এভাবেই পরিচয় ওর সাথে । এভাবেই ওকে চেনা আমার । পাশের বাড়ির বাসিন্দা না হয়েও আমাদের একজন হয়ে ওঠে খুবই অল্প সময়ে । আমার বাড়ির সব রুম ছাড়িয়ে যখন ও আমার সমস্ত কিছুর অংশীদার । তখন আমার বয়স আর কত ...।
ওকে আমি রুপি নামে ডাকতাম । সবার কাছ থেকে আড়াল করার চেস্টা । প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্পো শুনে শুনে আমার ও খুব ইচ্ছে হতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই । তারপর দুজন একসাথে ...। ক্লাস ...বাস থেকে শুরু করে সবখানে । এমন স্বপ্ন আমি দেখতাম ।
এলোমেলো ভাবতে ভাবতে টেলিফোনের শব্দ আমাকে ফিরিয়ে আনে আমার পৃথিবীতে । কর্ডলেস হাতে নিয়ে সোজা ব্যালখনি তে । প্রিয় ব্যালখনি । হাত বাড়ালেই যেন আলোর ছোঁয়া ।
: হ্যালো । গলা শুনেই আমি আনন্দিত ।
: হু , কি খবর ?
: তুই তো ভালোই শুদ্ধ ভাষা বলিস রে । ভালো ভালো ।
: আমি সবই পারি । তোমার মতো না । সেই দুই বছর ধরে শিখছো ...। এখনো পারো না । ভালা আচো?
: জি ,অয় ।
: কাল যাবো শ্যামলি । যাবা নাকি ?
: কে কে যাচ্ছে ?
; সবাই ,ইউ নি র সব বন্ধুরা ।
: আমি ওখানে কি করবো । তোমাদের ভীড়ে আমাকে মানাবে না । তাছাড়া বাইরে থেকে আমি গেলে সবাই ভাববে কি ? হুঁ
: কেন তোমাকে আমার সব বন্ধু রা চেনে না ।
: আমার পরিক্ষা সামনে । যেতে চাই না । শ্রীমঙ্গল খুব সুন্দর । ঘুরে আসো ।
: শুনেছি ওখানে এশিয়ার একমাত্র ক্লোরোফম গাছ । হুম । মজা হবে ।
: খুব সুন্দর । ভালো লাগবে তোমার ।
ওকে না করলে ও মনে মনে আমার যাওয়ার প্রস্তুতি । খুব ভোরে উঠতে হবে । জামাকাপড় আয়রন করে নিতে নিতে মাকে রাজি করালাম । সাথে যাবে । দেখে নিশ্চয় ও খুব খুশি হবে ।
জয়ন্তিকা ছাড়ে সাড়ে সাতটায় । সাতটার উপর বাজে । ওর আসার কোন খবর নেই । ওর বন্ধুরা খুব খুশি । যতটা না আমাকে দেখে ,তারচে খুশি আমার মা সাথে যাচ্ছে দেখে । কে যেন একজন নিয়ে এসেছে ক্যাসেট প্লেয়ার । মেয়েরা খুব সাজগোজ করে এসেছে । যেন বিয়ে বাড়ির যাত্রি ।
দেখেছো বান্দর টা আসে নি এখনো । আর মাত্র দশমিনিট আছে । বললো আইরিন আপু ।
ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেলাম । সবাই ট্রেনে । মোট পনের জন । ছেলেরা গান গাইছে । নিজের উপর খুব রাগ হচ্ছে আমার । নিশ্চয় ঘুম থেকে উঠতে পারে নি ও । কি হতো ভোরে উঠে একটা ফোন করলে । মা ওদের সাথে চুটিয়ে গল্পো করছে । আর মাত্র দু তিন মিনিট আছে । আমার কান্নাও পাচ্ছে খুব ।
সিট ছেড়ে উঠে দরজায় দাঁড়ালাম । দুলতে দুলতে ট্রেন ও শুরু করেছে চলা । ভোরের বাতাস এসে আমার চোখে মুখে লাগছে । প্লাটফর্ম ছেড়ে চলছে ট্রেন ।
হঠাৎ চোখ পড়লো ওর দিকে । হ্যাঁ, রুপি ই তো । দৌড়াচ্ছে ট্রেনের পিছু পিছু । মাথায় ক্যাপ পেছন করে পরা । আকাশী কালার টি সার্ট ।আমার চোখে জগতের সব খুশি । সব কান্না চোখ থেকে উদাও নিমিশেই ।মনে মনে বলি শেষ পর্যন্ত ট্রেন তুমি ধরলে । সবাই গান ধরেছে। সুরের ছোঁয়া আমার ভেতরে জানান দেয় , আজ খুব মজা হবে ।
তুমি আমার সারা বেলা
(ডাইরি থেকে )
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৮ রাত ২:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





