somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"হুমায়ুন আহমেদ -নামা": শেষ শ্রদ্ধা

২০ শে জুলাই, ২০১২ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

** বয়স হিসেবে বিশ বছর মোটেও তেমন আহামরি কিছু না। কিন্তু একজন মানুষের সাথে একযুগের পরিচয় মোটামুটি একটা বলার মতই ব্যাপার। ছোটবেলায় যখন ভাইয়ার হাত ধরে বা কোলে চড়ে বইমেলায় যেতাম, তখন মনে আছে আমার জন্যে জাফর ইকবালের "হাকারবিন" বা "টুকুনজিল" কোনমতে কিনে দেওয়ার পরেই ভাইয়া ছুট লাগাতো হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের স্টলের দিকে। তারপর কিসব "দেবি-রুমালি" টাইপ বই কিনত। ঐ যে কিনতে দেখা পর্যন্তই। বাসায় আনার পরে আর ঐগুলার কোন কুল-কিনারাও পাওয়া যেত না। মাঝে মাঝে ভাইয়া থেকে আপুর হাতবদলের সময় আবার দুএকনজর দেখার সম্ভাবনা ছিল।
** কারণ ওইগুলা নাকি "বড়দের বই"! এটা কোন কথা! গল্পের বই ইয গল্পের বই! এটার আবার বড় আর ছোট কি?! খুবই রাগ লাগতো! রাগ লাগার কারণও আছে।আমার জন্যে কেনা বইগুলি যে(কমপক্ষে ১০টা...) এক সপ্তাহের মধ্যেই "খেয়ে" শেষ! নজর তখন ভাইয়ারগুলার দিকে।গল্পের বইয়ে আমি "addicted" সেই ছোটবেলা থেকেই।
** মনে পড়ে, সারা জীবনে যতো মার খেয়েছি, বাসার সবার কাছে, তার অর্ধেকের বেশিই পড়ার বইয়ের নিচে অথবা নিরুপদ্রুবে টয়লেটে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্পের বই পড়ার জন্যে।
** যাই হোক, হুমায়ুন আহমেদ নামের লোকটার প্রথম যেই বইটা "পুরোপুরি" পড়েছিলাম, তার নাম "ইস্টিশন"......২০০০ সালের দিকে।আর এইতো সেদিন পড়লাম "মাঝে মাঝে তব দেখা পাই"। ইস্টিশনের কাহিনী আমার অতটা মনে নেই। কিন্তু নয় বছরের বালক হিসেবে মনে হয় সেদিন সেটা ভালই দাগ কেটেছিল......নাহলে এই দুইটা বইয়ের মাঝে স্যারের আরও প্রায় ১৫০ বই কিভাবে পড়লাম??!

** "ক্যাডেট কলেজে পড়তে গিয়ে আমার কি কি লাভ হয়েছে " শীর্ষক রচনা লিখতে হলে আমি প্রথম পয়েন্টই দিবঃ "নিরুপদ্রুবে গল্পের বই পড়া।আম্মুর প্যানপ্যান -ঘ্যানঘ্যান নাই। আত্মীয়স্বজনদের চোখরাঙ্গানি নাই। আমি যে গোল্লায় যাচ্ছি-সেটাও সার্টিফাই করারও কেউ নেই। গল্পের বই পড়ার জন্যে এরচেয়ে "ফেভারেবল এনভায়রনমেন্ট " আর কি হতে পারে!! কিসের পরের দিন বোর্ড এক্সাম আর কিসের কি?



