somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনূস প্রসঙ্গ: কিসের লজ্জা? কার লজ্জা? (২)

১১ ই মে, ২০১১ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোবেল বিজয়ী ডঃ ইউনূস প্রসঙ্গ: কিসের লজ্জা? কার লজ্জা? (১)
(Click This Link) এর পর থেকে ...

গত ৬ মে প্রথম আলোতে ফারুক ওয়াসিফ একটি প্রবন্ধ লিখেছেন, বিষয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১। শিরোনামটা চমৎকার: শুভংকরের ফাঁকিতে নারী ও রাজনীতি (Click This Link), তেমনি চমৎকার এর শুরুটাও। কিন্তু কিছুদূর পড়লেই শুরুর মুগ্ধতা দূর হয়ে যায়, হোঁচট খেতে হয়। নানা কথার ফাঁকে ফাঁকেই তার আসল কথা/দৃষ্টিভঙ্গী ধরা পড়ে। অবাক হয়ে পড়ি- "ইসলাম নারীদের সমানাধিকারের পক্ষে নয়—এমন মতবাদ কিসের ভিত্তিতে প্রচারিত হচ্ছে?" "বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে কোনো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন ইসলামে নেই, আল্লাহর দরবারে সবারই সমান অধিকার" !!! এ বিষয়ে আলাদা পোস্টে আলোচনা করার চেষ্টা করবো, আলোচ্য লেখাটাতে ফারুক ওয়াসিফের ঐ প্রবন্ধকে টেনে আনার কারণ প্রবন্ধটিতে উল্লেখ করা একটি লাইন: ‎"অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মাঠপর্যায়ে যতটা সক্রিয়, যতটা মুখর, মুফতি আমিনী চক্রের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ততটা নয় কেন?"

ফেসবুকে ফারুক ওয়াসিফকে মন্তব্য করি: "অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইউনুসরে আনা হইছে এবং পুরা স্টেটমেন্টটা ভুয়া ও ভুল"। জবাবে তিনি বলেন: "সরকারের বা সরকারি দলের রাজনৈতিক আচরণের বিশ্লেষণে এটা খুবই প্রাসংগিক। এটা বলায় ইউনূসের প্রতি কোনো সহানুভূতি যায় না, বরং নারী নীতি প্রশ্নে সরকারের অবস্থান যে ভাসা ভাসা প্রতারণাময়, তারা যে কার্যত নারীদের কিছু দিতে পারে না, তা বোঝাতে এই তুলনা খুবই দরকারি ছিল।"

এতেও পরিষ্কার হলো না। দুই বদমায়েশের কোনজনের বিরুদ্ধে সরকার কেমন ব্যবস্থা নিতেছে- এর তুলনামূলক আলোচনা কি কোন অর্থ বহন করে? ফারুক ওয়াসিফ সেটাই কি করতে চেয়েছেন? যদি তা নাহয়, তবে বক্তব্যটা কি এমন যে, ইউনুসের মতো নমস্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকার কত সক্রিয় আর আমিনীর ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় সেই তুলনা দেখানো? তাহলে আবার তিনি কেন বলছেন যে, "এটা বলায় ইউনূসের প্রতি কোনো সহানুভূতি যায় না"? ইউনুস ইস্যুতে প্রথম আলোর অবস্থান সকলেরই জানা, ফারুক ওয়াসিফও এ বিষয়ে বিস্তর লিখেছেন। "দেশীয়" প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার অন্তহীন টান এবং তার ষড়যন্ত্র থিউরির জুজুও অজানা নয়। ফলে, প্রথম আলো গ্রুপ এবং ফারুক ওয়াসিফেরা সুযোগ পেলেই যে ইউনুসের পশ্চাদ্দেশ রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালনে ঝাঁপিয়ে পড়বে- তা আর বলতে! আর সে কারণেই এমন অপ্রাসঙ্গিক, অসত্য ও ভুল বক্তব্য প্রদান: ‎"অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মাঠপর্যায়ে যতটা সক্রিয়, যতটা মুখর, মুফতি আমিনী চক্রের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ততটা নয় কেন?"

