আসেন না; সবই বউকে বলেন। ক'দিন পর স্বপ্নের কথা ছেলেকেও বলতে পারবেন। ছেলেও বড় হচ্ছে। অথচ, আমার ধারের টাকায় বিয়ে করেছিলেন তিনি।
আমার মন থেকে ভয়টা উবে গেছে। তুষিও পড়া বন্ধ করে দিয়েছে। মনে হয়, সেও আর ভয় পাচ্ছে না। ভয়ের পেছনে একটা যুক্তি খাড়া করতে পারলে সেই ভয় তাড়াবার যুক্তিও খাড়া হয়। সেটা আমি পেরেছি, তুষিও পেরেছে।
আমি বললাম, 'তুষি, আমার পরীক্ষার রেজাল্ট আগামী মাসে বেরুবে।'
'তুমি এমএ পাশ করবে। আড়াই বছর পর আমিও করব। তখন আমাদের বিয়ে হবে।'
'কিন্তু, আড়াই বছর তো অনেক দিনের কথা।'
'ছয় বছর পার করতে পেরেছি। আড়াই বছর কেন পারব না!'
'তুষি, খোদার কসম, আমি তোমাকে 'অশিক্ষিত' বলব না। চল, আমার রেজাল্টের পরই বিয়ে করে ফেলি।'
তুষি দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়েছে। গাড়ি চলছে। পটিয়ায় পৌঁছে গেছি। ঘণ্টা দেড়েক পর বাড়ি পৌঁছাব। ড্রাইভার বলছে, 'ভাই, একটা মহিলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।'
আমি বললাম, 'দাঁড়াও, বিপদে পড়েছে মনে হয়।'
তুষি বলল, 'জান, কতো রকম করে ডাকাতি হয়?'
আমি বললাম, 'লাশের গাড়িতে ডাকাতি হয় না।'
ড্রাইভার বলল, 'এদের পিষে দিয়ে যাব?'
তুষি বলল, 'হ্যাঁ, সরে না গেলে পিষে দিয়ে যান।'
আমি বললাম, 'দাঁড়াও।'
আমার কথা শুনে ড্রাইভার ব্রেক করেছে।
আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, 'এ-ই মেয়ে কী হয়েছে?'
মেয়েটি আর্তনাদ করছে। পটিয়া মেডিকেলে তার ছেলের চিকিৎসা হচ্ছে। অবস্থা মুমূর্ষু। ডাক্তার বলেছেন, সকালে রক্ত লাগবে। এখনই তাকে সাতকানিয়া যেতে হচ্ছে। যাওয়ার পথে তাকে নিয়ে গেলে সে আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে দোয়া করবে। মহিলাটিকে দেখে, তার কথা শুনে আমার মায়া হল। ড্রাইভারকে বললাম, 'মেয়েটাকে গাড়িতে ওঠাও।'
মেয়েটা গাড়িতে উঠতেই পাশে দোকানের পেছন থেকে আরও চারজন এসেছে। এরা পুরুষ। হাতে রিভলবার নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে একজন।
নাসের ভাই ঘুমাচ্ছেন। আমি তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, 'আসসালামু আলাইকুম।'
এদের একজন বলল, 'তোর সালাম তোর পাছায় ঢুকিয়ে দেব শালা। গাড়ি থেকে নেমে আয়।'
অন্যজন বলল, 'চুপচাপ কী আছে দিয়ে দাও।'
তুষি বলছে, 'ভাই, আমরা তো লাশ নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আমাদের কাছে শুধু পাঁচশ ত্রিশ টাকা আছে। আপনারা চাইলে দিয়ে দেব।'
আমি বললাম, 'আরও কম আছে।'
পাঁচজনই একটু থমকে দাঁড়িয়েছে। আমি ভাবছি, বেচারারা দুর্ভাগা। দুর্ভাগা না হলে অপারেশন এমন আনসাকসেস হয় না।
একজন এগিয়ে গাড়িতে ঢুকতে চাচ্ছে। তাকে একটু বেয়াদব মনে হল। সে লাশের মুখ থেকে কাপড় নামিয়ে লাশের নাক মুখ সব পরীক্ষা করছে। সে নিশ্চয়ই ভেবেছে, তাদের ফাঁকি দেওয়ার জন্য আমরা কাউকে শুইয়ে দিয়েছি। সে হঠাৎ বলে উঠল, 'এই, এই, এটা লাশ নয়। জিন্দা মানুষ শুয়ে আছে।' আমাদের নাসের ভাইয়ের ঘুম তখনও ভাঙেনি।
আমি হাসছি। এরা অপরাধী; এদের হাত কাঁপে। কাঁপা হাতে সে লাশকে জিন্দা ভেবেছে। ভাবুক, কপালে যা আছে তা হবে।
লোকটি আমার দিকে রিভলবার তাক করে বলল, 'এটা লাশ নয়। লাশ সামনে রেখে কেউ ঘুমায় না।' সে আবার গাড়িতে গিয়ে নাসের ভাইয়ের শার্টের কলার ধরে টান দিয়েছে। নাসের ভাইয়ের ঘুম ভেঙেছে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তিনি লোকটাকে আস্ত একটা ঘুষি লাগিয়ে দিয়েছেন।
মেয়েটি এবার তার বোরকার ভেতর থেকে অস্ত্র বের করে। সে নাসের ভাইয়ের হাতটা ধরে হাতের তালুতে অস্ত্রটা ঠেকিয়ে বলে, 'গাধা, কোন হাতে ঘুষিটা মারলি?'