** হুমায়ুন আহমেদের পাঠক হিসেবে আমি কখনই আদর্শ ছিলাম না। আমার কলেজ লাইফে গল্পের বই পড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বন্ধু, কম্পিটিটর ছিল শফিক। সে যখন হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ে সারাদিন নিজেকে "শুভ্র" বা "হিমু" ভাবত তখন আমার কাছে হাস্যকর লাগতো।
** কারণ আমার মতে "ধুর! হুমায়ুন আহমেদের বই! ফুঃ......এগুলা আবার কে পড়ে! এগুলা হইল ঝালমুড়ি। খাইতে মজা, কিন্তু কোন কামে লাগে না। আজাইরা বই পড়ার টাইম নাই। ডি এইচ লরেন্সের বই পড়। পুরাই সেরকম!"



** কিন্তু আজকে খেয়াল করে দেখলাম যে, হুমায়ুন আহমেদের নতুন বইয়ের সন্ধান পেয়েছি কিন্তু পড়ি নাই-এমনটিও হয়নাই। আবার পড়েছি কিন্তু সমালোচনায় মেতে উঠি নাই- এমনটিও তো হয়নাই!! এইচএসসির সহপাঠ-"রক্তাক্ত প্রান্তর"-এ একটা ডায়লগ ছিল -"অন্তরে অমৃত থাকলেই কেবল এমন গরল উগরে দেয়া যায়। আসলেই তাই মনে হয়.........আহারে বেচারা!



** বৃহস্পতিবার রাতটা কেমন যেন...... হঠাৎ করে খবর আসলো উনি মারা গেছেন। আর মুহূর্তের মধ্যে সারাদেশ যেন জেগে উঠল। একজন মানুষের জন্যে এটা কি কম পাওয়া! সারাজীবন উনার লেখার সমালোচনাই করেছি যেই আমি, সেই আমিই আজ নোট লিখছি!!!

** পরিশেষে, একটা বড় ভাইয়ের কথার উদ্ধৃতি দিয়ে হুমায়ুন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং উনার রূহের মাগফিরাত কামনা করে শেষ করছি...... আল্লাহ উনাকে সাহায্য করুন......

" মিসির আলির অমিমাংসিত রহস্য আর শেষ হলো না, রহস্যটা নিয়ে মাথা ঘামাবার আগেই মুষড়ে বসে পড়লেন। হুমায়ুন আহমেদ একটু আগে মারা গেছেন। জন্ম মৃত্যুর রহস্য নিয়ে মিসির আলি কখনই খুব একটা ভাবেন নি। যেটা আমোঘ সেটা হবেই। আজ প্রথম বার তার মনে হচ্ছে তার অস্তিত্তের সুতোয় টান পড়েছে। পা ভাঙ্গা কুকুরটাকে পাউরুটি খাওয়াতে খাওয়াতে হিমুর চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো। তার পিতার কঠিন উপদেশ ছিল, মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হইয়ো না! অতি বিচিত্র কারনে সে আজ হুমায়ুন আহমেদ নামক ব্যক্তিটির প্রতি কঠিন মায়া অনুভব করছে। রূপার জন্যেও সে কখনো এতো কঠিন মায়ার টান অনুভব করেনি।জানলা খুলে রুপা আজ জোছনা দেখছে।কেন যেন মনে হচ্ছে আজই তার শেষ জোছনা দেখা। চশমা খুললে শুভ্র কিছুই দেখতে পায়না। আজকে চশমা খোলার পর শুভ্রের মনে হলো, আজ যেনো তার মত অন্য কেউও কিছু দেখতে না পায়। সে আজ কাঁদবে। মাথার উপরের উথাল পাথাল করা জোছনায় সে আজ একলা একলা জরির হাত ধরে কাঁদবে।মিসির আলি, হিমু, রুপা, শুভ্র, জরি, মৃন্ময়ী, মাজেদা খালা, ধানমণ্ডি থানার ওসি, আগামাসি লেনের পা ভাঙ্গা কুকুরটা আজকে ওরা সবাই জোছনায় ভিজবে। আজ তাদের শেষ জোছনা দর্শন। আজকের পর তাদের আর কেউ খুজে পাবে না। আজকের পর 'কোথাও কেউ নেই!''

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×