somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামালপুর জিলা স্কুলের সম্পত্তি ভূমিদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা করতে মামলার আসামী শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দ।

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হযরত শাহ জামাল (রঃ) এর পুণ্য সৃতি বিজরিত জামালপুর জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মাধমিক বিদ্যালয়ের অন্যতম বিদ্যাপীঠ জামালপুর জিলা স্কুল। আমাদের এই বিদ্যালয় জেলার শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে এবং বিদ্যালয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অগণিত যোগ্য ও বরেণ্য ব্যক্তিত্বের সূতিকাগার।

আমাদের জিলা স্কুলের বর্তমান ছাত্র সংখ্যা ১৬০০ (প্রায়) এবং যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী দ্বারা দুটি সিফটে বিভক্ত করে শিক্ষকগণ বিদ্যাদান করে আসছেন। সুনাম, ভালো ফলাফল এবং সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য অধিকাংশ ছাত্ররা শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহী। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাস্থানের শীর্ষ ছাত্ররাই শুধুমাত্র এই বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তারপরও বিদ্যালয়টির অবকাঠামো তেমন বড় না হওয়ায় এবং অধিক জনসংখ্যার ফলে অনেকেই মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও এখানে বিদ্যা অর্জন করতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে না।

দুঃখের বিষয় হল, দেশের নামকরা একটি বিদ্যাপীঠ হয়েও আমাদের বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নেই পর্যাপ্ত জায়গা। তাছাড়া বিদ্যালয়টি একেবারে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত এবং সামনে জেলার প্রধান সড়ক। ইতিমধ্যেই বিদ্যালয়ের বেশকিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সুষ্ঠু বিদ্যাদানের জন্য চাই পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ কিন্তু বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ভবন সম্প্রসারণ কোন কালেই সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ের নেই কোন নিজস্ব অডিটোরিয়াম। ছাত্রদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার প্রয়োজন। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ দূরবর্তী অবস্থানে অবস্থিত হওয়ায় অধিকাংশ ছাত্রই তাদের প্রাকিতিক ও শারীরিক চাহিদা, খেলাধুলা হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে পৌর ভবন, এর মাঝে কিছু পুরাতন ঘরবাড়ি পড়ে আছে। অন্যদিকে পশ্চিম দিকে আছে খোলা একটি মাঠ যা সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত। এই মাঠে আমরা খেলাধুলা করে আসছি। এমনকি আমাদের বড় ভাইয়েরা, বাবা, দাদারা যারা বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন স্কুলের ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা এই মাঠেই খেলাধুলা করে বড় হয়েছেন।

উক্ত মাঠের জমির পরিমান ৬৬ শতক। যার পূর্ব দিকে জিলা স্কুল, পশ্চিমে সরকারী বাসভবন, উত্তরে ব্রহ্মপুত্র নদ, দক্ষিনে জিলার প্রধান সড়ক। ২০০৩ সালে জিলা স্কুলের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ভুমি মন্ত্রণালয় বিদ্যালয়ের অনুকূলে উক্ত জমি খানা দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদান করেন। তৎকালীন সময়ে জমির মূল্য ধার্য্য করা হয়েছিল ৮,০৯,০৮০.৫০ টাকা। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ভূমি অফিস হতে উক্ত মূল্য পরিশোধ করে দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বিগত ১০ বছর যাবৎ প্রধান শিক্ষকগণ মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বরাবরে উক্ত টাকার আবেদন করে ব্যর্থ হন।