নাসের ভাই কিছু বুঝতে পারছেন না। একটা শব্দ শুনতে পেলাম। দেখতে পাচ্ছি, নাসের ভাইয়ের হাত থেকে দরদর রক্ত বেরুচ্ছে। তিনি হাতটা চেপে ধরেছেন। সে নাসের ভাইয়ের শার্ট ও প্যান্টের সবগুলো পকেট থেকে সব বের করে নিয়েছে। টাকাগুলো সে গুনছে। পাঁচ হাজার ছয় শ' টাকা।
পুরুষের একজন তুষির গায়ে হাত দিয়েছে। শরীরের সব জায়গায় হাত দিয়ে সে টাকা বের করবে। আমার গা খিতখিত করছে। জানি না, তুষি এখন কী করে। তুষির সঙ্গে আমার সম্পর্ক আজ ছয় বছর। অথচ, তুষির গায়ে আমি হাত দেওয়ার সাহস করিনি। চেষ্টা যে করিনি তা নয়, তুষির মন-মানসিকতা দেখে সাহস পাইনি। এখন তুষি যদি লোকটার গালে একটা চড় দেয়! এর নিশ্চিত পরিণতি হবে, মহিলাটা তুষির হাতের তালুতে একটা গুলি করবে।
তুষি বলল, 'আমি সব দিয়ে দিচ্ছি।'
'ব্যাস, আরেকটা কথা বললে পরিণতি খারাপ হবে।'
'আমার দেহ মহিলাটা চেক করলে হয় না!'
'না, তিনিই করুন'- আমি আচমকা বলে উঠি। কারণ, লোকটার হাতে অস্ত্র নেই, মহিলাটার হাতে অস্ত্র আছে। অস্ত্রটা দিয়ে সে নাসের ভাইয়ের হাতটা ফুটো করে দিয়েছে। দ্বিতীয়বার কাউকে গুলি করতে তার হাত কাঁপবে না।
তুষিকে সে বিশ্বাস করছে না। সে তুষির বুকে হাত দিয়ে হয়ত বুঝতে পেরেছে, ভিতরে কিছু আছে। সে কাপড়ের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে। তুষি কিছু বলছে না, কিছু করছেও না, নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটা তুষির বুকে কিছু পায়নি। এবার কোমর তন্ন তন্ন করে খুঁজছে। কোমরেও কিছু পায়নি।
আমি বললাম, 'তুষি কিছু থাকলে দিয়ে দাও।'
লোকটি বলল, 'অই মিয়া মাতব্বরি করবে না, ফুটো করে দেব।'
তুষির চেহারার এমন অবস্থা আমি কখনও দেখিনি। ভয়, শরম, অসহায়ত্ব মিলেমিশে তুষির সাদা বর্ণের চেহারার উপর একটা লালাভ আভা এসে জড়ো হয়েছে। গাড়ির হেডলাইটের আলোয় সেটা চকচক করছে। আমার মনে হচ্ছে, বাসর রাতে তুষিকে হয়ত এ-রকমই দেখাবে। কেউ একজন তার বুকে হাত দেবে, বুকটা খুলে ফেলবে। কোমরে হাত দেবে। তুষির এতদিনের লুকোনো সব সম্পদ ছত্রখান হয়ে যাবে।
নাসের ভাই গুলিবিদ্ধ হাতটাতে কাপড় পেঁচিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে উহ্ উহ্ করছেন। ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছেন তিনি। এ-সময় নাসের ভাইকে হাসপাতালে নেওয়া দরকার। কিন্তু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, আমার তল্লাশির আগে নড়াচড়া করলে আমার কপালেও একটা গুলি আছে। তল্লাশি পর্বটা যথাযথভাবে সম্পন্ন হোক, এরপর নাসের ভাইকে নিয়ে সাতকানিয়া হাসপাতালে যাব।
আমার মনে হচ্ছে, নাসের ভাইকে মিথ্যার খেসারত দিতে হয়েছে। আমাকে এক হাজার টাকা দেওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, তাঁর কাছে টাকা নেই। অথচ, ডাকাতরা তাঁর পকেট থেকে পাঁচ হাজার ছয় শ' টাকা বের করেছে। এত টাকা থাকার পরও তিনি বলতে পেরেছেন টাকা নেই। আমার মনে হয়েছে, এতদিন টাকা থাকার পরও তিনি আমার ঋণটা শোধ করেননি। নাসের ভাই যদি সুস্থ হয়ে ওঠেন, তাঁকে সব গোস্বা ঝাড়ব। তাঁর বউয়ের কাছেও ঝাড়ব। তাঁর বউও জানতেন, স্বামীর কাছে টাকা আছে।
তুষিকে তারা ছেড়ে দিয়েছে; কিছু পায়নি। আমার মনে হচ্ছে, এরা পেশাদার ডাকাত নয়। অভাবের তাড়নায় ডাকাতি করছে। তাদের জানা উচিত ছিল, মহিলারা ভ্যানিটি ব্যাগ ছাড়া ঘর থেকে বেরোয় না এবং এই সময়ে তার ভ্যানিটি ব্যাগটা গাড়িতেই থাকবে।
অন্যজন ড্রাইভারের কাছে যা পেয়েছে নিয়ে নিয়েছে। ড্রাইভার লোকগুলো বেপরোয়া হয়। আমার ভয় হচ্ছে, সে যদি এদের সঙ্গে 'বেয়াদবি' করে, নিশ্চিতভাবে গুলিবিদ্ধ হবে। বিপদটা হবে আমাদেরই। আমি ও তুষি ড্রাইভিং জানি না। নাসের ভাইয়ের অবস্থা ভাল নয়, আমার ফুফুর লাশে কিছুক্ষণ পর পচন ধরবে। ড্রাইভার আপত্তি ছাড়াই সব দিয়ে দিয়েছে।
এবার আমার পালা। আমাকে মহিলাটা বলছে, 'এ-ই শালা, কাছে আয়।'
মহিলাটার স্বভাব উদগ্র হলেও চেহারা সুন্দর। এ-রকম শ্যামলা মহিলা বিয়ে করাই আমার স্বপ্ন ছিল। অনেকের মুখেই শুনেছি, সুন্দর ফলটা পোকায় খায়। তুষি ফর্সা না হলে, লোকটা হয়ত এভাবে তন্ন তন্ন করে তুষির গোপন জায়গাগুলোতে হাত দিত না। না, দিত। ওরা সুন্দরকে আক্রমণ করেনি, টাকাকে আক্রমণ করেছে। নইলে, তিনজন মিলে তুষিকে অন্ধকার কোথাও নিয়ে যেতে পারত।
মহিলাটার ভাব-সাব ছেলেদের চেয়েও ভয়ঙ্কর। আমি আল্লাহ আল্লাহ করছি। তল্লাশির সময় নিজের অজান্তে যদি কোনও ভুল হয়ে যায়, মহিলাটা নির্ঘাত অস্ত্র ব্যবহার করবে। আমার যদি কিছু হয়ে যায়, তুষির কী হবে!