প্রকৃত প্রস্তাবে, ইউনুস আর মুফতি আমিনী - কোন চক্রের বিরুদ্ধেই সরকার মোটেও সক্রিয় নয়। সরকারের তর্জন-গর্জন সব উপর উপর ভাসা-ভাসা, লোক দেখানো। আমিনীর ক্ষেত্রে সরকার যেমন চিৎকার চেচামেচী করে শেষ পর্যন্ত আমিনীর বক্তব্যই পুনপ্রচার করে জানাচ্ছে- কোরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন এই নারী নীতিতে নাই- কস্মিনকালেও করা হবে না (ফারুক ওয়াসিফও আওয়ামিলীগ সরকারের কায়দায় তার এই লেখায় বিশাল ফিরিস্তি হাজির করে শেষে জানাচ্ছে "আল্লাহর দরবারে সবারই সমান অধিকার", পশ্চিমী নারীবাদের এদেশে কোন দরকার নাই ইত্যাদি- হুবহু আমিনীরো এমন কথা আছে কিন্তু), তেমনি ইউনুসের ক্ষেত্রে যখন ইউনুসের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে অভিযোগগুলো সমানে আসছে, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ এর মরণ ফাঁদ নিয়ে জনমানসে প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে- সেই মুহুর্তে হুটহাট সরকার ইউনুসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে অপসারণ করলো। একটা তদন্ত কমিটি করতে বাধ্য হয়েছিল- কিন্তু তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বের হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে অপসারণ নাটক তৈরি করা হলো এমনভাবে যেন সমস্ত ইউনুসের অনিয়ম-দুর্নীতি চাপা পড়ে যায়। যে অনিয়মের মাধ্যমে ইউনুস এতদিন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদটি দখল করে ছিলেন- সেটার প্রতিবিধান কেবল সেই পদ থেকে অপসারণের মাধ্যমে কেমন করে হয়? এই যে অনিয়ম- এক যুগকাল অবৈধভাবে পদদখল করে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করার মাধ্যমে যে দুর্নীতি তার কি শাস্তির ব্যবস্থা জরুরী ছিল না? অপসারণ নাটক সাজিয়ে আসলে এসবকেই আড়াল করা হয়েছে। আসলে, প্রফেসর ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংকের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে চায় না- সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার এই সরকারগুলো। যতটুকু করে- তা লোকদেখানো কিছু হম্বিতম্বি ও নাটক। একইভাবে আমাদের মৌলবাদী সরকারগুলো মুসলিম ভোট ব্যাংকের উপর খুব নির্ভরশীল, ভোটের বাণিজ্যে ধর্ম তাদের কাছে অনেক বড় পণ্য- সুতরাং মুফতি আমিনীর বিরুদ্ধেও কিছু ঘোৎ ঘোৎ করা ছাড়া আর কিছু করার মুরোদ এরা রাখে না।

এই সিরিজের প্রথম পর্বের জবাবে ব্লগার মুক্ত মণ একটা পোস্ট দিয়েছেন (Click This Link)। যথারীতি আর দশটা ইউনুসের অন্ধভক্তদের মত তিনিও শুরু করেছেন- ইউনুসের নোবেল বিজয়ে বাংলাদেশ কতবড় অর্জন করলো তা দিয়ে, এবং গর্বে ভক্তিতে গদগদ হয়ে তিনি যুক্তি পর্বে এসে প্রশ্ন করছেন: "এবার আসুন দুর্নিতীর বিষয়ে।..... সেই সরকারের হাতে (আপনার কথা অনুযায়ী এবং বিডিনিউজ২৪ এর ভাষ্য অনুযায়ী) নিরেট প্রমান থাকা সত্বেও আবুল মাল আব্দুল মুহিত (এবং নরওয়েজিয়ান সেই রিপোর্টার) বললো যে তারা দুর্নীতির কোন প্রমান পায়নি!" তারপরে তিনি শুরু করলেন- রাজনীতিবিদেরা কেমন দুর্নীতিবাজ সে আলোচনায়! (এ যেন গোবরের তুলনায় শেয়ালের বিষ্ঠা কম দুর্গন্ধময়- এমন যুক্তির প্রচেষ্টা!!)