বর্তমান প্রধান শিক্ষক ২০১২ সালে উক্ত জমির প্রতীকী মূল্য বরাদ্দের জন্য ভূমি মন্ত্রনালয়ের নিকট আবেদন করেন। ভূমি মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর অনুমতিক্রমে ১০০১ টাকা প্রতীকী সেলামী ধার্য্য করে উক্ত মূল্য পরিশোধান্তে জমিটির দলিল প্রদান করার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়কে নির্দেশ প্রদান করেন। উক্ত নির্দেশের আলোকে বিধিমোতাবেক সমস্ত কার্যাদি সম্পাদন পূর্বক মহামান্য রাষ্ট্রপতির পক্ষে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এবং বিদ্যালয়ের পক্ষে প্রধান শিক্ষক ০৬।০২।২০১৩ ইং তারিখে দলিলে সাক্ষর করেন।
এই আনন্দ সংবাদে আমরা জিলা স্কুলের ১৯৬১ ব্যাচ থেকে শুরু করে ২০১৩ ব্যাচের ৫ শতাধিক (প্রায়) ছাত্র কিছু সম্মানিত অভিবাবক ও সকল শিক্ষক মিলে ১১।০২।২০১৩ ইং তারিখে বাঁশের বেড়া নির্মাণ করি। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় ঐদিন বিকাল বেলা থানায় বিজ্ঞ জজ আদালতের পক্ষে নাজির একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। যাতে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিবাবকগণকে কতিপয় সন্ত্রাসী,গুন্ডা, মাস্তান বলে আখ্যায়িত করা হয়। আরও পরিতাপের বিষয় ১৪।০২।২০১৩ ইং তারিখে গণ জাগরণ মঞ্চ হতে বিদ্যালয়ে মোমবাতি প্রজ্বলন করতে গিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় দেখি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের হাতে মামলার নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। উক্ত মামলায় প্রধান শিক্ষক সহ প্রায় সকল শিক্ষকদের ব্যাক্তি নামে বিবাদী করা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা আরও জানতে পারি ১৭।০২।২০১৩ ইং তারিখে কোর্ট অবমাননার দায়ে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে শিক্ষকদের ব্যাক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের কোমলমতি কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের পাশের জমিতে তাদের চিরচায়িত স্বভাবের বশে খেলতে গেলে কতিপয় জেলা জজ আদালতের কতিপয় কর্মচারী তাদের প্রান নাশের হুমকি দেয়। এমনকি এখন পর্যন্ত আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত তারা নানা ধরনের ভয় ভীতি প্রদর্শন, জখম, গুমের হুমকি দিয়ে আসছে। জামালপুর জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপত্তাহীন। তাদের অভিবাবগণ উদ্বিগ্ন এবং বিষন্নচিত্তে সময় অতিবাহিত করছেন।

দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্যই শিক্ষা। আর এই শিক্ষা প্রদান করা হয় বিদ্যালয় নামক স্থানে। যারা শিক্ষার আলোয় আমাদের জীবন আলকিত করান তারাই শিক্ষক। আর শিক্ষার্থীরা প্রকৃত মনুষ্যত্ববোধ, নীতিবোধ ও মূল্যবোধে দিক্ষিত হয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিদ্যালয়ে কি সুষ্ঠু বিদ্যাদান সম্ভব? এরুপ পবিত্র স্থানে মানুষ গড়ার কারিগরের উপর মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামালা
এবং যারা দেশের যোগ্য নেতৃত্ব দিবে, তাদের হত্যা, জখম, গুমের হুমকি হয়ে থাকে তবে পৃথিবীর বুকে তৈরি হবে এক অন্ধাকারাচ্ছন্ন কলঙ্কজনক অধ্যায় এবং এই কালিমা কোনদিনই ঘুচবেনা।

এখন আমাদের প্রশ্ন হলঃ

*** গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এই জমি প্রদান করেছেন বিদ্যালয়ের নামে। এখানে কোন শিক্ষক অট্টালিকা তুলবেন না। তবে শিক্ষকদের ব্যাক্তিনামে এই মামলা দায়ের করা হল কেন?

***মামলায় উল্লেখ করা হয়, ১৭।০২।১৩ ইং তারিখে injunction violation করে জমিতে বেড়া দেওয়া হয় (যে বেড়া মূলত ১১।০২।১৩ ইং তারিখে দেওয়া হয়)। দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা এসএসসি সেদিন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা জানি সুষ্ঠু পরীক্ষা গ্রহন করেও খাতা শ্রেণীবিন্যাস করে ডাকযোগে প্রেরন করতে আরও বেশ সময় লাগে। তাহলে শিক্ষকগণ পরিক্ষা গ্রহন বর্জন করেই কি জমিতে বেড়া নির্মাণ করেছিলেন?

***যারা বিদ্যালয়ের বর্তমান কোমলমতি শিক্ষার্থী তারা আজ ভীত। প্রান নাশের আশঙ্কায় শঙ্কিত। তারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হতেও ভয় পাচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ। এখানে এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দোষ কোথায়, যাদের প্রান আজ হুমকির মুখে?

***এর জন্য কে দায়ী?



এমন ঘৃণ্য, কালিমাযুক্ত কর্মকাণ্ডের জন্য জিলা স্কুলের ১৯৬১ হতে ২০১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহার, বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা এবং স্বাভাবিক ও সুন্দর পরিবেশ ফিরেয়ে আনার জন্য ২০।০৩।২০১৩ ইং তারিখ হতে বিক্ষোভ সমাবেশ চলতে থাকবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আমাদের এই আন্দোলন মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের আন্দোলন। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন।

উক্ত আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগন, জামালপুর জিলা স্কুলের সকল ব্যাচের ছাত্রের অংশগ্রহন একান্ত কাম্য।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×