মেয়েটি বলল, 'এ-ই, সব বের করে দাও।'
'আমার কাছে শুধু ত্রিশ টাকা আছে।'
'পরে বেশি পাওয়া গেলে গুলি করে দেব।'
'জ্বী।'
'শার্ট খোলো, আমার হাতে দাও।'
'এই শার্টে কিছু স্মৃতি আছে ম্যাডাম। আমার প্রেমিকা...'
'গুলি খেতে মন চাচ্ছে?'
তুষির দেওয়া দামি শার্টটা আমি খুলে দিয়েছি। সে শার্টের পকেটগুলোতে হাত দিয়ে অনেক টাকা বের করেছে। আমি অবাক হয়েছি, এত টাকা আমার পকেটে কিভাবে! আমার তখনই মনে পড়ে, তুষির পাঁচশ টাকা নিয়ে হোটেলের বিল দিয়ে বাকি টাকাটা আমার পকেটে নিয়েছিলাম।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এই হাসির শিহরণ আমার পায়ের আঙুল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। সারা দেহ দিয়ে ঘাম বেরুচ্ছে। আমি নিজের কানটা ধরে মহিলার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। পাশ থেকে একটা লোক এসে আমার পাছায় একটা লাথি দিয়েছে। এই লোকটাই তুষির বুকে ও কোমরে হাত দিয়েছিল।
মেয়েটা হুকুম দিল- 'প্যান্ট খোলো।'
আমি বললাম, 'ম্যাডাম আন্ডারওয়্যার নেই।'
আসার সময় বাড়িওয়ালির সঙ্গে ঝামেলাটা না বাধলে আন্ডারওয়্যার পরার কথা নিশ্চয়ই ভুলতাম না। শালিকে গলাধাক্কা না দিয়ে একটা গুলি করা দরকার ছিল। এই মেয়ের হাতে যে রিভলবার, সেটা ছয়হাজার টাকা দিয়ে পাওয়া যায়। নাসের ভাইকে টাকাটা ধার না দিলে সেটা আমি কিনতে পারতাম। মানুষ ঠেকলে শেখে। আল্লাহর কসম, আমি আর কাউকে টাকা ধার দেব না।
মেয়েটি বলল, 'যা বলেছি তাই কর।'
'ম্যাডাম, এই মহিলাটা আমার প্রেমিকা। পাশে যিনি রক্তাক্ত হয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে আছেন, তিনি আমার জেঠাতো ভাই; তাঁদের সামনে উলঙ্গ হলে শরম পাব।'
'যখন বলেছিলে শুধু ত্রিশ টাকা আছে, তখন শরম পাওনি?'
'ম্যাডাম আপনার পায়ে ধরি।'
পায়ের দিকে ঝুঁকতেই মহিলা রিভলবারটা আমার মাথার দিকে তাক করেছে। আর সামনে যাওয়ার সাহস পাইনি। সে আমার জিন্সের প্যান্টের সবগুলো পকেটে হাত দিয়ে তুষির দেওয়া রুমাল, চিঠি, চাবির তোড়া সব নিয়ে নেয়।
এরপর আমাদের মুক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু ঐ মহিলা পুরুষ তিনজনকে একপাশে ডেকে মিনিটখানেক কী যেন বলে। এরপর দুইজন দুই দিকে তুষির দুইহাত শক্ত করে ধরে বলে, 'চলো।'
তুষি তাদের কাছ থেকে ছুটে আসতে চাচ্ছে। টানাহ্যাঁচড়া হচ্ছে। মহিলাটা তুষির মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রেখেছে। তুষি আমার দিকে তাকাচ্ছে। এ-সময় তাদের উদ্দেশে কিছু বলার সাহস আমার নেই। আমিও তুষির দিকে তাকিয়ে আছি। তারা তুষিকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছে।
নাসের ভাই ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তাঁর শরীর থেকে প্রচুর রক্ত নির্গত হয়েছে। তাঁর চারপাশে অনেক জায়গা লাল হয়ে গেছে। তাঁর উহ্ উহ্ শব্দটা নিচু হয়ে এসেছে। বুঝতে পারছি, তিনি ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছেন।
আমার মাথাটা হঠাৎ চক্কর কাটে। আমি ধপ করে নাসের ভাইয়ের পাশে পড়ে যাই। নাসের ভাইয়ের হাত থেকে রক্ত ঝরছেই; আমার হৃদয়ও ক্ষতবিক্ষত; রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে, নাসের ভাইয়ের মতো আমার হাতটাও গুলিবিদ্ধ হলে ভাল হত। হাতে গুলি লাগলে কাপড় পেঁচিয়ে রক্ত বন্ধ করে রাখা যায়। আমার হৃদয়ের রক্তরণকে বেঁধে রাখা যাচ্ছে না! রক্তাক্ত দু'জন পাশাপাশি বসে আছি!
ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে আমাদেরকে আমার ফুফুর পাশে বসিয়ে দেয়। এখন আমরা হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। ফুফুর পাশে আমরা তিন জন ছিলাম, এখন দুই জন। বাকিজনের কোনও খবর আপাতত আমাদের হাতে নেই।
উপজেলা সদর হাসপাতালগুলোতে স্বভাবত রাতের বেলা ডাক্তার থাকেন না। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস ডিউটি করে তাঁরা চলে যান। বর্ষার সময় আরও আগে যান।
ডাক্তার নেই। নাসের ভাইকে একটা খাটে শুইয়ে দিয়ে একজন মহিলা নার্স তাঁর হাতটা দেখছেন। রক্ত বন্ধ করার চেষ্টা করছেন। বন্ধ হচ্ছে না। গ্লাসের পর গ্লাস পানি খাওয়ানো হচ্ছে। গজ কাপড় দিয়ে হাতটা পেঁচিয়ে রাখা হয়েছে। সকাল পর্যন্ত এভাবেই থাকতে হবে। ডাক্তার সাহেব এলে চিকিৎসা হবে। নার্সরা বলেছেন, আপাতত রক্তক্ষরণ বন্ধ করার অষুধ কিনতে। আমাদের কাছে এখন টাকা নেই। নার্সকে আমাদের ঘটনাটা বলেছি। অনুরোধ করেছি, আপাতত সব ব্যবস্থা করতে; বাড়ি থেকে ফিরে সব টাকা একসঙ্গে দিয়ে দেব। তিনি রাজি হয়েছেন।
আমি ও ড্রাইভার থানায় যাচ্ছি। থানায় বিষয়টা এখনই জানানো দরকার। গাড়িতে উঠেছি। ফুফুর লাশ থেকে গন্ধ বেরুচ্ছে। সে-ই দুপুরে মারা গেছেন, আর এখন রাত দুইটা।
আমাদের জন্য বিষয়টা যত গুরুতর, থানার ডিউটি অফিসারের কাছে সেটা তত জরুরি নয়। এ-রকম ঘটনা হরহামেশাই হয়। এর মধ্যে সব ঘটনার বিচার যে হয় না তা নয়, দু'-একটার হয়। আমার মনে হচ্ছে, পুলিশকে জানানোর মধ্যে বিপজ্জনক একটা বিষয়ও আছে। তারা তুষিকে হয়ত উদ্ধার করবে। এরপর তার দেহের সবকিছু তন্ন তন্ন করে দেখবে, তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা। ঘটনাটা পত্রিকায় উঠবে। আমার ও তুষির সম্পর্ক নিয়ে সারাদেশে কথাবার্তা হবে। লোকজন আমাকে চিনবে। আমাকে দেখে লোকজন বলবে, 'ঐ যে দিদার, 'দিদার-তুষি' ঘটনার সেই দিদার।'
ড্রাইভারকে বললাম, 'আচ্ছা, পুলিশকে জানালে কী লাভ?'
ড্রাইভার বলল, 'লাভ মানে, তারা মহিলাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করবে; পেলে পেল, না পেলে নাই।'
'তারচেয়ে বরং বাড়ি গিয়ে লাশটা রেখে এলে ভাল হয় না?'
'হয়।'
আমাদের গাড়িটা সেই জায়গার উপর দিয়ে যাবে, যেখান থেকে তুষিকে টানাহ্যাঁচড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে নাসের ভাইকে গুলি করা হয়।
গাড়ি চলছে। ফোঁটা-দু'ফোঁটা করে বৃষ্টি হচ্ছে।
বৃষ্টিকে আমার খুব ভয় হয়। বৃষ্টি হলে আমার মন ভেঙেচুরে যায়। কোনও কাজ ঠিকঠাক হয় না। শুধু একটা মানবীর জন্য মন কাঁদে। আগে তুষির জন্য মন কাঁদলে তাকে বাসায় আসার খবর দিতাম, বাসায় না এলে রাগ করতে পারতাম। এখন কিছুই পারব না।
ড্রাইভার ব্রেক করেছে। যেখান থেকে তুষিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানেই তুষি বসে আছে। পাশে আমার শার্টটাও পড়ে আছে। তুষি হাঁটুটা খাড়া করে দিয়ে হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছে। গাড়ির দিকে তাকাচ্ছে না।
আমি বললাম, 'তুষি, এ-ই তুষি, তুষি আমি দিদার।'
তুষি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আমি বললাম, 'তুমি ভাল আছ তুষি?'
