মেজো ভাই নতুন বাড়ী কিনেছেন সাতাশ লাখ টাকায়। নিজ থেকেই খবর দিলো কেয়া। আনন্দের সাথে সাথে গর্বেরও একটা ভাব ফুটে উঠলো ওর চেহারায়।
কোথায় ? প্রশ্ন করলাম আমি, জানার কোন আগ্রহ না থাকার পরও।
বারিধারায়। খুব সুন্দর, আমাকে ছবি পাঠিয়েছেন।
আমাদের ওখানকার কোন খবর পেয়েছো ?
না। চেষ্টা করেও লাইন পাইনি। কেয়াকে একটু গম্ভীর মনে হলো।
আমি নিজেও একটু গম্ভীর হয়ে গেলাম । অনেকদিন যাবৎ কোন যোগাযোগ নেই দেশের সাথে। এখানে আসার পর একবার অনেক কষ্টে নিজে ফোন করেছিলাম, আরেকবার কেয়া করেছিলো।
আরো কিছুন বসে থাকার পর বিদায় নিলো কেয়া। আমি অনেক চেষ্টা করলাম ঘুমোনোর জন্যে। কিন্তু হাজারো ভাবনা এসে আমার নিজের ভেতরের দরজাগুলো অসংখ্য বার খুললো ও সশব্দে বন্ধ করলো। কিন্তু তারপরেও ঘুমোলাম ও আবার খারাপ একটা সপ্ন দেখলাম।
্থভার্সিটিতে পড়ার সময়ই চার বন্ধুর পরিচয় আমাদের। বাইরের প্রকাশে অনেক কিছুতেই আমাদের মাঝে অমিল থাকলেও ভেতরে ছিলাম আমরা একই ধরণের। সুহাস আর অনিক ভালো লিখতো। আমি ও তুষার এতোটা ভালো লিখতাম না কিন্তু আমাদের গানের চর্চা ছিলো। আর অন্যদিকে রোমান্টিকতার দিক থেকে আমি ও অনিক ছিলাম অনেকটা একই ধরণের। বাকী দু্থজন সেজন্যে আমাদেরকে খোঁচাতে ও আমাদেরকে নিয়ে হাসাহাসি করতে ছাড়তো না। গানের ব্যাপারে অনেকের সাথেই বন্ধুত্ব হতো আমাদের। মেয়েদের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে মাঝে মাঝে একটু রোমান্টিকতার আভাসও থাকতো। কিন্তু তা কখনোই বড় কোন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রে সুন্দর করেছে আমাদের সময়গুলোকে। তারপর তো অকস্মাত কোন কিছু না বলেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো তুষার। আমরাও আমাদের কর্মজীবনের যুদ্বে ছিটকে পড়লাম বিভিন্ন দিকে। অনেকটা বছর কাটলো এখানে। আমি যেমন ছিলাম, ভেতরে ভেতরে তা ই রয়ে গেলাম ও আজ অবধি তার কোন পরিবর্তন ঘটে নি।
সকালের বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেক বাস একসাথে ছেড়ে যায় আলাদা আলাদা গন্তব্যে। মাঝের কোন এক ষ্টেশনে এসে কেয়ার দেখা পেয়েছিলাম। কিছুটা সময় আমাদের একই গন্তব্য থাকলেও আমাদের গতিরেখা সমান ছিল না। সেসাথে দুজনের মাঝে মিলে বদলে প্রতিযোগিতার পরিমাণই ছিল বেশী। কখনো পিছিয়ে পড়েছে কেয়া, কখনো আমি। এবার কোন এক গন্তব্যের কাছাকছি এসে পিছিয়ে পড়লাম আমি। আর কেয়ার গন্তব্য এখন আলাদা। তাতে আমার কোন দু:খ নেই। শুধু দু:খ আমার তুষারের জন্যে, এতো কথা বলার পরও কি এক ফাঁকির মাঝে আমাদেরকে রেখে বিদায় নিল সে। রাগও রয়েছে বেশ। কিন্তু আস্তে আস্তে সে রাগও কমে আসছে, অনেকটা পথ পেরিয়েছি বলেই হয়তো।
********
পাঠকের মতামত লেখকের জন্যে অনুপ্রেরণা....।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