এই যে আবুল মাল আব্দুল মুহিতরা দুর্নীতির কোন প্রমাণ পাননি বলছেন কিংবা আর সবাই দুর্নীতির প্রসঙ্গটিকে বেমালুম চেপে যাচ্ছে- সেকারণেই আমি বলেছি- ফারুক ওয়াসিফের দাবি "অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মাঠপর্যায়ে সক্রিয়"- সম্পূর্ণ অসত্য। আসুন, তবে একে একে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রকাশিত প্রফসর ইউনুসের অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলোর দিকেই প্রথমে দৃষ্টি দেই। এ পর্বে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদটি আকড়ে ধরে রাখা বিষয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কি কি আছে- সেটাই দেখবো।

১.০১ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ
১.০.১.১ 'গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩' অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন। ১৯৯০ সালের সংশোধনী অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। সে মোতাবেক ১৯৯০ সনের ১৪ আগস্ট তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নিম্নলিখিত শর্ত সাপেক্ষে ২৫ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের ব্যাপারে অনাপত্তি প্রদান করে:
১। গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ১৪(৪) ধারার বিধান অনুযায়ী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকুরীর শর্তাবলী উক্ত অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রণীত রেগুলেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে;
২। উক্ত অধ্যাদেশের ৩৬ ধারা অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ রেগুলেশন প্রণয়ন করবে এবং সরকারী গেজেটে প্রকাশিত হবার পর তা কার্যকর হবে;
৩। উক্ত রেগুলেশনে যেসব শর্তাবলী অন্তর্ভূক্ত হবে তা বর্তমান শর্তাবলীর অনুরূপ না হলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অনুমোদন প্রয়োজন হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন/ অনাপত্তি প্রাপ্তির পর গ্রামীণ ব্যাংকের ২৯ আগস্ট ১৯৯০ তারিখের পত্রের কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের অনুকূলে নিয়োগপত্র জারী করা হয়। উক্ত নিয়োগপত্রে, অন্যান্যের মধ্যে, শর্ত আরোপ করা হয় যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন নিয়মিত কর্মকর্তা হিসাবে গণ্য হবেন এবং তাঁকে ব্যাংকের প্রচলিত বেতন কাঠামোর আওতায় মাসিক বেতন সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি প্রদান করা হবে।

১.০১.২ পরবর্তীতে ২০ জুলাই, ১৯৯৯ তারিখে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের ৫২ তম সভায় এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, যতদিন পর্যন্ত পরিচালকমণ্ডলী অন্য কোন সিদ্ধান্ত না নেনে ততদিন পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে বহাল থাকবেন। পরিচালকমণ্ডলীর ৫২ তম সভার কার্যবিবরণী বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। (উক্ত সভার কার্যবিবরণী খুব মজার, মন্তব্যে তুলে দেয়ার চেষ্টা করবো: না.ধ.)

১.০১.৩ উল্লেখ্য, ২০ জুলাই ১৯৯৯ তারিখে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর বয়স ছিল ৫৯ বছর ২২ দিন (জন্ম: ২৮ জুন, ১৯৪০)। পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক উপরিউক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকালে বলবৎ থাকা ১লা মার্চ, ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত গ্রামীণ ব্যাংক চাকুরী বিধিমালা অনুযায়ী কর্মীদের চাকুরী থেকে অবসরের ক্ষেত্রে সীমা ৬০ (ষাট) বছর। কিন্তু ২৭ জন ২০০০ তারিখে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বয়স ৬০ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বলবৎ চাকুরী বিধিমালা লংঘন করে গ্রামীণ ব্যাংক তাকে অবসর প্রদানের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করনি।