'হ্যাঁ, ভাল আছি।'
সে মুখে বলছে ভাল আছে। ঘটনার আদ্যোপান্ত এবং তুষির চেহারা দেখে সেটা বিশ্বাস করলে ভুল হবে। আমি নিশ্চিত, এতদিনের সঞ্চিত এবং লালিত সব সম্পদই তুষি আজ বিসর্জন দিয়ে এসেছে। এতে তুষির কোনও দোষ নেই। দোষ আমার। তুষি বলেছিল মহিলাকে চাপা দিয়ে চলে যেতে, আমি যেতে দিইনি।
এখন তুষিকে বলার কোনও ভাষা আমার নেই। তুষির দিকে তাকানোর অধিকারও আমি হারিয়েছি। আমার মাঝে যদি পৌরুষত্ব থাকে, বংশের অহংকার থাকে, শিক্ষার গুণ থাকে, আমি যদি আসল প্রেমিক হই, এই মুহূর্তে আমার ইহধাম ত্যাগ করা দরকার। কিন্তু, ইচ্ছে করলেও সেটা করার সুযোগ নেই। আমি যদি এখন আত্মহত্যা করি, ফুফুর লাশটা বাড়িতে যাবে না, তুষিকে ধর্ষণ করার প্রতিশোধ নেওয়া যাবে না, নাসের ভাইয়ের চিকিৎসা হবে না, সে মারা যাবে।
আমি বললাম, 'তুষি, আমি বিশ্বাস করি, তুমি ভাল আছ।'
তুষি আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। কিছু বলছে না। আমি তুষিকে বুকে টেনে একটা চুম্বন করি। দৃশ্যত মনে হচ্ছে, তুষি এর কিছুই শুনছে না, কিছুই অনুভব করতে পারছে না। তাকে গাড়িতে তুলে এনে আমার পাশে বসাই।
ফুফুর লাশ থেকে উৎকট গন্ধ বেরুচ্ছে। আমাদের কাছে সেন্ট-আগরবাতি কিছু নেই। এসবের দরকারও মনে করিনি। কারণ, আমাদের এতক্ষণে বাড়ি পৌঁছার কথা, তুষিকে নিয়ে একটা কথাও ওঠার কথা, নাসের ভাইয়ের হস্তক্ষেপে সেটার সুরাহাও হয়ে যাওয়ার কথা।
ভাবছিলাম, পৌঁছার ঠিক আগে নাসের ভাইকে নিয়ে একটা বুদ্ধি খেলব। নাসের ভাইকে আমি অনুরোধ করব, 'নাসের ভাই, আমার জন্য একটু কষ্ট করতে হবে।'
'কী কষ্ট?'
'তুষির যাওয়া নিয়ে একটা প্রশ্ন উঠবে। সেটা আপনাকে সুরাহা করতে হবে।'
'লাশ পৌঁছালে ঘরে মাতম হবে। তোর এ-সব উঠবে না।'
'যদি ওঠে?'
'কী করব আমি?'
'বলতে হবে, মেডিকেলের ডাক্তাররা বলেছিলেন, ফুফুর সেবা-শুশ্রূষার জন্য মহিলা লাগবে। মহিলা ক্যাবিনে পুরুষ থাকতে পারবে না। সেজন্য আমরা তুষিকে ঠিক করেছি। ফুফু মারা যাওয়ার পর তুষির খুব খারাপ লাগে। এ কারণে, সে আমাদের সঙ্গে চলে আসে।'
'লাশ সামনে নিয়ে এই কথা আমি বলতে পারব না।'
'নাসের ভাই, মানুষের বিপদে মানুষকে যে কোনওভাবে এগিয়ে আসতে হয়।'
এই কথার মাধ্যমে আমি কী বোঝাতে চেয়েছি নাসের ভাই বুঝবেন। তিনি ম্যানেজড হবেন। আমার সামনে তিনি দুর্বল। বাড়িতে আর সমস্যা থাকবে না।
পরিকল্পনাটা একেবারে খারাপ ছিল না। কিন্তু, সবকিছুই ওলট-পালট হয়ে গেল। পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। সবই আমার কারণে হয়েছে।
তুষি আমার কাঁধে মাথাটা রেখেছে। চোখ বন্ধ। সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছে।
'তুষি, অ-তুষি!'
তুষি কিছু বলছে না।
ড্রাইভারকে লাইট অন করতে বলেছি। ফুফুর মুখের চাদরটা সরিয়ে দিয়েছি। মানুষ মরে গেলেও সব কিছু জানতে পারে! আমার ধারণা, ফুফু সব কিছু জেনেছেন। তাঁর আত্মা ফুঁসে ফুঁসে উঠছে। এই ঘটনা যদি ফুফুর জীবদ্দশায় হত, চার-চারটা ডাকাতের জন্য তিনি আমৃত্যু লড়তেন। ফুফু আজ নিস্তেজ। তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমার মনটাও ইন্তেকাল করেছে। আমি সবই দেখছি, শুনছি, অথচ আমার মনে এতটুকুন বল নেই যে, এর একটা সুরাহা করব। ভাবতে পারছি না, আমি এখন তুষির জন্য কী করব!
'তুষি, অ-তুষি!'
তুষি কিছু বলছে না। সম্ভবত তুষির মনও ইন্তেকাল করেছে।
আমার মনের এই যে অবস্থা, তার প্রতিকারের কোনও উপায় পৃথিবীতে আছে কিনা জানি না। এই সময়ে একটা কেন, শত-সহস্র মিষ্টি গিললেও আমার মনের কোনও পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।
গাড়ি এগিয়ে চলছে। তুষির কাঁধে হাত দিয়ে তাকে আমার দিকে টেনে ধরেছি। তুষিকে কখনও আমি এভাবে ধরিনি। মন চাইলেও ধরার সাহস করিনি। তুষি জানে, আমি তাকে জড়িয়ে ধরেছি, অথচ সে এর প্রতিবাদ করছে না। অন্যসময় এভাবে জড়িয়ে ধরলে শরীরটা হয়ত নড়েচড়ে উঠত। আজ উঠছে না। একটি লুণ্ঠিত দেহকে মমতায় আগলে রাখতে পারার অতিরিক্ত একটি আনন্দ আমার মাঝে কাজ করছে। একটি লাশ, লাশে পচন ধরেছে; জেঠাতো ভাইয়ের রক্তক্ষরণ হয়ত এখনও থামেনি, তবুও ব্যাখ্যাবহির্ভূত এই আনন্দে আমি চোখ থেকে পানি বের করে দিয়েছি।
আমি তুষির দিকে তাকাচ্ছি। তার দেহটা এলিয়ে যাচ্ছে।
'তুষি, অ-তুষি!'
তুষির ঘুম ধরেছে। একটা দেহের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চলেছে; এরপর সে কান্ত। সে ঘুমাক; তাকে আর ডাকব না।
ড্রাইভার বলছে, 'সামনে পুলিশ।'
আমি বললাম, 'এই এলাকায় পুলিশের বেশে ডাকাতি হয়।'
'তাহলে কী করব?'
