somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমোপখ্যানের সংক্ষিপ্ত কাহিনী-পিগম্যালিয়ন এবং গ্যালাতিয়া

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাইপ্রাসের এক স্বর্গীয় আশির্বাদপুষ্ট তরুন ভাস্কর পিগম্যালিয়ন ছিলেন চরম নারী-বিদ্বেষী। তিনি কখনো বিয়ে না করার স্থির সংকল্প করেছিলেন। তিনি নিজেকে বোঝালেন,তার জন্য তার শিল্পকলাই যথেষ্ট অথচতিনি যে মূর্তি নির্মান করলেন এবং যা নির্মানে প্রয়োগ করলেন তার সবটুকু প্রতিভা তা ছিলো এক নারী-মূর্তি। এতদিন যা তিনি মন থেকে এমনকি জীবন থেকেও এত সহজে প্রত্যাখ্যান করেছেন তাকে পুরোপুরি বাতিল করতে পারলেন না, অথবা তিনি এক আদর্শ নারীর রূপ সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছিলেন এবং মানুষকে দেখাতে চাইলেন, যে নারীকে আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই তার মাঝে কি কি গুনাবলীর অভাব আছে।



তিমি গভীর অনুরাগে মূর্তিটি নিয়ে কাজ করলেন দীর্ঘদিন ধরে এবং সৃষ্টি করলেন শিল্পকলার এক সুন্দরতম নিদর্শন। তিনি এটি নিয়ে মেতে থাকলেন এবং প্রতিদিন তার আঙুলের শিল্পিত স্পর্শে তা আরো সুন্দর হয়ে উঠতে লাগলো। মর্তলোকে এমন কোনো নারী নেই বা কখনো সৃষ্টি হয়নি এমন কোনো নারী মূর্তি যার সৌন্দর্য এর সাথে তুলনীয় হতে পারে। যখন এর শ্রেষ্ঠত্ব পৌছে গেলো সর্বোচ্চ পর্যায়ে তখন এর স্রষ্ঠার ভাগ্যে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা; তিনি প্রেমে পড়লেন ! তিনি গভীর আবেগময় ভাবে প্রেমে পড়লেন তার নিজেরই সৃষ্টিকর্মের ! এর ব্যাখ্যা সুলভ এটি বলা যায় যে মূর্তিটিকে কোনো মূর্তির মতই লাগছিলো না, কেউ চিন্তাও কিরতে পারবে না এটি আইভরি বা পাথরের তৈরি বরং এটিকে উষ্ণ রক্ত মাংসে তৈরি মানুষের মতই লাগছিলো যর শুধু মাত্র নেই শুধু চলনশক্তি। অন্যকে তাচ্ছিল্য প্রদশর্নকারী ঐ যুবকের ক্ষমতা ছিলো এতটাই বিষ্ময়কর !

কিন্তু এর পর থেকেই যে নারী জাতিকে তিনি অবজ্ঞা করেছিলেন তারা তার উপর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠলো। কোনো প্রাণশীল কুমারীর আশাহত প্রেমিক কখনোই পিগম্যালিয়নের মত অসুখী ছিলো না। তিনি চুম্বন ছড়িয়ে দিলেন তার ঠোঁট দুটিতে কিন্তু সেটি তাকে চুম্বন করতে পারলো না। তিনি অনুরাগের মৃদু স্পর্শ ছড়ালেন তার হাত এবং মুখমন্ডলে- কিন্তু তাদের সাড়া মিললো না তিনি সেটিকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলেন , সে থেকে গেলো শীতল ও নির্বিকার। কিছুক্ষনের জন্য পিগম্যালিয়ন ভান করতে চেষ্টা করলেন যে সেটি জীবিত যেমনটি করে শিশুরা তাদের খেলনার সাথে। তিনি একে পরাতেন মূল্যবান পরিচ্ছদ সামগ্রী। তিনি এমন সব উপহার সামগ্রী নিয়ে আসতেন যেগুলো পছন্দ করে রক্তমাংসের কুমারীরা। যেমন ছোটো কোনো পাখি বা চমৎকার কোনো ফুল আর স্বপ্ন দেখতেন সে তাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে তার এই প্রবল ভালোবাসার জন্য। তিনি রাতে সেটিকে শুইয়ে দিতেন তার শয্যায় এবং তার জন্য সকল আরাম উষ্ণতার ব্যবস্থা করতেন, যেমনটি ছোটো মেয়েরা করে থাকে তাদের পুতুলের জন্য। কিন্তু তিনি তো কোনো শিশু ছিলেন না তাই তিনি এ অভিনয় বেশিদিন চালিয়ে যেতে পারলেন না। অতঃপর তিনি হাল ছেড়ে দিলেন।



এই অনন্য আবেগময় একতরফা প্রেমটি দীর্ঘদিন প্রেমের দেবীর অগচরে থাকলো না। পিগম্যালিয়ন ছিলেন এক নতুন রকমের প্রেমিক এবং আফ্রোদিতি দৃঢ প্রতিজ্ঞ ছিলেন তাকে সাহায্য করতে।

আফ্রোদিতির ভোজন উৎসবটি ছিলো সাইপ্রাসে বিশেষভাবে সম্মানিত। এই বিশেষ উৎসবে পিগম্যালিয়নও ছিলেন। তিনি দেবীকে এটি জিজ্ঞাসা করার দুঃসাহস দেখানেলন যে তিনি তার মুর্তিটির মত কোনো কুমারীকে খুজে পাবেন কিনা, কিন্তু প্রেমের দেবী জানতেন তিনি প্রকৃতপক্ষে কি চাচ্ছিলেন এবং ততমধ্যে তার প্রার্থনা মন্জুর করেছিলেন। পিগম্যালিয়ন ফিরে গেলেন তার গৃহে এবং খুজে পেলেন তার নিজের সৃষ্টিকে যাকে তিনি দিয়েছেন তার হৃদয়। সে দাড়িয়ে ছিলো তার ভিত্তির উপরে যেন এক অপুরপ সুন্দরী। তিনি তাকে ভালোবাসার কোমোল স্পর্শ দিলেন ঠোটে একে দিলেন চুম্বন, স্পর্শ করলেন তার বাহু,কাধ এবং সাথে সাথেই বিলীন হয়ে গেলো সব কঠিনতা। তিনি কৃতজ্ঞ অনুভব করলেম প্রেমের দেবীর প্রতি এবং আনন্দভরে তার প্রেমাস্পদকে জড়িয়ে ধরলেন যার নাম তিনি রেখেছিলেন গ্যালাতিয়া।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:০৩
২১টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×