১.০১.৪ ১৯৯৯ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের উপর প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মেয়াদপূর্তিতে দায়িত্ব পালনসহ অনেক অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সরকারের গোচরীভূত করা হলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।


১.০১.৫ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশনা প্রদানের ১১ বছর পর ১৯ নভেম্বর, ২০০১ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি রেগুলেশন প্রকাশিত হয়। উক্ত রেগুলেশনে উল্লেখিত বিভিন্ন শর্তাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্তাবলী নিম্নরূপ:
১। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক হবে।
২। পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগপত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যকাল নির্ধারণ করে দিবেন। তবে কার্যকাল পাঁচ বছরের বেশী হবে না। পরিচালনা পর্ষদ যে কোন কার্যকালের মেয়াদ শেষে একই পদে পরবর্তী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুন:নিয়োগ দিতে পারবেন। পুন:নিয়োগ দেবার সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের শর্তাবলী নতুনভাবে নির্ধারণ করা যাবে;
৩। ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চাকুরীর ক্ষেত্রে বয়সের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকবে না। গ্রামীণ ব্যাংকের চাকুরীবিধি তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

১.০১.৫ ১৯৯০ সাল গ্রামীণ ব্যাংক প্রদত্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগপত্রে উল্লেখিত শর্ত (গ্রামীণ ব্যাংকের একজন নিয়মিত কর্মকর্তা হিসাবে বিবেচিত হওয়া) ২০০১ সালে প্রকাশিত রেগুলেশনে উল্লেখিত শর্ত (ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক হওয়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চাকুরীর ক্ষেত্রে বয়সের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের চাকুরীবিধি তাঁর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়া) হতে ভিন্নতর। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ২৫ আগস্ট ১৯৯০ তারিখে প্রদত্ত অনাপত্তি পত্রের শর্ত (উক্ত রেগুলেশনে যেসব যেসব শর্তাবলী অন্তর্ভূক্ত হবে তা বর্তমান শর্তাবলীর অনুরূপ না হলে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অনুমোদন প্রয়োজন হবে) অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুন:অনুমোদন গ্রহণের আবশ্যকতা থাকলেও তা পরিপালন করা হয়নি।

১.০১.৬ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ রেগুলেশন, ২০০১ এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগপত্রে তাঁর কার্যকাল নির্ধারণ করে দেবেন এবং কার্যকাল পাঁচ বছরের বেশী হবে না এবং পরিচালনা পর্ষদ যে কোন কার্যকালের মেয়াদ শেষে একই পদে পরবর্তী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুন:নিয়োগ দিতে পারবেন। কিন্তু উক্ত রেগুলেশন জারীর পর (এমনকি ১৯৯০ সালের পর হতে) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জন্য আর কোন নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়নি। ফলশ্রুতিতে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ এর ১৪(৪) ধারা লংঘিত হয়েছে। তাছাড়া ২০০১ সালে জারীকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সংক্রান্ত রেগুলেশনটিও উদ্দেশ্য প্রণোদিত (mala fide) বলে প্রতীয়মান হয়।

১.০১.৭ উল্লেখ্য যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক The Bangladesh Penal Code, 1860 এর Section 21(12((ii) এ যে অর্থে Public Servant কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে সে অর্থে Public Servant বলে গণ্য হবেন। তাছাড়া বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫২ নং ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক একজন সরকারী কর্মচারী (Public Officer)। প্রাপ্ত বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে যে, নিম্নোক্ত কারণে ড. মুহাম্মদ ইউনূস Public Servant হিসাবে তাঁর চাকুরীর শর্তাবলী গুরুতরভাবে লংঘন করেছেন:
১। পূর্ণকালীন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মস্থল থেকে প্রায়শ:ই অনুপস্থিত থাকা;
২। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বিদেশ ভ্রমণ;
৩। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে বিদেশ থেকে ব্যক্তিগত নামে তহবিল গ্রহণ;
৪। বিভিন্ন সহযোগী কোম্পানী ও প্রতিষ্ঠান গঠনকালে নিজেকে গ্রামীণ ব্যাংকের পূর্ণকালীন কর্মকর্তা হিসাবে এর প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থাপন না করা।
"