'ভেঁপু বাজাও; না সরলে চাপা দাও।'
সামান্য দূরে পুলিশ দেখা যাচ্ছে। এ সময় তুষি জেগে উঠলে ভালই হত। তার কথা না শুনেই বড় বিপদে পড়তে হয়েছে। এখন তার পরামর্শ দরকার। এখন তাকে যে-রকম জরুরি মানুষ মনে হচ্ছে, আগে কখনও এ-রকম মনে হয়নি। মেয়েটাকে সবসময় আমি হালকা চোখে দেখেছি; সে যেটা বলেছে তার উল্টোটাই করেছি। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে শুনলে হয়ত আমার জীবনে উন্নতি হত।
আমি আবার ডাকলাম, 'তুষি, তুষি, অ-তুষি।'
তুষির ঘুম ভাঙছে না। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে জাগাবার চেষ্টা করছি। তুষি অঘোর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।
ড্রাইভারকে বললাম, 'জোরে চালাও; না সরলে চাপা দিয়ে যাও।'
'যদি পুলিশ হয়, বিপদ হবে।'
'বিপদ হবে না, চালাও।'
ড্রাইভার একটু থামাবার ভান করে জোরে চালিয়ে চলে যাচ্ছে। পেছনে দেখছি, ডাকাত অথবা পুলিশ কেউ একজন হাতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছে; চিল্লাচ্ছে। কী বলছে আল্লায় জানে; গাড়ির শব্দে কিছু শোনা যাচ্ছে না।
খোদার অশেষ রহমত, কেউ মারা গেলে আমরা সবাই খুনের আসামী হতাম। আমরা সবাই না, ফুফু আসামি হতেন না। তিনি মৃত। তুষিও আসামি হত; কারণ, হত্যাকাণ্ডের সময় সে ঘুমন্ত ছিল- এমন কথার প্রমাণ নেই।
গাড়ির প্রচণ্ড ধাক্কায় ফুফুর দেহটা আমার পায়ের উপর আছড়ে পড়েছে। তাঁর পা-টা নাড়িয়ে দেওয়া দরকার, কিন্তু তাঁকে নাড়তে গেলেই তুষি আমার কাঁধ থেকে পড়ে যাবে। পড়ে নাক মুখ ভেঙে ফেলবে অথবা সে ফুফুর গায়ের ওপর পড়বে। ফুফুর গায়ের ওপর পড়া অবস্থায় যদি তার ঘুম ভাঙে, আরেকটা নতুন বিপদ হবে। তখন তুষি নির্ঘাত মুর্ছা যাবে। তাকে হুঁশ করার জন্য আশেপাশে মেডিকেল নেই। বেহুঁশ কারও মাথায় পানি ঢালার জন্য পাত্রও নেই। কারও কাছ থেকে পাত্র নেব, ঘরবাড়িও নেই। নিঝুম রাত, জনমানবের সাড়া-শব্দ নেই।
লাশ থেকে বিকট দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। আমি নাকে রুমাল পেঁচিয়েছি। তুষি ঘুমের ঘোরে গন্ধ টের পাচ্ছে না। সকালে পেট ফুলে গেলে বুঝতে পারবে। ড্রাইভারের দিকে গন্ধ যাচ্ছে না। ড্রাইভার আর আমাদের মাঝখানে একটা আড়াল আছে।
পেছনে দিক থেকে কেউ আমাদের তাড়া করছে। নিশ্চয়ই ডাকাত অথবা পুলিশ।
আমি বললাম, 'ড্রাইভার, আমাদের কেউ তাড়া করছে, জোরে চালাও।'
'পুলিশ হলে সব বিপদ আমার ওপর যাবে।'
'তোমার কি মনে হয়, ওরা পুলিশ?'
'পুলিশ না হলে ধাওয়া করত না।'
'সেটা পরে দেখা যাবে। আমরা বলব, ডাকাত ভেবে দাঁড়াইনি।'
'এ-সব ওরা বুঝবে না।'
'চালাও। তুষি ঘুম থেকে উঠলে বুদ্ধি নেব।'
ড্রাইভার একটু হেসেছে। এই বিপদের সময় কারও হাসি না আসা উচিৎ। ড্রাইভারকে আমার ঘেন্না হচ্ছে। তুষির মর্ম সে বুঝছে না।
'ড্রাইভার, তুমি কি হাসলে!'
'জ্বী।'
'এ-সময় কারও হাসি আসে!'
'আপনার কথা শুনতে পেলে লাশও হাসত।'
'লাশ আবার কিভাবে হাসবে!'
