অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম কোথাও বেড়াতে যাব। কিন্তু যাওয়া আর হচ্ছিল না নানা ব্যস্ততার কারণে। এর মধ্যে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়া দুই বন্ধু বেড়াতে এল। ঠিক করলাম সবাই মিলে একসাথে কক্সবাজার যাব। আমি, আমার বউ, সাঈদ, লিসা, ওয়ালী আর মুনা। আমরা তিন জন এর আগেও বেশ কয়েকবার একসাথে ঘুরতে গিয়েছি, কিন্তু তিন জুটি মিলে এবারই প্রথম। এর মধ্যে শেষের দুজনের অফিস থেকে ছুটি ম্যানেজ করার ঝামেলা না থাকলেও বাকি সবারই এটাই ছিল আসল সমস্যা। আমি আর সাঈদ একি অফিসে হওয়ায় ছুটি পাওয়া একটু কঠিন ছিল। কারণ আমাদের কাজের ধরনের কারণে ছুটির দিনেও মাঝে মধ্যে অফিসে ছুটতে হয় অল্প সময়ের নোটিসে। একারণে সাধারণত একসাথে দুইজনকে ছুটি দেয়া হয় না। তারপরেও বসকে অনেক বলে কয়ে ছুটি ম্যানেজ করলাম। অফ-সিজন হওয়া সহজে হোটেলও পেয়ে গেলাম ৫০% ডিসকাউন্টে (কাপল-বেড এসি ১০০০/-)। হোটেল সি প্যালেস - কলাতলী বিচ থেকে সামান্য দুরে। গ্রীনলাইন ভলভো বাসের টিকিট কাটা হল। ভাড়া ৯০০ টাকা। ওখানে গিয়ে কি করব না করব এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতেই বুধবার চলে এল। ঐদিন রাতেই বাস। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম এবং ব্যাগ গুছিয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। বাস ছাড়তে না ছাড়তেই ওয়ালী ফেসবুকে বেশ রোমান্টিক একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিল (going to cox bazar ... first time with her
রাতে অর্ধেক খেলা দেখে ফুরফুরে মেজাজে খেতে গেলাম প্রাসাদ প্যারাডাইস এর বারবিকিউ কর্ণারে। তবে মেজাজ বেশিক্ষণ ফুরফুরে ছিল না। ব্রাজিলের পরাজয় কি আর সহজে মেনে নেয়া যায়? সাথে বোনাস হিসেবে ছিল বন্ধুদের টিটকারী। ওরা আবার সবাই আর্জেন্টিনার সাপোর্টার ছিল। এর মধ্যেই খাবার চলে এল। চার রকমের কাবাবের সেট মেনু। প্রিয়দলের পরাজয়ের দুঃখ কিছুটা হলেও কাবাব দিয়ে ঢাকা পড়ল। পরের দিনটা কাটল বিচে দাপাদাপি আর হালকা শপিংয়ের মধ্য দিয়ে। সকালে বিচে গোসল করার সময় লিসার পা মচকাল। ওকে হোটেলে ফিরতে হল সাঈদের ঘাঁড়ে চড়ে। বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে X-Ray করার পর দেখা গেল আশঙ্কাজনক কিছু নয়।
আমরা কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা মনে করে একচোট হাসলাম। সেবার আমরা গিয়েছিলাম লাবনী বিচে। হঠাৎ সাঈদের পা গেল মচকে। পরামর্শের জন্য ওয়ালীর বাবাকে ফোন করা হল। উনি পরামর্শ দিলেন ব্যথা কমানোর জন্য একটি বিশেষ অষুধ লাগবে, যা কিনা সেবন করা যায় না, বিশেষ উপায়ে বিশেষ জায়গায় প্রয়োগ করতে হয়। আমার বউয়ের প্রশ্ন ছিল শেষ পর্যন্ত কে অষুধটি প্রয়োগ করেছিল। থাক না হয় সে প্রসঙ্গ।
যাওয়ার সময় হয়ে এল। রাত দশটায় বাস। ঠিক করলাম যাওয়ার আগে জম্পেশ খাওয়া দাওয়া করব। রুম সার্ভিসে ফোন করে চাইনিজ অর্ডার দিলাম। কিন্তু খাওয়ার মজা মাঠে মারা গেল আর্জেন্টিনার খেলা দেখে। সবাই আমাকে বলতে লাগল, "আমরা বুঝতে পারছি কালকে তোর কেমন লেগেছিল"। ডিনারটা স্পনসর করল ওয়ালী। খাওয়া শেষে চেক আউট করে বাসস্ট্যান্ডে আসলাম। বাগদাদ এক্সপ্রেসের মার্সিডিজ বেন্জ। কিন্তু বাস ছাড়ার পর ঝাকুনির চোটে সবার অবস্থা খারাপ। আর ড্রাইভারও খুব রাফ চালাচ্ছিল। আর থাকতে না পেরে বিরতির সময় বাস চেন্জ করল সাঈদ আর লিসা। বাকিটা সময় আমরা মোটামুটি দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে আসলাম। এসেই আবার দৌড়াও অফিসে। আর অফিসে এসে যথারিতি ঘুম। সাঈদেরও দেখি একই অবস্থা। তবে এবার আর বসের কাছে ধরা পড়িনি।
স্টুডেন্ট লাইফে মাত্র কয়েক ঘন্টার প্লানে একবার কক্সবাজার গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন বেড়াতে যেতে চাইলে অনেক কষ্টে সময় ম্যানেজ করতে হয়। তাও হয়ত সবাইকে একসাথে পাওয়া যায় না। আর কখনো এভাবে একসাথে যাওয়া হবে কিনা তা জানি না, তবে এরকম একটা টুরের কথা আমার আজীবন মনে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