==========>>>>>
উপরের প্রতিবেদন থেকে খুব পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে- ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের খেয়াল-খুশী মোতাবেক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের মত চালিয়েছেন এবং কোন প্রকার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেননি। কেবল বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকারী নিয়মভঙ্গই করেননি, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের অধ্যাদেশ, রেগুলেশনও ভঙ্গ করেছেন অহরহই। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়- তা হচ্ছে অনেকে মনে করেন বা এমন কথা প্রচার করা হয়ে থাকে যে গ্রামীণ ব্যাংক একটি বেসরকারী/ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান - যা আসলে সঠিক নয়। এমনকি ২০ জুলাই ১৯৯৯ তারিখে অনুষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের ৫২ তম সভার কার্যবিবরণী থেকে দেখা যায় পরিচালকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহানও বলেন:"গ্রামীণ ব্যাংক দেশের অন্যান্য ব্যাংকের মত নয়। এটি একটি বেসরকারী ব্যাংক। এর ৯৩ শতাংশের উপরে মালিকানা ভূমিহীনদের। মাত্র ৭ শতাংশেরও কম মালিকানা রয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকারের"। এ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: "গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্যরা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকৃতি সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে কাজ করেছেন। তারা একটি Statutory Public Authority কে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য করেছেন।"
কেবল তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারের জবাবদিহিতা থেকে মুক্ত করে ব্যক্তি বলয়ে আনার বিভিন্ন প্রচেষ্টাও উল্লেখ করা দরকার। তদন্ত প্রতিবেদন থেকেই বিষয়টি দেখা যাক:
১.০১ গ্রামীণ ব্যাংক গঠন
গ্রামীণ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। উক্ত অধ্যাদেশ অনুযায়ী গ্রামের ভূমিহীন লোকদের ঋণ সুবিধাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান এবং আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করাই গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্দেশ্য। প্রতিষ্ঠার পর হতে গ্রামীণ ব্যাংকের অধ্যাদেশটি ১৯৮৬ ও ১৯৯০ সালে দু'বার সংশোধিত হয়। অধ্যাদেশে এই সংশোধনীর মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতা হ্রাস করে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের উপর অধিকতর ক্ষমতা ন্যাস্ত করা হয়। বিধি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন গ্রহণের আবশ্যকতা রহিত করে পরিচালনা পর্ষদের উপর ন্যস্ত করার বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। এর ফলে সরকারের নিকট গ্রামীণ ব্যাংকের জবাবদিহিতা হ্রাস পায়।

১.০২ গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার মূলধন
গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ অনুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন এবং পরিশোধিত মূলধন ছিল যথাক্রমে ১০ কোটি এবং ৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন এবং পরিশোধিত মূলধন যথাক্রমে ৩৫০ কোটি এবং ৫৪.৭৭ কোটি টাকা। ১৯৮৩ সালের মূল অধ্যাদেশ অনুযায়ী সরকার ও গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের মূলধনের অনুপাত ছিল যথাক্রমে ৬০% এবং ৪০%। ১৯৮৬ সালে সংশোধনীতে গ্রামীণ ব্যাংকের মূলধন ৪০% হতে বৃদ্ধি করে ৭৫% করা হয় এবং সরকারের মূলধন ৬০% হতে হ্রাস করে ২৫% করা হয়। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর ২০১০ এ সরকার ও গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের মূলধন অনুপাত বাস্তবে দাঁড়ায় যথাক্রমে ৩.২৯% এবং ৯৬.৭১% , যা অধ্যাদেশের ৭ নং ধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

চলবে ....
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×