'এটা কথার কথা।'
'এখন কথার কথা বলার সময় নেই।'
'বুঝলাম না।'
'আর হাসবে না। এই বিপদের সময় হাসলে বিশ্রী লাগে।'
ড্রাইভার গাড়ি থামাচ্ছে। আমার মনে হয়, সামান্য কথাকাটাকাটিতে সে আমার ওপর রাগ করেছে। আমার কথা না মেনে সে গাড়ি থামাচ্ছে। গাড়ি থামালে নিশ্চয়ই বিপদ হবে।
এখন তুষিকে যেভাবেই হোক জাগানো দরকার। তুষির কাছে আমি আরও একটা বিষয়ে ছোট হতে যাচ্ছি। সে অন্তত আমাকে এক শ' বার বলেছে ড্রাইভিং শিখতে। আমি পাত্তা দিইনি। আমি শুনেছি, নামরদরা মহিলার কথা শোনে। ইস্, আজ যদি ড্রাইভিং জানা থাকত, তাহলে এই কুত্তার বাচ্চাকে ঘাড় ধরে নামিয়ে দিতে পারতাম।
তুষিকে আবার ডাকলাম, 'তুষি, অ-তুষি।'
তুষি চোখ দু'টো একটু ফাঁক করেছে।
'তুষি, বিপদ হয়েছে, ওঠো প্লিজ।'
তার চোখ দু'টো টকটকে লাল। বোতল থেকে হাতের তালুয় সামান্য পানি নিয়ে আমি তুষির মুখে মেখে দিয়েছি। সে চোখ দু'টি আরও ফাঁক করেছে। আমার সাহস হচ্ছে। আজ থেকে তুষি আমার কাছে দেবির মতো! মহিলাদের কাছে এত শক্তি হয় এর আগে জানতাম না।
তুষি বলল, 'পানি খাব।'
আমি বোতলটা তার দিকে এগিয়ে দিচ্ছি। আমার সংশয় হচ্ছে, এই পানি সে খাবে না। সে জানে, মরার আগে ফুফু এই পানি খেয়েছিলেন। না খেলে অন্য কোনও পানির ব্যবস্থা নেই।
তুষি গড়গড় করে পানি খাচ্ছে। আমার বুকটা খুশিতে ভরে যাচ্ছে। এখন তুষি জেগে উঠবে। প্রচণ্ড একাকীত্বে আমি কুঁকড়ে ছিলাম। সিদ্ধান্তহীন ছিলাম। ড্রাইভার শালা আমার সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। এখন তুষিকে পেলে আমার আর কোনও সমস্যা নেই।
ড্রাইভার গাড়ি থামিয়েছে। আমি চ্যাঁচামেচি করছি, 'এই, গাড়ি থামালে কেন?'
তুষি বলল, 'কী হয়েছে?'
'তুষি, কেউ আমাদের ধাওয়া করছে। দাঁড়ালে বিপদ হতে পারে।'
'কে ধাওয়া করছে?'
'সম্ভবত পুলিশ। ডাকাতও হতে পারে।'
'কেন করছে?'
'পুলিশের পোশাক পরে কেউ আমাদের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল। আমরা ডাকাত ভেবে চলে এসেছি। এরপর তারা আমাদের পিছু নিয়েছে।'
'অসুবিধে নেই, ওরা পুলিশ। ডাকাতরা এতক্ষণ ধাওয়া করে না।'
'তুষি, তুমি কি নিশ্চিত, ওরা পুলিশ! যদি ডাকাত হয়!'
'ডাকাত হলেও অসুবিধে নেই।'
'মানে?'
'আমাদের বড়জোর গুলি করবে, অসুবিধে নেই; আমাদের কাছে রক্ত ছাড়া তো আর কিছু নেই।'
পেছনের গাড়িটা আমাদের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। আমরা থেমেছি দেখে ওরাও থেমেছে।
'তুষি, ওরা দূরে থেমেছে কেন?'
'ওরা মনে করেছে, আমরা সন্ত্রাসী। আমাদের হাতে অস্ত্র আছে। আমরা তাদের মোকাবেলা করব।'
'ওরা যদি আমাদের গুলি করে?'
'করবে না।'
ওরা গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক ছড়িয়ে পড়ছে। সম্ভবত চারিদিক থেকে ওরা কমান্ডো স্টাইলে আমাদের ঘেরাও করবে। করুক, আমি এখন শঙ্কাহীন। তুষির বুদ্ধি মতো চললে আশা করি বিপদ হবে না।
তুষি বলল, 'চল, আমরা গাড়িটার দিকে এগিয়ে যাই।'
আমি বললাম, 'চল।'
ফুফুর লাশটা একা রেখে যাওয়াটা আমার ভাল মনে হচ্ছে না। ড্রাইভার লাশ নিয়ে নিজের সিটে বসে আছে। আমি আর তুষি এগিয়ে গেলাম।
গভীর রাত। মেঘের গর্জন হচ্ছে। মেঘের ফাঁকে চাঁদটাও দেখা যাচ্ছে। আমাদের উত্তর দিকে সবুজ ধানক্ষেত। দক্ষিণে পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে। দু'এক ফোঁটা বৃষ্টি হলে আরও ভাল হত। তবু প্রকৃতিটা চমৎকার।
এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে আমাদের ঘটনার কোনও মিল নেই। আমার মনটা ক্ষতবিক্ষত। পাশে লুণ্ঠিত দেহধারী একজন নারী। আমরা এখন লাশের সঙ্গী। আমাদের মধ্য থেকে জীবিত একজন এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ড্রাইভারের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ভাল নেই। সব মিলিয়ে প্রকৃতি আর আমাদের মাঝে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করছে।
'তুষি, ঝিঁঝিঁ পোকার গান শোন, মন ভাল হবে।'
'তুমি কি জান, আমরা এখন কোথায়?'
'কোথায় আমরা?'
তুষি নিশ্চুপ। তুষি আমাকে বলত, 'তুমি এমনিতে বকবক কর, আসলে তুমি একটা ভীতু।' সেই কথার কড়ায় গণ্ডায় হিসাব আমি পাচ্ছি। আজ তুষিকে আমার বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, 'তুষি, তুমি ঠিক বলতে, আমি আসলে একটা ভীতু।' কিন্তু এখন সেই কথা বললে তুষির মনে ভয় ঢুকতে পারে। আমি তুষিকে সাহস দেখাচ্ছি।
'তুষি, মানুষের জীবনে এ-রকম কত বিপদ আসে; এগুলো সাহস দিয়ে জয় করতে হয়।'
তুষি উত্তর করছে না। আমার মনে পড়েছে, তুষি নীতিবাক্য পছন্দ করে না। তার মতে, যারা নীতিকে মানে না, তারাই নীতিবাক্য বেশি বলে। তুষির কথা সত্য, আমি নীতিবাক্য বেশি বলি কিন্তু মেনে চলি কম।
'তুষি, ফুফুর লাশটা গাড়ির নিচে নামিয়ে রাখলে ভাল হত। পুলিশরা বুঝতে পারত, আমরা সন্ত্রাসী নই।'
'ধ্যাৎ!'
'বুঝলাম না তুষি।'
'চুপ থাক তুমি।'
'আমি কিছু বুঝতে পারছি না।'
'দেখ, এম্বুলেন্স দেখেই তো বোঝা যায়, এটা লাশ কিংবা রোগির গাড়ি। কিন্তু, সন্ত্রাসীরা পুলিশকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য এম্বুলেন্স ব্যবহার করে। এ-জন্যই ওরা আমাদের গাড়ি থামাতে চেয়েছিল। যখন গাড়ি থামাওনি, তখন ওরা ভেবে নিয়েছে, আমরা সন্ত্রাসী।'
'কিন্তু, লাশ দেখলে সেই ভুল ...'
'না, সেই ভুল কাটবে না। জিন্দা মানুষকেও তো লাশের মতো শুইয়ে দেওয়া যায়।'
তুষি ঠিক বলেছে। এখন আমি কিছু বলব না। তুষি যা-ই করতে বলে তা-ই করব।
পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শব্দ আসছে, 'দাঁড়াও, গাড়ির দিকে যাবে না।'
আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম।
শব্দ আসছে, 'তোমরা হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাক। হাত নামালে গুলি করব।'
আমরা দু'জন হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকলাম। তুষির গায়ে ওড়না নেই; দেখতে ভাল লাগছে না। পুলিশেও খারাপ লোক আছে। কেউ যদি তুষির গায়ে হাত দেয়!
জোছনার আলো আরও স্পষ্ট হয়েছে। দু'জনই নিজেদেরকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার জন্য অপেক্ষা করছি। তুষির চুলগুলোও এলোমেলো, মুখের সাজসজ্জা নষ্ট হয়ে গেছে। সবই এলেবেলে। এ-রকম গভীর রাতে এমন সাদামাটা তুষিকে আগে কখনও দেখিনি। সম্ভবত, বাসর-রাতের হালকা আলোয় এলোমেলো চুল আর অনাবৃত বুকের দুঃসাহসী তুষিকে এ-রকমই দেখাবে! আমি তুষির দিকে তাকিয়ে আছি।
ওরা আমাদের সামনে ও পেছনের দিক থেকে এগিয়ে আসছে। একজন বলছে, 'দু'জন আরও ফাঁক হয়ে দাঁড়াও।'
তুষি বলছে, 'আপনারা আমাদের 'আপনি' করে বলতে পারেন।'
আমি বললাম, 'তুষি, ওরা আমাদের 'তুমি' করে বললে অসুবিধা কী!'
'তুমি চুপ থাক।'
আমি সম্ভবত আবার ভুল করেছি। আমি আর কিচ্ছু বলব না।
ওদের একজন আমাদের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তার গায়ে পুলিশের পোষাক। আমি তার নেম প্লেট দেখার চেষ্টা করছি। তুষি একবার বলেছিল, 'কোনও পুলিশ যদি তোমার সঙ্গে অন্যায় করে তার নেম প্লেটটা দেখে নেবে।'
তুষি বলল, 'আমাদের সার্চ করার আগে আপনার আইডি কার্ড দেখান।'
আমার কাছে আশ্চর্য মনে হচ্ছে, এই মেয়েটার কি ভয়-টয় নেই! যাদের ভয়ে আমার পেশাব পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে, সে তাদেরকে কার্ড দেখাতে বলছে! এখন যদি বন্দুকের বাট দিয়ে পায়ে একটা আঘাত করে, কী হবে!
আমি দেখছি, লোকটা পকেট থেকে তার আইডি কার্ডটা তুষিকে দেখাচ্ছে। আমরা হাত উঁচু করে আছি। তুষি বলল, 'সার্চ করুন।'
চারদিক থেকে ওরা দশ-বার জন এসেছে। আমার দেহ তল্লাশি করার পর একজন জিজ্ঞেস করছে, 'এই মহিলা আপনার কী হন?'
'আমার স্ত্রী।'
এটা আমি নির্ভয়ে বলেছি। আমি ও তুষি একবার বিপদে পড়েছিলাম। বান্দরবানে বনভোজনে গিয়ে আমাদের গাড়ি খারাপ হয়েছিল। ওখানে রাত কাটাতে হয়েছিল। আমরা দু'জন হোটেলের এক রুমেই থাকব। তুষি আমাকে আগেভাগেই বলেছিল, 'ম্যানেজার আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে চাইবে; বলবে, আমরা স্বামী-স্ত্রী।'
পুলিশের এক লোক বলল, 'আমরা যেভাবে বলি, সেভাবে আপনি মহিলার দেহ তল্লাশি করুন।'
বিপদে পড়ে তুষি আমার কাঁধে মাথা রেখে স্রেফ একবার শুয়েছে; এটাই আমাদের সর্বোচ্চ শারীরিক ঘনিষ্ঠতা। আমি তার শরীরের সব জায়গায় হাত দেব কিভাবে!
আমি ইতস্তত করে বলেছি, 'সে নিজে নিজে তল্লাশি করতে পারবে না!'
তুষি আমাকে বলল, 'দিদার, তাঁরা যা বলেন, তাই কর।'

এরপর View this link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৫:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৯



গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আর্তনাদ

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১৬ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২১

গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:০০

ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল্যাইকা লেন্সে ওঠানো ক’টি ছবি

লিখেছেন অর্ক, ১৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৩০




ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একটা আবেদন আছে।




এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×